#অর্ধ_নক্ষত্র ।৩৭।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
সকলের মধ্যমণি হচ্ছে ফাইজ,বিশেষ করে নারী ডাক্তার বিশেষজ্ঞদের।জাহরা তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে সকলের দিকে।
ফাইজ পাশ ফিরে চাইতেই নজরে পড়ে জাহরা,গলার থেকে স্টেথোস্কোপটি সরিয়ে হাতে নিয়ে নিলো সে।ফাইজ অনিমেষ চেয়ে দেখলো শুভ্র রঙ্গা জামা পরা মাথা অব্দি ঘোমটা টানা জাহরাকে,প্রথম দিনের জাহরার মত লাগছে আজ তাকে।জাহরা এসে দাড়ালো সকলের মাঝে।সকলে একসঙ্গে জাহরার দিকে চাইলে ফাইজ হেঁসে বলে,”আলাপ করুন ওনার সঙ্গে উনি হচ্ছেন ডক্টর রোমাইজা জাহরা।আমার জন্ম কালের শ্রেও শত্রু।নাহ থুক্কু বন্ধু।”
জাহরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলে,”কীসের বন্ধু?আমি আপনার বন্ধু’ও না শত্রুও না।”
“তাহলে তুমি কি আমার বিয়ে করা বউ?”
সকলে একসঙ্গে হেঁসে উঠলো,জাহরা কটমট চোখে চেয়ে বলল,”আমি আপনার বউ এই কথা কবে বললাম আমি?’
“বলো নি তবে বউ হতে আর কতদিন।”
জাহরা মুখ ভেংচে বলে,”ইশ আসছে রে,এইযে শুনুন আমার আপনাকে বিয়ে করার একদম শখ নাই।আপনিও তো বিয়ে করতে চান না আমায় তো এইসব কেনো বলছেন।”
ফাইজ উত্তরে ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসলো।সকলের মাঝে থেকে সরে এসে হাঁটা ধরলো সে পিছন ফিরে একবার বলল,”এখন যদি চাই তোমায় বিয়ে করতে, তবে কী তুমি রাজি মিস জাহরা?”
জাহরা দ্বিরুক্তি করে বলে,”অবশ্যই না।”
ফাইজ হাঁসলো সামনের দিকে ফিরে হাঁটা ধরলো।জাহরা কে সকল নারী ডাক্তার বিশেষজ্ঞরা চেপে ধরে বলে,”আপনার সঙ্গে ডক্টর ফাইজ এর সম্পর্ক আছে নাকি?”
জাহরা নিজেকে তাদের থেকে ছাড়িয়ে বলে,”নাহ ভাই এই বেটার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।এই ফা’জি’ল এর সঙ্গে সম্পর্ক করে এই বয়সে পাগল হতে চাই না আমি।”,বলে এক দৌড়ে সকলের সম্মুখ থেকে উদাহ হয়ে গেলো জাহরা।সকলে জাহরার দৌড় দেখে উচ্চ কণ্ঠে হেঁসে উঠলো।
..
মেহরা, জুনায়না আজ বড্ডো খুশি কিছুক্ষন পর পর সদ্য পাওয়া সংবাদ বের হচ্ছে।তা দেখেই তাদের এত খুশি।মেহরা,জুনায়না একে অপরের সঙ্গে কথায় ব্যাস্ত,দুজন হাসতে হাসতে থানার পেছনের সড়কটি পার হতে লাগলো।আচমকা কয়েকটি কালো রঙ্গা গাড়ি শাই শাই করে এগিয়ে আসতে লাগলো মেহরার দিকে,জুনায়না খেয়াল করলো সঙ্গে সঙ্গে মেহরার হাত ধরে এক টানে এক পাশে সরিয়ে আনলো মেহরাকে।
মেহরা ভড়কে গেলো,বুকে হাত রেখে বারকয়েক বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিলো, ঢোক গিলে অস্থির কণ্ঠে বলল,”কী হলো এমন করে টানলি কেন?”
