অতুলনীয়া #পর্বঃ২৩(ধামাকা) #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
121

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ২৩(ধামাকা)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমাকে আজ আবার কোর্টে তোলা হয়েছে। আজকের দিনে সবাই ভেবে নিয়েছে ফাতেমাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। কারণ তার নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার তেমন আশা এখন আর কেউ দেখছে না। এদিকে কোর্টের সময় ঘনিয়ে আসার পরেও ফাতেমার উকিল প্রত্যুষ চৌধুরী এখনো উপস্থিত হয় নি৷ এই নিয়ে সবাই বলাবলি করছিল। শ্রেয়া বসে বসে ফাতেমার জন্য প্রার্থনা করছিল। মোহনা, ফাহিমও ফারিয়াকে আগলে বসেছিল। মোহনা ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে,
“মিস্টার প্রত্যুষ চৌধুরী এখনো আসছেন না কেন? এই কেইসটা জেতার সম্ভাবনা এমনিতেই কম। এখন যদি উনি না আসেন তাহলে তো আমরা নিশ্চিত ভাবে হেরে যাব।”

ফাহিম নিজেও কিছু বুঝতে পারছিল না। তার ভরসা ছিল প্রত্যুষের উপর। যে একমাত্র এই লোকটাই পারবে তার বোনকে বাঁচাতে। কিন্তু সেই আশাও বিফলে চলে গেল হয়তো। ফাহিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। নিজের পাশে বসা ফারিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এদিকে শ্রেয়া প্রত্যুষকে কল করে যাচ্ছিল কিন্তু সে ফোন ধরছিল না। বিপরীত পক্ষের উকিল ইতিমধ্যেই বলে উঠলেন,
“আমার মনে হয় আসামী পক্ষের উকিল বুঝে গেছেন যে এই কেইসটা আর জেতা সম্ভব নয়। তাই আজ তিনি এখনো এখানে উপস্থিত হন নি। আমি মাননীয় জজ সাহেবের কাছে অনুরোধ করব যে মিস্টার সোহেল হোসেনের মৃত্যুর কেইসে তার প্রাক্তন স্ত্রী ফাতেমা যে জড়িত সেই প্রমাণ নিশ্চিত যেহেতু হয়েই গেছে তাই এবার তার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।”

ফাতেমা নির্লিপ্ত হয়ে সব শুনছিল। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যাইহোক না কেন সে সেটা মেনে নেবে। এজন্য কোন ধরনের প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছে না।

এমন সময় হঠাৎ করেই আদালতে উপস্থিত হলো প্রত্যুষ, নুহাশ এবং তাদের সহিত তারা এনেছে সোহেলকে। কোর্টে উপস্থিত সবাই অবাক। এমনকি ফাতেমাও সোহেলকে জীবিত দেখে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো!

৪৫.
হঠাৎ করেই যে কেইসের মোড় এভাবে ৩৬০° ঘুরে যাবে সেটা হয়তোবা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি। সোহেলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। সোহেলকে জীবিত দেখে সবাই ভীষণ অবাক এমনকি জজ সাহেব নিজেও। জজ সাহেব নিজের বিস্ময় কাটিয়ে বলে ওঠেন,
“কম দিন তো হলো না এই প্রফেশনে আছি। কিন্তু এমন কেইস কখনো দেখিনি যে, যে ভিকটিম এভাবে বেঁচে ফিরে। যাইহোক, আপনি নিজের মুখে নিজের সব সুকীর্তি স্বীকার করুন মিস্টার সোহেল হোসেন।”

সোহেল একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“ফাতেমার কারণে আমাকে এবং আমার বর্তমান স্ত্রী নয়নাকে জেলে যেতে হয়েছে এজন্য আমাদের দুজনেরই রাগ ছিল ওর উপর। আমি জেল থেকে জামিন পাওয়ার পরই নয়নার সাথে আমার যোগাযোগ হয়। জেলে গিয়ে আমি ওর সাথে কথা বলি। সেই সময় ও আর আমি দুজনই একমত হই যে, ফাতেমাকে যেভাবেই হোক শায়েস্তা করতে হবে। ওর উপর প্রতিশোধ করতে হবে। ও যেহেতু আমাদের জেলের ভাত খাইয়েছে এজন্য আমরাও ওকে জেলের ভাত খাওয়ানোর পরিকল্পনা করি। একদিন রাতে নয়না জেল থেকে পালিয়ে আসে৷ আমি সেদিন বার থেকে বের হচ্ছিলাম। এগুলো সব আমাদের সাজানো নাটক ছিল। নয়না মিছি মিছি আমায় ফলো করে। তারপর একটা নকল ছু*রি দিয়ে আমার উপর হামলা করে। আর একটা ক্যামেরায় সেটা রেকর্ড হয়ে যায় যে কেউ আমার উপর হামলা করছে। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমি আর নয়না মিলে সেদিন রাতে রাস্তার এক পাগলকে হ**ত্যা করি। তারপর আমার সব পোশাক-আশাক তাকে পড়িয়ে দেই, নিজের ফোন, এনআইডি কার্ড সব ওর পকেটে রাখি এবং সর্বশেষ ওর মুখ থেতলে দেই। কিছুদিন থেকেই আমি এমন একজনকে খুঁজছিলাম, যার বয়স এবং উচ্চতা আমার মতোই। আর ঐ পাগলটার সাথে সেটা সম্পূর্ণভাবে মিলে যায়। এরপর আমি ঐ নকল ভিডিও ক্লিপটা বানিয়ে নয়নার মাধ্যমে পুলিশে হস্তান্তর করি। আর নিজে আত্মগোপনে চলে যাই।”

জজ সাহেব বলেন,
“তাহলে ফরেসনিক রিপোর্টে কিভাবে প্রমাণিত হলো যে ওটা আপনার ডেড বডি?”

