ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা ছয়

0
434

!#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

ছয়

“আরে আপনি সেই ম্যানার্সলেস মেয়েটি না? কি যেন নাম? ও হ্যাঁ ময়ূরাক্ষী৷ ”
আকস্মিক গম্ভীর কন্ঠে কম্পন ধরলো দেহে৷ ঘাম ছুটলো ওর্না খানা ঠিকঠাক করে ওর্না দিয়েই সে দিনের ন্যায় মুখটি ঢাকলো৷
শাহওয়াজ কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ আকাশ সমান ভাবনা তার মস্তিষ্কে মেয়েটি কে? যতদূর জানে এ বাড়িতে বাইরের কেউ খুব সহজে প্রবেশ করতে পারেন না৷ মৃদুলা মেয়েটিকে বুবু বলে সম্বোধন করছিলো৷ মেয়েটি কি রুপা, বা হাসির বন্ধুবী? সে স্পষ্ট দেখেছে ধাক্কা দেওয়া ব্যাক্তিটিই এ মেয়েটি৷
“কথা কেন বলছেন না? আপনি এখানে কি করছেন?”
মেয়েটি এবারো সারা শব্দ করলো না৷ ওপাশ ফিরেই তাকিয়ে আছে৷ মেয়েটি কি কথা বলতে পারে না? হুট করেই কিছু ভাবলো শাহওয়াজ৷ পকেট থেকে নুপুরটা বের করে রুনঝুন শব্দ করলো৷
বললো,
“এটা আপনার?”
ময়ূরাক্ষীর চকিত ফিরলো ওর্না দিয়ে মুখ চেপে শাহওয়াজ এর পানে ফিরে উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
“আরে এটাতো আমার নুপুর৷ ”
নুপুর দেখে টইটম্বুর আঁখি জোড়ায় আমোদ দেখা গেলো৷ হাত বাড়িয়ে নিতে চাইলো সাথে সাথেই সরিয়ে ফেললো নুপুরটি৷ ময়ূরাক্ষী মুখ ফুলিয়ে মাথা উচু করে তাকালো শাহওয়াজ এর পানে৷ ভদ্রলোক এত লম্বা ময়ূরাক্ষীর বেশ বেগ পেতে হয়৷ শাহওয়াজ এর চোখ মুখেও বিস্ময় ভাব৷আরে এ তো সেই মেয়ে, এইতো চেই আঁখি৷ এ নেত্র যে শাহওয়াজ এর মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে তবে হাসি যে বললো ও ছিলো?
মেয়েটি কে? তারই নাম ময়ূরাক্ষী? আঁখিদ্বয় ফের পরখ করলো৷ তাকালেই যেন অতলে ডুবে যায়৷
শাহওয়াজ নুপুরটি সরিয়ে নিতেই ক্ষুণ্ণ হলো ময়ূরাক্ষীর মন দৃষ্টি উঁচু করে তাকালো৷ হাত বাড়িয়ে বললো,
“নুপুরটা আমার, ওটা দিন আমায়৷”
শাহওয়াজ এর মন ছুঁলো৷ মেয়েটা প্রথম দিনের ন্যায় মুখ ঢেকেই রেখেছে৷ এর হেতু জানে না শাহওয়াজ৷ তবে মেয়েটাকে নিয়ে তার আকাশ সমান কৌতুহল৷ শাহওয়াজ প্রশ্নবোধক চাওনিতে তাকিয়ে বললো,
“সে দিন রাস্তায় আপনার সাথেই দেখা হয়েছিলো না আমার?”
ময়ূরাক্ষীর রাগ হলো৷ইশ দেখা হলো কই? ফস ফস করে নিশ্বাস নিলো কঠিন স্বরে বললো,
“দেখা হয়নি পথ আঁটকেছিলেন আপনি৷”
শাহওয়াজ ভরকালো৷ মেয়েটি ভীতু, বোকা, নাকী ধূর্ত বোঝা বড় মুশকিল৷ মেয়েটির অদ্ভুত বিষয় হলো কথা বলার সাথে সাথে চোখের ভঙ্গিমা পালটায় যেন চোখ ও কথা বলছে৷
ময়ূরাক্ষী শাহওয়াজ এর ভাবনার মাঝেই বললো,
“দিন নুপুরটা৷”
শাহওয়াজ বাঁকা হেসে বললো,
“শাহওয়াজ প্রহর এর কাছে থাকা জিনিস কেউ নিতে পারেনা৷ আপনাকে দিবো তবে শর্ত আছে৷”
ময়ূরাক্ষী শাহওয়াজ এর পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো৷ বেশ বুঝলো লোকটা দিবে না তাকে৷ শর্ত দিয়ে কেন নিবে নিজের জিনিস৷ শাহওয়াজ কে উপেক্ষা করে যেতে যেতে বললো,
“লাগবে না ওটা আমার৷ আপনিই রেখে দিন৷”
বলেই দৌড় লাগালো৷ হাওয়ার ফলে ওর্না টা ও পরে গেলো৷ পা ছুই ছুই খোলা চুল গুলো দুলছে তখে মুখশ্রী খানা দেখা হলো না শাহওয়াজ এর৷ কেশ দেখেই যেন বক্ষ থমকালো৷ পাশে থাকা উঁচু কাউচের উপর বসে পরলো সে৷ ময়ূরাক্ষী চলে গেলেও আকাশ সমান প্রশ্ন রেখে গেলো এখানে৷ আঁখি যুগল বড়ই চেনা৷সেদিন বাদেও কোথায় দেখেছে?

