#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৪৯ [ ধামাকা 😳]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সকলের সামনে আরহাম মেহেভীনকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে। মেহেভীন হাত-পা ছড়াছড়ি করলেও, তেমন কোন লাভ হয়না। বাড়ির ভিতরেই ঢুকতেই মেহেভীন থমকালো। পুরো বাড়ি বিয়ের সাঁজে নিজেকে সাঁজিয়ে তুলেছে। চারদিকে লোকের ছড়াছড়ি তাদের সাথে আরহামের মা-বাবা হাঁসিমুখে
কথা বলছে। আরিয়ান প্যান্ডিলের লোকদের সব কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে। বাড়িতে আবার কার বিয়ে লাগলো? কথাটি বার বার মেহেভীনের মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। মেহেভীনের অবস্হা খানিক্টা বুঝতে পেরে,আরহাম মেহেভীনের কানে আস্তে করে বলে,
‘ কার বিয়ে হচ্ছে তা নয় পরে বলি। ‘
‘কিন্তু আপনি তার আগে আমাকে কোলে থেকে নামান। বাড়ির সবাই দেখলে কি ভাব্বে? ‘
মেহেভীনের বলা ব্যক্ত বানীকে সম্পূর্নভাবে নাঁখোচ করে দিয়ে, আরহাম ধরা গলায় বললো,
‘ ছাড়বো না তোমায়। কোলে বসিয়ে রেখে দিবো আজীবন। যেন বার বার ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারো। ‘
আরহামের কথা শুনে মেহেভীন শুকনো ঢুগ গিললো। আরহামের বলা বানীটি তার কানে কেমন করে যেন ঠেকলো। মেহেভীন লক্ষ্য করছে আরহাম তাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছে,অথচ তাতে কারো কোন ভাবান্তর নেই। সবাই সবার মতো
কথা বলে যাচ্ছে। যা মেহেভীনের চিন্তাকে দ্বিগুনভাবে বাড়িয়ে তুলছে।কেউ কেউ তো আরহাম এবং মেহেভীনকে এইভাবে দেখে মিটিমিটি হাঁসছে।
মেহেভীনের তো ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে। লজ্জায় কুচকে আছে। আরহাম তা দেখে স্মিত হেসে মেহেভীনকে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে যেতে থাকে। মেহেভীনের মনে পড়ে যায় কিছুক্ষন আগের কথা।
কিছুক্ষন আগে…..
মেহেভীন ঠিক করেছে সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে এই বাড়ি ছেড়ে, এই শহর ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে। কেননা এই বাড়ির প্রতিটা কোণায় কোণায় লুকিয়ে আছে তার সন্তানকে নিয়ে ঘিড়ে থাকা সকল
স্মৃতি। যা প্রতিনিয়ত মেহেভীনকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিচ্ছে। তাছাড়াও অভ্র বিভিন্নভাবে মেহেভীনের সাথে দেখা করার চেস্টা করছে। যা মেহেভীনের পুরোনো ক্ষতগুলো পুনরায় জাগিয়ে তুলছে। এমনকি মেহেভীন জানে আরহাম তাকে কতটা ভালোবাসে, কিন্তু আরহামের এই অফুরন্ত ভালোবাসার বদলে সে শুধু আরহামকে কষ্ট ছাড়া
কিছুই দিতে পারবে না। তাই মেহেভীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সবার থেকে দূরে চলে যাবে। যেখানে তাকে কেউ পাবে। মেহেভীন তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে,আরহামকে নিবেদন করার উদ্দেশ্য ছোট্ট একটা চিরকুট নিয়ে, বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। বাড়িতে রাহেলা এবং মজনু ছাড়া কেউ ছিলো। তারাও বাগানে তাদের প্রেমালাপে ব্যস্ত। এইটাই ছিলো মেহেভীনের জন্যে সুবর্ন সুযোগ। আরিয়ান প্রথমে বাড়িতে এসে,মেহেভীনের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে মেহেভীনের রুমে যেতেই,সর্বপ্রথম তার চোখে পড়ে টেবিলে রেখে যাওয়া চিরকুট খানা। আরিয়ান চিরকুটটা খুলে বুঝতে পারে, মেহেভীন বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই আরিয়ান সময় নষ্ট করে আরহামকে ফোন করে সবটা জানায়। আরহাম আর দেরী না করে রাগে ফুশতে ফুশতে তৎক্ষনাৎ
অফিস থেকে বেড়িয়ে এসে,বাড়িতে চলে আসে।
বাড়িতে এসেই চিরকুটটা পড়ে, রাগে আরহামের মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। কেননা চিরকুটে লেখা ছিলো..
