ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া মেঘলা তিন

0
456

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া মেঘলা

তিন
চৌধুরী বাড়ির ভোজনশালা আজ জমজমাট৷ বাহারী রান্নার গন্ধ্যে ম ম করছে চারোপাশ৷ সবাই উপস্থিত এখানে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত সুঠাম দেহের অধিকারী শাহওয়াজ জড়তা নিয়ে প্রবেশ করলো৷ তার এত মানুষের ভীড়ে থেকে অভ্যাস নেই৷ সাথে আকবর চৌধুরী আসলেন৷ খেতে বসার পূর্বে সবার সাথে পরিচয় ও করালো৷ আকবর চৌধুরীরা চার ভাই এক বোন৷ আকবর চৌধুরী, রুম্মন চৌধুরী, নুর-জামান চৌধুরী, নুর-জামাল চৌধুরীর৷ আর তাদের রক মাত্র বোন নুর-জাহান৷ বোন এখানে উপস্থিত না থাকলেও তার ছেলে রেহান এখানেই আছেন৷ রেহান এখানেই থাকেন সব সময়৷ রুম্মন চৌধুরির কোনো সন্তান নেই৷

নুর-জামন চৌধুরীর একটা মাত্রই মেয়ে তার নাম হাসি ময়ুরাক্ষীর এক বছরের ছোটো সে৷ আর নুর-জামাল চৌধুরীর ও এক মেয়ে মৃদুলা৷ তাদের বংশে ছেলের বলতে শুধু শাহওয়াজই৷ শাহওয়াজ আসায় কারোই তেমন খুশির ঝলক নেই রুম্মন চৌধুরী বাদে৷ আপদ যত তাড়াতাড়ি বিদেয় হবে তত তাড়াতাড়ি যেন বাঁচে তারা৷ এ ছেলে খুঁটি গেড়ে যেন না বসে আবার৷ সবার সাথে টুকটাক পরিচিত হলো শাহওয়াজ যদিও তার মুখশ্রী-তে তেমন আগ্রহ নেই৷ রেহান এসবে আরো বেশি আগ্রহী নয়৷ নানির আদিখ্যেতা তার সহ্য হচ্ছে না৷
শাহওয়াজ ঢাকা এসেছে মাস খানেক হলো লন্ডন থেকেই ডাক্তারি পড়া সমাপ্ত করেছে৷ এ বাড়িতে আসার বড় একটা সুযোগ খুঁজছিলো এবং সে সুযোগ টি তার জন্মদাতা নিজেই তৈরি করে দিলো৷ খাল কেঁটে কুমির আনা যাকে বলে৷

এক দিন হুট করেই আকবর চৌধুরী তাদের বাড়িতে গিয়ে উঠলো,তার মায়ের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করলো তার ছেলে যেন তার মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত থাকে৷ তার মা এতে রাজি না হলেও ছলে বলে মানিয়ে নিয়ে ছিলো আকবর চৌধুরী৷ সে শাহওয়াজ এর মা কে ও আসতে বলেছিলো কিন্তু শাহওয়াজ এর মা সাফ সাফ জানিয়েছে, তার সাথে তার কোনো সম্পর্কনেই৷ ছেলের সাথে তার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে ছেলেই যাবে৷
মানুষের কত রকমের রুপ থাকে এ বাড়ির মানুষ গুলোকে না দেখলে ঠাহর করতে পারতোই না শাহওয়াজ৷ সবাই বসলো নিজ নিজ চেয়ারে৷

আকবর চৌধুরী দৃষ্টি এপাশ ওপাশ করে কাউকে খুঁজলো অতঃপর নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আমিতো বাড়ির সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলছিলাম রাবেয়া৷”
শাহওয়াজ ও কৌতুহল নিয়ে তাকালো আশেপাশে৷ সেই হরিণী চোখের অধিকারী মানুষ টিকে দেখার জন্য৷ মুখশ্রী দেখেনি তাই বলতে পারছে না কে ছিলো৷ আর এ বাড়িতে মেয়ে তো রুপা, হাসি, আর মৃদুলা৷ কিন্তু এদের চোখের সাথে যে সে চোখ মেলাতে পারছেনা৷
রাবেয়া কিছু বলবে ঠিক তখনি খোদেজা বেগম বললেন,
“বাড়ির সবাইতো উপস্থিত আছে আকবর৷”
আকবর চৌধুরী থেমে গেলেন৷ খোদেজার বিচক্ষণী দৃষ্টি, শাহওয়াজ এর দিকে তাকালেন৷ ছেলেটা বড়ই চালাক৷ কেঁচো খুড়তে গিয়ে না কেউটে বের করে আনে৷ রঙ পাল্টালো তার মুখ চোখের৷

..

