তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 #পর্ব- ৩২ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
262

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৩২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীনের আর্তনাদ কানে আসতেই,আরহাম লাফিয়ে উঠে বসে। মেহেভীনের কাছে যেতেই, মেহেভীমের ঘুমের মাঝেই আরহামের হাতজোড়া খামচে ধরে, ব্যাথায় কুকড়ে উঠে।আরহাম বুঝতে পারছে না হঠাৎ মেহেভীনের কিসের ব্যাথা উঠলো? আরহাম আস্তে ধীরে মেহেভীনকে খাটের কিনারে হেলান দিয়ে, শুয়ায়। অতঃপর মেহেভীনের গালে হাত রেখে বলে, ‘ মেহেভীন হঠাৎ কি হলো তোমার? তুমি ঠিক আছো তো? ‘
মেহেভীন নিজের আখিঁজোড়া আস্তে আস্তে খুলে ধীর গলায় বললো,

‘ আরহাম সাহেব! ‘

‘হুম? ‘

‘বেবী আমার পেটে কিক করলো মনে হচ্ছে। বেবী নড়ছে আরহাম সাহেব। আমি অনুভব করতে পারছি। ‘

মেহেভীন ব্যাথা পেলেও, তার চোখ-মুখে খুশির আভাশ পাওয়া গেলো। মেহেভীনের কথা শুনে আরহাম মহানন্দনে বললো,

‘ সত্যি? বেবী নড়ছে? ‘

মেহেভীন খুশিতে মাথা নাড়ায়। আরহাম নিজের অজান্তেই তার কান পেতে দিলো মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে, বেবীকে একটু অনুভব করার প্রচেস্টায়। মেহেভীনের থেকে কথাটি শুনে আরহামেরও বড্ড ইচ্ছে হলো, বেবীকে একটু অনুভব করার। মেহেভীন অদ্ভুদ পানে আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরহাম মনোযোগ সহকারে মেহেভীনের পেটে তার কান পেতে রয়েছে একটুখানি বেবীটাকে অনুভব করার প্রচেস্টায়। মেহেভীনের পেটটাও ভারী হয়েছে আগের তুলনায়, যদিও বেশি নয়।আরহাম একটু হলেও বুঝতে পারছে, বেবী সত্যি নড়ছে। এই মুহুর্তটা যেন, তার কাছে সত্যি সবথেকে শ্রেষ্ট মুহুর্ত। আরহাম উঠে গিয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে খুশিতে বলে,

‘ মেহভীন আমি অনুভব করতে পারছি। আমি সত্যি পারছি। বেবী তার ছোট ছোট হাত-পা দিয়ে কেমন করে নড়ছে। আমার পক্ষে তো অপেক্ষা করা যেন এখন থেকে অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। কবে বেবী আসবে, কবে আমি আমার হাতে তাকে একটু ছুঁয়ে দেখবো। সেইদিন কবে আসবে মেহেভীন?
চারটা মাসেও যেন আমার কাছে এখন চার যুগ মনে হচ্ছে। আচ্ছা বেবী যখন হবে তখন তার নাম কি রাখবো আমরা? ‘

আরহাম নিজের মনে কথাগুলো বলেই যাচ্ছে। বেবী পৃথিবীতে আসলে, কত প্ল্যান তার। আরহাম যেন ভুলেই গেছে সে বাচ্ছাটার আসল বাবা নয়। মেহেভীন বুঝতে পারছে আরহামের টান হয়ে গেছে বাচ্ছাটার প্রতি। আরহামকে থামাতে হবে,নাহলে আরহাম আরো অনেক ভেবে ফেলবে, যা পরবর্তিতে কষ্ট দিতে পারে আরহামকে,যা মেহেভীন কিছুতেই চায়না। আরহাম আবারোও বললো,

‘ আচ্ছা বেবী আমাকে কি নামে ডাকবে? আমি বরং বেবীকে বলবো আমাকে ভালো বাবা বলে ডাকতে। ভালো না নামটা? আমি বেবীর জন্যে সবকিছু এনে দিবো। বেবী যা যা চাইবে সব। ‘

মেহেভীন থমথমে গলায় বললো,

‘ আরহাম সাহেব আপনি থামুন। আপনি কি ভূলে গেলেন? আমরা একটা চুক্তিতে ছিলাম। বেবীর জন্মের পরেই তো আমি এবং বেবী চলো যাবো। তাহলে শুধু শুধু মায়া কেন বাড়াচ্ছেন? সে তো অন্য কারো সন্তান। ‘

