ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা পাঁচ

0
155

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

পাঁচ

ফোনে কথা বলছিলো শাহওয়াজ হুট করেই কারো সাথে ধাক্কা খাওয়ায় ফোনটা ছিঁটকে গিয়ে পরে কিছুটা দূর৷ ময়ূরাক্ষী চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে৷ আজ বুঝি শেষ রক্ষা হলো না৷

কিন্তু না ফোন ছিঁটকে পরায় সে দিকেই ধ্যান গেলো শাহওয়াজ এর, হসপিটালে জয়েন করার তিন মাসের মাথায় দশ দিনের ছুটি নিতে হয়েছে৷এমনি তার চিন্তার শেষ নেই ফোনটার আবার কিছু হলে কেলেংকারী হবে৷ মায়ের অসুখ হলেও যে কখনো ছুটি নেয়নি সে দশ দিনের ছুটি নিয়ে বিয়ের জন্য দূরে এসেছে৷
শাহওয়াজ এর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো ময়ূরাক্ষী, হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন৷
হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো সামনের দিকে৷ তখনি পিছন থেকে গম্ভীর মুখে বললো কেউ,
“এই মেয়ে, কে আপনি? দেখতে পান না নাকি?”
কিন্তু পিছন ফিরে তাকায় কে? সে তো তারাহুরো করে নিমেষে দৃষ্টির আড়াল হলো৷

ময়ূরাক্ষীর এহেন কান্ডে রুপা আর মৃদুলা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে হাসির রাগ হচ্ছে৷ মেয়েটা ইচ্ছে করে শাহওয়াজ এর গা-য়ে পরেছে৷ এ মেয়েকে শায়েস্তা করতেই হবে৷

শাহওয়াজ ফস করে নিশ্বাস টানলো, রাগে শরীর রি রি করে উঠলো৷ মেয়েটার ব্যাবহার দেখে বিস্মিত না হয়ে পারলো না৷ কি অভদ্র, নূন্যতম জ্ঞান বুদ্ধি বা মানবিকতা নেই৷ মানুষ স্যরিও তো বলে? ফিসফিসিয়ে বললো,
” ম্যানার্সলেস৷”

রুপার মন ক্ষুন্ন হলো, ভাইজান নিশ্চয়ই ময়ূরাক্ষী কে ভুল বুঝছে? আচ্ছা এক বাড়িতে থেকে একজন মানুষের থেকে লুকিয়ে আরেকজন মানুষ থাকতে পারে? কি যেন কি ভেবে তপ্ত শ্বাস টানলো৷

শাহওয়াজ আকাশ কে দেখে সামনে এগোবে ঠিক তখনি দৃষ্টি গেলো নিচে ক্ষানিকটা চমকালো৷ সে দিনের সেই নুপুরটা৷ তুললো নুপুরটা৷ সে দিন যে মৃদুলা বললো নুপুরটা তার বুবুর৷ আর হাসি বলেছিলো রাস্তায় দেখা হওয়া মেয়েটা সে সব যেন গোলমেলে লাগছে৷ নুপুরটা তুলে নিয়ে সবার সামনে ধরে জিগ্যেস করলো,
“এটা কি তোমাদের?”

শাহওয়াজ এর কথায় কেউ কিছু বলার আগেই ফট করে মৃদুলা মুখ ফসকে বললো,
“আরে এটাতো ময়ূরাক্ষী বুবুর৷ বুবুর নুপুর খালি আপনিই পান কেমনে ভাইজান?”