জুনায়না এখনও তীক্ষ্ণ চোখে গাড়ির নাম্বার প্লেটের দিকে চেয়ে আছে,সেই পানেই চেয়ে বলে,”ওহ রোহান আর তার বাপের গাড়ি।তোকে গাড়ি চাপা দিত একটুর জন্য।শা’লা গাড়ি চালাতে পারে না নাকি।”
মেহরা খিলখিল করে হেঁসে উঠলো।জুনায়না ভ্রু কুঁচকে চাইলো সেই হাঁসির পানে।বলল,”তুই হাসছিস?”
মেহরা হাসতে হাসতে রাস্তার পাশে থাকা কাঠের বেঞ্চিতে বসে পড়লো বলল,”আরেহ পারলো না তো গাড়ি চাপা দিতে তবে এইবার দেখ এখন থেকে থানায় দিনে কীভাবে যাওয়া আসা হয় তাদের।খুব হাঁসি পাচ্ছেরে জুনায়না।”
এবার জুনায়নার ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে উঠলো।সে মেহরার হাঁসি মাখা মুখ দেখলো বিড়বিড় করলো,”উফ আরশু মিস করলি এই হাঁসি।”
শব্দ তুলে ফোন বেজে উঠলো,মেহরা পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করতে থাকা নামটি দেখলো,আজ নামটি দেখে সে বিরক্ত হলো না রিসিভ করলো।ঐপাশ থেকে আরশমান এর কণ্ঠে ভেসে এলো,”ওগো বউ কোথায় আপনি?কখন আসবেন?আপনাকে ছাড়া এই অবলার একা একা কিছুই ভালো লাগছে না।”
মেহরা পুনরায় খিলখিল করে হেসে ওঠে।ঐপাশ থেকে মেহরার হাঁসির ঝংকার যেনো শুনতে পায় আরশমান।সে আবেশে শুনতে থাকে সেই হাসির ঝংকার।মেহরা হাঁসির ইতি টেনে বলে,”আমি আসছি।”
বলে ফোন রাখলো মেহরা,জুনায়নার দিকে চেয়ে বলল,”চল জুনায়না।”
..
দরজার বাইরে থেকে তালা খুলে ফ্লাটে প্রবেশ করলো জুনায়না।সকালে যাওয়ার সময় ফ্লাট এর বাইরে থেকে তালা দিয়ে গিয়েছিল।কারণ ওই সময়টিতে আঞ্জুমান,প্রশান্ত দুইজনই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল।বসার ঘর পেরিয়ে যখন নিজের ঘরের দিকে যাবে তখন দেখতে পেলো প্রশান্ত আঞ্জুমানকে।প্রশান্ত খাবার টেবিলে বসে নিজের একেক ফাইল চেক করতে ব্যাস্ত আর পাশেই আঞ্জুমান প্রশান্তকে খাবারের এক এক লোকমা মুখ তুলে দিতে ব্যাস্ত।প্রশান্ত আঞ্জুমান এর দিকে চেয়ে বলে,”মামনি প্লিজ আর না,অনেক খাইয়েছো আমাকে। আর খেলে আমার পেট ফেটে যাবে।”
আঞ্জুমান দ্বিরুক্তি করে বলে,”সারাদিন কাজের মাঝে কতটুকু খাস তুই?নিজের অবস্থা দেখেছিস?বেশি বেশি করে খাওয়া দাওয়া করতে হবে যে।”
প্রশান্ত হাঁসলো।জুনায়না সেথায় দাড়িয়েই বলল,”আমি কী তোমাদের মাঝ আসতে পারি।”
প্রশান্ত,আঞ্জুমান এক সঙ্গে চাইলো জুনায়নার পানে।আঞ্জুমান কোমল কণ্ঠেই হেঁসে বলল,”তোকে আসতে বারণ করেছে কে?কিন্তু মা আগে ফ্রেশ হয়ে আয়।”
জুনায়না চোখে হাঁসলো,মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো জুনায়না।প্রশান্ত টেবিলের উপর থেকে সব ফাইল গুছিয়ে হাতে তুলে নিতে নিতে উঠে দাড়ালো বলল,”মামনি সত্যি আর না,আমি ঘরে যাচ্ছি।”
আঞ্জুমান হাঁসলো,এবার দ্বিরুক্তি করলো না।প্রশান্ত চলে গেলো আঞ্জুমান প্রশান্তির নিশ্বাস ত্যাগ করলো পাশের দেয়ালে ঝুলানো তার স্বামীর ছবির দিকে চাইলো মিষ্টি করে হাসলো বলল,”এইযে শুনছো!তোমার অদূরে মেয়েকে তার ভালোবাসার হাতে তুলে দিতে পেরেছি আমি।”
..