‘ আরহাম সাহেব প্রথমেই আপনার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এইভাবে আপনাদের সকলকে না বলে চলে যাওয়ার জন্যে। আমি একটা বিষয় খুব ভালো করেই রিয়ালাইজ করেছি যে, আমি যত বেশি আপনার কিংবা আপনার পরিবারের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখবো আপনাদের ঝামালা ততই বাড়বে।
আপনারা আমাকে শতাধিক ভালোবাসা দিলেও, আমি তার এক ভাগ ও দিতে পারেনি বরং তার বদলে শুধু কষ্টই দিয়েছে। আমি সত্যি এই শহরে আর থাকতে পারছি না। তাই দূরে চলে যাচ্ছি। আশা করি
আপনারা কেউ আমাকে খুঁজার চেস্টা করবেন না, পারলে আরহাম সাহেব নতুনভাবে জীবনটাকে শুরু করবেন। ভুলে যাবেন মেহেভীন নামক কোন কালো ছায়াকে। ‘
চিরকুটটা দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আরহাম।
চিটকুটটা হাতে নিয়ে মুহুর্তেই ছুড়ে ফেলে দিয়ে, আরিয়ানকে কিছু একটা বলে বেড়িয়ে যায়। আরিয়ান ও বুঝেছে আজ তার ভাই যা ক্ষেপেছে আজ সত্যি মেহুর রক্ষে নেই। আরিয়ান মনে মনে মেহেভীনের জন্যে দোয়া করতে থাকে এবং কাজে লেগে পড়ে। কেননা তার ভাই যে তাকে অনেক বড় গুরুদায়িত্ব অর্পন করেছে। আরিয়ান মনে মনে অনেক খুশি হয় আরহামের নেওয়া সিধান্তে। এইটাও তো চেয়েছিলো সে।
_________________
শহরের থেকে কিছুটা দূরে নদীর পাড়ে শিউলি গাছের নীচে বসে আছে মেহেভীন। এই জায়গাটা কেন যেন তার খুব ভালো লাগে। এই জায়গাটাতে সে অন্যরকম শান্তি খুঁজে পায়। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে শিউলি ফুলের গাছ থেকে থেমে যায় মেহেভীন। গাছের নীচে বসে থাকে কিছুক্ষন। শিউলি ফুল গুলো ঝড়ে যাচ্ছে গাছ থেকে। মেহেভীনের নিজের জীবনটা কেমন যেন শিউলি ফুলের মতো লাগছে। শিউলি ফুলের মতো তার জীবনেরও সমস্ত হাসি খুশি
আনন্দের মুহুর্তগুলো কেমন করে যেন হারিয়ে গেলো। মেহেভীনের মনে পড়ছে আরহামের সাথে কাটানো প্রতিটা হাঁসি খুশির মুহুর্ত। আরহামের প্রতিটা যত্ন। এমন করে কে বা এতোটা খেয়াল রাখবে মেহেভীনের? মেহেভীন নিজের মনটাকে শত শক্ত করতে চাইলেও,পারেনা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। আরহামের থেকে দূরে চলে আসলেও তার কষ্ট সে হারে হারে টের পাচ্ছে। কিন্তু কেন এতো কষ্ট হচ্ছে তার? তার সঠিক কারণ খুঁজতে লেগে আঁতকে উঠে মেহেভীন। সেই যেই অনুভুতি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছা সেই অনুভুতিটিই কী তবে তাকে নিজের মায়ার জালে জড়িয়ে ফেললো।
আরহাম তখনি তার গাড়িটা মেহেভীনের থেকে কিছুটা দূরে সাইডে রাখে। আরহামের গাড়ি দেখে কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে মেহেভীন। আরহাম এখানে কি করে এলো? কি করে জানলো মেহেভীন এখানে থাকতে পারে। তখনি তার মনে পড়ে যায় একদিন পূর্নিমার রাতের কথা।
‘ আমাকে যদি কখনো হারিয়ে ফেলো তবে আমায়
খুঁজতে থেকো কোন শিউলি গাছের ফুলের ভীরে।
সেখানেই আমি শিউলি ফুলের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রাখবো।’
মেহেভীন আনমনে কথাটি বলে ফেলেছিলো, তখন আরহাম শুনে বলেছিলো,
‘ তোমার শিউলি ফুল ভালো লাগে? ‘
‘ খুব ভালো লাগে। সবচেয়ে ভালো লাগে নদীর পাড়ের সেই শিউলি গাছটা। ‘
মেহেভীনের বলা সেই কথাটি আরহামের মনে ছিলো,তাইতো খুব তাড়াতাড়িই মেহেভীনকে খুঁজে বের করে। মেহেভীনকে খুঁজে বের করে ফেলে।
আরহাম মেহেভীনের কাছে আসতে চাইলে, মেহেভীন পিছাতে পিছাতে থমথমে গলায় বললো,
‘ এগোবেন না প্লিয। আমি ফিরে যেতে চাইনা।’
আরহাম খুব শান্ত থেকেই বললো,
‘ কিন্তু তোমাকে যে যেতেই হবে আমার সঙ্গে।’
মেহেভীন তেঁতো গলায় বললো,
‘ যেতেই হবে মানে? আপনি কি আমার উপর অধিকার খাটাচ্ছেন? কোন অধিকার নেই আমার উপর আপনার। আমি আপনার সাথে ফিরবো না।
এতোদিন অনেক কিছু করেছেন আপনি আমার জন্যে। আমি আপনার আর বোঁঝা হয়ে থাকতে চাইনা….’
