#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৩৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন বেড়িয়ে পড়তেই,সে অনুভব করে তার কাঁধে কারো উতপ্ত নিঃশ্বাস উপছে পড়ছে। মেহেভীন স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস কেমন উঠছে নামছে মেহেভীনের। পিছনে থাকা ব্যক্তিটি যে আর কেউ স্বরং আরহাম নিজেই। যে ভয়টা মেহেভীন পেয়েছিলো,তাই হলো। মেহেভীন ভয়ে ভয়ে আরহামের দিকে তাকিয়েই, সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ফেলে। আরহাম রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখুনি মেহেভীনকে কাঁচা চিবিয়ে ফেলবে। আরহাম মেহেভীনের হাতজোড়া শক্ত করে ধরে,রুমে নিয়ে যায়। মেহেভীন কাচুমাচু হয়ে বসে পড়ে বিছানায়। আরহাম মেহেভীনের বাহু চেপে ধরে শক্ত গলায় বলে,
‘ জাস্ট স্টুপিড মেয়ে তুমি একটা। এতোটা স্টুপিড মানুষ কীভাবে হয়! তুমি আমাকে ছেড়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে? এতোটা কঠোর তুমি কীভাবে হতে পারো মেহেভীন আন্সার মি? আন্সার মি ড্যাম ইট। ‘
আরহাম ধমকে কথাগুলো বলে টেবিলে জোড়ে ঘুষি মারে। মেহেভীন কেঁপে উঠে ভয়ে। আরিয়ানও রুমে ঢুকে আরহামের কথা শুনে, আরহামকে শান্ত করার জন্যে বলে, ‘ ভাই তুই মেহুর উপর এইভাবে রাগ করে থাকিস না প্লিয ভাই। দেখ মেহু হয়তো বুঝেনি। একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেই…’
আরহাম আরিয়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতেই,
আরিয়ান চুপ হয়ে যায়। সে খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছে। আরহাম এইবার ঠান্ডা গলায় বললো,
‘ ও বুঝি নি? সবকিছুই বুঝে বুঝেছিস এবং বুঝে বলেই আমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চায়। এই স্টুপিড মেয়েটা ভালো করেই জানে ওকে এবং বেবীকে আমি কতটা ভালোবাসি। ওরা আমার জীবনের ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবুও ইচ্ছে করে আমার থেকে সরে যেতে চাচ্ছে, আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে। ‘
‘ তাহলে আমার মতো স্টুপিড মেয়েকে ভালোবাসেন কেন? যে শুধু আপনাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না। ‘
‘ জাস্ট স্টপ ইট মেহেভীন। আর একটা কথা আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইনা? আর ইউ গট ইট?’
আরহামের কাঠিন্য গলায় বলা কথাগুলো শুনে,মেহেভীন মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।সে কি বা করবে? সে তো আরহামের ভালোই চেয়েছিলো বলে চলে যেতে চাইছিলো, যেন আরহাম ভালো থাকে,কিন্তু উল্টো আরহাম তাকে এইভাবে বকা দিলো। আরিয়ান আরহামের কাঁধে হাত রেখে বুঝায় যেন একটু শান্ত হয়, নাহলে মেহেভীন ভয় পেয়ে যাবে এমনিতেই মেয়েটার মনের উপর কম ঝড় বইছে না। আরহামও কোনরকম নিজের রাগটাকে সংযত করার চেষ্টা করে। আরিয়ানের ফোন বেজে উঠে। আরিয়ান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে, ফারিয়ার ফোন। আরিয়ান রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আরিয়ান নিজের রুমে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করার সঙ্গেই সঙ্গেই ফারিয়া অস্হির হয়ে বললো,
‘ বাড়ির অবস্হা কেমন? সব ঠিক আছে তো ডাক্তার সাহবে! ‘
‘ তেমন ভালো না। বিচ্ছিরি একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। ‘
আরিয়ান পর পর সব ঘটনাই খুলে বললো ফারিয়াকে। সবকিছু শুনে ফারিয়া বললো,
‘ আপনি চিন্তা করবেন না ডাক্তার সাহেব। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আরহাম ভাইয়া তো মেহেভীন আপুকে অনেক ভালোবাসে,দেখবেন ভাইয়া আপুকে ঠিক আগলে রাখবে। ‘
আরিয়ান ছোট্ট করে বলে,
‘ আমি শুধু চাই ভাইয়া এবং মেহু এক হয়ে যাক। আর কিছুই না। ‘
ফারিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহ ভরসা। ‘
ফারিয়া এবং আরিয়ান আরো কিছুক্ষন গল্প করলো। আরিয়ান খেয়াল করে দেখলো মেয়েটার সাথে কথা বললে তার মনটা হাল্কা হয়ে যায়।
এদিকে….