আরহাম কিছু একটা ভেবে রহস্যময় হাঁসি আস্তে করে বললো,

‘কিছু টান তো হুট করে অজান্তেই হয়ে যায়। আর ভবিষ্যৎ এর কথা কে বলতে পারে? ‘

‘ কি বললেন আপনি? ‘

‘ না মানে, আমার মনে হয় না যে তোমার সাথে প্রতারণা করেছে। সে কখনোই বেবীর কোনপ্রকার অধিকার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। ‘

আরহামের গম্ভের কন্ঠে বলা কথাটি শুনে মেহেভীন চুপ হয়ে যায়। সত্যিই তো অভ্রের কোন অধিকার নেই তার সন্তানের উপর। জন্ম দিলেই তো কেউ বাবা হতে পারেনা।

আরহাম অধরের কোণে হাল্কা হাঁসি এনে বললো,
‘এই কয়দিনে আমি বুঝে গিয়েছি, আমি না চাইতেও বেবীর সাথে জড়িয়ে গিয়েছি। সে এখনো পৃথিবীতে আসেনি তাতেই তার প্রতি এতোটা মায়া জন্মে গেছে, সে যখন আসবে তখন তাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো? এইটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন। ‘

আরহামের কথা শুনে ভালো লাগা কাজ করে মেহেভীনের। মানুষটার এতোটা টান পড়ে গেলো? কখন কীভাবে? আচ্ছা আরহামের কি মেহেভীনের প্রতি কোন টান অনুভব হয়? মেহেভীনের কেন যেন
প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু সে তা করলো না।

আরহাম বারান্দায় চলে গেলো। মেহেভীন গভীর ভাবনায় ডুব দিলো। এই মানুষটাকে একা করে সে কী করে তার সন্তানকে নিয়ে দূরে চলে আসবে? এই মানুষটা যে, নিজের অজান্তেই মায়াজালে জড়িয়ে ফেলেছে, নিজেকে। আচ্ছা অভ্র যখন জানতে পারবে এই সন্তানটি তার, তখন কি হবে? অভ্র কি সন্তানের অধিকার চাইবে মেহেভীনের থেকে? মেহেভীন তখন কি করবে? কথাটি ভেবেই শুকনো ঢুগ গিললো মেহেভীন। মেহেভীন গোলকা ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে।
মেহেভীনের আজ বড্ড তার মায়ের কথা মনে পড়ছে। তার মা নিশ্চয় তার পাশে থাকলে, তাকে এখন সঠিক পথ দেখিয়ে দিতো। সে তো কখনোই তার মাকে পাশে পাইনি। মেহেভীন বড্ড ইচ্ছে করছে, এখন তার মা ম্যাজেকের মতো চলে আসুক এবং তার সকল সমস্যা নিমিষেই দূর করুক। মায়ের একটু ঠায় পেলেই, একজন সন্তান তো সমস্ত কষ্ট ভূলে যায়। মেহেভীন এখন সেই ঠায়টুকু পেতে ইচ্ছে করছে।

________________

রুশা মন খারাপ করে চুপটি করে নিজের ঘরে বসে আছে। মনটা যে বেহায়া, কথা সে মানেনা। আরহামকে দেখে তার কষ্টে বুকটা জ্বলে উঠে। এই কষ্টের আদোও শেষ আছে কোথাও?

তাহসান রুশার রুমে কালকের প্রযেক্টের ফাইল নিয়ে এসে দেখে, রুশা চুপটি মেরে বসে আছে। তাহসান রুশার কাঁধে হাত রাখতেই, রুশা তাহসানের দিকে তাকায়। রুশার মুখখানি দেখে তাহসানের বুকের ভিতরে তলপার সৃষ্টি হয়। তাহসান রুশার অবস্হা দেখে বলল,

‘ রুশা তুমি এখন এইবার নিজেকে সামলাও? ‘

‘কীভাবে সামলাবো আমি নিজেকে? আমি যে পারছি না। আমার না মেহেভীন নামক মেয়েটার প্রতি অনেক হিংসা হয়। কি আছে ওই মেয়েটার মাঝে, যার জন্যে স্যার মেয়েটাকে এতোটা ভালোবাসে। আমার মাঝে কি সেই গুনগুলো নেই? কেন নেই আমার মাঝে।? ‘

