ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা ষোলো

0
159

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

ষোলো

চা নিয়ে রসুই ঘর থেকে গুটি গুটি পায়ে উপরে এলো ময়ূরাক্ষী৷ পায়ে ব্যান্ডেজ হাটতে ক্ষানিকটা কষ্ট হয়৷ উদ্দেশ্য এখন রেহানের কক্ষে যাওয়া৷
রেহান ভাই সেই সকালে উঠেছে দেখেছে ময়ূরাক্ষী৷ লোকটা বেশ অমায়িক ময়ূরাক্ষীর সব কিছুতেই তার যেন সূক্ষ্ম নজর৷

এর মাঝেই আকস্মিক শাহওয়াজ নিজের কক্ষ থেকে বের হলো৷ শাহওয়াজ কাধে ব্যাগ লোকটা ফোনে কথা বলছে৷ লোকটা যাচ্ছে তার কেন এত খারাপ লাগছে? যাক না সেই তো শান্তি পাবে৷
ক’দিন ঘুরে বেড়াতে পারবে নিজের মত৷ লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক তাড়াহুড়োতে আছে ভাবতে ভাবতেই এগোচ্ছিলো সামনের দিকে৷ হুট করে সামনে আসায় ভরকে যায় ময়ূরাক্ষী৷ সে তো সাইড দিয়েই যাচ্ছিলো৷ এ লোক ভারী অদ্ভুত৷ হুট হাট উদয় হয়৷ ময়ূরাক্ষী কিছু বলবে এর আগেই শাহওয়াজ তাকে না দেখার ভান করে কথা বলতে বলতে পাশ কা’টায়৷

লোকটা এমন ভাবে ঘেঁষে যায় খানিকটা নিজের জায়গা থেকে সরে যায় ময়ূরাক্ষী৷ হড়বড়িয়ে যাওয়ায় গরম চা টা একে বারে পরে ময়ূরাক্ষীর হাতে৷
“আহ” করে ক্ষানিকটা চেঁচিয়ে উঠে ময়ূরাক্ষী৷ থামে শাহওয়াজ৷ উষ্ঠো কোণে হাসি ঝুলছে কিঞ্চিৎ৷ যেন উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে৷
রেহান এদিকেই আসছিলো ময়ূরাক্ষীর চিৎকার এর শব্দ পেয়ে এগিয়ে আসে৷
শাহওয়াজ ফোন পকেটে পুরে খপ করে হাত ধরে ফেলে ময়ূরাক্ষীর৷ তটস্থ কন্ঠে বলে,
“কি করলেন মেয়ে? চোখে দেখেন না নাকি?”
ময়ূরাক্ষী আহত দৃষ্টিতে তাকায়৷ লোকটা এমন ভান করছে সে দেখেইনি কিছু৷ রেহান হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে নিচে পরে থাকা কাপ আর ময়ূরাক্ষীর হাত দেখে বিচলিত কন্ঠে বলে,
“চা টা পরলো কি করে? তুই কি চোখে দেখিস না ময়ূর? কাল পা কাঁ’টলি আজ চা পরলো৷”

রেহান এগিয়ে এলো৷ সে আরো কিছু বলবে তার আগে শাহওয়াজ৷ বলে,
“গরম চা পরেছে হাতে ফোসকা পরএ যাবে তো৷ চলুন ঠান্ডা পানি দিয়ে, মলম লাগিয়ে দেই৷”
বলেই রেহানের সামনে দিয়ে এক প্রকার টানতে টানতেই নিজের ঘরে নিয়ে গেলো শাহওয়াজ৷যএন রেহান কে উপেক্ষা করলো৷ রেহান নির্লিপ্ত হয়ে নির্নিমেষে চেয়ে রইলো৷ কি ঘটলো বোধগম্য হলো না তার৷ শাহওয়াজ এভাবে নিয়ে গেলো কেন?

ময়ূরাক্ষীর হাত টা এইটুকুতেই লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ জ্বলছে কেমন চামড়া টা৷ চোখ টই টুম্বুর পানি পরবে পরবে ভাব৷ শাহওয়াজ ব্যাগ রেখে বেসিনের কাছে নিয়ে গেলো ময়ূরাক্ষীকে৷
সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটলো ময়ূরাক্ষী বুঝতে পারছে না কিছু৷ উপচে পরা কান্না ভীর করলো৷ এর মাঝেই গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনলো শাহওয়াজ এর,
“খবরদার এক ফোটা পানি ও যেন না পরে চোখ থেকে৷”
দাতে দাত চেঁপেই বললো শাহওয়াজ কথা খানা৷ তাতে ময়ূরাক্ষীর আঁখি বাদ ভা’ঙলো যেন৷ ফুঁপিয়ে উঠলো! গরম চা পরা হাতটাই চেপে ধরলো শাহওয়াজ৷ ফের বললো,
“হুস! কোনো কান্না না৷”
এমন ভাবে কথা টা বললো কেঁপে উঠলো ময়ূরাক্ষী৷ শাহওয়াজ বেসিনের ট্যাব ছেড়ে দিলো পানি এসে পরলো পানির শব্দের সাথে রিনরিনিয়ে কানে এলো শাহওয়াজ এর ফের ওই অদ্ভুত কন্ঠ,
“অন্যকারো স্বস্তি হবে তা আমি সহ্য করবো না মেয়ে৷ কারো চোখে তোমার জন্য প্রশান্তি আমি সহ্য করবোনা৷ তাতে যদি তোমায় ও কষ্ট দিতে হয় আমি তাতেও পিছপা হবো না৷ আমিই কষ্ট দিবো আবার আমিই পরিত্রান দিবো৷”