ময়ূরাক্ষী নামটা প্রথম শুনেছে শাহওয়াজ ক্ষানিকটা ভ্রু কুঁচকে চাইলো শাহওয়াজ৷ চোখ মুখ জুড়ে আকাশ সমান কৌতুহল৷ নুপুরের মালিককে দেখার ইচ্ছা জাগলো প্রবল৷ ধাক্কা লাগা মেয়েটির নাম কি ময়ূরাক্ষী? সব যেন অদ্ভুত লাগছে৷ সে পালটা প্রশ্ন করবে হাসি কোনো রকম সামলে নিয়ে আকাশের উদ্দেশ্যে বললো,
“আকাশ ভাইয়া? ইনিই হলো আমাদের বাড়ির বড় পূত্র৷ শাহওয়াজ ভাইজান৷”
শেষের কথাটা একটু আস্তে আস্তেই বললো লজ্জা জড়িত নত মুখে৷ ফের তাকালো শাহওয়াজ এর দিকে৷ কয়েক দফায় বুকটা কেঁপে উঠলো যেন৷ ইশ লোকটা কত সুদর্শন শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে৷ শাহওয়াজ আকাশের সাথে কুশল বিনিময় করলেও মন তার অন্য দিকে৷ মন যেন বার বার আওড়াচ্ছে “ময়ূরাক্ষী, ময়ূরাক্ষী ” আর মস্তিষ্কে বার বার সে আঁখি জোরা জ্বল জ্বল করে উঠছে৷
..
শুক্রবারের এখনো দুই দিন বাকি, চৌধুরী বাড়িতে এখন থেকেই তোরজোর চলছে৷ আজ নতুন রঙ করা হচ্ছে সে রঙের উপর৷ খোদেজা বেগম বৈঠকখানায় বসে পান চিবোচ্ছে তার পাশে বসে শুপারি কেঁ’টে দিচ্ছে রাহেলা৷ তার কিছুটা দূর রাবেয়া আর রুমানা৷ রুমানা হলো মৃদুলার মা৷ তার মাঝেই ঢুকলো ময়ূরাক্ষী জোরে জোরে দম ছাড়ছে৷

রাবেয়া তা দেখে এগিয়ে এসে চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,
“এমন করছিস কেন মা?কি হয়েছে?
ময়ূরাক্ষী আড়ষ্ট হয়ে দাদিজানের পানে তাকালো৷ বললো না কিছু জাদি জানলে বকবে৷ রাহেলার গা পিত্তি জ্বলে যায় মেয়েটাকে দেখলে৷ এর মাঝেই রেহান এলো, ময়ূরাক্ষীকে দেখে তার ও রাগ হলো৷ সে দেখেছে শাহওয়াজ এর উপর কি করে পরেছে৷ ময়ূরাক্ষীকে স্পর্শ করার অধিকার একমাত্র তার৷ ফস ফস করে নিশ্বাস ফেলে কাটকাট কন্ঠে বললো,
” তোর কি পড়াশোনা নেই? কলেজে যাচ্ছিস না কেন?যখন তখন দেখি এখানে ওখানে ঘুরে বেরাস? কিভাবে নিজের রুপ দিয়ে মানুষ কে ফাঁ’সাবি তা নিয়ে ফন্দি আঁটিস সারাদিন?”
ভরকালো ময়ূরাক্ষী৷ কি হলো হুট করে? রেহান ভাই রেগে গেলো কেন?
ময়ূরাক্ষী মিনমিনিয়ে বললো,
“রাতে পড়বো রেহান ভাই৷”
ময়ুরাক্ষীর মলিন কন্ঠে গললো রেহান৷ মেয়েটার চাওওনি মেয়েটার কন্ঠ তাকে ক্ষনে ক্ষনে বিনাশ করে৷ মাথা ঝিম মেরে আসে বুক ধুকপুক করে৷
রেহান কিছু বলতে চেয়েও যেন বলতে পারলো না৷ চলে গেলো সে৷ যাক বাঁচা গেছে!
ময়ূরাক্ষী এগিয়ে গিয়ে বসলো দাদির সামনে রাহেলা থেকে সুপারি গুলো নিয়ে নিজে কাঁ’টা শুরু করলো রাবেয়া গেছেন নাস্তা বানানো কতদূর হলো তা দেখতে৷ আকবর চৌধুরী পই পই করে বলেছেন যেন মেহমানদারী ভালো করে করা হয়৷ রসুই ঘরের সব কাজ রাবেয়া করলেও টুকটাক নাস্তা রান্নার লোকটাই বানায়৷
চৌধুরীর বাড়ির কোনায় কোনায় কাজের লোক থাকলেও তাকে হাত লাগাতেই হয়৷

রাহেলা আর রুমানা শাশুড়ীর সামনে বসে কেমন উশখুশ করছে৷ যেন কিছু বলতে চায় কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছে না৷ খোদেজার বিচ্চক্ষণী দৃষ্টি, ঠোঁট নাড়ালেই বুঝতে পারে মানুষ কি বলতে চায়৷ ছেলের বউদের এমন উশখুশ করতে দেখে বললো,
“কি ব্যাপার? কিছু বলবে?”