তাহসান রুশার পাশে বসে বলে,

‘ রুপ-কিংবা গুন দেখে ভালোবাসা হয়না। ভালোবাসা তো এমন এক অনুভুতি যা হুট করে যে কারো প্রতি যখন-তখন চলে আসে। ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট কারণ থাকে না।’

রুশা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তাহসান রুশার দিকে টিস্যুর এগিয়ে বলে, ‘ রুশা তুমি অন্তত প্লিয় কেঁদো না। দেখো আল্লাহ নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ট পরিকল্পনাকারী। তিনি যখন আরহামের জন্যে তোমাকে রাখেননি, তাতে নিশ্চয় কিছু না কিছু ভালো হবেই। দেখবে আল্লাহ তোমার জন্যে উত্তম কিছুই নির্বাচন করেছেন। তুমি শুধু দৃঢ় মনোবল রাখো। ‘

তাহসানের্ কথায় কিছুটা ভরসা পায় রুশা।

_____

সকাল হতেই মেহেভীন বারান্দায় হাটতে বের হয়। আরহাম তার অফিসের কলিগদের সাথে অনেক আগেই,প্রযেক্টের কাজে বেড়িয়ে গেছে। তখনি একজন স্টাফ এসে,মেহেভীনের হাতে একটা পার্সেল দিয়ে বলে,

‘ ম্যাম আপনার নামে কে যেন কুড়িয়ারে পার্সেল পাঠিয়েছে৷ টেক ইট৷ ‘

।স্টাফের কথা শুনে, কিছুটা অবাক হয়ে মেহেভীন পার্সেলটা নেয়। পার্সেটা খুলেই দেখে ছোট্ট একটা চিরকুট। তার পাশেই অনেকগুলো লাল টকটকে গোলাপ ফুল। ফুলগুলো এতেটাই সুন্দর যে, মেহেভীনের মুখে অজান্তেই হাঁসি ফুটে উঠে, তা দেখে। মেহেভীন চিরকুট খুলে দেখে তাতে লেখা,

‘ লাল টকটকে গোলাপের মতো সবসময়ই তোমার মুখশ্রীতে যেন হাঁসিতে খুশির ঝলক ফুটে উঠে। ওগো প্রেয়সী সবসময় মনমরা হয়ে থাকো কেন? তুমি কি বুঝো না? তোমার কষ্টগুলো যে আমাকেও খুব করে পোড়ায়। ‘

মেহেভীন এইবার কেন যেন চিরকুট টা ছুড়ে ফেলে দিলো না। তার বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে কে এই চিরকুটের মালিক।

সঙ্গে সঙ্গে মেহেভীনের ফোনের মেসেজের টং টা বেজে উঠলো। মেহেভীন মেসেজ চেক করে দেখে, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে,

‘গোলাপ ফুল দেখে তোমার মুখে যেই হাঁসিটা লেগে ছিলো, তা যেন সর্বদা বিরাজমান থাকে। ‘

মেসেজটা দেখে আরেকদফা চমকে উঠে মেহেভীন। তার মানে যে এই চিরকুটটা দিয়েছে, সে এখানেই আছে। কথাটি ভেবেই মেহেভীন চারদিকে তাকাতে থাকে,কিন্তু আফসোস কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে আরেকবার মেসেজ আসে। মেহেভীন মেসেজ টা পড়ে দেখে তাতে লিখা,

‘ আমাকে শত খুঁজেও তুমি পাবে না প্রেয়সী। আর শুধু কিছুটা প্রহরের অপেক্ষা, তারপরেই আমি তোমার কাছে নিজেকে ধরা দিবো। ‘

মেহেভীন মেসেজটা পড়ে, আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে যায়। তার মানে যে এসব করছে, সে এইবার নিজেকে সামনে আনবে, কিন্তু কীভাবে? মেহেভীন যেই নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছিলো, সেই নাম্বারে ফোন করে, কিন্তু বরাবরের মতো সে আশাহত হয়। নাম্বার বন্ধ! তখনি একটা গাড়ি গেট দিয়ে প্রবেশ করে। মেহেভীন বুঝতে পারলো আরহাম চলে এসেছে। আরহাম গাড়ি থেকে ফরমাল লুকে বেড়িয়ে, তাহসানের সাথে কথা বলতে বলতে হাটছে। আরহামকে দেখে মেহেভীনের চোখ যেন আটকে যায়। লোকটাকে ফরলাম ড্রেসাপে যে কারো চোখ আটকে যাবে। মেহেভীনকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আরিয়ান মেহেভীনের কাছে এসে বলে,

