#তুমি_আছো_মনের_গহীনে
#পর্ব- ৩৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীনকে এইভাবে হুট করে উধাও হয়ে যেতে দেখে আরহামের ভিতরে ভয় ঢুকে যায়। সে দ্রুত নাঁচ বন্ধ করে দিয়ে, মেহেভীনকে খুঁজতে যাওয়ার জন্যে, পা বাড়াতে গেলে তা চোখ আটকে যায় সামনে থাকা শাড়ি পরিহিতা রমনীর দিকে। মেহেভীনকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রমনীরা তাদের মতো করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। মেহেভীন শাড়িটা কিছুটা তাদের মতো করেই কোমড়ে গুজে পড়েছে। চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। মুখে নেই কোন কৃত্রিম ম্যাকাপের প্রলেপ। তার ঠোটজোড়া জুড়ে রয়েছে হাল্কা লিপ্সটিপ। মেহেভীনের এমন রুপের স্নিগদ্ধতায় যেকোন পুরুষ ঘায়েল হতে প্রস্তুত। মেহেভীনকে দিকে আরহাম মেহেভীনের দিকে এগিয়ে আসে। মেহেভীন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। মেহেভীন ভেবেছে আরহাম হয়তো তার প্রশংসা করবে, কিন্তু আরহাম তার সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে, বাজখাই গলায় বললো,
‘ এইরকম স্টুপিডের মতো শাড়ি পড়ে আছো কেন? এমনিতেই সারাক্ষন হোচট খেতে থাকো। তার মধ্যে এই ভারি শাড়িতে তো বার বার হোচট খাবে। তুমি কী এইসব শাড়ি ক্যারি করতে পারো? স্টুপিড মেয়ে একটা। ‘
মেহেভীনের এখন রাগে কান্না আসছে। কই ভেবেছিলো, সে শাড়ি পড়েছে বলে লোকটা তার একটু প্রশংসা করবে, তা না করে সে বকেই যাচ্ছে। আরিয়ান ও ফারিয়া মেহেভীন এবং আরহামের কাছে আসে। আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘ কি হলো ভাই? তুমি আমার কিউটি ভাবিটাকে এইভাবে বকছো কেন? দেখছো না? শাড়িতে আমার কিউটি ভাবিটাকে কতটা কিউট লাগছে। তুমি আমার ভাবির প্রশংসা না করে, উল্টো বকছো?’
ফারিয়াও আরিয়ানের কথায় সায় দিয়ে বলে,
‘ সত্যিই তো আজ মেহেভীন আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে। ‘
মেহেভীন আগুনরুপী রুপ ধারণ করে, ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
‘ না উনি আমার প্রশংসা করবে কেন? আমি তো শাড়ি ক্যারিই করতে পারি না। ওই মেয়েগুলো আছেনা? যাদের সাথে উনি নাঁচানাঁচি করছিলেন? তারাই তো শাড়ি ভালো করে ক্যারি করতে পারে। আমি তো কিছুই পারি না। আমি গেলাম। উনি বরং ওই মেয়েগুলোর সাথেই নাঁচতে থাকুক। ‘
মেহেভীন কিছুটা দূরে গিয়ে বসে পড়লো। রাগে সে একেবারে আগুনরুপী রুপ ধারন করে আছে। আরিয়ান ও ফারিয়াও মেহেভীনের সাথে গিয়ে বসে পড়ে। মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে, আরহাম ঠোটের কোণে মুচকি হাঁসি ফুটিয়ে তুলে। সে মেহেভীনকে কিছুটা রাগানোর জন্যেই বকাবকি করেছে। আরহামের কেন যেন মেহেভীনের রাগান্বিত চেহারাটা বেশ লাগছিলো।আরহামের চোখে মেহেভীনের জন্যে একরাশ মুগ্ধতা ধরা দিচ্ছে। মেহেভীন হয়তো জানে না আরহাম ছাড়াও আরেকজন মেহেভীনের দিকে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। সে আর কেউ নয় অভ্র।
অভ্রের কাছে শাড়ি পরিহিতা মেহেভীনকে কোন হুরপরীর থেকে কম সুন্দর লাগছে না। তার মেহুর চোখ-মুখে আজ কতটা মায়া। ভেবেই অভ্র মৃদ্যু হাসে। তা মায়রার নজরে এড়ায় না। তবুও মায়রা চুপ থাকে। আজ-কাল তার কিছুই বলতে ইচ্ছে করেনা।
______
আরিয়ান মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে বললো,
‘ কিছু পুড়ছে মনে হয়? ‘
মেহেভীন আরিয়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘ না মানে.. তুই যেভাবে রাগ করে আছিস। দেখে মনে হচ্ছে তুই চেয়েছিলিস ভাইয়া যেন তোর একটু প্রশংসা করুক। তার মানে ভাইয়ের প্রতি তোরও কিছু এক্সপেকটেশন ছিলো তাইনা? ‘
আরিয়ান কথাটি বলেই উঠে চলে যায়। মেহেভীন গভীর চিন্তায় ঢুবে যায়। সত্যিই তো আরহাম তার প্রশংসা করেনি বলে সে এতো রেগে যাচ্ছে কেন? তার মানে কি সে ও চাইছিলো আরহাম যেন তার প্রশংসা করুক। সবকিছু মিলেই এইটাই দাঁড়ায় মেহেভীনেরও আরহামের প্রতি আশা তৈরি হচ্ছে। তাহলে কী মেহেভীনের মনে আরহামের জন্যে যে সুপ্ত অনুভুতি ছিলো, তা কী দিনের পর দিন বেড়ে উঠছে?
মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, তার ফোনে আবারো মেসেজ আস সেই অচেনা নাম্বার থেকে। তাতে লিখা,
‘ওগো রমনী! শাড়ির আঁচলটা নিয়ে নিজের মুখশ্রীটা এইবার একটু ঢেকে রাখো। তুমি কী জানো? তোমার এই আগুনরুপী রুপ আমার ভিতরটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রেয়সী তোমার এই আগুনরুপী রুপে যে, আমি শতবার মরে যাই। তুমি জানো কি? ‘
মেহেভীন চমকে উঠে। তার মানে যে চিঠিপ্রেরক তাকে চিঠি লিখে পাঠাতে সে এখানেই আছে? কিন্তু কোথায় সে?
_________
রাইসা সবে মাত্র দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরেই সে ডক্টর জেসমিনের চেম্বারে এসেছে। ডক্টর জেসমিনেই তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কেননা তার কাছে মেহেভীনের প্রেগন্যান্সির দুটো রিপোর্ট ছিলো, একটি তিনি মেহেভীনকে দিয়ে দিয়েছিলো। অপরটি তিনি মেহেভীনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে রাইসার কাছে রিপোর্টটি দিয়ে দেন।কারন তিনি কিছুতেই মেহেভীনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।তিনি খুব ভালো করেই রাইসাকে চিনে। তিনি এইটাও জানেন রাইসার সাথে মেহেভীনের ভালো সম্পর্ক আছে। তাই তিনি রাইসার কাছে রিপোর্টটা দিয়ে দেয়। রিপোর্টটা দেখে রাইসার আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে, মেহেভীনের গর্ভে অভ্রের সন্তান বেড়ে উঠছে। কেননা রিপোর্টটা মেহেভীন এবং অভ্রের ডিভোর্সের দুইদিন আগের। তখন মেহেভীন দুই মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো। রাইসা চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসে। সে সিদ্ধান্ত নেয় সে সবকিছুই অভ্রকে জানাবে।
________
নভেম্বর মাসেই শীত প্রায় চলে এসেছে বলতে গেলে। এখুনি এই শীতে সবার কাঁপাকাঁপির অবস্হা। এখানকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা বড় বড় কাঠ
দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে,শীতটাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যে। আগুনের পাশেই সবাই নাঁচ-গান করছে। বেশ ভালো পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছে। পরিবেশটাকে আরো ভালো করার জন্যে,আরিয়ান আরহামকে গান গাইতে বলে। আরিয়ানের সাথে বাকি সবাইও আরহামকে অনুরোধ করে। তাই আরহাম গান গাইতে রাজি হয়ে যায়। মেহেভীন চিঠি প্রেরকে খুঁজার উদ্দেশ্য পা বাড়াতে নিলে, আরহাম পিছন থেকে মেহেভীনের হাত ধরে নিজের সাথে হাল্কা করে মিশিয়ে গাইতে থাকে,
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।
হ্যাঁ প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
মেহেভীন ও নিচের দিকে তাকিয়ে তাল মিলিয়ে গাইতে থাকে,
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে।
পথ চেয়ে রই, দেরি করোনা যতই
আর ভোলা যাবেনা জীবনে কখনোই,
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
মেহেভীন ও আরহাম একে-অপরের চোখের দিকে নিষ্পলকহীনভাবে তাকিয়ে গান গাইতে থাকে। রুশা আরহাম ও মেহেভীনের এতোটা কাছে দেখে কষ্ট পায়। সে দুঃখী মনে অনুষ্টান ছেড়ে চলে যেতে নিলে, তাহসান তার হাতজোড়া শক্ত করে চেপে চোখের ইশারায় জানান দেয় রুশা যেন শক্ত থাকে। তাহসান সবসময়ই তার পাশে রয়েছে। রুশা যায়না বরং খানিক্টা ভরসা পেয়, তাহসানের পাশে বসে থাকে।
