প্রেমের_তাজমহল #পর্ব৯ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
211

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৯
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

“ওহে আমার প্রাণপ্ৰিয়া প্ৰিয়স্বীনি
আমি হলাম লেবু, তুমি হলে চিনি
তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো পাহাড়, সমুদ্র,পর্বত
দুজনে মিলে একত্রে হব ঠান্ডা এক গ্লাস শরবত (যা এই গরমে খুবই জরুরি )”

অর্ণবের কবিতা শুনে আনায়া খিল খিল করে হাসছে। ফোনের ওপাশে থাকা অর্ণব খুব মনোযোগ দিয়ে প্রিয়সীর হাসির শব্দ শুনছে। প্রিয়সীর খিল খিল হাসি ওর মনে তরঙ্গের মতো বার বার প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করছে। ওর মনে প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে।
“বড্ড আফসোস হচ্ছে”

আনায়া হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কেনো?”

“এইযে প্রিয়সী খিল খিল করে হাসছে। তার হাসিতে হৃদয় শীতল হয়ে যাচ্ছে। মস্তিসকে হাসির ঝংকার সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আফসোস সেটা সামনে থেকে দেখার সুযোগ হলো না। চক্ষুদয় আমার তৃষ্ণার্থ প্রিয়সীর হাসি মুখখানা দেখার জন্য”

“এমপি সাহেব রাজনীতি ছেড়ে কবি হলেন কবে থেকে?”

“যখন থেকে প্রিয়সী কবিতা হলো। তখন থেকে নিজেকে কবি রূপে রূপান্তরিত করেছি”

“ভালো”

“মন ভালো হয়েছে?”

“আপনাকে কে বলল আমার মন খারাপ?”

“অনুভূতিরা জানান দিল আজ প্রিয়সী মন খারাপ। সে আমায় বড্ড মিস করছে। আমার আবার প্রিয়সীর মন খারাপ সহ্য হয় না। যেই মুখে খুশির ঝলক মানায় সেই মুখে উদাসীনতা বড্ড বেমানান”

আনায়া উদাস মনে বলল,
“সেই মুখেই এক সময় বিষাদের বিচরণ ছিলো”

“সেটা অতীত। অতীত কে স্মরণ করে বর্তমানকে অবহেলা করতে নেই”

“হয়তো”

“রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়। আমি জানি তুমি সারাদিন আমার কথা ভাবো। কিন্তু তাই বলে রাত জেগে আমার কথা ভাবতে হবে না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়”

“হুম। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন”

অর্ণব দুস্টু হেসে বলল,
“আমার খেয়াল রাখার জন্য তুমি পার্মানেন্টলি আমার কাছে চলে এসো, তাহলে আমার আর কষ্ট করে নিজের খেয়াল রাখতে হবে না”

“রাখছি। আল্লাহ হাফেজ”

অর্ণবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিল। ওপর পাশে অর্ণব বোকা বনে গেল। কি এমন বললো যে মেয়েটা মুখের ওপর কল কেটে দিল। ভেবে পেল না। ওর ঘুম পাচ্ছে, সারাদিন খুবই ব্যস্ততায় কেটেছে। খুবই ক্লান্ত লাগছে। বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিতেই মুহূর্তে ঘুমের দেশে পারি দিল।

আনায়ার ঘুম ভাঙলো অনেকটা বেলা করে। পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখল দশটা বেজে গেছে। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
নিচে নেমে দেখল নীলিমা টেবিল গুছাচ্ছে।
“ভাবি এতো বেলা হয়ে গেল আমাকে ডাকলে না কেন? ভাইয়ারা কি অফিসে চলে গেছে? যাওয়ার আগে একবার আমাকে ডাকলোও না”

“আমি তোমাকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার ভাইয়া ডাকতে দেয়নি। বলল ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। আজকে অফিসে বেশি কাজ নেই তুমি নাস্তা করে আসতে ধীরে যাও”

আনায়া খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। আকস্নাৎ ভাবনায় উঁকি দিল অর্ণব নামক মানুষটা। কাল ওভাবে মুখের ওপর কল কেটে দাওয়ার মানুষটা কি রাগ করেছে? করারই কথা। রাগ করলে করুক তাতে আনায়ার কি আসে যায় ? সত্যিই কি আনায়ার কিছু আসে যায় না? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। আনায়া মাথা থেকে অর্ণবের কথা বাদ দিতে চাইল। কিন্তু চাইলেই কি তা সম্ভব? আনায়া যত চাচ্ছে অর্ণবের কথা মনে না করতে ততো ওর মনে অর্ণবের ওর প্রতি কেয়ার, ওর সাথে কাটানো সময়, ওর কথা বলা সব কিছু স্মরণ হচ্ছে। অর্ণবকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আনায়া তৈরি হয়ে গেল।