“কাল তোমার সাথে ওই মেয়েটা কে ছিলো মৃদুলা?”
শাহওয়াজ এর ঘরে শ-খানেক চকলেট হাতে নিয়ে বসে আছে মৃদুলা৷ তার সামনে কৌতুহল নিয়ে বসে আছে শাহওয়াজ৷ মৃদুলা চকলেট দেখে খুশিতে আত্মহরা৷ খাওয়ার পর শাহওয়াজই মৃদুলা কে নিয়ে এসেছে৷
শাহওয়াজ এর প্রশ্নে মৃদুলা একটা চকলেট নিয়ে ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো,
“কেন? আপনিকি বুবুরে চুমু খাইবেন ভাইজান?”
শাহওয়াজ তপ্ত শ্বাস টানলো৷ এ মেয়ের মাথায় কি চুমু ছাড়া কিছু নেই?
শাহওয়াজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে শান্ত হয়েই বললেন,
“ছিহ! এসব কেন করতে যাবো? সবাইকে দেখলাম সেই মেয়েটাকে দেখলাম না তাই জিগ্যেস করলাম৷ ”
মৃদুলা বুঝলো৷ সে জানে ভাইজান সবার মত না সে তো এমনি দুষ্টুমি করছিলো৷ মৃদুলা বললো,
“ভাইজান ওইটাতো…..!!”
এইটুকু বলতেই অর্ধ পথে থামিয়ে দিয়ে কেউ লাজুক স্বরে বললো,
“ওইটাতো আমি ছিলাম৷”
অচেনা কন্ঠে ঘুরে তাকালো শাহওয়াজ৷ চোখমুখ জুরে কৌতুহলতা৷ কিন্তু না আশাহত হলো এ তো হাসি৷ হাসির চোখের সাথে সে চোখের একটুও মিল নেই৷ শাহওয়াজ উঠে দাঁড়ালো বললো,
“তুমি?”
হাসি মাথা ধুলালো৷ হাত থেকে দুধের গ্লাস টা টেবিলের সাইডে রাখলো৷ তার চোখ মুখে লজ্জার আভা৷ হাসি মনে মনে স্বস্তি পেলো৷ মৃদুলা আর ময়ূরাক্ষী যখন রুপাকে বিকেলে ওদের সাথে শাহওয়াজ এর রাস্তায় দেখা হওয়ার কথা বলছিলো শুনে ফেলেছিলো হাসি৷

তাইতো এখানে এসে পরিস্থিতি টা সামলালো৷ শাহওয়াজ ভাইজান কে তার দারুণ লাগে প্রথম দেখাতেই সপ্তদশী হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছিলো৷ কি সুন্দর পুরুষ আবার ডাক্তার৷ ইশ ভেবে লজ্জা পেলো হাসি মৃদুলাকে আলগোছে চিমটি মারলো ফিসফিসিয়ে বললো৷ দাদি বারণ করেছে না?
এবার মাথা নিচু করে শাহওয়াজ এর উদ্দেশ্যে বললো,
“দুঃখিত ভাইজান৷ আমি চিনতে পারিনি আপনাকে৷ আর আমাদের গ্রামে রাস্তাঘাটে ছেলেদের সাথে কথা বললে অন্য চোখে দেখে৷”
মৃদুলা কিছু বলতে গিয়েও চুপসে গেলো৷ হাসির সাথে কক্ষ ছাড়লো৷ শাহওয়াজ এর কি যেন কি হলো মনে নিকষ আঁধার জমলো৷ সে যেন চেয়েও বিশ্বাস করতে পারছে না৷ কিন্তু মেয়েটা মিথ্যা তো বলবে না?তবেকি শাহওয়াজ ভুল দেখেছিলো? বা চিনতে ভুল করছে?