প্রশান্ত ঘরে এসে নিজের ফাইল গুলো গুছিয়ে রাখলো ঘরের এদিক ওদিক পায়চারি করতে শুরু করলো,জুনায়না কখন বেরিয়ে আসবে ওয়াশরুম থেকে।কিয়ৎক্ষণ সময় পর বেরিয়ে এলো জুনায়না,বেরিয়েই প্রশান্তকে এমন পায়চারি করতে দেখে হাঁসলো সে এগিয়ে গেলো পিছন থেকে হাতের তোয়ালে দিয়ে প্রশান্তর কোমড়ে জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে বলল,”কী হয়েছে আপনার?এমন পায়চারি করছেন কেনো?”
প্রশান্ত ফিরলো জুনায়নার দিকে সেও এক হাতে জড়িয়ে নিলো জুনায়নার কোমড়।জুনায়না মুচকি হাসলো বলল,”বেশি দুষ্টু হয়ে যাচ্ছেন না প্রশান্ত বাবু।”
“বউ যদি হয় এমন এক্সট্রিম লেভেল এর দুষ্টু তাহলে আমি কি করে ভদ্র থাকি বলুন তো জুনায়না রানি।”
এবারও হাসলো জুনায়না।তোয়ালে ছেড়ে দিয়ে দুই হাতে প্রশান্তর গলা জড়িয়ে নিলো বলল,”তো পায়চারি করার কারণটা বলুন তো?”
“তুই সকালে যাওয়ার আগে আমাকে কেনো ঘুম থেকে তুলিশ নি?”
“তুই যে খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলি প্রশান্ত।তোর ওই শান্তির ঘুম আমি কি করে নষ্ট করি।”
প্রশান্ত ছেড়ে দিলো জুনায়নার কোমড়,হাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো জুনায়নার হাত।বসার ঘরের দিকে হাটা ধরলো বলল,”তবুও ডাকা উচিত ছিলো।”
জুনায়না প্রতিউত্তর করলো না চেয়ে থাকলো প্রশান্তর
দিকে।প্রশান্ত খাবার টেবিলের সম্মুখে গিয়ে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো জুনায়নাকে বলল,”তুই বস আমি গিয়ে খাবার নিয়ে আসি।”
জুনায়না দ্বিরুক্তি করলো না তবে কণ্ঠের রেশ টেনে আবদার করলো,”আমাকে তোর নিজ হাতে খাইয়ে দিবি প্রশান্ত।”
.
প্রশান্ত মিষ্টি করে হাঁসলো উত্তর করলো না রান্না ঘরে গিয়ে প্লেট করে খাবার নিয়ে নিলো জুনায়নার জন্য অতঃপর অগ্রসর হলো টেবিলের দিকে।এসে জুনায়নার পাশের চেয়ারটিতে বসলো প্রশান্ত। পোলাওর সঙ্গে মাংসের ঝোল মেখে হাতে খাবার নিয়ে জুনায়নার মুখের সম্মুখে তুলে ধরলো খাবার,চোখে ইশারা করে বলল খেতে।জুনায়না খেয়ে নিলো।চোখের কোণে জল এসে জমাট বাধা আরম্ভ করেছে জুনায়নার।প্রশান্ত লক্ষ্য করলো তা।বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে মুছে দিলো জুনায়নার চোখের কোণে থাকা জল।জুনায়না মাথা নিচু করে হেঁসে ফেললো।
প্রশান্ত হেঁসে বলল,”ইন্সপেক্টর জুনায়নার চোখের কোণে জল বড্ডো বেমানান।”
জুনায়না মাথা তুলে চাইলো প্রশান্তর দিকে বলল,”এ তো খুশির অশ্রু।”
প্রশান্ত ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসলো।
..