রাহেলা যেন চাঁদ পেলো এই সুযোগটাই খুঁজছিলো৷ মিনমিনিয়ে বললো,
“আম্মা একটা কথা বলি যদি অনুমতি দেন?”
খোদেজা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“বলো কি বলবে শুনি?”

রাহেলা আশেপাশে পরখ করে মিনমিনিয়ে বললো,
“আম্মা শাহওয়াজ কি একেবারের জন্য চইলা আসছে?”
বলে শুকনো ঢোক গিললো শাশুড়ির পানে তাকালো৷ মহিলার মুখ চোখ স্বাভাবিক৷ কিন্তু হুট করেই মুখ গুলো৷ বিস্রি একটা কথা বলে বললো,
“এসব জাইনা তুমি কি করবা? থাকলেইবা তোমার কি? দুইজনের একজন ও তো একটা পোলা জন্ম দিতে পারলা না৷ ”
কিছু বলবে তার যেন হুস এলো ময়ূরাক্ষীর পানে তাকালো গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ময়ূরাক্ষী বাইরে যা তো দেখ ওরা আসছে নাকি৷”
ময়ূরাক্ষী সায় দিলো৷ তার এসব শুনে কাজ নেই, না আছে আগ্রহ৷ সে বাইরের দিকে যাবে তার আগেই কানে এলো দাদিজানের কথা,
“তোমার মাইয়াডারে কিছু শিখাও….৷ ”
তারপর আর শুনেনি বলেছে তারা কারণ এতক্ষণে বেরিয়ে এসেছে৷

অন্দর থেকে বেরিয়েই বিশাল বাগান৷ এ বাগানটা ময়ূরাক্ষীর বেশ শখের মালি কাকা আর ও নিজে হাতে করেছে৷ বাইরে আসতেই আকাশ আর রুপাদের দেখতে পেলো৷ শাহওয়াজ নেই আশেপাশে ওরা নিশ্চয়ই এখন অন্দরে ঢুকবে?

আকাশ ভারি ভালো মানুষ, রুপাকে অনেক ভালোবাসে৷ তাদের গল্পটাও সুন্দর লোকটা সব কিছু এক করে যেন সমবন্ধটা পাঁকা করেছে৷ ওদিক আর গেলোনা৷ এ বাড়িটি বিশাল বড় বাড়ি অন্দরটা যেমন সুন্দর তেমন বাইরের বাগানটাও সুন্দর৷ তেমন সুন্দর আশেপাশের রাস্তা গুলো৷ এ বাড়িতে দুটো পুকুর একটা বাইরে একটা ভিতরে৷ ভিতরের পুকুরের পাশেই ওই বৈঠকখানা৷ সেখানেই হাটা ধরলো ময়ূরাক্ষী৷ এ পুকুরটি পদ্মপুকুর তবে এখন ফুল নেই পুকুর পারের এ জায়টা বেজায় পছন্দ ময়ূরাক্ষীর৷
শত মন খারাপের সময় কাটিয়েছে এখানে৷

পুকুরে পা ভিজিয়ে বসলো৷ পুকুরে পদ্মপাতায় ভরা ছিলো আজ ভোরেই মানুষ দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে৷ হুট করেই পায়ের দিকে নজর যেতেই চমকে উঠলো৷
তৎক্ষনাৎ উঠে চারোপাশে নজর বুলালো৷ নুপুরটা গেলো কোথায়? নুপুর জোড়া দিয়েছিলো মিনারা৷ একটা শাহওয়াজ এর কাছে আছে মৃদুলা বলেছে তাকে৷
ময়ূরাক্ষী সর্বদাই বেখেয়ালিমনা এখন করবে কি সে? চোখ টইটম্বুর হয়ে এলো৷যেন এখনি বাঁধ ভাঙবে কি করে হারাতে পারলো সে? আঁখি ভর্তি টইটম্বুর পানি নিয়ে বসলো ওখানে৷ হুট করেই কর্ণকুহর হলো গম্ভীর স্বর,
“আরে আপনি সেই ম্যানার্সলেস মেয়েটি না? কি যেন নাম? ও হ্যাঁ ময়ূরাক্ষী৷ ”

চলবে,

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/975101614211611/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here