‘ বইন রে চোখটা নামা এইবার। তোরই তো নকল বর। যখন-তখন দেখতে পারবি। ‘

মেহেভীন কথাটি শুনে আরিয়ানকে মারতে শুরু করে দেয়। আরিয়ান হু হা করে হেঁসে উঠে।

________

আরহাম যেহুতু দুপুরের মাঝেই মিটিং টা শেষ করে, ফিরেছে তাই সবাই মিলে ঠিক করেছে, আজকে সবাই পার্বত্য অঞ্চলটা ঘুড়ে দেখবে।

আরহাম নোয়া গাড়ি ভাড়া করে নেয়। ফ্রন্ট সিটে আরহাম ও মেহেভীন একসাথে বসেছে। তার পরের সিটে মায়রা এবং অভ্র বসেছে।
অভ্র ও মায়রাও মেহেভীনদের সাথে যাচ্ছে। তার পিছনে আরিয়ান ও মজনু বসেছে। তাহসান ও রুশাও যাচ্ছে। রুশা যদিও আসতে চাইছিলো না তবুও তাহসান জোড় করায় এসেছে। গাড়ি তার আপনগতিতে চলতে শুরু করে দেয়।

অভ্র আজ নিষ্চুপ, তার মনে আজ এক্টাই প্রশ্ন উঁকি দেয় সে কি ভালোবাসে মেহেভীনকে? অভ্র নিষ্পলকভাবে মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়রার নজরে তা ঠিকই পড়েছে,তবুও সে চুপ থাকে। মেহেভীন তো অভ্রকে বার বার এড়িয়ে চলার চেস্টা করছে। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকায়। মানুষটা নিজের মতো ড্রাইভিং করছে।
কালকের পর থেকে মেহেভীনের শুধু একটা কথায় মনে পড়ছে,

‘ আরহাম সাহেব! জীবনটা বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কি করবো আমি এখন? ‘

গাড়ি চলছে আপন গতিতে, আরিয়ান কিছুক্ষন পরেই বলল,

‘ ভাই বড্ড বোরিং লাগছে জার্নিটা। পরিবেশ কেমন থমথমে একটা গান তো প্লে কর। ‘

আরিয়ানের কথা শুনে, আরহাম গান ছেড়ে দেয়,

কিছু কথার পিঠে কথা

তুমি ছুঁয়ে দিলেই মুখরতা

হাসি বিনিময় চোখে চোখে

মনে মনে রয় ব্যাকুলতা

আমায় ডেকো একা বিকেলে

কখনো কোনো ব্যথা পেলে

আমায় রেখো প্রিয় প্রহরে

যখনই মন ক্যামন করে

কোনো এক রূপকথার জগতে

তুমি তো এসেছো আমারই হতে

কোনো এক রূপকথার জগতে

তুমি চিরসাথী আমার, জীবনের এই পথে।।

মুহুর্তেই পরিবেশটা মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে।

গানটা শুনে মেহেভীন আরহামে দিকে তাকাতেই,আরহাম চমৎকার মুচকি হাঁসি উপহার দেয়। মেহেভীনও তালি মিলিয়ে হাঁসে। যা নজর এরায় না অভ্রের।

চলবে…. 😊
[নীচে আমি একটা পেজের লিংক দিয়েছি আপ্নারা চাইলে ঘুড়ে আসতে পারেন 😊✨]

[গল্পটা হয়তো আপনাদের ভালো লাগছে না 😗,তাই তাড়াতাড়ি ইতি টেনে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আজকে সত্যি লেখার মুড ছিলো না। তবুও আপনাদের জন্যে দিলাম।আজকের পর্বে এমনভাবে কাটাছেঁড়া করেছি,তা ধারণার বাইরে। আসলে এমন কিছু নেগেটিভ কমেন্ট চোখে পড়ে, তা দেখলেই 😊মুড নষ্ট হয়ে যায় লেখার।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here