#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া মেঘলা
সতেরো
শপিং ব্যাগের ভেতর নীল কাগজে মোড়ানো উপহার বক্স খানা৷ ওই টুকুনি বক্স খানা নিয়ে মানুষের আকাশ সমান কৌতুহল বা কারো এক রাশ হিংসা৷ কয়েক জোড়া চোখ নির্নিমেষে চেয়ে আছে কি আছে তাতে দেখার জন্য৷
কেউ কেউ ঠাহর করেছে হয়তো কি আছে ভেতরে৷
রুপার চোখ জোড়া খুশিতে জ্বলজ্বল করছে সে খুশির ঝিলিক মুখেও স্পষ্ট৷ সবার কাছে সামান্য হলেও তার কাছে মহামূল্যবান৷ সবার কৌতুহলের মাঝেই রাহেলার কন্ঠ পাওয়া গেলো হিংসাত্মক কন্ঠে বললো উপহাস করে,
“কি আর হইবো? হার টারই হবে হয়তো৷ এমন কত্ত হার পাবি এখন এতে এত খুশি হইতাছিস কেন বুঝিনা বাবা৷ আমিও তো তোর চাচারে বলে দুবাই থেইক্কা কানের দুল আনাইছি৷ খালা ও তো কত্ত দামি একটা উপহার দিলো৷সৎমা সৎভাইয়ের দেওয়া উপহারের দিকে এমন ভাবে উৎসাহ নিয়ে তাকায়া আছিস মনে হইতাছে সাত রাজার ধ্বন আনছে তোর লাইগা৷”
রাহেলার কথায় সবাই হাসলো যেন সে খুস হাসির কথা বলেছে৷ রুপা আড়চোখে তাকালো এক বার৷তবে তার উৎসাহ কমলো না৷ সে জানে তার চাচি এমনই নিজেরটাই সেরা ভাবে৷ এটা যে শুধু উপহার নয় আবেগ ও ভালোবাসা তা তো বোঝেনা৷ উপহার এর জিনিসটা কি তা কি দেখার বিষয় নাকি? মানুষ টা কে তা দেখার বিষয়৷ ভালোবাসা টা দেখার বিষয়৷ যদি হারই হয়ে থাকে হোক৷ সব হারের সাথে এটা জোড়া বুঝি?
মা ছোটো বেলা থেকে যার গুনগান গাইতো তার দেওয়া উপহার৷ তার ভাইজান এনেছে এটা যে পৃথিবীর সব চাইতে মূল্যবান উপহার৷
রাবেয়া বুঝলো মেয়ের মনের কথা৷ ক্ষানিকটা হেসে এগিয়ে এলো৷ তার দেখলে ভালো লাগে মেয়েটার মনে যে হিংসে নেই কোনো৷ সে ছোটো বেলা থেকে মেয়েকে যে শিক্ষা দিয়েছে মেয়ে তা বহল রেখেছে৷ নয়তো পাছে লোকের কথা শুনে যদি হিংসে জন্মায়? মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“সব উপহারের সাথে এটা জোড়া নাকি? এটা রুপার আরেক মায়ের দেওয়া উপহার এটা সব থেকে সেরা৷আর বললে না সৎমা? মায়েরা সৎই হয় মায়েরা কি অসৎ হয় নাকি? মাত তো মায়ই৷”
রাবেয়ার কথায় নাকমুখ কুঁচকে এলো ঢং দেখলে তার গা পিত্তি জ্বলে যায় রাহেলার৷ এত নেকামির কি আছে? আর আজকালকের দিনে কে এমন বোকা হয়? নিজের ভালো পাগল ও বুঝে আর এ মহিলা সতীনের ছেলে আর সতীনকে নিয়ে নেকামি করে৷
বোনঝি এর এমন বোকা বোকা কথায় জোবেদার বাজখাঁই কন্ঠে বললো,
“এহ, সতীনের লেইগা আবার দরদ উতলে পরছে দেখছি তোর৷ হ্যাঁ রে রাবেয়া? তুই এমন হলি কি করে? আমার বুবুর সাথে থেকেও তুই এমন বোকা কি করে? তুই কি অবুঝ নাকি? এহনো সময় আছে ঠিক হ নয়তো পস্তাবি পরে৷ এই যে এসেছে খুটি গেড়ে না বসে৷”
খলার কথা রাবেয়ার অপছন্দ হলেও বুঝতে দিলো না সে৷ বড় মানুষ তার যা মনে হয়েছে তা বলেছে তার মুখের উপর সে তো কটু বাক্য শোনাতে পারে না?