,,

কাঠের আলমারি খানায় যত্ন করে তুলে রেখেছিলো উপহার খানা রাবেয়া৷ স্ব-যত্নে ফের উপহার টা নিলো উপর থেকে৷ দু-তিনবার হাত বুলালো! এখানে কি আছে সে জানে না তবে এটা তার মেয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার৷
তাদের সম্পর্ক টা যেমনই হোক৷ শাহওয়াজ তাকে নাই বা পছন্দ করুক ভাই বোন যেন এক থাকে৷ মা এক না হোক তারা দুটিতো একি র’ক্তের৷

বাড়ি ভর্তি আজ মানুষ ঘরোয়া ভাবে সব টা হলেও ঘরের মানুষই এত মনে হচ্ছে ছোটো খাটো অনুষ্ঠান৷
এ বাড়ির প্রতিটা আসবাব সময়ের সাথে পরিবর্তন করলেও পরিবর্তন করা হয়নি এ ঘরের আসবাব৷ এ ঘরের একটা সুতা ও পরিবর্তন হয়নি৷
এ ঘরের প্রতিটা জিনিস মধুলতার সাজানো৷ যে জিনিসটা যেভাবে রাখা ছিলো সে জিনিসটা সেভাবেই আছেন৷ মেরামত করা হলেও ঘরেই মেরামত করিয়েছেন আকবর চৌধুরী৷
এ ভালোবাসা একদম চোখে লাগার মত তাই না? কিন্তু কেন যেন তার কিঞ্চিৎ ও কষ্ট হয়নি বরং ভালো লেগেছে৷

এমনকি এ ঘরে বড় একটা ছবিও আছে মধুলতার৷ তাতে তার কোনো দুঃখ নেই৷ দুঃখ থাকবে কেন? যেখানে গোটা একটা মানুষই মধুলতার সেখানে আসবাব তো ছোটো খাটো জিনিস৷
আলমারি খানা লাগালো রাবেয়া উপহারের ব্যাগটা বুকের সাথে চেপে মধুলতার ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷
আকবর চৌধুরীর সাথে তার বিয়েতে তার মত ছিলো না কখনোই৷ আকবর চৌধুরী সম্পর্কে তার তথাকথিত খালাতো ভাই সে হিসেবে সবই জানতো৷
একদিন হুট করেই খালা যায় তার মায়ের কাছে কি না কি বলে মা-কে বিয়ের জন্য রাজী করায়৷
রাবেয়ার মা শুরুতে রাজী না হলেও রাবেয়ার বাবা রাজী করান৷
রাবেয়ার বাবা ছিলেন অত্যন্ত লোভী একজন মানুষ৷ মেয়ে এত বাড়ির বউ হবে কার না মত থাকবে না?
তারা হয়তো তখন অন্য জনের মেয়ের জায়গাটা নিজের মেয়ের মত ভেবে দেখেনি তাইতো অন্ধ ছিলো৷

হুট করেই একদিন খালা ও বাড়ি থেকে তাদের বাড়ি চলে যায় আকবর চৌধুরী কে জানায় সে ওবাড়িতে আর যাবে না৷ তাকে নিতে হলে রাবেয়া কে বউ করে এক সাথে ঘরে তুলতে হবে৷
আকবর চৌধুরী মা ভক্ত হলেও সে দিন রাজী হয়নি৷ এভাবেই কেটেছিলো পাঁচ দিন৷ যে ছেলে মা বলতে অজ্ঞান সে কি না মা কে ছাড়া আছে? মা যাবে না শুনেও কিছু বলেনি?
খোদেজা রেগে যায় আরো মধুলতার উপর৷ তার ধারণা সব মধুলতার ষড়যন্ত্র৷ একদিন অসুস্থতার নাটক করে রাবেয়ার মা কে দিয়ে ফোন করিয়ে নিয়ে যায় রাবেয়াদের বাড়ি সেখানে আত্ম’হ’ত্যা করবে সেই ভয় দেখিয়ে রাবেয়ার আর আকবর চৌধুরীর বিয়ে দেন খোদেজা৷