..

সন্ধ্যা হয়েছে আরো এক ঘন্টা আগে৷ পড়তেও বসেছে এক ঘন্টা হলো৷ এইতো বললো বুবু একটু ঘুরে আসি নিচের থেকে? কিন্তু রুপা যেতে দিলো না৷ রেহান ভাই কে ও দেখতে পারছে না ময়ূরাক্ষী৷ ময়ূরাক্ষীর একটা বিড়াল আছে আকবর চৌধুরীর সামনে একদিন রুপাকে বলেছিলো তার লোম ভর্তি ছোট্ট বিড়াল গুলো খুব পছন্দ এর পরের দিনই বিড়াল হাজির৷
লোকটা অদ্ভুত মাঝে মাঝে এমন ভাব করে ময়ূরাক্ষীকে পছন্দ করেন না৷ কিন্তু সব আবদার পূর্ণ করেন৷ ময়ূরাক্ষীর বিড়ালটির নাম চাঁদ৷ বছর খানেক হলো তার কাছেই আছে কিন্তু হুটভকরেই অসুস্থ হওয়ায় রেহান ভাই তার এক বন্ধুবীর কাছে দিয়ে আসলো সে নাকি ডাক্তার কিন্তু তিন দিন হলো এখনো নিয়ে আসলো না৷
রুপা নিচে গেছে অনেক্ষণ হলো৷ হাফ ছেড়ে বাঁচলো৷ পালানোর মোক্ষম সময়৷ বই গোছালো মেঝোমা বলেছিলো তেল দিয়ে দিবে৷ সেখানে গেলে এ যাত্রায় বাঁচা যাবে পড়া থেকে আর রুপাবু থেকে৷ বই গুছিয়ে তেল নিয়ে ছুটলো মেঝোমার ঘরের দিকে৷

মিনারা চুপচাপ ধাঁচের মানুষ৷ ঘর ছেড়ে সে খুব একটা বের ও হয়না৷ বের হলে হয়তো শাশুড়ী কটু কথা বলবে নয়তো ছোটো দুই জ্বা ইঙ্গিতে তাকে কথা শোনাতে ছাড়ে না৷ কত ডাক্তার, কবিরাজ দেখালো কিন্তু ফলাফল শূন্য৷ সৃষ্টি কর্তার তার উপর কিসের এত অভিমান? সে কি মা হওয়ার যোগ্য না?
তবে ময়ূরাক্ষীকে দেখলে তার বড়ই মায়া হয়৷ আপন আপন লাগে৷ ঘষে ঘষে তেল দিয়ে দিচ্ছে৷ এ চুল নিয়েও বিশাল কাহিনী আছে৷ ময়ূরাক্ষীর চুল গুলো কার মত হয়েছে মাঝে মাঝে ভাবে৷ মেয়েটির মায়ের বোধহয় এত বড়ই চুল ছিলো?ছোটো বেলা থেকেই এমন চুল ময়ূরাক্ষীর৷ রাহেলা কত বার ময়ূরাক্ষীর চুল কেঁটে দিয়েছিলো৷ কিন্তু তবুও দু-তিন মাস যেতে না যেতে চুল ফের বড় হওয়া শুরু করে৷
মিনারা তেল দিচ্ছে আর এটা ওটা বলছে এর মাঝেই প্রবেশ করলো তার স্বামী রুম্মন৷ আকবর চৌধুরীর ন্যায় কঠিন ধাঁচের মানুষ৷ বিয়ে হয়েছে যুগ হলো কিন্তু লোকটা তেমন খোলামেলা কথাই বলেনি কখনো৷ তবে রুম্মন চৌধুরীর মায়ের প্রতি তেমন টান নেই৷
ঘরে ঢুকেই ময়ূরাক্ষীকে দেখে রাগ চাড়া দিলো মাথায়৷ তার ময়ূরাক্ষী কে মোটেও পছন্দ না৷ ময়ূরাক্ষীকে দেখলেই যেন অদ্ভুত কিছু স্মৃতিচারণ হয়৷
“তুই এখানে কি করছিস?”
উচু কন্ঠে কেঁপে উঠলো ময়ূরাক্ষী মিনারা কিছু বলবে তার আগেই রুম্মন চৌধুরী বললো,
“তোকে না আমার ঘরে আসতে মানা করেছি? যা এখান থেকে৷”
টুপ টুপ করে আঁখি থেকে কয়েক ফোটা মুক্তার ন্যায় পানি পরলো৷ মিনারার মায়া লাগলো৷ মিনারা ফের কিছু বলবে রুম্মন চৌধুরী বললো,
“এদের মায়া মায়া মুখ দেখে ফেসো না মিনারা৷ এরা শুধু মানুষ কে ফাঁসাতেই জানে৷”
বলেই সে বেরিয়ে গেলো৷ রাগে গা রি রি করছে৷ কেন এমন হয়? এ মেয়েটার সাথেতো ওই মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই তবে তার ময়ূরাক্ষী কে দেখলে এত রাগ হয় কিসের? হুট করেই ফের স্মৃতি চারণ হলো এক জোড়া আঁখি৷ বক্ষ খানা জ্বলে উঠলো৷ শ্বাস কষ্ট বাড়লো৷ পকেট থেকে ইনহেলার বের করে তা মুখে পুরলো৷

