ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা চার

0
154

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

চার

বাড়িটির বংশীয় নাম চৌধুরী নিবাস হলেও আকবর চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী সখ করে এ বাড়ির নাম দিয়েছে “সৌহার্দ্যনিবাস” ভালোবাসায় পূর্ণ থাকবে এ বাড়ি৷ জমিদারী টা গতানুগতিক পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত হলেও আকবর চৌধুরী বড় হওয়ার সাথে সাথে যেন তার পিতা সব হারাতে বসেছিলো৷ চারোপাশে এতটা ঋণগ্রস্ত হয়ে পরেছিলেন এ বাড়িটি বাদে সব কিছু খোয়া গেছিলো৷ এমন ও দিবস ছিলো সু-বিশাল প্রাসাদের ন্যায় চৌধুরী নিবাসে থেকেও না খেয়ে কাঁ’টাতে হয়েছে তাদের পাঁচ ভাই বোনকে৷ এ দুঃখের মাঝেই মারা যান তার পিতা তখন যেন আরো খেই হারায়৷ আকবর চৌধুরী সব দায়িত্ব কাধে তুলে নেয়৷ এ সব দুঃখের মাঝেও এক টুকরো সুখ হয়ে আসে মধুলতা৷ তাদের প্রেমটাও হয় অদ্ভুত ভাবে৷ ভালোবেসেই তাদের বিয়ে হয়েছিলো৷ আকবর মধুলতার বাবার বন্ধুর পূত্র হওয়ায় কাঠকয়লা খোয়াতে হয়নি বেশি৷ বিয়ে করার পর পরই যেন আরো কঠিন সময় আসে তাদের শেষ আশা নিজেদের ছাদ টা ও হারাবার পথে ছিলো৷ ঠিক সে সময় ঢাল হয়ে পাশে দাঁড়ান সেই মধুলতা৷ মধুলতার বাবাও বেশ ধনী৷বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া গয়না তুলে দেন স্বামীর হাতে৷ তা দিয়েই ব্যাবসা শুরু করেন এবং একটু একটু করে ফের নিজের সব কিছু শক্ত পোক্ত করতে থাকেন৷ ঠিক সে সময় বাড়িটির নাম দিয়েছিলেন “সৌহার্দ্যনিবাস” ৷
আকবর চৌধুরী ফের নিজের সামরাজ্য তৈরি করেন৷ প্রমাণ করেন সেই জমিদার বাড়ির সুযোগ্য পূত্র৷ জমিদার নামটা পূর্বকাল থেকে বহাল থাকলেও আকবর চৌধুরী নিজের হাতে সব কিছু গড়ে নেন৷

তবে সব কিছুর পর ও সে মধুলতাকে নিজের রাখতে পারেননি৷ মানুষ বলে না রত্ন সবাই রাখতে পারেন না? তাইতো আজ ও নিজের কাছেই নিজে স্বার্থপর৷
বিয়ের ছয় বছর পরেও যখন কোনো সন্তান হচ্ছিলো না খোদেজা বেগম তখন ছেলেকে ফুসলায়, জোর জবরদস্তি করে৷ একদিন বোনকে দেখতে যাবে বলে আকবর চৌধুরীকে সাথে নিয়ে যায় সেখানেই নিজের বোনের মেয়ের সাথে আকবর চৌধুরীর বিয়ে দেন৷

আকবর চৌধুরী মা-কে অন্ধ্যের মত ভালোবাসেন সে চেয়েও সে দিন ওখান থেকে চলে আসতে পারেননি৷ সে দিনি আসার পর জানতে পারেন মধুলতা অসুস্থ দাসিরা জানায় মধুলতার গর্ভে তার অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে৷ সে দিন যেন খেই হারায় দিক দিশা পায় না৷
মানুষ সব কিছুর অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে পারলেও অর্ধাঙ্গের ভাগ ভাগাভাগি করা যায় না৷ নিজের অঙ্গ কি কাউকে কেঁ’টে দিয়ে দেওয়া যায়? তাহলে কি মানুষ বাঁচে? আর স্বামীতো নিজের অঙ্গেরি অর্ধ রুপ৷ সে অবস্থাতেই সে ঘর ছাড়ে৷

