তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 #পর্ব- ৫৪ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
244

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৫৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন পা পিছলে পড়ে যেতে নিলে,আরহাম মেহেভীনের কোমড় চেপে ধরে নিজের বুকের মাঝে আবদ্ধ করে রাখে। অভ্রের দৃশ্যটি দেখেই নিজেকে সামলাতে পারেনা। আখিজোড়ায় জলগুলো নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে অভ্রের গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। অভ্রের শরীরে জ্বর থাকা সত্ত্বেও, সে আজ অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিলো। অভ্রের অফিসটি যাওয়ার পথে আরহামের বাড়িটি পড়ে। অভ্র যখন গাড়ি নিয়ে অফিসে যাচ্ছিলো তখনি বারান্দায় মেহেভীনকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দেয়। নিষ্প্রান দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে তার ভালোবাসার মানুষটির দিকে। যদিও সে জানে তার ভালোবাসার মানুষটি এখন অন্য কারো। তবুও ভালোবাসার মানুষটিকে এক পলক দেখার লোভ অভ্র কিছুতেই সামলাতে পারলো না। তখনি তার সামনে ঘটনাটি ঘটে গেলো। আরহাম এবং মেহেভীনকে এতো কাছে দেখে তার বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেললো তৎক্ষনাৎ।

মেহেভীন আরহামের বুকে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরেকটু হলেই, সে পা পিছলে পড়ে যেতো বারান্দা থেকে। মেহেভীন আরহামের বুকে মাথা রেখে স্পষ্ট শুনতে পারছে আরহামের হৃদয়ের স্পন্দন কতটা গতিশীল হয়ে গিয়েছে। হয়তো সে ও কিছুক্ষন এর জন্যে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো তার প্রেয়সীকে হারানোর । আরহাম কিছুক্ষন স্হীর দাঁড়িয়ে থেকে, মেহেভীনকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। অতঃপর মুখের গাম্ভীর্য ভাব এনে, মেহেভীনের বাহু চেপে ধরে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

‘ হাও স্টুপিড ইউ আর মেহেভীন। এতোটা স্টুপিডের মতো সারাদিন কাজ করো কেন? একটু হলেই তো দুতলা থেকে পড়ে যেতে কখন কি হতো বলো তো?
মেহেভীন তুমি তোমার স্টুপিড কাজ কখনো বন্ধ করবে না তাইনা? একটু দেখে শুনে তো কাজ করা যায়না? না আপনি তা করবেন কেন? আপনি তো একজন স্টুপিড মেয়ে। ‘

আরহামের রাগে শরীর বলতে গেলে একপ্রকার কাঁপছে। মেহেভীনকে নিয়ে ঠিক তার কতটা ভয় তা তার বকাতেই খুব স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। অন্যদিন হলে আরহামের বকা খেয়ে মেহেভীন নাক ফুলিয়ে থাকতো না হয় পাল্টা উত্তর দিতো, কিন্তু আজ সে তা
করবে না। সে স্মিত হেসে আরহামের বুকে মাথা রেখে বলে,

‘ এতো কিসের চিন্তা আপনার বলুন তো? ‘

আরহাম হতাশ হয়ে কিছুটা ঠান্ডা গলায় বললো,

‘ তুমি বুঝো না কেন? ‘

‘ উহু…’

‘ যদি তোমাকে কখনো হারিয়ে ফেলি তবে মরণ ঘটবে আমার। তাই আমার জন্য হলেও তোমাকে আমার চাই আজীবন। ভালোবাসি বলেই এতোটা ভয়। প্রতিনিয়ত তোমাকে হারানোর ভয়ে আমার ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। ‘

‘ সেই সাধ্যি যে আমার নেই। আপনি ভালোবেসে আমায় নিজের বুকে আবদ্ধ রাখুন। কথা দিচ্ছি হারিয়ে যাবো না কখনো। ‘

____________________

ফারিয়ার ফোন পেয়ে আরিয়ান ফোনটা রিসিভ করে তাড়াহুড়ো করে বলে,

‘ হ্যা বউ বলো। ‘

‘ বউ ‘ নামক উদ্ভুট ডাকটি শুনে বিষম খেয়ে গেলো ফারিয়া। তার কাছে বউ ডাকটি উদ্ভুটই বটে। তার জানা মতে সে এখনো সিংগাল আন্ডা বাচ্ছা। তাহলে সে কেন অন্য কারো বউ হতে যাবে কেন?

