তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 #পর্ব- ৫২ #Jannatul_ferfosi_rimi

0
249

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৫২
#Jannatul_ferfosi_rimi (লেখিকা)
গর্ভবতী অবস্হায় ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে অভ্রের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে মায়রা। সে আজ নিজের মনকে হাজারোবার ক্ষতবিক্ষত করে বুঝিয়েছে অভ্র তার নয়। অভ্র শুধু মেহেভীনকেই ভালোবাসে। তাহলে মিছে মিছে বিয়ের মতো সম্পর্কটা বয়ে চলার কোন মানেই হয়না। মায়রা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে অভ্রের কাছে তার কিংবা তার সন্তানের কোন মূল্যই নেই। তাদের বিয়েটাও এখন অভ্রের কাছে বোঝা মাত্র। তাই মায়রা উকিলের সাথে কথা বলে তাদের ডিভোর্স পেপারটা তৈরি করিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু অভ্র সাইন করে দিলেই ডিভোর্সটা হয়ে যাবে। অভ্র আজীবনের জন্যে
মায়রার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। মায়রা একবার ভাবলো ছুটে গিয়ে অভ্রের রুমে গিয়ে, ডিভোর্স পেপারটা দিয়ে আসবে,কিন্তু অভ্রের বাড়িতে যাওয়ার সাহসটুকুও তো তার আসছে না। কত স্বপ্ন কতটা আশা নিয়ে অভ্রের সাথে অভ্রের বাড়িতে প্রবেশ করেছিলো। আজ তা নিমিষই শেষ হয়ে যাবে। মায়রার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমাট বাঁধে। বুকের ভিতরে ঝড় বইতে থাকে,তবুও মায়রা নিজেক শক্ত করার প্রয়াস করে।

___________

অভ্র দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে। চোখে কেমন জল এসে জমাট বেঁধে রয়েছে। একটু হলেই যেন গড়িয়ে পড়বে। অভ্রের জোড়ে শ্বাস নিয়ে মেহেভীনের ছবিটা নিয়ে আপনমনে বিড়বিড় করতে থাকে,

‘মেহু একটা ভুলের জন্যে তুই আমাকে এতো বড় শাস্তি দিলি? আরহামকে বিয়ে করে নিলি মেহু?কেন করলি? আমার যে বড্ড কষ্ট হয় রে। এই সীমাহীন কষ্ট লাঘব করবো কীভাবে? ‘

ইশরা বেগম তড়িঘড়ি করে ছেলের কাছে ছুটে এসে বললেন, ‘ অভ্র বাবা! তোকে এতোটা দুর্বল লাগছে কেন? তুই ঠিক আছিস তো? ‘

অভ্র জোড়ানো কন্ঠে বললো,

‘ মা আমি ঠিক আছি। আমাকে নিয়ে এতোটা চিন্তা করো না তুমি। ‘

ছেলের মুখ দেখে খুব ভালো করেই ইশরা বেগম বুঝতে পারলেন ছেলে তাকে মিথ্যে বলছে। ছেলের মিথ্যে বুঝতে পেরে ইশরা বেগম তার ছেলের কপালে হাত রেখেই ঘাবড়ে উঠেন। কেননা অভ্রের আগুনের মতো শরীর গরম হয়ে রয়েছে। ইশরা বেগম থার্মোমিটার দিয়ে ছেলের জ্বর দিয়ে মেপে দেখলেন প্রায় ১০০ ডিগ্রির উপরে জ্বর। ছেলের এতো ঘাড় কাপানো জ্বর দেখে মুহুর্তেই চোখ জল চলে আসলো ইশরার।

______________________

বাসরঘরে হঠাৎ সব লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেহেভীনের মনে কিছুটা আতন্ক এসে হানা দেয়। সে
চট জলদি উঠতে নিলে,অনুভব করে তার ঘাড়ে কারো ঘন ঘন নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে। মেহেভীন স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষন। নিঃশ্বাসের শব্দেই সে টের পেয়ে যায় পিছনে থাকা ব্যক্তিটি
আর কেউ নয় স্বয়ং তার আরহাম সাহেব। আরহাম তার হাত ধরে আস্তে আস্তে ধরে বারান্দার দিকে নিয়ে যেতে থাকে। চারদিকে শুধু ঘন কালো অন্ধকার। শুধু
চাঁদের আলো এসে বারান্দাকে নিজের আলো দিয়ে আলোকিত করছে। হাতে কোন কিছুর স্পর্শ পেতে, মেহেভীন চোখ পিটপিট করে দেখে আরহাম হাটু গেড়ে ডায়মন্ডের আন্টি মেহেভীনের আঙ্গুলে পড়িয়ে দিচ্ছে। ছোট্ট ডায়মন্ডের পাথরের আন্টিটা অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে মেহেভীনের অনামিকায়। আরহাম হাটু গেড়েই মেহেভীনকে বললো,