আর সবার মানসিকতা তো আর এক হয় না তাই না? দুনিয়ার সবাই যদি এক হতো তাহলেতো হতোই৷
কিছু মানুষ আছে যারা নিজের টা এবং নিজের ভালো টা দেখে শুধু৷
রাবেয়া হাসিমুখেই বললো,
“দরদ আর দেখালাম কোথায় খালা? আর আমি কি ভুল কিছু বলেছি? রুপার দিকে তাকান না একবার মধুলতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পান না? কে বলবে এ মেয়ে আমার পেট থেকে হয়েছে? আর খুঁটি গাড়ার কথা বলছেন? এ চৌধুরী বাড়ি পুরোটাইতো শাহওয়াজেরই৷ আমিও ও মা আমি ছেলেকে নিয়ে অন্য চিন্তা করতেও পারিনা৷ ওর বাড়িতে ও থাকবে আমি কেন কিছু করবো?”
বলেই হাসলো রাবেয়া৷ হাসি মুখেই কথা গুলো বললো রাবেয়া যেন তার খালা খারাপ ভাবে না নেয়৷ এসব নিয়ে শুধু শুধু ঝামেলা সে চায় না৷
খোদেজা এবার খাকাড়ি দিয়ে উঠলেন সে এতক্ষণ নিরব দর্শক ছিলেন কেবল৷ চুপচাপ শুনছিলো সবার কথা৷ এ বাড়ির মানুষ বোধবুদ্ধি হীন৷
সে এত লোকের মাঝে এসব কথা তুলতে চায় না এখন৷ ঘরের খবর পর কে কেন জানাবো?
খোদেজআ গম্ভীর মুখে নাত্নিকে উদ্দে করে বললেন,
“তোমাদের কথা হইলে চুপ করো নয়তো বৈঠক খানায় গিয়া কথা কও৷
রুপা উপহার খানা খোলো তো বুবু৷ দেহি তোমার ভাই কি দিছে৷ মহিলার মত জাতের কি না৷”
রুপা রেপিং পেপার খানা খুললো৷ সাথে সাথেই চেনা একটা বক্স দেখা গেলো৷ খোদেজা আঁতকে উঠলো বাক্স খানা দেখেই৷ রাবেয়াও অবাক বনে গেলো৷
রুপা খুশি খুশি খুললো বক্স খানা সাথে সাথেই দেখা মিললো সুন্দর খানা একটা স্বর্নের হার৷ চকচক করছে হার খানা পুরো ডিজাইনের ছোঁয়া৷ হার টা চকচক করলেও দেখেই মনে হচ্ছে কত কত বছর আগের৷
খপ করে হার খানা নিলো খোদেজা৷ বিস্মিত কন্ঠে বললো,
“এটাতো জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী পুরো এই হার টা৷”
রাবেয়া থম মেরে দাঁড়িয়ে৷ তার মনে হাজার প্রশ্ন৷ মধুলতা এই হার খানা তার মেয়ে কে কেন দিলো? মধুলতা কি অভিমান করে হার টা পাঠালো নাকি ভালোবেসে? এ কেমন বিড়ম্বনায় ফেললো তাকে? সে খুশি হবে নাকি দুঃখি?
..
“এ বাড়িতে দেখি চাঁদ ও দেখা মেলে দিনে দুপুরে৷”
অচেনা কন্ঠে থামলো ময়ূরাক্ষী৷ সে সবেই নিচে নেমেছিলো৷ আজ বাড়িতে তার অনেক সইরা ও আছে জম্পেশ আড্ডা হবে৷
পিছন ফিরলো অচেনা মুখ দেখে মাথায় কাপড় টানলো৷ দাদিজান বলেছে অচেনা কারো সামনে হুটহাট এভাবে যেতে না৷
নাহিন লোভাতুর চোখে তাকিয়ে আছে৷অচেনা একটা লোকের এমন দৃষ্টি দেখে জড়সড় হলো ময়ূরাক্ষী৷ভাবলো কিছু বলবে কিন্তু বললো না৷ নাহিন এগিয়ে এলো একই দৃষ্টিতে আপাদমস্তক চোখ বুলালো ক্ষানিকটা এগিয়ে এসে ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে শুধালো,
“এই বাড়িতেই থাকো নাকি সুন্দরি?”