সূর্য তার প্রকট তেজ কমিয়ে দিলো,আশপাশ মৃদু শীতল বাতাসে ছেয়ে দিলো।ছাদের একপাশে দাড়িয়ে কানের কাছে ফোন চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে নিজের রাগ গুলোকে দমিয়ে ওপর পাশের মানুষটির কথা শুনছে আরশমান।ওপর পাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে বিশ্রী স্বরে ভেসে এলো,”তেমন খারাপ না আবার তোর বউ।আজকে গাড়ির থেকাঁ দেখলাম তোর বউরে,মাল টা সুন্দর আছে।এই মাইয়াই তো আমাগো সাফওয়ান এর কলিজা আসিলো।এই কলিজা রেই কুকুর দিয়ে ছিঁড়ে খাওয়াবো দেখিস,আর যদি ভালো চাস তবে তোর বউরে আর বাড়াবাড়ি করতে মানা কর আরশমান।নাহয় তোমার বউয়ের সর্বনাশ হয়ে যাবে”
আরশমান গর্জে উঠল,”মুখ সামলে কথা বল।আমার বউয়ের দিকে একদম নজর দিবি না।নেই জবানে এইসব বলি তোর ওই জবান আমি টে’নে ছিঁ’ড়ে ফেলবো।”
ওইপাশে মানুষটি উচ্চ কন্ঠে হাসলো, তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলল,”কে কার কী করবে দেখবো নে।শুন বউয়ের সঙ্গে তোর ওই পুলিশ বান্ধবীরেও দেইখা রাখিস,আজকে ওর লাইগাই তোর বউরে গাড়ি চাপা দিতে পারলাম না।তোর বান্ধবী টাও কিন্তু দেখতে চান্দের টুকরা।তুই এত সুন্দর সুন্দর মাল কোথায় পাস রে আরশমান।”
আরশমান দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”তোর জবান শামলা।বয়স তো কম হলো না এক পা কবরে চলে গিয়েছে। মরার খুব শখ হয়েছে রে তোর।তোর ওই জমান কেটে আমি কুকুরকে খাওয়াবো।”,বলে ফোনের লাইন কেটে দিলো আরশমান।রেলিংয়ে দুই হাত রাখলো দৃঢ় ভাবে নিজের রাগকে দমানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকলো।
এতক্ষণ যাবত ফোনের ওইপাশে রোহনের বাবা ছিল।
.
মেহরা এসেই নিজের ঘরটি খালি পায়,একটি শাড়ি নিয়ে গোসলে চলে যায় সে।এখন সে আয়নার সম্মুখে দাড়িয়ে নিজের শাড়ির কুচির ভাঁজ গুলো ঠিক করে নিচ্ছে।
“আমাকে তো উন্মাদ বানিয়ে ফেলবেন মেহরা।”,দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে গালে হাত রেখে অনিমেষ চাহনিতে চেয়ে কথাটি বলল আরশমান।
মেহরা চমকিত নয়নে চাইলো আরশমান এর দিকে।লোকটি কেমন করে চেয়ে আছে তার দিকে।মেহরা খেয়াল করলো আরশমান কে,পরনে তার ঢিলেঢালা কালো রঙ্গা টি শার্ট,কালো রঙ্গা টাউজার,এলোমেলো চুল।নাকের ডগা সহ পুরো মুখখানা লাল বর্ণ ধারণ করে আছে।রেগে ছিলো নাকি আরশমান?
আরশমান অগ্রসর হলো মেহরার দিকে,সম্মুখে এসে দাঁড়ালো মেহরার।আচমকাই মেহরাকে দৃঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরলো আরশমান।মেহরা চমকালো,ভড়কে গেলো।আরশমান বিড়বিড় করে,”আপনার কিচ্ছুটি হতে দেবো না আমি।আপনাকে ছোঁয়ার সাধ্য কার আছে।”
মেহরা ভ্রু কুঁচকে ফেললো বলল,”কী বিড়বিড় করছেন আপনি?”
