#অতুলনীয়া
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাতেমা বাড়িতে এসে ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেল। নয়না যখন একবার জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে তখন সে এখন যেকোন মূল্যেই তার এবং তার পরিবারের মানুষদের কোন না কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। ফাতেমার নিজেকে নিয়ে তেমন কোন চিন্তাই নেই। কারণ এমনিতেও সে নিজের জীবনের মায়া করে না।
কিন্তু আসল কাহিনি অন্য, সে ভয় পাচ্ছে তার মেয়ের না কোন ক্ষতি করে দেয় নয়না। ফাতেমা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। যদিওবা নুহাশ খন্দকার বলেছে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে তবুও ফাতেমা কোন ভরসা পাচ্ছে না। ফাতেমা নয়নাকে খুব ভালো ভাবেই চেনে। তার ভয় নয়না তার বা তার মেয়ের কোন ক্ষতি করার জন্য বদ্ধ পরিকর। নয়না মোনাজাতে বসে আল্লাহর কাছে নিজের মেয়ের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতে থাকে। অতঃপর ঘুমন্ত ফারিয়াকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমি তোর কোন ক্ষতি হতে দেব না নয়না। নিজের বুকের সাথে আগলে রাখবো সবসময়। আমার যা হবার হোক কিন্তু নয়নাকে আমি আমার মেয়ের গায়ে একটা হাতও তুলতে দেব না। ওর গায়ে আমি ফুলের টোকাও লাগতে দিব না। এর আগেও মাতৃশক্তির কাছে তোকে হেরে যেতে হয়েছে এবং আবারও তোকে হারতে হবেই। এবার এক মায়ের শক্তির কাছে তুই পরাজিত হবি। আমি আমার মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবোই।”
পরদিন সকালে ফাতেমা ফারিয়াকে স্কুলে যেতে দেয়না। তার মনে ভয় ভীষণ ভাবে চেপে বসেছে। তার মনে হচ্ছে ফারিয়াকে দূরে পাঠালেই নয়না এর সদ্ব্যবহার করবে। মোহনা এসে ফাতেমাকে বলেছে,
“এভাবে কয়দিন চলা যাবে ফাতেমা?”
“যতদিন না পর্যন্ত পুলিশ নয়নাকে গ্রেফতার করছে ততদিন আমি ওকে নিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে পারব না ভাবি৷ তুমি তো জানোই ও আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ওকে হারালে আমি যে একদম শেষ হয়ে যাব।”
“আমি বুঝছি পারছি ফাতেমা। তুমি চিন্তা করো না। দেখবা সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। নয়না খুব শীঘ্রই ধরা পড়বে।”
৫১.
নয়না নিজেকে সম্পূর্ণ নেকাবে আড়াল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরময়। বোরকার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে বন্দুকের মতো মারণঘাতী অস্ত্র। নয়না নিজের কাছে বদ্ধপ্রতিজ্ঞ সে ফাতেমার বড় কোন সর্বনাশ করে তবেই দম নেবে। ফাতেমার জন্য তার পুরো জীবন তছনছ হয়ে গেছে৷ এবার সবকিছুর শেষ দেখে ছাড়বে নয়না। নয়না মনে মনে বলছে,
“তুই আমায় জেলে পাঠিয়েছিলি তাই না ফাতেমা? এবার আমি তোকে সোজা উপরে পাঠিয়ে দেব। যেভাবে তোর মা-বাবাকে পাঠিয়েছিলাম ঠিক সেভাবে তোকেও উপরে পাঠানোর বন্দবস্ত করব আমি। তোর এবার বিনাশ হবেই আমার হাতে। তোকে শেষ করে তোর রক্তে আমি গোসল করব। তারপর আমি শান্তি পাব। তোকে না মেরে আমি কিছুতেই শান্তি পাবো না কিছুতেই না।”
নয়না হঠাৎ নিজের চোখের সামনে ফাহিমকে দেখতে পেল। ফাহিম তার সামনেই একটা দোকান থেকে বাজার করছে। ফাহিমকে দেখে নয়না বলে উঠল,
“আরে,,এটা ফাতেমার ভাই মা…হ্যাঁ, তাইতো। ফাতেমার ভাই ফাহিম। এর মাধ্যমেই আমি ফাতেমার কাছে পৌঁছাতে পারব।”
নয়না মনে মনে পরিকল্পনা সাজিয়ে নেয়। ফাহিম বাজার করে দোকান থেকে বের হতেই নয়না তার কাছে গিয়ে নিজের গলার স্বর বদলে বলে,
“ভাইজান আমি গেরাম থাইকা ঢাকাত আসছি। এহানকার কোন ঠিকানা চিনি না। আমায় একটু এই ঠিকানায় পৌঁছে দেবেন?”
ফাহিম কাগজটা হাতে নিয়ে বলে,
“এই ঠিকানাটা তো এখান থেকে অনেক দূরে।”
“আমারে একটু কোন ভ্যান, রিক্সায় তুলে দিলেই আমি যাইতে পারুমু।”
ফাহিমের দয়া হলো। নিশ্চয়ই এই ভদ্র মহিলা কোন বড় বিপদের সম্মুখীন। এমন ভাবনা থেকেই ফাহিম সাহায্যের হাত বাড়াতে চাইল। আর নয়নার মুখে ফুটে উঠলো শয়তানী হাসি। ফাহিম নয়নাকে নিয়ে যাচ্ছিল কোন ভ্যানে তুলে দিতে। মাঝরাস্তায় একটা গলি আছে। গলিটা একদম ফাকা। নয়নার মুখে ক্রুর হাসি ফুটে উঠল। সে নিজের পার্স থেকে একটা ইঞ্জেকশন বের করলো। ফাহিমের অলক্ষ্যে সেটা পুশ করে দিলো ফাহিমের গলায়। ফাহিম সামান্য আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো৷ নয়নার মুখে অট্টহাসি ফুটে উঠল। সে দুজন লোককে ঠিক করে রেখেছিল। তারা এসে ফাহিমকে একটা গাড়িতে তুলে নেয়। নয়না বিশ্রী হেসে বলে,
“এবার তোকে আমার কাছে ধরা দিতেই হবে ফাতেমা। ধরা না দিয়ে যে তোর কাছে আর কোন উপায় নেই।”
৫২.