নয় মাসের মাথায় জন্ম হয় চৌধুরী বাড়ির বড় পূত্র শাহওয়াজ প্রহর চৌধুরী৷ ছেলের সাথে দেখা করতে চাইলে মধুলতার বাবা আটকায় তাকে, শাহওয়াজ হওয়ার এক বছরের মাথায় দেশ ছাড়েন মধুলতা৷
রাবেয়ার সাথে তার স্বামী স্ত্রী সুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠলেও ভালোবাসা হয়েছে কি না সে জানেন না৷ হয়তো মায়া হয়েছে? রাবেয়ার সাথে বিয়ের আট বছর পর জন্ম হয় তার মেয়ে রুপার৷ সে ছোট্টো রুপার চোখে মুখে তার মধুলতার আভা পায়৷মেয়েটা হয়েছেও তেমন বুদ্ধিমান, চুপচাপ, বুঝধার, আবার নিজের মায়ের মত অঢেল মায়া৷ অদ্ভুত বিষয় লাগে আকবর চৌধুরীর কাছে৷ রুপা কে দেখলে যে কেউ বলবে রুপা মধুলতার মেয়ে, আকবর চৌধুরী খেয়াল করে তার ছেলে তাকে পছন্দ করেন না৷ এখন অব্দি বাবা বলে ডাকেনি ওই আসার পর যে একবার বলেছে৷ কিন্তু রুপার সাথে কথা বলে সে শুনেছে রাবেয়ার থেকে৷ রুপাকে উপহার ও দিয়েছে, রুপা তার মায়ের মত দেখতে তাই বলেকি শুধু রুপার সাথেই কথা বলে? যাক সে ভালো বাবা না হতে পারুক ছেলের কাছে৷ তার মেয়েকে তো তার ছেলে মেনে নিয়েছে? এই অনেক৷

সৌহার্দ্য নিবাস নামটার উপর কিছুক্ষণ হাত বুলালো আকবর চৌধুরী৷ পিছন থেকে আকস্মিক চেনা কাতর কন্ঠ কর্ণকুহর হলো,
“আপনি মধুলতা আপা কে অনেক ভালোবাসেন তাই না?”
আকবর সাহেব স্বাভাবিক রইলেন৷ পিছনের মানুষ টি তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়া৷ প্রথম দিনের ন্যায় এখনো আটপৌরে শাড়ি এবং এক হাত ঘোমটা টেনে থাকেন রাবেয়া৷ হিংসা, ইর্ষাহীন একটা মানুষ৷ আকবর চৌধুরী মলিন কন্ঠে বললো,
” আমি ধরে রাখতে পারিনি ওকে, আমিযে বড় অপরাধী রাবেয়া৷”
কথাটায় কি যেন ছিলো বক্ষ টা জ্বলে পু’ড়ে গেলো তার৷ আকবর সাহেব উত্তর দেননি কিন্তু এ কথাটায় যেন উত্তর লুকিয়ে ছিলো৷ আকবর চলে গেলেন ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো রাবেয়া অন্তরের জ্বা লা নিয়ে৷
সেই কাতর কন্ঠেই মিনমিনিয়ে বললেন,
“আপনি আমার কিন্তু আপনার ভালোবাসা পেলাম না আমি৷ এ আক্ষেপ যে আমার ইহজন্মেও শেষ হবে না৷”

..