ময়ূরাক্ষী অচেনা মানুষের সাথে কথা বলে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না৷ তার উপর ছেলে মানুষ বাড়িতে আত্মিয়রা আছে দেখলে মন্দ কথা বলবে৷ সে শুধু ভদ্রতায় উত্তর দিলো,
“জ্বি৷”
এর মাঝেই মৃদুলা নেমে এলো বললো,
“ময়ূর বু তুমি এইখানে? রুপাবু তোমায় ডাকে৷”
নাহিন বিরক্ত হলো বেশ৷ এ বাচ্চা মেয়েটি আবার কোথ্যকে এলো?নাহিন বিরক্ত কন্ঠে বললো,
“এই পিচ্চি তুমি যাও তোমার বুবু এখন যাবে না৷ আমার সাথে গল্প করবে৷”
শেষের কথাটা এমন ভাবে বললো আর আপাদমস্তক এমন ভাবে দৃষ্টি বুলালো গা ঘিনঘিন করে উঠলো ময়ূরাক্ষীর শরীর৷ ভয় লাগলো কেমন৷ শাহওয়াজ এর সাথে যখন দেখা হয়েছে লোকটা তো কখনো এভাবে তাকায়নি৷ রেহান ভাই ও কখনো এভাবে তাকায়নি৷ এ লোকটার দৃষ্টি এমন কেন? যেন কাঁটে দিয়ে উঠলো শরীর৷
ময়ূরাক্ষী তড়িঘড়ি করে মৃদুলাকে বললো,
“চল চল মৃদু দাদিজান ডাকছে বোধহয়৷”
বলেই কয়েক কদম পা ফেলতেই হাত ধরে ফেললো নাহিন৷ শরীর খানা কেঁপে উঠলো৷ এর মাঝেই নাহিন এর কন্ঠ কর্ণপাত হলো,
“বাহ হাত ও দেখি ময়ূরের পেখমের মত নরম৷”
ময়ূরাক্ষী থমকালো৷ সর্বাঙ্গ এখনো কাঁপছে এর মাঝেই মদুলা বললো,
“ছাড়েন ছাড়েন আমার বুবুর হাত৷”
ময়ুর এবার নিজ থেকেই এক ঝটকায় হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“এ কেমন অভদ্রতা?”
নিহান কিছু বলবে তার আগেই এর মাঝেই উপস্থিত হলো রেহান৷ ময়ূরাক্ষীর পানে একবার তাকিয়ে নিহান এর পানে তাকালো জিগ্যেস করলো,
“কি হয়েছে নিহান? কিছু দরকার?”
রেহান ছেলেটাকে নিহানের একটুও পছন্দ না৷ তাই পকেট থেকে ফোন বের করে ঘাটতে ঘাটতে সোফায় গিয়ে বসলো৷ ফিসফিসিয়ে বললো,
“কিছু আর হতে দিলি কই শা**লা”
তারপর তপ্ত শ্বাস টেনে জোরে বললো,
“না ভাইয়া কিছুনা৷”
রেহান এবার ময়ূরাক্ষীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“উপরে যা এখানে কি?”
ময়ূরাক্ষী দাড়ালো না আর৷ দৌড়ে প্রস্থান করলো৷ শরীর তার ঘিন ঘিন করছে৷ এ লোকের ছোয়ায় কেমন নোংরামি ছিলো যা ময়ূরাক্ষী টের পেয়েছে৷ উপচেয়ে পরা কান্না গুলো ভীর করলো৷ অন্য এক ছেলে তাকে স্পর্শ করলো৷ শাহওয়াজ ও তো অচেনা লোকটাও তো তার হাত ধরেছিলো এমন তো লাগেনি৷ এ লোকটা এমন নিকৃষ্ট কেন? কই শাহওয়াজ এর চাওনি বা ছোঁয়ায় তো খারাপ ইঙ্গিত পায়নি৷
..
সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত তখন! আঁধার ধরণীকে গ্রাস করেছে আলো ফুরিয়েছে সেই কখন৷ এই কৃষ্ণ কালো মত আঁধার নেমে এলো সৌহার্দ্যনিবাসে৷ ঝলমলে হৈ-হুল্লোড় করা সৌহার্দ্যনিবাস হুট করেই নিরব, নিষ্প্রাণ হয়ে গেলো৷ এত এত আলোর মাঝেও যেন অন্ধকার নেমে এলো৷ অতঃপর বুক জুড়ে কষ্ট আর আহাজারি
চলবে,
[রোজা চলছে তবুও আমি চেষ্টা করি প্রতিদিন গল্প দেওয়ার৷ যে দিন পারি না এক দিন পর পর দেই৷ আর রোজার মাঝে সবাই কোরআন পড়েন বাড়ির নানাবিধ কাজ করেন সবাইতো জানেন? আশাকরি এক দিন পর দেওয়ার কারণ বুঝবেন৷ আর একটু গঠনমূলক মন্তব্য করবেন তাতে একটু উৎসাহ পাই আমি৷]