‘ পছন্দ হয়েছে? ‘

মেহেভীন স্মিত হেসে বলে, ‘ একদম। ‘

আরহাম ও ঠোটে চমৎকার হাসি ঝুলিয়ে বলে,

‘ জানো প্রেয়সী? আজ আমি ইচ্ছে করেই আমাদের ঘরের সব লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। আজ পূর্নিমার
চাঁদ উঠেছে দেখেছো? আজ যেহুতু আমাদের বাসর রাত তাই এই রাতে তোমাকে কি আমি নরমাল ভাবে দেখতে পারি? তাই ভাবলাম আমি আমার প্রেয়সীকে এই বিশেষ রাতে চাঁদের আলোতে দেখবো। ‘

মেহেভীন মাথা নিচু করে ফেলে। আরহাম মেহেভীন হাতে নিজের হাত রেখে মুগ্ধ গলায় বলে,

‘ চাঁদের আলোয় তোমার মুখশ্রীট কতটা মায়া কতটা
স্নিগ্ধতা ধরা দিচ্ছে তা যদি তুমি দেখতে তাহলে
নিজের মুখশ্রীর প্রেমে পড়ে যেতে। আজ যেমন আমি বার বার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি নিজের সদ্য নবুবধুকে দেখে। ‘

মেহেভীন আরেকদফা লজ্জা পেয়ে যায় আরহামের শীতলকন্ঠে বলা মধুর বানী শুনে। আরহাম আরেকটি প্যাকেট মেহেভীনের হাতে ধরিয়ে দেয়।
মেহেভীন প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকাতেই,আরহাম মিষ্টি হাঁসি উপহার দিয়ে বলে,

‘ খুলে দেখো আরেকটা গিফ্ট তোমার জন্যে। ‘

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

মেহেভীন বেশ কৌতহল নিয়েই, প্যাকেটটা খুলে দেখেই একটা ছবির ফ্রেম। ছবির ফ্রেমটা দেখেই
চোখের পানি নিজের বাঁধ ভেঙ্গে গলায় বেয়ে বেয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়তে থাকে। কেননা ছবির ফ্রেমে
আরহাম মেহেভীন এবং মেহেভীনের ছোট্ট মেয়ে সন্তানটি রয়েছে। যাকে আরহাম এবং মেহেভীন একসাথেই কোলে নিয়ে দাঁড়িয় আছে। ছোট্ট বাচ্চাটা ছবিটাতেও তোয়ালাতে মোড়ানো রয়েছে। চোখ বুজে আছে। মুখটা অস্পষ্ট। যেমনটি আরহাম হসপিটালে দেখেছিলো। ঠিক তেমনিই ছবিটা একেঁছে। আরহামের নিঁখুত শিল্পির ফলে ছবিটাকে জীবন্ত মনে হচ্ছে। মেহেভীন চোখ বন্ধ করে ছবিটাকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে। আরহাম এগিয়ে এসে মেহেভীনের
চোখের জল মুছে বলে, ‘ একদম কাঁদবে না কিন্তু
আমি আগেও বলেছি আমার প্রেয়সীর চোখের জল আমি সহ্য করবো না। যখনি বেবীর জন্যে মন খারাপ করবে তখনি এই ছবিটা বের করবে কেমন? ‘

মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে আরহামকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ ধন্যবাদ আরহাম সাহেব। এতোটা মূল্যবান উপহার দেওয়ার জন্যে। ‘

আরহাম এইবার মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে,শীতল কন্ঠে বলে,

‘ আমারও কিন্তু গিফ্ট পাওনা রইলো তোমার কাছে। ‘

আরহামের শীতল কন্ঠে বলা বানীটা মেহেভীনের ভিতরে তোলাপাড় সৃষ্টি করে দিলো মুহুর্তেই।

‘ কি….কি উপহার? ‘

খানিকটা কাঁপাকাঁপা গলায় মেহেভীন কথাটি বলতেই, আরহাম মেহেভীনের দিকে এগিয়ে আসতে নিলে, মেহেভীন তৎক্ষনাৎ নিজের হাত দিয়ে শাড়িটা খামচে ধরে। মনে তার অদম্য ভয় জন্ম নেয়। আরহাম কি আজকেই মেহেভীনের কাছে তার স্বামীর অধিকার চেয়ে বসবে?কিন্তু মেহেভীন তো এখনো সম্পূর্নভাবে তৈরি নয়। তার তো সময় প্রয়োজন তা কী আরহাম বুঝবে? মেহেভীনকে সম্পুর্নরুপে অবাক করে দিয়ে, আরহাম মেহেভীনের কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দেয়। অতঃপর নরম গলায় নিজের প্রেয়সীকে বললো,