মেহেভীনের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে, আরহাম মধুর গলায় বললো,
‘ বোঝা নয় ভালোবাসা তুমি আমার। বাকি রইলো অধিকারের কথা? সেই অধিকার আজ আমি নিজেই তৈরি করে নিবো। ‘
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস রিমি]
কথাটি বলেই আরহাম মেহেভীনের কাছে এসেই,আরহাম মেহেভীনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, মেহেভীনকে কোলে তুলে নিয়ে নেয়। এতে মেহেভীন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।মেহেভীন নামার জন্যে উদ্ধত হলেই, আরহাম তাকে রামধমক দেয়। সে চুপ হয়ে যায়। কেননা আরহামের চোখ-মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে যথেষ্ট পরিমানে রেগে আছে। আরহামের রাগে ঝলসে থাকা মুখশ্রীখানা দেখে মেহেভীন আর কিছু বলার সাহস পেলো না। আরহাম মেহেভীনকে কোলে নিয়ে গাড়ি দিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসলো। বাড়িতে এসেই মেহেভীন দেখতে পেলো বাড়িতে ছোটখাটো বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
_____
আরহাম মেহেভীনকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। মেহেভীন ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে আরহামের কথায়। আরহাম বললো,
‘ তুমি কি এখনো কোলে বসে থাকবে? ঘরে তো চলেই এসেছি। নাকি এখনো আমার কোলেই বসে থাকবে। যদিও আমার তেমন একটা সমস্যা নেই।’
মেহেভীন আরহামের কথায় আরেকদফা লজ্জা পায়। সে দ্রুত আরহামের কোল থেকে নেমে আসে। সে এখন আরহামের ঘরে। আরহামের কাউকে গলায় উচিয়ে কাউকে হাক করে ডাকে। আরহামের গলা শুনে, কিছু মেয়েরা বিয়ের শাড়ি -গয়না বিছানায় রেখে দিয়ে চলে যায়। মেহেভীন সবকিছু দেখে বিস্মিত হয়ে বলে,
‘ এইসব বিয়ের জিনিস কিসের জন্যে? ‘
আরহাম মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘ আজ যে আমাদের বিয়ে ম্যাডাম। এইগুলো তোমরাই বিয়ের শাড়ি-গয়না। ‘
মেহেভীন কথাটি শুনে অবিশ্বাসের সাথে আরহামের দিকে তাকাতেই,আরহাম তার অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘ ভেবো না তোমার উপর আমি কোন স্বামীর অধিকার খাটানোর জন্যে বিয়েটা করছি কিংবা তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করছি। আমি শুধু তোমায় সারাটাজীবন আগলে রাখার জন্যে বিয়েটা করছি।
ভালোবাসি তোমায় আমি। তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আমার পাশে সারাজীবন থেকে যেও। আমি তোমাকে আগলে রাখবো সযত্নে প্রেয়সী। ‘
অতঃপর আরহাম মুখশ্রীতে কাঠিন্য ভাব এন বললো,
‘ তোমাকে আমি কখনোই নিজের থেকে দূরে চলে যেতে দিবো না। তুমি কখনো আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না, কেননা সেই অধিকার আমি তোমাকে দেইনি।’
..চলবে কী?
[ধামাকা টা কেমন লাগলো। ‘মেহেরহাম ‘ এর বিয়েতে সবাইকে দাওয়াত দিলাম। আসবে তো? আবার কিপ্টামি করবেন না গিফ্ট নিয়ে আসিয়েন]