,,

বড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছে রুপা, আর মৃদুলা৷ দূরে পুকুর পার ইটের কাউচের উপর বসে বসে ব্রাশ করছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে হাসি৷ ইদের দিনের মত আনন্দ হচ্ছে হাসির৷ হাসির এত হাসি দেখে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে রুপার৷

রাহেলা সকাল সকালই ময়ূরাক্ষীকে পাঠিয়েছিলো বড়ই গাছ থেকে বড়ই পারার জন্য৷ ময়ূরাক্ষী আর মৃদুলাই এসেছিলো কিন্তু গাছে উঠতে উঠতে কখন যে গাছের মগডালে উঠে পরেছিলো সে দিকে হুস নেই তার৷ নামার সময় ঘটলো বিপত্তি এখন যে নামতে পারছে না৷ মৃদুলা গিয়ে রুপাকে ডেকে আনলো৷ রুপা এসে উপায় না পেয়ে এক প্রহরীকে পাঠিয়েছে মই আনতে কিন্তু সে আসার নামই নেই৷ হাসির আজ বেশ আনন্দ হচ্ছে, এ মেয়েকে জব্দ করতে পারলে মহা আনন্দ হয়৷ ব্রাশ নিয়ে হাটতে হাটতে অন্দরের দিকে গেলো৷ এ সাইডটা বাড়ির বাইরে উলটো দিকে৷ রুপা পায়চারি করছে আর ময়ূরাক্ষী কে বকছে৷ তার মা জানলে আজ ফের বকা খাবে ময়ূরাক্ষী, সেঝোচাচি আর ছোটোচাচি বরাবরই এমন করে৷
শাহওয়াজ সকাল সকাল বেরিয়েছিলো গ্রাম পরিদর্শন করতে, আকবর চৌধুরীই নিয়ে বেরিয়েছিলো৷ আকবর চৌধুরী ফেরার সময় আর সাথে ফিরেনি শাহওয়াজ একাই আসছিলো হুট করেই রুপাকে দেখে থেমে গেলো৷ দাঁড়ালো প্রশ্ন ছুড়লো,
“এখানে কি করছো তোমরা?”
শাহওয়াজ এর গম্ভীর কন্ঠে ময়ূরাক্ষীর আত্মা আরো ছোটো হলো৷ লোকটা এমন করে কথা বলে কেন? কেমন গম্ভীর গম্ভীর৷ রুপা গাছের দিকে তাকালো ময়ূরাক্ষী একটু আড়ালে চলে গেলো রুপা দিক দিশা না পেয়ে বললো,
“আসলে বড়ই পারবো তো তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি ভাইজান৷”
শাহওয়াজ আস্বস্ত হলো৷ ক্ষানিকটা বাঁকা হেসে বললো,
“এত এত কাজের লোক থেকে কি লাভ? যদি আকবর চৌধুরীর মেয়েকে নিজ হাতেই বড়ই পেরে খেতে হয়?”
বলে দাঁড়ালোনা সামনে হাটা ধরলো৷ রুপার খারাপ লাগলো কেমন৷ ভাইজান বাবার নাম ধরে কথা বলে কেন? তার কিসের এত অভিমান বাবার জন্য? সব কিছুতেই বাবাকি একাই দোষী?
রুপার ভাবনার মাঝেই ধপ করে উপর থেকে কিছু পরয়ার শব্দ হলো৷ ময়ূরাক্ষীর কথায় মাথায় আসতেই চিৎকার করে বললো,
“হায় আল্লাহ ময়ূর পরে গেলো নাকি৷”
শাহওয়াজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলো৷ এমন শব্দ পেয়ে সে ও কৌতুহল বসত থামলো পিছনে ঘুরতে যাবে ঠিক তখনি ফোন টা বেজে উঠলো এ দিকের খেয়ালটা চলে গেলো মুঠোফোনে ব্যাস্ত হয়ে পরলো৷

চলবে,

দ্বিতীয় পর্ব:
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/973963234325449/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here