‘ এই অধিকার টুকু আমাকে তোমার দিতেই হবে প্রেয়সী। কি দিবে তো? ‘

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
মেহেভীন চোখ বন্ধ করে ছিলো আরহামের ঠোটের স্পর্শে তার শরীরে অনুভুতি গুলো কেমন দুলে উঠছিলো। অতঃপর মেহেভীন চোখ বন্ধ করেই আলতো হাঁসে। যার অর্থ সে এই অধিকার টুকু তার আরহাম সাহেবকে দিয়েছে। আরহাম আবারোও মেহেভীনকে কোলে তুলে নিলো। অতঃপর ফুলের বিছানায় মেহেভীনকে বসিয়ে, কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ প্রেয়সী আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি। আমি তোমাকে শুধু নিজের পাশে পেতে চাই সারাটাজীবন। তোমার হাত টা ধরতে চাই। তুমি কখনো আমাদের বিয়েটাকে বোঁঝা মনে করো না। এই বিয়েটা হলেও কখনো আমি তোমার কাছে নিজের স্বামীর অধিকার কিংবা ভালোবাসা চাইবো না। তাই এতোটা নারভাস হওয়ার কোন দরকার নেও। তুমি আমার পাশে থেকো দ্যাটস ইনাফ। ‘

আরহামের কথা শুনে মেহেভীন কিছুটা ভরসা পেলো।

‘ তাহলে আপাতত গুট নাইট মিস থুরি মিসেস মেহেভীন আরহাম হাসান তালুকদার। আপাতত আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাচ্ছি।’

আরহাম মেহেভীনের গালে হাত রেখে কথাটি বলে উঠে চলে যেতে নিলে,মেহেভীন আরহামের হাত ধরে
আটকে নিয়ে বলে,

‘ সোফায় যেতে হবেনা। বিছানাতেই ঘুমিয়ে পড়ুন। আমার স্বামীর প্রতি আমার এইটুকু ভরসা আছে যে সে বিনা অনুমুতিতে এমন কিছু করবে না, যাতে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। ‘

আরহাম আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে মেহেভীনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ ভালোবাসি তোমায়। আজীবন ভালোবাসতে চাই।
আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না কখনো। নাহলে তোমার আরহাম সাহেব যে বড্ড একা হয়ে যাবে। তুমি হীনা ছন্নছাড়া হয়ে যাবে তার জীবন। ‘

আরহামের আবেগমাখা কথায় মেহেভীন আরহামের বুকে মাথা রেখে দিলো পরম শান্তিতে।

__________

অভ্র জ্বরের ঘোরেই বিড়বিড় করতে লাগলো,

‘ মা আমি তো মেহুকে অনেক ভালোবাসি। তবুও মেহু আমার হলো না। অন্য কারো হয়ে গেলো নিমিষেই। আহা সে যে কি কষ্ট রে মা। মরন যন্ত্রনার থেকেও বড্ড কষ্টকর। ‘

ছেলের মুখে এমন কষ্টকর করুন সুরে বলা আর্তনাদে বুকে কেঁপে উঠলো ইশরা বেগমের। নিজেকেই তিনি দুশতে লাগলেন ছেলের এমন পরিনতির জন্যে। অভ্র আবারো চটজলদি বলে উঠলো,

‘ না মা। মেহুর তো কোন দোষ নেই৷ সব দোষ আমার। আমি এতোটাই খারাপ। এতোটাই পাপী যে আমাদের সন্তানটাও পৃথিবীর আলো দেখতে পারলো না। না মেহু একদম ঠিক করেছে। আমার মতো প্রতারক মেহুর কেন কারো ভালোবাসাই ডিসার্ভ করে না। ‘

ইশরা বেগম অভ্রের কপালে আবারো হাত দিলেন। না জ্বর বেড়েই চলেছে। ডাক্তারকে এখন ডাকতেই হবে অভ্র এখন তার নিজের অবস্হায় নেই। কথাটি ভেবে
ইশরা বেগম দ্রুত ডাক্তার ডাকতে চলে গেলেন।

ইশরা বেগমের যাওয়ার পানে এক পলক তাকিয়ে অভ্র আবারোও দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে। কতটা বিষাদময় হয়ে উঠছে তার জীবনটা। আহা কি ভয়ংকর বিষাদময় জীবন। ইশরা বেগম চলে যেতেই, মায়রা ঘরে প্রবেশ করে। অভ্রকে দেখেই তার ও প্রচন্ড কষ্ট হয়। অভ্রের কাছে সে যেতে চাইলেও যেতে পারেনা। যদি অভ্র তাকে কাছে দেখে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় তখন? অভ্র তো এখন তাকে সহ্য করতেই পারেনা। মায়রা দূর থেকেই বলে,

‘ অভ্র আমি ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে এসেছি। আমি সাইন করে দিয়েছি। তুমি করে দিও। তাহলেই তুমি আমার থেকে আজীবনের জন্যে মুক্তি পেয়ে যাবে। ‘

খুব স্বাভাবিক কথাটি বললেও,মায়রার কথায় স্পষ্ট লুকায়িত ছিলো অভ্রের জন্যে এক সমুদ্র পরিমাণ অভিমান। অভ্র……

চলবে….কী?

[ জানি আপ্নারা অনেক বোরিং হচ্ছেন ডোন্ট ওয়ারী গল্প প্রায় শেষের দিকে। আশা করি শেষের দিকেও আপনাদের ভালোবাসা পাবো। খুব তাড়াতাড়ি রহস্য উন্মোচিত হয়ে যাবে গল্পের 🥳]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here