আরহাম মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনের হাতজোড়া ধরে নরম সুরে বলে,
‘ মেহেভীন তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে ছেড়ে বেবীকে নিয়ে দূরে চলে যাবে,তাহলে একদম ভূল ভাবছো। আমি তোমাকে নিজের থেকে কখনো দূরে যেতে দিবো না। তুমি চাইলেও না। একটা অনুরোধ রাখবে আমার? ‘
মেহেভীন অশ্রুসিক্ত চোখে আরহামের দিকে তাকাতেই, আরহাম মৃদ্যু হেসে জবাব দিয়ে বলে,
‘ আমার ভালোবাসার মানুষটির থেকে ভালোবাসা না পেলেও, আমি আমার ভালোবাসাকে কখনো নিজের থেকে আলাদা করতে দিবো না। তাই আমার কাছে ছোট্ট অনুরোধ। ভালোবাসতে হবে না আমায় আজীবন না হয় কষ্ট দিও তবুও আমার কাছে থেকো যেও আমি তোমায় রেখে দিবো আমার মনের গহীনে। ‘
আরহামের কথা শুনে মেহেভীন উঠে দাঁড়ায়। মানুষটার কথাগুলো শুনলেই,যে ভালোবাসার প্রতি তার বিশ্বাস উঠে গিয়েছে সেই বিশ্বাসটা যেন পুনরায় উজ্জীবিত হতে চায়। মেহেভীনের মস্তিষ্ক বার বার যেন বলছে ‘ মেহেভীন ভালোবাসা একটা ফাঁদ। যা আমাদের ধংশের দিকে ধাবিত করে।এই ফাঁদে আবারোও নিজেকে জড়িয়োও না তুমি। ‘
অন্যদিকে মন বার বার বলছে ‘ মেহেভীন সঠিক মানুষ বার বার জীবনে আসেনা। সে একবারই আসে। একবার যখন সে তোমার জীবনে চলে এসেছে তাকে আকড়ে ধরে রাখো, দেখবে ভালেবাসা সুন্দর। ‘
মেহেভীন যেন গোলক ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে। কার কথা শুনবে সে? মনের কথা নাকি মস্তিষ্কের কথা? মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
‘ চলুন এখন। ‘
‘ কোথায়? ‘
‘ যেখানে আমি নিয়ে যাবো। ‘
আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে আস্তে ধীরে নিয়ে যায়। ছাঁদে আসতেই, মেহেভীন এক প্রকার স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
________________
ইশরা বেগম ড্রইং রুমে বসে আছেন মাথা নিচু করে। তখনি অভ্র একপ্রকার ঢুলতে ঢুলতে তার মায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। ইশরা বেগম চমকে উঠেন ছেলেকে এই অবস্হায় দেখে। ইশরা বেগম অভ্রকে উঠিয়ে, নিজের পাশে সোফায় বসিয়ে বললেন,
‘ অভ্র! এইসব কি শুরু করেছো তুমি? তুমি জানো মায়রা আজ বাপের বাড়ি চলে গেছে। ‘
‘হুম জানি মা চলে গেছে। ‘
অভ্র মুখটা বেকিয়েই আস্তে করে জবাব দিলো। ছেলের থেকে এইরকম উত্তরে বিরক্তির রেশ ফুটে উঠলো ইশরা বেগমের কপালের ভাজে। তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন অভ্র ড্রিংক করেছে।ইশরা বেগম ছেলের গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললেন,
‘ অভ্র এইসব কি পাগলামি করছো? দেখো বাবা
মায়রা তোমাকে ভালোবাসে। মেহেভীনকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দাও। আমার কথাটা শুনো বাবা।’
অভ্র তার মায়ের থেকে সরিয়ে রুক্ষ গলায় বললো,
‘ কি কথা শুনবো আমি মা? আজ তোমার কথা শুনেই তো এতো কান্ড হয়ে গেলো। ভালোবেসে ফেললাম আমি মেহেভীনকে। আজ আমার জীবনের এই পরিনতির জন্যে তুমি দায়ী মা!’
‘ অভ্র..’
‘ প্লিস মা থামো তুমি। তুমি কী জানতে না? মেহেভীনের গর্ভে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে কি হলো মা জানতে? তাহলে কেন তাকে মেরে ফেলতে চাইছিলে তুমি? সে তো আমারই অংশ। সে তো ছোট্ট নিষ্পাপ। তার কি দোষ বলো? ‘
কথাটি বলেই অভ্র তার মদের বোতলটা সজোড়ে ফেলে দিলো,যা ভেঙ্গে বিকট শব্দের সৃষ্টি করলো।
ইশরা বেগম শক্ত মুখে বসে রইলেন। সে যেন এই মুহুর্তে অভ্রের সাথে কোনপ্রকার তর্কে জড়াতে চাইলেন না। অভ্র এইবার নিজের কন্ঠটা নরম করে, নিজের মায়ের কোলে মাথা রেখে বললো,
‘ মাগো ও মা! তুমি তো জানো মা। কখনো তোমার কথার অমান্য করি না। সব কথা শুনেছি তোমার। আজ একটা ছোট্ট আবদার রাখবে গো মা? আমার মেহেভীনকে এনে দাও না মা। ওগো মা শুনছো? আমার মেহেভীনকে এনে দাও। ‘
একটা ছোট্ট বাচ্ছা যখন তার পছন্দের খেলনার জন্যে যেমন তার মায়ের কাছে আবদার করে বসে, তেমনি অভ্র ও আজ মাতাল অবস্হায় তার মায়ের কাছে মেহেভীনকে চাইছে। ইশরা বেগম একেবারে হতভম্ব হয়ে যায় ছেলের এমন আবদারে। ছেলেটা কি তাহলে সত্যিই মেহেভীনকে ভালোবেসে ফেললো?