আনায়া আজ নিজেই ড্রাইভ করছে। কিশোরী বয়সে ওর শখ হয়েছিল ড্রাইভিং শিখার। শখের বসেই ওর ড্রাইভিং শিখা। সাধারণত বাড়ির কেউ আনায়াকে কখনো ড্রাইভ করতে দেয় না। কোথাও যেতে হলে ড্রাইভার বা ভাইদের মধ্যে কেউ দিয়ে আসে। দুই ভাইয়ের চোখের মনি বলে কথা। এই মুহূর্তে বাড়িতে কোনো ড্রাইভার ছিলো না। তাই ও নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। ফুরফুরে মনে গান শুনছে আর ড্রাইভ করছে আনায়া। হটাৎ দেখল ওপর পাশ থেকে একটা গাড়ি আনায়ার গাড়ির দিকে আসছে। আনায়া ভাবলো গাড়িটা হয়তো পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। ওর ভাবনাকে ভুল প্রমান করে গাড়িটা আনায়ার গাড়ির ঠিক ২ ফুট সামনে থামল। আনায়া তাড়াতাড়ি ব্রেক কসলো। আর একটু হলে এক্সিডেন্ট হয়ে যেত। এভাবে মানুষ গাড়ি চালায়? নেশা করে গাড়ি চালাচ্ছে নাকি? রাগে ফুসে উঠলো আনায়া। গাড়ি চালককে এক চোট কথা শুনাবে এমন মনোভাব নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো। ওপর পাশের গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো একজন। আনায়া কিছু বলার জন্য মানুষটার মুখের দিকে তাকাতেই থমকে গেল। আনায়াকে এভাবে থমকে যেতে দেখে ওপর পাশের মানুষটার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।
“কি হলো অবাক হলে? অবাক হওয়ারই কথা, এতদিন পর যে দেখা হলো”

আনায়া নিজেকে সামলে নিল। আজ ও নিশানকে তার যোগ্য জবাব দিবে। পূর্বে মানুষটাকে ছাড় দিলেও এখন আর নীরব থাকবে না।
“হটাৎ মাঝ রাস্তায় অবর্জনার সম্মুখীন হলে যে কেউই অবাক হবে, তেমন আমিও কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। চিন্তা নেই আমি নিজেকে সামলে নিতে জানি”

নিশান কিছুটা নয় বরং অনেকটা অবাক হলো। পূর্বের আনায়ার সাথে এই আনায়ার মিলে পাচ্ছে না। পূর্বে কিছু বললে মেয়েটা চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকতো। পাল্টা কিছু বলতো না। সেই মেয়ের থেকে এমন জবাব পেয়ে নিশান অবাক হলো।
“বাহ্! মুখে বুলি ফুটেছে দেখছি। এই বুলি কি অর্ণব সিকদারের থেকে শেখা নাকি?”

“শিখলেই বা ক্ষতি কি? এতো সুন্দর, হ্যান্ডসাম একটা মানুষের থেকে কোনো কিছু শিখার সুযোগ কয়জনই বা পায়”

নিশান কিছু না বলে আনায়ার দিকে তাকালো। নিশানকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আনায়ার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
“এভাবে অভদ্রদের মতো গাড়ি চালানোর মানে কি? রাস্তা কি আপনার বাবার? নাকি নেশা করে হুস হারিয়ে গেছে?”

“এতদিন পড় দেখা তাই ভাবলাম তোমাকে একটু চমকে দেই, তাই আরকি”

আনায়া ফুসে উঠে বলল,
“গাড়ি সরান। আমার কাজ আছে আমাকে যেতো হবে”

“যদি না সরাই”

“ভালোয় ভালোয় বলছি গাড়ি সরান নাহলে কিন্তু ভালো হবে না”

নিশান কিছুটা এগিয়ে বলল,
“আমিও দেখতে চাই খারাপ কি হতে পারে”

আনায়া বাঁকা হাসলো। নিশান কে কিছু না বলে গাড়িতে যেয়ে বসল। নিশান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আনায়া কি করে সেটা দেখার জন্য। আনায়া গাড়িটা কিছুটা ব্যাক এ নিয়ে স্পিড বাড়িয়ে নিশানের গাড়ির পাশ দিয়ে গেল। এতে নিশানের গাড়ির লুকিং গ্লাস আর পাশের ডোরের গ্লাস ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। আনায়া পিছু ফিরে একবার দেখলোও না। কোনো কিছুর পরোয়া না করে সোজা চলে গেল।

পিছনে ফেলে রেখে গেল অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকা নিশান কে। নিশানের যেন আজ অবাক হওয়ার দিন। ও ভাবতেই পারে নি আনায়া এভাবে ওর গাড়ি ওভার টেক করে চলে যাবে। নিজের গাড়ির এই হাল দেখে রাগান্বিত হয়ে গাড়ির বোনেটের ওপর ঘুসি দিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে ছাড়বো না মিস সেহেরিশ আনায়া। অর্ণবকে পেয়ে তোমার পাখনা গজিয়েছে না। ওই পাখনা আমি খুব জলদি ছেটে দিবো। আমি তোমার আর অর্ণবের জীবনে আবার ফিরছি। অর্ণবকে এবার আমি সর্বহারা করে দিবো। ইটস মাই প্রমিস”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটি কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না যেন। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here