দুধে আলতা গাঁয়ের বরণ ময়ূরাক্ষী-র হরিণী ডাগর ডাগর আঁখি৷ পা ছুঁই ছুঁই কেশ৷ পা ছুঁইছুঁই বলা চলে না পা থেকে পাঁচ আঙুল উপরে৷ পাতলা গরণের অধিকারী, যেন সৃষ্টিকর্তা রুপ ঢেলে দিয়েছেন৷ তবে লম্বা টেনে টুনে পাঁচ ফুট হবে৷ বলেনা সৃষ্টিকর্তা সব দিন দিয়ে খুঁতহীন রাখে না মানুষ কে?
কিছুনা কিছু খুঁত থাকেই৷ চালচুলোহীন মেয়ে কিন্তু রুপ এর দিক দিয়ে অঢেল৷ ময়ূরাক্ষীর জন্য কত জায়গা থেকে কত সম্বন্ধ আসে কিন্তু পরিচয় জানলে কেউ আর আগে বারে না৷
রুম্মন চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী মিনারা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে ময়ূরাক্ষীকে৷ বিয়ে হয়েছে চৌদ্দ বছর হলো কিন্তু তার ঘরে এখনো তাকে মা ডাকার জন্য কারো জন্ম হলো না৷ সৃষ্টিকর্তা তার কোন পাপের শাস্তি তাকে দিচ্ছে সে জানে না৷ এই ময়ূরাক্ষী তার ঘরে কেন জন্ম হলো না? আগলে রাখতো বক্ষে৷ বা ময়ূরাক্ষীকে যখন এ বাড়ি এনেছিলো তখন কেন তার বিয়ে হয়নি? তাহলেতো এই মেয়েকে সেই নিয়ে নিতো৷ মিনারা এগিয়ে গেলেন ময়ূরাক্ষীর দিকে মমত্বময়ী হয়ে হাত বুলালেন মাথায়৷ মা সুলভ অধিকার নিয়ে বললেন,
“চুলের কি হাল? আয় তেল দিয়ে দেই ময়ূর৷”
ময়ূরাক্ষী ভারী নেত্রপল্লব ফেললেন ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললেন,
“চুল ভেজা মেঝো মা, পরে দিয়ে দিও৷”
মিনারা আবারো মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“রাতে তেল নিয়ে ঘরে যাবি কিন্তু৷”
ময়ূরাক্ষীর চোখমুখ চকচক করে উঠলো৷ উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
“আচ্ছা মেঝো মা৷”
মিনারা হাসলেন৷ মেয়েটা যতবার মেঝো মা বলেন ততবার বুক জুড়ায়৷ ময়ুরাক্ষী বেজায় খুশি পড়ালেখা তার ভালো লাগেনা৷ কিন্তু রাত হলেই রুপাবু পড়তে বসায়৷ নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে কলেজের বইয়ের পড়া একটাও মাথায় ঢুকে না ময়ূরাক্ষীর৷ রুপার ডাকে ছাদ থেকে নামে ময়ূরাক্ষী৷

..
পুকুর পারের শেষ প্রান্তে পুকুর ঘেঁষে ছোটোখাটো একটা বৈঠকখানা রয়েছে৷ বাশ দিয়ে তৈরি ছাওনি সেখানে বেতের চেয়ার টেবিল পাতা৷ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে রুপা পাশেই কিছুটা দূর আকাশ দাঁড়িয়ে৷ আকাশ হলো রুপার হবু স্বামী৷ তাদের কিছুটা দুরই হাসি, মৃদুলা,আকাশের বোন প্রিয়ন্তি বসে৷ ময়ূরাক্ষী ও আছে রুপা টেনে হিঁচড়ে ময়ূরাক্ষীকেও নিয়ে এসেছে৷ আকাশরা এসেছিলো পাশের এলাকায় একটা বন্ধু বাড়িতে দাওয়াত খেতে সেখানে হঠাৎ আকবর চৌধুরীর সাথে দেখা হয়ে সে বাড়িতে নিয়ে আসে৷ জমিদার বাড়ির মেহমান পাশের এলাকা এসে চলে যাবে কেমন দেখায় না? আকাশ আসতে না চাইলেও আকবর চৌধুরী ছেলের সাথে দেখা করাবেন বলে নিয়ে আসেন৷
“ওইতো আমগো ভাইজান আসতেছে৷”
হুট করে মৃদুলার এহেন কথা শুনে চমকে উঠলো ময়ূরাক্ষী৷ এবার কি হবে? দাদি জানলে কেলেংকারী হবে৷ এ পথে যাওয়ার রাস্তা নেই হাসি ইশারা করলো ময়ূরাক্ষীকে চলে যাওয়ার৷ দিক দিশা না পেয়ে বড় একটা ঘুমটা টানলো বের হওয়ার আগেই ঘটলো বিপত্তি৷ বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়? হুমরি খেয়ে শাহওয়াজ এর বাহুর সাথেই ধাক্কা খেলো ময়ূরাক্ষী৷

চলবে ইনশাআল্লাহ,

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/cWszSPgbuu4TYWzW/?mibextid=oFDknk

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here