#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৭
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
তপ্ত রোদে উত্তপ্ত ধরণী। গরমে নাজেহাল অবস্থা। আনায়া নিজের কেবিনে কপালে হাত রেখে বসে আছে। রাগে ওর শরীর জ্বলে যাচ্ছে। চোখের সামনে অতীত ভেসে উঠছে। নিশান নামক মানুষটার ওপর এক রাশ ঘৃ*ণা রয়েছে তার। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিলেও এখন তার মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। ইচ্ছে করছে নিশান নামক মানুষটাকে ধ্বংস করে ফেলতে। এতো গুলো বছর ভালোই তো ছিলো তাহলে কেন আবার ওই নিকৃষ্ট মানুষটা সামনে চলে এল। আনায়া তো কখনো চায়নি এই মানুষটার সাথে পুনরায় দেখা হোক। অতীতের খারাপ স্মৃতি অতীতেই রয়ে যাক। কিন্তু এবারের আনায়া পূর্বের আনায়া নয়। একে জ্বালাতে এলে নিজেকেই সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে হবে। আনায়া কিছুক্ষন সময় নিয়ে ভাবল। অতঃপর ওর ঠোঁটের কোণে দেখা গেল ক্রুর হাসি।
আনায়া কপালে হাত রেখে বসে আছে এমন সময় ঝড়ের গতিতে কেবিনে কেউ ঢুকল। আনায়া চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল মানুষটা আর কেউ না স্বয়ং অর্ণব সাহেব। অর্ণব একটা চেয়ার টেনে আনায়ার বরাবর বসল। আনায়াকে কপালে হাত রেখে বসে থাকতে উদিগ্ন হয়ে বলল,
“কি হয়েছে তোমার? মাথা ব্যাথা করছে? খারাপ লাগছে? নাকি জ্বর এসেছে?”
বলতে বলতে আনায়ার কপালে হাত রেখে তাপমাত্রা চেক করল। আনায়া নিশ্চল চোখে চেয়ে আছে মানুষটার দিকে। তার সামান্য কপালে হাত রাখায় মানুষটার এতো উদিগ্নতা ওকে মানুষটার প্রতি মুগ্ধ করছে। অর্ণব আনায়ার কপালে হাত রেখে দেখল ওর শরীরের তাপমাত্রা সঠিক আছে।
“কপালের তাপমাত্রা তো ঠিক আছে। তাহলে কি তোমার মাথা ব্যথা করছে? আগে বলবে তো আমার চিন্তায় চিন্তায় তোমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে তাহলে আমি আরো আগেই তোমার কাছে চলে আসতাম”
কথাটা বলেই অর্ণব আনায়ার মাথা টিপে দেওয়া শুরু করল। আনায়া মানুষটার কাজে প্রতিবারই মুগ্ধ হয়। আনায়া অর্ণবকে থামিয়ে দিয়ে বসতে বলল।
“আমার মাথা ব্যাথা করছে না।খারাপও লাগছে না। আমি ফিট এন্ড ফাইন আছি। আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতো হবে না”
অর্ণব ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তোমার চিন্তা আমি করবো না তো কে করবে?”
“কারোই করা লাগবে না”
আনায়া উঠে জানালার থাই গ্লাসের সাথে গিয়ে দাঁড়ালো। গ্লাসের বাহিরের ব্যস্ত শহর দেখায় ব্যস্ত আনায়া। আর তার পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে রয়েছে অর্ণব নামক প্রেমিক পুরুষ। অর্ণবের মাথায় কিছু একটা আসতেই উঠে দাঁড়ালো। আনায়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে দরজার দিকে হাঁটা দিল। আনায়া কিছুই বুঝল না। এই লোক হটাৎ ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে।
আবির আনায়ার কেবিনের দিকেই আসছিলো। হটাৎ এই সময়ে অর্ণবকে আনায়ার কেবিন থেকে বের হতে দেখে অবাক হলো।
“তুই এই সময় এখানে?”
অর্ণব ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন? আসতে মানা আছে নাকি?”
“মানা নেই কিন্তু হটাৎ দেখে অবাক হলাম”
“তোর অবাক হওয়া শেষ হলে সামনে থেকে সর”
আবির এতক্ষনে খেয়াল করলো আনায়ার হাত অর্ণবের হাতের মুঠোয়।
“তুই ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
অর্ণব এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল,
“সেটা তোকে বলতে হবে?”
“অবশ্যই। বড় ভাই হিসেবে বোন কোথায় যাচ্ছে সেটা জানা জরুরি”
“তোর বোনকে নিয়ে ডেটিংয়ে যাচ্ছি”
আবির দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি যা”
আনায়ার মাথায় হাত। ওর ভাই কোথায় ওকে লোকটার থেকে বাঁচাবে তা না করে উল্টো অর্ণবকে উস্কে দিচ্ছে।
“তুই খাম্বার মতো সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে যাবো কি করে? সামনে থেকে সর”
অর্ণব আনায়া কে নিয়ে কিছু দূর যেতেই আবির পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,
“আমাকেও নিয়ে যা”
অর্ণব হাঁটা থামিয়ে ওর দিকে তাকাতেই আবির কেবলা কান্তের মতো হেসে দিয়ে বলল,
“থাক আজকে তোরা যা। পড়ে কোনো একদিন আমিও যাবো”
পার্কিংয়ে আসতেই আনায়ার চোখে পড়ল নিশান কে। নিশান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আনায়াকে দেখে এগিয়ে আসতে নিলেই পাশে অর্ণবকে দেখে থেমে গেল। অর্ণবের হাতের মাঝে আনায়ার হাত লক্ষ্য হতেই ওর চোখ জ্বলে উঠল। হিংসায় নাকি জেলাসি? আনায়া নিশানকে দেখানোর জন্য অর্ণবের আরো কাছে যেয়ে অপর হাতে অর্ণবের হাত জড়িয়ে ধরল। আনায়ার কাজে অর্ণব মুচকি হাসলো। নিশানের শরীরে যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। অর্ণব গাড়ির দরজা খুলে দিল। আনায়া মিষ্টি হেসে গাড়িতে বসতেই অর্ণব ঘুরে নিজে বসার জন্য দরজা খুলবে এমন সময় ওর চোখ পড়ল নিশানের ওপর। দুজন দুজনের দিকে চেয়ে আছে। দুজনেই চোখেই একে অপরের প্রতি প্রতিহিংসার আগুন। অর্ণব নিশানের দিকে চেয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল। অর্ণবের হাসিতে নিশানের গাঁ জ্বলতে থাকা আগুনে যেন ঘি পড়ল। অর্ণব আনায়ার হটাৎ ওর এতটা কাছে আসার মানে বুঝতে পেরে শব্দ করে হেসে দিল।
আনায়া হটাৎ মানুষটাকে এভাবে হাসতে দেখে অবাক হলো। মানুষটা হটাৎ এভাবে হাসছে কেন? মানুষটা আবার পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি।
“কি হলো? এভাবে পাগলদের মতো একা একা হাসছেন কেন?”
“পাগল তো আমি তোমার প্রেমে সেই কবেই হয়েছি সুন্দরী”
“আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে”
“তোমাকে দেখার পর থেকে”
#চলবে?
(ছোট পর্বের জন্য দুঃখিত। ব্যস্ততায় গল্প লিখতে পারিনি। তাই যে টুকু পেরেছি তাই দিয়েছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করবেন। আপনাদের সুন্দর সুন্দর কমেন্ট আমাকে লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়। ধন্যবাদ?