আরশমান এর দুই হাতের বাধন আরও দৃঢ় হলো পুনরায় বিড়বিড় করলো,”খুব ভালোবাসি আপনাকে।”
এবার যেনো মেহরা শুনতে পেলো,সে শুকনো ঢোক গিলে মৃদু কন্ঠে বলল,”আমাকে ছাড়ুন আরশমান।দরজা খোলা কেউ এসে এইভাবে দেখলে কি বলবে।”
আরশমানের একটুও নড়চড় হলো না সে এবার হাসলো বলল,”দেখলে দেখুক,আমি আমার বউকে আদর করছি।আমর প্রাণ,আমার সব কিছু সে।এইযে শুনুন আজ কী অন্যরা দেখে ফেলবে বলে ছেড়ে দিতে বলছেন?আপনার সমস্যা হচ্ছে না?”
“আপনার মুখ অমন লাল হয়ে কেনো আছে আরশমান?আপনি রেগে আছেন?কী হয়েছে?”
“এত প্রশ্ন একসঙ্গে?”,বলে ছেড়ে দিলো মেহরাকে আরশমান।কপালে অধর ছোঁয়ালো মেহরার।মেহরা আখিপল্লব বুজে নিলো আরশমান এর টি শার্টের হাতের দিকটা খামচে ধরলো।আরশমান নিঃশব্দে হাসলো, ঝুঁকে গিয়ে মেহরার কানের কাছে এসে বলল,”আমি এইটুকু ছুঁয়ে দিলেই এতটা লজ্জায় মিয়ে যান আপনি?তবে আরো একটু কাছ থেকে ছুঁয়ে দিলে তখন কী হবে মেহরা?”
মেহরার নিশ্বাস ভারী হয়ে এলো বন্ধ আখিপল্লব খুলে দূরে সরে এলো আরশমান থেকে, হাসফাঁস করে এদিক ওদিক চাইলো তোয়ালে খুঁজে অন্যদিকে চেয়ে ভেজা চুল মুছতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল মেহরা।আরশমান হাসলো মেহরার হাত থেকে ছো মেরে তোয়ালেটি নিয়ে নিলো বলল,”আমি মুছে দিচ্ছি।”
মেহরা দ্বিরুক্তি করে বলল,”নাহ্ দিন আমি পারবো।”
আরশমান শুনল না মেহরার চুল মুছে দিতে শুরু করলো।মেহরা চুপ হয়ে গেলো দাড়িয়ে রইলো।আরশমান হঠাৎ বলে উঠলো,”আচ্ছা মেহরা আপনার কাজ থেকে আবার কী ছুটি নেয়া যায় না?”
“আমার মনে হয়না ছুটি দেবে আমায়।আমি অসুস্থতার জন্য এক সপ্তাহর মত ছুটিতে ছিলাম।তার উপর বিয়ের জন্য একদিন যাওয়া হয়নি।”
“এত ভাবার প্রয়োজন নেই,আপনি চাইলে আমি ছুটি নিতে পারি আপনার।আমি ভাবছি আপনি,আমি,প্রশান্ত,জুনায়না,ফাইজ মিলে বান্দরবান থেকে ঘুরে আসি।সাথে চাইলে জাহরা কেও নিয়ে নিতে পারি।”
মেহরা সময় নিয়ে বলল,”এইখানের সব কিছু গুছিয়ে গেলে হয়না?”
আরশমান মেহরার মাথা মুছা শেষ করলো তোয়ালেটা পাশে রেখে দিয়ে মেহরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো কাধের এক পাশে মুখ গুঁজে বলল,”হম তা তো গুছিয়ে যাওয়া হবে।আমাদের আর কিছু করতে হবে না,যা করার সকল কিছু ম্যাজিস্ট্রেট উপর মহলের ব্যক্তি বর্গরাই করে ফেলবে।আমার সঙ্গে অনেকেরই কথা হয়েছে আমি তাদের রোহন এর অনেক গোপন জায়গার খোজ দিয়ে দিয়েছি।”
মেহরা শুনলো তবে সে যে কাপছে।আরশমান এর স্পর্শ গুলো কাপিয়ে তোলে তাকে।মেহরা আরশমান এর বাধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সরে আসল বলল,”ভালই হয়েছে।বান্দরবন যাওয়ার তারিখ ঠিক করা হলে আমাকে জানাবেন।”
আরশমান মিটমিট করে হাসলো।মেয়েটা কাছে টেনে নিলেই দূরে দূরে চলে যায়।
..