‘ এই আপনি কাকে বউ বলছেন? নাম্বারটা ভালো করে দেখেছেন তো? আপনি ভুলে আপনার জিএফ এর জায়গায় আমাকে বউ ডেকে ফেলেছেন।’

আরিয়ান বিড়বিড় করে বলে,

” এমনি এমনি কি আর এক্সামে ফেল করে? গাঁধি একটা বুঝেও না যে আমি ওকেই বউ ডেকেছি। যাক গে গাঁধি হলেও আমার হবু বউ তো। আস্তে আস্তে আমার সাথে থাকতে থাকতে গাধিটা এই আরিয়ান হাসান তালুকদার এর মতো চালাক হয়ে যাবে। ‘

‘ এই কি বললেন আপনি? ‘কি এতো বিড়বিড় করছেন? ‘

‘ না মানে তুমি হয়তো ঠিকই বলেছো আমি গার্লফ্রেন্ড ভেবে তোমাকে বউ ডেকে ফেলেছি। ‘

আরিয়ানের গার্লফ্রেন্ড আছে শুনে চোখ-মুখে অন্ধকার নেমে আসলো ফারিয়ার। সে মন খারাপের সুরে বলে,

‘ আপনার গার্ল ফ্রেন্ড আছে? ‘

আরিয়ান ভাবলো ফারিয়াকে কিছুক্ষন না জ্বালালে মন্দ হয়না। তাই একটু-আকটু মিথ্যে বললে খুব একটা ক্ষতি হবেনা। সে ও দেখতে চায় ফারিয়ার মনে
তার জন্যে আদোও কোন অনুভুতি আছে কিনা। তাই আরিয়ান মিথ্যেটাই ফট ফট করে বলে দেয় হ্যা তার অবন্তি নামে একটি গার্লফ্রেন্ড আছে। যদিও অবন্তি শুধুমাত্র আরিয়ানের বানানো নাম মাত্র।
ফারিয়া কথাটি শুনে আরিয়ানের সাথে আর কথা বলে না। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে দেয়। কেন যেন তার একদমই ভালো লাগছিলো না। কেমন করে যেন বুকটা কেপে উঠলো। আচ্ছা তার এতো খারাপ লাগছে কেন? আর অবন্তি বা কে? তাকে সামনে পেলে ফারিয়া নিশ্চিত পানিতে চুবিয়ে রাখতো। ফারিয়া মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘ আমার ছোট্ট মাথায় একটা প্রশ্ন বার বার ঘুরঘুর করছে। ডাক্তার সাহেবের জিএফ এর আছে এতে
আমার কি? আমার এতো রাগ উঠছে কেন? ‘

ফোনটা কেটে আরিয়ান বসে থেকে ফিক করে হেঁসে দেয়। সে খুব করেই বুঝতে পারছে ফারিয়া এখন নিশ্চই খুব রেগে গিয়েছে। আরিয়ান এখন রাগি হিংসুটে মুখটাকে খুব করে দেখতে। আরিয়ান ফারিয়াকে ফোন করার আগেই,আরিয়ানের মা আরিয়ানের কানে মোলা দিয়ে বলে,

‘ ওরে পাজি ছেলে তাহলে তুমি তলে তলে এইসব করো? ‘

নিজের মাকে দেখে ঘাবড়ে যায় আরিয়ান। তার মানে এখন সে শেষ। আরিয়ান তোতলিয়ে বলে,

‘ মা আমি আবার কি করলাম? ‘

‘ ওরে আমার ছেলে টা রে কি মাসুম। কিচ্ছু জানে না।
যাকে জ্বালাচ্ছিলে সে কে রে? নাম কি তার? ‘

_________________

আরহাম অফিসে বসে ঘেটে ঘেটে ফাইল দেখছে। তাহসান আরহামের পাশে বসে কিছুক্ষন চুপ করে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। তাহসানকে দেখে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। চিন্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক কয়দিন পরে তার বিয়ে রুশার সাথে। হ্যা রুশাও তাহসানের সাথে কয়দিন পরে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে। তাহসান অনেক আগে থেকেই রুশাকে ভালোবাসতো কিন্তু প্রকাশ করতে পারতো না। কেননা রুশা আরহামকে ভালোবাসতো। যখন রুশা একেবারে ভেঙে পড়ে তখন তাহসান তার মনের কথা খুলে বলে রুশাকে। রুশাও ভেবে চিন্তে অতীতকে ভুলে তাহসানের সাথে নতুনভাবে সবকিছু শুরু করতে চায়। সে জানে মরিচীকার পিছনে ছুটলে শুধু কষ্টই পাওয়া যায়।

আরহাম ফাইল ঘাটতে ঘাটতে বলে,

‘ এতো কিসের চিন্তা করছিস তুই? ‘

‘ ভাই কয়দিন পরে বিয়ে আমার ভুলে গেলি? ‘

‘ তাহলে তো খুশি হওয়ার কথা তোর। ‘

‘ আমি তো খুশিই বাট আমার হবু বউ আমাকে এখুনি পাগল করে ছাড়ছে তার কি হবে? দিন রাত শুধু শপিং আর শপিং। এর বিয়ের কেনাকাটা আর শেষ হয়না। কি জানি বিয়ের পরে মনে হয় পুরো শপিং মলটাই তুলে আনবে। ‘

‘ হবে কি করে? এখন তো সবে শুরু। বিয়ে করো চান্দু আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া। ‘