সময়ের বিবর্তনে এখন ঘড়ির কাটায় রাত ৯ টা। ফাহিম এখনো বাড়িতে ফেরে নি। ফোন করলে ফোনটাও রিসিভ করছে না। মোহনা চিন্তায় ঘরময় পায়চারি করছে। ফাতেমা সোফায় বসে আছে। মোহনা বলতে লাগল,
“তোমার ভাইয়া তো কখনো এত দেরি করে না ফাতেমা। সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যেই বাড়ি ফেরে আর এখন ৯ টা পেরিয়ে গেছে। আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। এদিকে ওর ফোনটাও রিসিভ করছে না।”
ফাতেমার নিজেরও ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল। তবুও সে ভাবিকে শান্তনা দিতে বলল,
“তুমি চিন্তা করো না ভাবি। ভাইয়া হয়তো কোন জরুরি কাজে আটকে গেছে। এক্ষুনি এসে পড়বে।”
এরমধ্যে ফাতেমার ফোনে একটা কল আসে। ফাতেমা ফোনটা হাতে নিয়েই হেসে বলে,
“এই দেখো ভাইয়া কল দিয়েছে। বলেছিলাম না চিন্তা না করতে, হয়তো কোন কাজে আটকে গেছে। আমি কথা বলছি।”
বলেই ফাতেমা ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলল। বিপরীত দিক থেকে নয়না বলে উঠলো,
“যদি তুই তোর ভাইকে বাঁচাতে চাস তাহলে এক্ষুনি মির্জা কোম্পানির পুরাতন ফ্যাক্টরিতে চলে আয়। আর ভুলেও চালাকি করে পুলিশ আনতে যাবি না, নাহলে তোর ভাইয়ের লা**শ ফেলে দেব।”
ফাতেমা ভয়ে আতকে ওঠে। মোহনা বলে,
“কি বললো তোমার ভাই?”
ফাতেমা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“ভাইয়া আমায় একটা যায়গায় ডাকল। বলল কিছু জরুরি কাজ আছে। তুমি ফারিয়াকে একটু সামলাও আমি আসছি।”
বলেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলো ফাতেমা। যাওয়ার সময় ভুলে নিজের ফোনটাও ফেলে গেল। মোহনা বলে উঠল,
“তোমার ফোনটা তো নিয়ে যাও।”
কিন্তু ফাতেমা তাড়াহুড়োয় তার কথা শুনলোই না। ফাতেমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাকে এখন যেকোন মূল্যেই ফাহিমকে বাঁচাতে হবে।
✨
নয়নার কথা মতো মির্জা কোম্পানির পুরাতন ফ্যাক্টরিতে পৌঁছে গেল ফাতেমা। নয়না সেখানে ফাতেমার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ফাতেমাকে দেখতেই এগিয়ে এসে বললো,
“আয়, আয় তোর জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম। তোর জন্য অনেক সুন্দর সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছি যে!”
ফাতেমা ক্ষেপে গিয়ে বললো,
“আমার ভাইয়া কোথায়?”
“তোর ভাইয়া একদম ঠিক আছে। কিন্তু তুই মোটেই ঠিক থাকবি না। আজই হবে তোর শেষ দিন। তোর জন্য আমায় জেলে যেতে হয়েছে, আমার সাজানো সাম্রাজ্য শেষ হয়েছে। আজ তার সবকিছুর হিসাব নেব। নিজের হাতে তোকে খু** করে তোর রক্তে গোসল করব।”
ফাতেমা বলে,
“আমার সাথে যা করার কর কিন্তু আমার ভাইকে ছেড়ে দে নয়না।”
নয়না অট্টহাসি দিয়ে বলে,
“না, না কাউকে ছাড়ব না আমি। তোর মা-বাবাকেই ছাড়িনি। নিজের হাতে তাদের গাড়ির নিচে পিষে মে*রেছিলাম। আর আজ তোকে আর তোর ভাইকে শেষ করব। এরপর তোর ভাবি আর তোর মেয়েকেও শেষ করব। তোর বংশ ধ্বংস করব।”
ফাতেমা অবিশ্বাসের সুরে বলে,
“আমার মা-বাবাকে তুই মে*রেছিলি নয়না? এত নিচ তুই?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ নিচ আমি অনেক নিচ।”
বলেই ফাতেমার মাথায় বন্দুক তাক করলো নয়না। পাগলের মতো হেসে বললো,
“কাউন্ট ডাউন শুরু কর। আজকেই তোর শেষ দিন ফাতেমা। শেষবারের মতো নিঃশ্বাস নিয়ে নে।”
ফাতেমা দুচোখ বন্ধ করল। তার চোখের সামনে ফারিয়ার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো। সাথে নিজের মা-বাবারও। তারা তো নয়নাকে নিজের মেয়ের মতো দেখতো অথচ নয়নাই কিনা তাদের!
ফাতেমা আর ভাবতে পারল না। জোরে একটা গুলির শব্দ হলো। আর ফাতেমা লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
[খারাপ আবহাওয়ার কারণে গত ২ দিন গল্প দিতে পারিনি। কারেন্ট ছিল না এতদিন। আজই এলো।]