সোহেলঃসবই টাকার খেলা।

জজ সাহেব খুব রেগে গেলেন। আর বললেন,
“আমি এটা দেখে ভীষণ অবাক হচ্ছি যে, আজকাল আইন ব্যবস্থাকে কিভাবে টাকা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ক’টা টাকার বিনিময়ে যদি আইনের লোকরা এভাবে বিক্রি হয়ে যান তাহলে তো কিছু করার থাকছে না। আমি ফরেসনিক ল্যাবের সাথে জড়িত সব মানুষকে কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির ব্যবস্থা চাইছি। সোহেল হোসেন এবং নয়না মির্জাকে খু**নের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করছি এবং ফাতেমা খাতুনকে বেকসুর খালাস করছি।”

ফাতেমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। শ্রেয়া, ফাহিম, মোহনা, প্রত্যুষ চৌধুরী, নুহাশ খন্দকার সবাই ভীষণ খুশি হয়৷ ফারিয়া দৌড়ে এসে ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরে। শেষপর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়।

৪৬.
নেহা মির্জা কোর্টের বাইরে থেকে ফিরে আসে। সবকিছু যখন প্রমাণ হয়েই গেছে তখন আর তার কোর্টে গিয়ে কোন কাজ নেই৷ নেহা কোর্টের বাইরে আসতেই তার ফোনে কল আসে। নেহা বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে কেউ একজন বলে ওঠেন,
“তোমাকে যা করতে বলেছিলাম করেছ তো? ফাতেমার হয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে ওকে বের করে এনেছ তো?”

নেহা মির্জা বলে ওঠে,
“না, কারণ সেটার কোন প্রয়োজনই পড়ে নি। আমি কোর্টে পৌঁছানোর আগেই প্রত্যুষ চৌধুরী আর নুহাশ খন্দকার মিলে ফাতেমাকে নিরপরাধ প্রমাণ করে ফেলেছে। সোহেল এবং নয়নার সব কীর্তিও জানাজানি হয়ে গেছে। কোর্ট ওদের শাস্তি দিয়েছে। ফাতেমাও মুক্তি পেয়েছে।”

আগন্তুক হেসে বলে,
“মুক্তি আর পেল কই? একটা সমস্যা মুক্তি পেয়েছে কেবল। আকাশ থেকে পড়ে খেঁজুর গাছে আটকানোর কথাটা শুনেছ? ঐ ফাতেমার সাথে তাই হবে।”

নেহাঃতোমার যা করার করো। আমার পেমেন্টটা দিয়ে দিও।

“সেটা তো অবশ্যই দিবো। তোমার মতো কাজের লোককে পেমেন্ট না দিলে চলে। তবে তার আগে তোমায় আরেকটা দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

“কি দায়িত্ব?”

“ঐ ফাতেমার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করো। ওর ভরসা জিতে নেওয়ার চেষ্টা করো। আর এরজন্য যা প্রয়োজনীয় তাই করো। আর তারপর..”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। নেহা মির্জা বলে,
“তারপর কি সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। এটাই তো প্রথম নয়। এর আগে তোমার হয়ে আরো কত কাজ যে করেছি।”

“আশা করি, আগের বারের গুলোর মতো এই কাজটাও ভালো ভাবে উতড়ে দেবে। মনে রেখো, এটা কিন্তু আমি তোমায় শেষ সুযোগ দিয়েছি। যদি এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে না পারো তাহলে মনে রেখো তোমায় আমি বাঁচিয়ে রাখবো।”

“পারব! আমি কোন ভুলচুক করব না।”

“দ্যাটস গুড।”

বলেই সে কল রেখে দেয়। ফাতেমার একটা বড় ছবি টাঙানো সামনের দেয়ালে। সেই ছবিটায় হাত বুলিয়ে বলে,
“খুব শীঘ্রই আমাদের দুজনের দেখা হচ্ছে ফাতেমা!”


ফাতেমা আজ মুক্তি পেয়ে আবার তার বাড়িতে ফিরেছে। মোহনা এই খুশিতে ফাতেমার পছন্দমতো সব রান্না বসিয়েছে। ফাহিমও উৎফুল্ল নিজের বোনের ফিরে আসায়। আর ফারিয়া তো এতদিন পর নিজের মাকে ফিরে পেয়ে তার কোল থেকে আর নামতেই চাচ্ছে না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে নিজের মাকে। যেন ছেড়ে দিলেই আবার পালিয়ে যাবে।

শ্রেয়া, শাবানা বেগম ও প্রত্যুষও আজ এসেছে। শাবানা বেগম তো ফাতেমাকে বলছেন,
“তুমি ফিরে আসায় আমি অনেক খুশি হয়েছি মা। এতদিন আল্লাহর দরবারে কত প্রার্থনা করেছি যেন তুমি বেকসুর খালাশ পাও। আজ আমার সেই প্রার্থনা পূরণ হয়েছে।”

এরমধ্যে হঠাৎ নুহাশ খন্দকার চলে আসেন সেখানে। সে এসেই ফাতেমার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পেরে আমিও খুশি। যদি আমার কারণে আপনার বিনা অপরাধে জেল হয়ে যেত তাহলে আমি নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারতাম না।”

ফাতেমা মৃদু হেসে বলে,
“আপনি যা করেছেন সবই ছিল আপনার দায়িত্বের খাতিরে। কিন্তু আমার সৃষ্টিকর্তার উপর ঠিকই বিশ্বাস ছিলাম। আমি জানতাম আল্লাহ তার মাসুম বান্দার কোন ক্ষতি হতে দেবেন না। আর দেখুন, ঠিক তাই হয়েছে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here