রাত হয়েছে জাহরা ধূসরের কেবিন থেকে বেরিয়ে করিডোর পেরিয়ে হাসপতালের প্রবেশ দ্বারের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো তখনই হুট করে পাশে চলে আসে ফাইজ।জাহরা ভড়কে যায় দুই থেকে তিন হাত দূরে গিয়ে দাড়িয়ে ধমকে বলে,”ভাই তুই এমন প্রেতাত্মা’দের
মত হুট হাত কোত্থেকে আসিস?”
ফাইজ হেঁসে বলে,”আরেহ তোমার টানে চলে আসি হুট হাট।”
জাহরা সন্দিহান কন্ঠে বলে,”এই আপনার কী হয়েছে বলুন তো?”
“আমার আবার কি হবে?আমি তো তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ!নাউজুবিল্লাহ!ভাই তুই আসলেই ঠিক আছিস তো?”
“নাহ্ আমি তো তোমার প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছি।”
জাহরা শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে,”জাহরা সূরা দুরুদ পড়,এই ফাজিলকে মনে হয় হাসপাতালের পিছনের জঙ্গলের পেত্নীটা চেপে ধরেছে।”,বলে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যায় জাহরা।
ফাইজ ভ্রু কুঁচকে জাহরার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,”এই কী হলো তোমার?”
জাহরা ভীতু কন্ঠে শুধায়,”কাছে আসবি না ভাই,দূরে যা।নাহয় জুতা পিটা করে তোর ঘাড়ে চেপে থাকা পেত্নী ছাড়িয়ে ফেলবো।”
ফাইজ এগিয়ে আসতে আসতে অবাক কণ্ঠে বলে,”আর ইউ ওকে?কিসব বলছো?”
জাহরা এইবার ভয়ের চোটে পায়ের থেকে চাপ্পল খুলে
ফাইজএর উপর ছুঁড়ে মারে।ফাইজ চাপ্পলটি এক হাতে ক্যাচ করে ফেলে চোখ বুজে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে চোখে খুলে ধমকে বলে ওঠে,”হোয়াট ইজ ইওর প্রবলেম জাহরা?”
জাহরা সটান হয়ে দাড়িয়ে যায়,উচ্চ কণ্ঠে বলে,”আমার না তোর সমস্যা ভাই।যেই ছেলে আমাকে দেখতে পারে না সে সকাল থেকে কিসব উদ্ভট কথা বলে যাচ্ছে।”,বলেই পাশে থাকা তার গাড়ির দরজা খুলে জাহরা গাড়িতে উঠে পড়ে।ড্রাইভার মামাকে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে।
ফাইজ হো হো করে হেঁসে ফেলে উচু কণ্ঠে বলে,”আরেহ জুতা টা নিয়ে তো যাও।”
জাহরা জানলা দিয়ে মুখ বের করে বলে,”ওই জুতা তুই রেখে দে ভাই আমার লাগবে না।”,বলে মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়।সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটি থেকে প্রস্থান করে জাহরার গাড়ি।
ফাইজ হেঁসে ফেলে জুতাটি দিকে চেয়ে থেকে বলে,”তোমার আমার এই জুতার সম্পর্ক কবে যে ঠিক হবে।এইবার সব কিছু অন্যরকম হবে জাহরা বেগম।”
#চলবে।
গত কাল গল্প দিতে পারিনি।আগেই বলেছিলাম একটু গ্যাপ যাবে আমার।তবে ২০০০+ শব্দে লিখেছি। ।রিচেক দেয়ার মত সময় পাইনি আমি।লিখেই পোস্ট দিচ্ছি।তাই বানানে ভুল হলে আমি দুঃখিত।