অভ্র কন্ঠটাকে কিছুটা বাচ্ছামো এনে বললো,
‘ আমি মেহেভীনকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। একটিবার মেহেভীনকে এনে দাও মা। আমি আর কিচ্ছু চাইনা। একটিবার আমি আর কিচ্ছু চাইনা মা।’
ইশরা বেগম নিজের ছেলের এই গভীর কষ্টেভরা আকুতি শুনে নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারলেন না। শক্ত করে চেপে ধরলেন নিজের ছেলেকে। এইরকম একটা পরিনতি সে কখনোই আশা করেননি।
অন্যদিকে,
মায়রা নিজের বাড়িতে ঢুকেই তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আদরের মেয়ের চোখের পানি দেখে মায়রার বাবা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মেয়ের কাছে হঠাৎ কান্নার কারণ জানতে চাইলে,মায়রা কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বলে তার বাবাকে। মায়রার বাবা মেয়ের এইরকম পরিনতির কথা শুনে,একপ্রকাত স্তব্ধ হয়ে পড়েন। আদুরের মেয়ের এতোটা কষ্টে আছে সে ভাবতেই পারছেন না।
মায়রা তার বাবাকে জড়িয়ে, কান্নার সুরে বলে,
‘ বাবা মেহেভীন আমার সব থেকে বড় পথের কাটা। ওর জন্যে অভ্র আমাকে নিজের থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমার সন্তানকে পর্যন্ত এখন সে মেনে নিতে নাখছ।’
মায়রার বাবা নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে, আদুরে কন্ঠে বললেন,
‘ ডোন্ট ক্রাই মাই প্রিন্সেস। তোমার বাবা আছেনা? সে সব ঠিক করে দিবে। তোমার পথের কাটাকে পারলে একেবারে উপড়ে ফেলে দিবে,তবুও তোমাকে অসুখি থাকতে দিবে না। ‘
……..
ছাদের পরিবেশটা নীরব এখন। চারদিকের মৃদ্যু বাতাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে আরহাম এবং মেহেভীমকে। আজ আকাশে পূর্নিমার চাঁদ উঠেছে। তার আলো দিয়ে উজ্জ্বল করে দিয়েছে গোটা পরিবেশটা। আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে দোলনায় বসে পড়ে। দুজন মিলে আজ চন্দ্রবিলাশ করবে। আরহাম তার ড্রইনিং এর খাতা ও পেন্সিল ও নিয়ে এসেছে। মেহেভীনকে উঁকিে মেরে দেখছে, আরহাম মেহেভীনকে আঁকছে। মেহেভীন ভ্রু কুচকে বলে,
‘ পৃথিবীতে এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস, অথচ শুধু আমাকেই আকেঁন আপনি। ‘
‘ ওইযে বলেছিলাম না? আমার চোখে আমার ভালোবাসার মানুষটিই সর্বশ্রেষ্ট সুন্দর। ‘
মেহেভীন আনমনে বললো,
‘ আপনি আর একটু আগে কেন এলেন না জীবনে আরহাম সাহেব? ‘
‘কিছু বললে? ‘
‘ মান মানে..আমরা সবসময় ভূল মানুষকেই কেন ভালোবাসি আরহাম সাহেব? আজ দেখুন না অভ্রের মতো ভূল মানুষকে ভালোবেসে আমার এই পরিনতি। ‘
আরহাম বুঝেছে মেহেভীনের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তাই বিষয়টি চেঞ্জ করে, তার ছোটবেলার কাহিনী শুনানো মেহেভীনকে। মেহেভীন ও খুব আনন্দের সাথে শুনতে লাগলো। একটা সময়ে মেহেভীন আরহামের কাঁধেই ঘুমিয়ে পড়লো। আরহাম তা দেখে মুচকি হেসে, পুনরায় মেহেভীনের ছবি আঁকতে শুরু করে দিলো।
চলবে…
[ রিচেক দেইনি। তাড়াহুড়ো করে দিলাম। তাই অনেক ভূল থাকতে পারে]