ফারিয়াও গানটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। আরিয়ান ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাঁসে। অভ্র দুজনকে এইভাবে এতোটা কাছে দেখে, নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারেনা। সে আড়ালে চলে আসে। তার বুক ফেটে কান্না আসছে। সে নিজেকে শক্ত রাখতে চাইলেও সে তা পারছে না।সে বুঝতে পারছে মিথ্যে ভালেবাসার অভিনয় করতে গিয়ে,নিজের অজান্তেই সে অনেকটা ভালেবেসে ফেলেছে মেহেভীন। কিন্তু সে তার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে গিয়ে,বড্ড দেরী করে ফেলেছে। কেননা মেহেভীন তো এখন অন্য কারো।
____
আরহাম ও মেহেভীন একে-অপরের চোখে যেন হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে তালির শব্দে তাদের ঘোর ভেঙ্গে যায়। সবাই তাদের গানকে ভিষনভাবে উপভোগ করছে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে দৌড়ে চলে যায় কিছুটা দূরে। মেহেভীনকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে সবাই কিছুটা অবাক! আরিয়ানও মেহেভীনের পিছন পিছন চলে যায়। মেহেভীন দৌড়ে এসে ঢুকরে কেঁদে উঠে। এক মুহুর্তের জন্যে সে আরহামের চোখে হারিয়ে গিয়েছিলো। আরহামের প্রতি তার যেই অনুভুতি রয়েছে, তা ভয়ংকর পরিনতির সৃষ্টি করতে পারে, যা কিছুতেই চায় না মেহেভীন।
‘ আজ না হয় পালিয়ে এলি সবার থেকে,কিন্তু কাল? পরশু? আর কতদিন এইভাবে নিজের অনুভুতির থেকে পালাবি মেহু? ‘
আরিয়ানের কথা শুনে, মেহেভীন কান্নাভেজা গলায় বলে,
‘ তুই জানিস আরিয়ান। ভালোবাসা আমার কাছে ভূল ছাড়া আর কিছুই না। একবার ভালোবেসে আমি ঠকে কষ্ট পেয়েছি, সেই কষ্ট আমি দ্বিতীয়বার পেতে চাইনা। আমার পক্ষে দ্বিতীয়বার ভালোবাসা সম্ভব না। ‘
আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘ তোকে কিছু বুঝাতে চাইনা আমি৷ শুধু এইটুকুই বলবো লাইফে সঠিক মানুষটা চলে এলে, মানুষ যতই তার অনুভুতির থেকে পালানোর চেষ্টা করুক না কেন,সে দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে বাধ্য। সত্যি বলছি লাইফে একজন সঠিক ভালোবাসার মানুষ খুব দরকার। তাহলেই বুঝবি ভালোবাসা মন্দ নয়।’
আরিয়ান কথাটি বলেই প্রস্হান করে। মেহেভীন কথাগুলো শুনে চুপ হয়ে পড়ে। তখনি সে অনুভব করে কেউ তার চোখ………
চলবে…কী?
[সবাই নীচের কথা পড়ুন প্লিয]
[ অনেক কষ্টে পার্টটা লিখিছি। কেউ ছোট বলবেনই না। আজ আমার ডাবল কষ্ট হয়েছে। এই পার্টটা দুইবার লিখতে হলো আমাকে। প্রথমবার লিখার পরে, কপি করতে গিয়ে ডিলেট হয়ে যায়। সত্যি আমার প্রচন্ড কান্না পেয়েছিলো। এতো কষ্ট করার পরেও ডিলেট হয়ে গেলো। ভেবেছিলাম আজকে দিবোই না। তবুও আপনাদের জন্যে লিখলাম 🙂। জানিনা কি হাবিজাবি লিখছি 😥আসলে প্রথমবার ভালো করেই লিখিছিলাম,এখন দ্বিতীয়বার লিখাতে কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। সবাই ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন]