ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা সাত

0
434

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

সাত

এর মাঝেই রুপা কফি নিয়ে এলো ভাইয়ের পাশে বসলো৷ রুপা বসতেই শাহওয়াজ হুট করেই শুধালো,
“ময়ূরাক্ষী কে?”
সচকিত দৃষ্টিতে মায়ের পানে তাকালো রুপা৷ বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে৷ রাবেয়া স্বাভাবিকই আছে৷ সে বুঝে পায় না তার শাশুড়ী ময়ূরাক্ষীকে কত দিন এমন আড়াল করে রাখতে পারবে? আড়াল করেই লাভ টা কি?সে যা ভেবে এসব করছে তা কি সম্ভব?
রাবেয়া কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ বললো,
“আশ্রিতা এ বাড়ির৷”
রাবেয়া আর রুপা পিছন ফিরলো৷ খোদেজা দাঁড়িয়ে আছে৷ খোদেজা এগিয়ে আসলো৷ তার চোখমুখ স্বাভাবিক৷ এগিয়ে এলো সে নাতীর পাশে বসলো৷ শাহওয়াজ এর মন কুঠিরে হাজার প্রশ্নরা ভীর করলো৷ তবে এখন এত কৌতুহল দেখালে এরা অন্য সন্দেহ করবে৷
শাহওয়াজ কফিটা শেষ করলো এর মাঝেই বাড়ির সবাই আসলো৷ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে৷ আকবর চৌধুরীর উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলো বললো,
“আমার খাবার টা উপরে পাঠিয়ে দিলে ভালো হয়৷”
এর মাঝেই রাহেলা বলে উঠলো,
“কিন্তু এ বাড়ির নিয়ম তো সবাই এক সাথে বসে খাবে৷”

শাহওয়াজ রাহেলার প্রশ্নটায় হাসলেন অতঃপর আকবর চৌধুরীর পানে তাকিয়ে বললেন,
“নিয়মটা তো বাড়ির মানুষদের জন্য৷ ”
বলে আর মূহুর্ত ও দাঁড়ালেন না৷ পা চালিয়ে উপরের দিকে গেলেন৷ আকবর চৌধুরী আহত হলেন বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো৷ কি বলছে তার ছেলে? তবে দূর্বলতা দেখালেন না কাউকে কঠোর মুখে দাঁড়িয়ে রইলেন৷ খোদেজা বেগম রেগে গেলো বিচ্ছিরি একটা অকথ্য কথা বলে ছেলেকে একটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বললেন,
“** নিজে গেছে আমার নাতীরেও লইয়া গেছে এখন আমার নাতী আমাদের ভুল বুঝবে৷”
এখানে থাকা আকবর চৌধুরী মায়ের এমন কথায় কিছু না বললেও রেগে গেলেন রুম্মন চৌধুরী৷ ভাবী তার বড়ই প্রিয় ছিলো,বাড়ির কেউ তেমন যোগাযোগ না থাকলেও ভাবী যাওয়ার পর সে খবর নিতো৷ কিন্তু তারা দেশ ছাড়ার পর আর যোগাযোগ করা হয়নি৷ এ মহিলার মুখের ভাষা চরম রকমের খারাপ রুম্মন চৌধুরী রেগে গিয়ে বললেন,
“মুখের ভাষা ঠিক করুন আম্মা৷ আপনারা তার সাথে কম অপরাধ করেননি৷ আপনার সু-মহান বড় ছেলে সব ভুললেও আমি কিছু ভুলিনি৷ আমার মুখ খোলাবেন না খবরদার৷”
বলে সে এখানে দাঁড়ালেন না৷ খোদেজা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো৷ শাহওয়াজ উপরেই দাঁড়ানো, উপর থেকে সব শুনেছে সে৷ তার মাকে বলা অকথ্য কথাটি শুনেছে সে৷ সে আসতেই যাচ্ছিলো এর মাঝেই রুম্মন চৌধুরী উত্তর টা দিলেন৷ আকবর চৌধুরীর প্রতি রাগ বাড়লো৷ সে কি করে কুলুপ আঁটলো? তার সাথে বাড়লো খোদেজার প্রতি ক্ষোভ৷ সব সুদে আসলে হিসাব নিবে সে৷ পতন অতী সন্নিকট৷

সবাই খাবার টেবিলে বললেন৷ আকবর চৌধুরী রুপাকে বললেন শাহওয়াজ এর খাবারটা উপরে দিয়ে আসতে৷ সবাই যখন খাবার ঘরে যাচ্ছিলো খোদেজা ফিসফিসিয়ে রাবেয়ার উদ্দেশ্যে বললো,
“এখনো সময় আছে আকবর রে হাতের মুঠোয় নাও বড় বউ৷ এ ছেলে এসেছে দু-দিন পর মধুলতাকেও না নিয়ে আসে আকবর৷ দেখছোনা ছেলে এত বছরের বড় নিয়ম ভাঙলো ছেলে কিছু বললো না? একদিন রেহান না আসায় কি করেছিলো কনে আছে? আমার ওই নাতীটাকে সে দিন খাবার অব্দি দিতে দেয়নি৷ কিন্তু নিজের ছেলের বেলায় ষোলো আনা৷ তোমারে কিন্তু শুধু শুধু কাঠ কয়লা খুয়াইয়া এই বাড়িতে আনিনাই বউ৷”
বলেই খোদেজা চলে গেলেন৷ রাবেয়া ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন৷ তপ্ত শ্বাস ফেললেন৷ শাশুড়ীর কথা ভাবছে না সে, মানুষ টা তার স্বামী হলেও কোনো কালে তার ছিলো না৷ শুধু বিয়ে হলেই মানুষ নিজের হয় না৷ এ মহিলা শুধরাবার না৷

..

শাহওয়াজ এর খাবার নিয়ে শাহওয়াজ এর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাসি৷ দু-বার করাঘাত করলো কিন্তু শাহওয়াজ এর সারা নেই কোনো৷ আম্মা বলেছে তাকে শাহওয়াজ এর সামনে সামনেই থাকতে সব সময়৷ তাইতো রুপা যখন খাবার নিয়ে আসছিলো কৌশলে সে খাবার রাহেলা তার মেয়ে কে দিয়েই পাঠালো৷
হাসি ফের কড়ায় আঘাত করলো ওপাশ থেকে ভেসে এলো গম্ভীর স্বর,
“খাবার নিয়ে যাও রুপা, আমি খাবো না৷”
হাসি এপাশ ওপাশ তাকালো৷ মা কে বলেছিলো সাথে একটা কাজের লোক পাঠাতে সে কি এসব পারে? শুক্রবার রুপার পাকা দেখা তাই ছোটো খাটো অনুষ্ঠান করা হবে বাড়িতে তাই পার্লার থেকে নখ গুলো এক্সটেনশন করিয়ে আসলো৷ এসব জিনিস এর জন্য নখ গুলোতে ব্যাথা লাগছে৷
হাসি মিনমিনিয়ে বললো,
“রুপা না, আমি ভাইজান৷”
ওপাশ থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে হাসি আবার দরজায় বারি দিলো৷ এর দুই সেকেন্ডের মাঝেই ফট করে কপাট খুললো শাহওয়াজ৷ খালি গায়ে চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে কয়েকটা চুল সামনে কপালে চলে আসায় মারাত্মক লাগছে৷ হাসির যেন হৃদস্ফন্দন থেমে থেমে আসলো৷ উজ্জল শ্যামবর্ণের পুরুষ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে৷ শাহওয়াজ ক্ষানিকটা কন্ঠ উঁচিয়েই বললো,
“কি চাই?”
হাসির মুখ হা হয়ে গিয়েছিলো৷ শাহওয়াজ এর কথায় চকিত ফিরলো ক্ষানিকটা কেঁপে উঠলো তড়িৎ গতিতে বললো,
“আপনার খাবার৷ ”
শাহওয়াজ রাগী কন্ঠে বললো,
“না করছিলাম কানে যায়নি কথা?”
বলে ফটাফট দরজাটা বন্ধ করে দিলো মুখের উপর৷ হাসি ভরকালো৷ এত কষ্ট করে আনলো এমন করলো লোকটা?
হাসি বিরস মুখে খাবারের ট্রে খানা নিয়ে নিচে নামলো৷

সবার খাওয়া শেষ হয়েছে ততক্ষণে বলতে গেলে আজ কেউই খায়নি তেমন৷ সবাই এক সাথে খেলেও রাবেয়া খায়নি আজ৷ হাসি আসার অপেক্ষা করছে হাসি নিচে নামলো তার মাঝেই রুপাকে পেলো৷ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“তোর ভাই এর খাবার তুইই খা বুবু৷”
বলেই চলে গেলো৷ এর মাঝেই রাহেলা সবটা শুনে রুপাকে বললো,
“রাখতো, না খেলে নেই৷”
রাবেয়া আশাহত হলো৷ ছেলেটা না খেয়ে থাকবে? এত্ত বড় রাত এক কাপ কফিতে কাটে? সে জন্মধাত্রী মা না হোক তবুতো তার ও সন্তান শাহওয়াজ৷
ছেলে না খেলে মা কি খেতে পারে৷ হতাশ দৃষ্টিতে রুপার পানে তাকিয়ে বললো,
“তুই দেখনা গিয়ে মা? ছেলেটা না খেয়ে থাকবে?”
ময়ূরাক্ষী দূর থেকে অভিভূত নয়নে তাকালো৷ মানুষ টা কত্ত অমায়িক৷ আর ওই অভদ্রলোকের এত রাগ কিসের? বদ একটা৷
রাবেয়ার কান্ড দেখে রাহেলা টিপ্পনী কেটে বললো,
“সতীনের ছেলের জন্য এত দরদ বুবু? নাকি ভাই জানের কাছে ভালো সাজার কৌশল? ”
রাবেয়ার কথাটা মন্দ লাগলেও এর উত্তর দিতে ইচ্ছে করলো না৷ লোকে মন্দ কথা বলেই তাই বলে যে সব কথার উত্তর দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ বরং তর্ক না করে চুপ করে যাওয়াই শ্রেয়৷ তবে সল্প ভাষায় সে বললো,
“যা ভাবিস৷ ”
রুপার ভালো লাগে না তার মা কে কেউ কিছু বললে৷ চাচি মুখিয়ে থাকে যেন কথা শোনানোর জন্য৷ সে খাবার নিয়ে হাটা দিলো৷

শাহওয়াজ ল্যাপটপ ঘাটছিলো৷ এখানকার কিছু তথ্যই জানার চেষ্টা করছিলো হুট করেই ফের কড়ার আঘা’ত করলো কেউ৷ এ বাড়ির মানুষ গুলো এমন কেন? বুঝে না? আর এ হাসি মেয়েটা চরম মাত্রায় বেয়াদব তা ঢেড় আঁচ পেয়েছে৷ আর মিথ্যাবাদী ও বটে৷ কি করে মিথ্যা কথা বললো?
শাহওয়াজ কঠিন স্বরে ধমকে উঠে বললো,
“হাসি আমি যেতে বলিনি তোমায়?”
কথাটা বলতে দেরি হলেও ওপাশ থেকে উত্তর আসতে দেরি হলো না,
“আমি রুপা৷ দরজা খুলুন ভাইজান৷”
রুপা নামটা শুনতেই শাহওয়াজ এর রাগ যেন পানি হলো৷ তবে খাওয়ার ইচ্ছা নেই এখান থেকেই বললো,
“আমি খাবোনা রুপা৷”
“আপনি না খেলে আমিও খাবোনা ভাইজান৷ আমি এখানেই বসলাম দরজা না খুলিলে যাবোই না৷”
রুপার আহ্লাদ মিশ্রিত রাগী কন্ঠ৷ হার মানতে বাধ্য হলো শাহওয়াজ দরজা খুলে ফের লেপটপ নিয়ে বসতে বসতে বললো,
“খাবার রেখে যাও কাজ শেষ হলে খেয়ে নিবো৷”
খাবার সামনে দিয়ে বললো,
“আপনি এখন আমার সামনে না খেলে আমি যাবোই না৷”
শাহওয়াজ খেয়াল করলো মেয়েটা আগের ন্যায় মাথা নিচু করে কথা বলছে না৷ মাথা উচুই তবে চোখের দিকে তাকায়নি৷ মেয়েটা সকাল অব্দি ভয়ে ভয়ে কথা বলতো দেখেছে শাহওয়াজ৷
শাহওয়াজ বাঁকা হেসে বললো,
“কি ব্যাপার রুপা? আজকাল আমায় ভয় পাচ্ছো না?”
মেয়েটা ফট ফট করে উত্তর দিলো,
“ওমা ভয় কেন পাবো? আপনি তো আমার ভাইজান৷ নিন এখন খান দেখি৷”
শাহওয়াজ অবাক হয়ে তাকালো কিছুক্ষণ তারপর ঠোঁট চেপে হেসে উঠলো৷ এই বাচ্চা মেয়েকে নাকি আকবর চৌধুরী বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে? ইশ রুপা তার মায়ের মেয়ে হলে বিয়ে দিতেই দিতো না৷ সবে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে মেয়েটা এখনি বিয়ে করে ফেলবে? ভাবলো বলে দেখবে রুপাকে৷

শাহওয়াজ খাচ্ছে রুপা রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখলো৷ বিছানার পাশেই টেবিল সে টেবিলের উপর একটা ফটো ফ্রেম৷ ছবিটির মানুষটিকে দেখে চমকালো রুপা৷ ছবিটি তুলে নিলো হাতে তারপর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরখ করলো৷ ছবির মানুষ টি আর তার কত্ত মিল৷ শাহওয়াজ খারার মাঝেই দেখছিলো রুপার কান্ড৷মেয়েটি উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
“ভাইজান এটা কি আপনার মা?”
শাহওয়াজ মুচকি হেসে মাথা ধুলালো৷ মানে হ্যাঁ রুপা আরো চমকালো, থমকালো৷

চলবে ইনশাআল্লাহ,

[কাল প্রথম রোজা, কাল গল্প দিবো কি না জানি না৷ আমি লিখতে পারলে দিয়ে দিবো৷ আশাকরি বুঝবেন?]

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/hsiGAZhLdkrhBnch/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here