..
ঘামে জবুথুবু হয়ে বাড়িতে ফিরলো শাহওয়াজ৷ রাত তখন সারে আটটা বাজে৷ দু-দিন হয় এ বাড়িতে আছে আজ গেছিলো কিছু কাজে৷ শূন্য হাত এবং নিরাশ হয়ে ফিরলো৷
মা কে যে সে কথা দিয়ে এসেছে৷ সেই কথা কি সে রাখতে পারবে না?
এখানে যে কাজের জন্য এসেছে তা কি তাহলে হবে না? নাহ৷ এত তাড়াতাড়ি খেই হারালে চলে? হাতে তো আটদিন রয়েছে৷
এ আটদিনে কিছু না হলে দরকার পরে অন্য ব্যাবস্থা নিবে৷
শাহওয়াজ কে ঢুকতে দেখে রাবেয়া রাশে পাশে খুঁজলো রুপাকে৷ কাজের লোক ভর্তি বাড়ি কিন্তু তার স্বামীর যে নির্দেশ ছেলেকে নিজ হাতে যত্ন করতে হবে৷
উপায় না পেয়ে সেই এগিয়ে গেলো৷ জড়তা আষ্টেপৃষ্টে ধরলো সাথে আকাশ সমান অপরাধবোধ৷
ছেলেটা কে চিন্তিত দেখাচ্ছে কি হলো আবার? এগিয়ে এলো মাথার ঘোমটা টা ঠিকঠাক করে৷ নমনীয় কন্ঠে শুধালো,
“আব্বা তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে৷ শরীর খারাপ লাগছে?”
শাহওয়াজ একবার তাকালো৷ শরীর এর রক্ত টগবগিয়ে উঠলো৷ চোখ মুখ নিমেষে লাল হলো৷ তবে নিয়ন্ত্রণ করলো নিজেকে৷ মা বলেছে মহিলাটার কোনো দোষ নেই৷ সে ও চলে যেতে চেয়েছিলো শাহওয়াজ এর মা যেতে দেয়নি৷ শাহওয়াজ নিচু কন্ঠে উত্তর দিলো,
“না৷”
রাবেয়া উৎফুল্ল হলো৷ ভেবেছিলো ছেলেটা কথা বলবে নাকি বলবে না৷ সে ফের জিগ্যেস করলো,
“আব্বা চা দিবো?”
শাহওয়াজ খেয়াল করলো মহিলাটি তাকে আব্বা আব্বা করে শুধাচ্ছে৷ শাহওয়াজ কিছু বলবে তার আগেই কোথ্যেকে রুপা এসে যেন বললো,
“আম্মা ভাইজান চা পছন্দ করেন না৷আমি কফি করে দিচ্ছি৷”
রাবেয়া অবাক হলো৷ মেয়েটা তার ভাইজানের পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখছে৷ শাহওয়াজ এর ও ভালো লাগলো৷ মেয়েটার স্বভাব তার মায়ের মত৷ ভেবেছিলো এ বাড়িতে আসলে কারো সাথে কথা বলবে না কিন্তু প্রথম দিন যখন চা নিয়ে গেলো পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলো৷ প্রথম দেখলে যে কেউ ভাববে তার মায়ের কপি৷ মায়ের মত সব দিকে রুপার নজর৷ এর মাঝেই রুপা কফি নিয়ে এলো ভাইয়ের পাশে বসলো৷ রুওয়া বসতেই শাহওয়াজ হুট করেই শুধালো,
“ময়ূরাক্ষী কে?”

চলবে ইনশাআল্লাহ,

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/SMqTwiy3rmYsnUKg/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here