বিয়ের দিন বাড়িতে আসার পর শোনা যায় মধুলতা অসুস্থ৷ এক দাসী জানান মধুলতা গর্ভবতী৷ আসমান যেন ভে’ঙে পরে আকবর চৌধুরীর মাথায়৷
রাবেয়ার সাথে বিয়ের কথা জানার পর মধুলতা এক মিনিট ও থাকেনি এ বাড়িতে৷ রাবেয়া চলে আসতেও চেয়েছিলো মধুলতা আসতে দেয়নি৷ আকবর চৌধুরীও সে দিন মধুলতার হাতে পায়ে ধরে আটকেছিলো কিন্তু লাভ হয়নি কোনো৷
রাবেয়ার হাত দুটি আঁকড়ে ধরে তার শেষ কথা ছিলো,
“আমি ব্যার্থ আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে আঁটকে রাখতে পারিনি আমার মানুষ কে৷ সে এখন আর আমার একা না৷ আর আমি সব কিছুর ভাগ করে নিতে পারলেও ওনাকে ভাগ করে নিতে পারবো না৷ তুমি চলে গেলেও যে দাগ টা থাকবে৷ তার থেকে বরং আমিই চলে যাই৷”
সে দিন নিজের কাছেই রাবেয়া বড় পাপী হয়ে ছিলো৷ এই শাহওয়াজ কে গর্ভে নিয়ে রাতে সে মূহুর্তে বাড়ি ত্যাগ করেন মধুলতা৷

যে মানুষ টা কে মধুলতা রেখে গেছিলো সে মানুষ টা দীর্ঘ ছয় বছর ফিরেও তাকায়নি রাবেয়ার দিকে৷ পরবর্তীতে শারীরিক সম্পর্ক টা হয়ে উঠলেও মনের খবর নেওয়া হলো না এখনো৷ রাবেয়া তার শাশুড়ীর অনেক কু-কীর্তির কথা শুনেছে৷ মানুষ টা এতটা নিকৃষ্ট আগে জানা ছিলো না তার৷ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস টানলো রাবেয়া৷

সৃষ্টিকর্তার লীলা বোঝা বড় দায়, এ মধুলতারই প্রতিরুপ যেন তারই মেয়ে রুপা৷ রুপ, আচরণ সব যেন আল্লাহ একেবারে মিলিয়ে দিয়েছে৷ মাঝে মাঝে তো মনে হয় তার না মধুলতার গর্ভ থেকেই হয়েছে তার রুপা৷
তাই হয়তো শাহওয়াজ এতটা ভালোবেসে ফেলেছে মিশে গিয়েছে সহজে?
শুরু শুরুতে তার শাশুড়ী তাকে বলতো মধুলতার ছবিটা ঘরে ছিলো দেখেছে তাই এমন হয়েছে৷এসব কথার সত্যতা জানেনা রাবেয়া তবে তার ভালো লাগে৷ সে চায় তার মেয়ে যেন মধুলতার মতই বিচক্ষণী, ধৈর্য্যবান, আর বুদ্ধিমান হয়৷

..

অভিমানে টইটম্বুর আজ অষ্টাদশী হৃদয়, ক্লেশ আর কান্নারা উপচে পরা ভীর করছে৷ লোকটা কি পাষাণ? ময়ূরাক্ষী ঢেড় টের পেলো ইচ্ছে ইচ্ছে করে লোকটা ফেলেছে৷
এবং পরিশেষে সিকার ও করলো৷ এ কেমন অদ্ভুত আচরণ? নিজেই কষ্ট দিলো আবার নিজেই তাতে মলম লাগালো৷ সে তো ওই লোক থেকে দূরে দুরেই থাকে তাহলে নিজ থেকে কেন সান্নিধ্যে আসে কেনই বা কষ্ট দেয়? এমন কি কেউ কারো সাথে করে? আর ওই অভদ্র লোকের জন্যই ওর কেন খারাপ লাগে? এমন তো চায়নি ময়ূরাক্ষী৷ তার মন এত বেহায়া হলো কি করে? আকাশ পাতাল ভাবনা নিয়ে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ময়ূরাক্ষী৷
বুক কেম্ন ধুরু ধুরু করছে৷ এত কেন কান্না পাচ্ছে তার? ওই অভদ্র লোকের সামনে সে আর কখনোই যাবে না৷ এর মাঝেই কর্ণপাত হলো মৃদুলার ঠোঁট কাঁ’টা সাংঘাতিক এক কথা,
“বুবু তুমি এইখানে? তোমারে সারা বাড়ি খুঁইজা আমি হয়রান৷ ভাইজান চইলা গেছে তাই কি মন খারাপ কইরা আছো বুবু?”

চলবে ইনশাআল্লাহ

নোট:১২০৯ শব্দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here