কথাটি বলে আরহাম তাহসানের দিকে বাঁকা হাঁসি নিক্ষেপ করলো। তাহসান ক্ষেপে উঠলো। সে আছে নিজের জ্বালায় আর ফাজিল বন্ধুটা কীভাবে মজা নিচ্ছে। তাহসান কোনপ্রকার বানী উচ্চারণ করার আগেই, হুড়মুড়িয়ে একটা মেয়ে বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়লো। মেয়েটা সেলোয়ার কামিজ পড়ে আছে। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। মেয়েটাকে দেখেই মনে হচ্ছে বয়সে বেশ ছোট হবে। মেয়েটা আরহামকে দেখেই বললো,

‘ আপনি আরহাম হাসান তালুকদার তাইনা?’

আরহাম ‘হ্যা ‘ বোধক মাথা নাড়ায়। মেয়েটি লাফিয়ে উঠে। আরহামের কাছে একপ্রকার ঘেষে দাঁড়িয়ে বলে,

‘ আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি আরহাম দ্যা গ্রেট আর্টিটেক এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। জানেন আপুর কাছে আপনার নাম অনেক শুনেছি।
লাইফের ফার্স্ট ক্রাশ আপনি। ‘

আরহাম মেয়েটার কথায় ভরকে গিয়ে তাহসানের দিকে তাকাতেই, তাহসান দাঁত কেলিয়ে বলে,

‘ রুশার কাজিন তন্নি।বিয়ে উপলক্ষ্যে রুশাদের বাসায় এসেছে। তোর কথা অনেক শুনেছি। তাই ছুটে অফিসে চলে এসেছে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। ‘

আরহাম তন্নির দিকে তাকিয়ে মেকি হাঁসি দিয়ে বলে,

” ওহ আচ্ছা তুমি রুশার কাজিন? আচ্ছা তুমি বসো আমি একটু আসছি ওকে? ‘

আরহাম উঠতে নিলে, তন্নি তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বলে,

‘ আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমি তো আপনার সাথেই দেখা করতে এসেছি। আচ্ছা আপনি কি সিংগাল? ‘

‘ উনি বিবাহিত। ‘

শক্ত মুখে কথাটি বলে মেহেভীন কেবিনে জবাব দেয়।
মেহেভীন আজকে আরহামের জন্যে নিজ হাতে খাবার বানিয়ে অফিসে নিয়ে এসেছিলো তখনি তার সামনে ঘটনাটি ঘটে। মুহুর্তেই তার রাগে নাক লাল হয়ে উঠে। বাচ্চা একটা মেয়ে কিনা বলে মেহেভীনের স্বামী তার ক্রাশ? মেহেভীন কি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? সে সঙ্গে সঙ্গে কবিনে প্রবেশ করে আরহামের জন্যে নিয়ে আসা টিফিনের বাটিটা রেখে, জোড় করে হাসার চেস্টা করে বলে,

‘ আমি তার ওয়াইফ মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। বুঝলে পুচকি? এইবার তুমি আসতে পারো। উনি এইবার খাবেন। ‘

তন্নি মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বেড়িয়ে গেলো। তাহসান ও মুচকি হেসে তন্নির পিছনে গেলো।

আরহামের কপালের বলিরেখায় গভীর ভাঁজ পড়লো। সে হাত দুটো আড়াআড়িভাবে ভাজ করে মেহেভীনের দিকে তীক্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘ এইটা কি হলো? ‘

‘ কেন আপনি দেখতে পেলেন না? মেয়েটা আপনার গাঁয়ে কিভাবে পড়ছিলো। ‘

ক্ষিপ্ত গলায় কথাটি বলে মেহেভীন। আরহাম দুষ্টু হাঁসি দিয়ে মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ তাই বলে কি আমার বউয়ের হিংসা হচ্ছে? আচ্ছা তুৃমি কী আমায় সত্যি ভালোবেসে ফেললে? দেখো জেলাসি কিন্তু ভালোবাসার লক্ষন। ‘

আরহাম দুষ্টুমির ছলে কথাটি বললেও কথাট গভীরভাবে দাগ কাটে মেহেভীনের মনে। সত্যিই তো
তার এতো রাগ হচ্ছিলো কেন? তবে কি সে সত্যি ভালোবেসে ফেললো তার আরহাম সাহেব কে?

রাত প্রায় ৩টা।

মেহেভীন প্রতিদিনের মতো নিশ্চিন্তে আরহামের বুকে নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছিলো তখনি তার ফোনটি বেজে উঠে। ফোনের শব্দে আরহাম ও জেগে উঠে। মেহেভীন তড়িঘড়ি করে ফোনটা রিসিভ করার পরে এমন কিছু শুনে যা শুনে মুহুর্তেই তার হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। গাল বেয়ে অজান্তেই অশ্রুপাত ঘটে।

চলবে…কী?

[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here