ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা আট

0
159

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

আট

কৃষ্ণকালো আজ অম্বরটা চাঁদ নেই৷চাঁদ তারা হীন অম্বরো মুগ্ধকর৷ তবে চাঁদ না থাকলেও চারোপাশ ঝলমলে আলোয় আলোকিত৷ এত তাড়াতাড়ি কখনোই ঘুমানোর অভ্যাস নেই শাহওয়াজ এর৷ মায়ের সাথে কথা শেষ হলো সবে৷ মা কে ছাড়া এখানে এক মূহুর্ত ও মন টেকে না৷ অথচ সেই ভিন্ন পরিকল্পনা করছে৷

আজ এখানকার হসপিটাল গুলো পরিদর্শন করতে গিয়েছিলো একটু৷ শাহওয়াজ এর নানার নিজস্ব হসপিটাল রয়েছে ঢাকায়৷ সেখানেও তার নিজস্ব চেম্বার রয়েছে৷ ব্যাস্ত মানুষ হুট করেই ছুটি কাঁ’টালে অদ্ভুত লাগে৷ ডাক্তারি পেশায় আসাও মায়ের জন্যই৷ তবে শাহওয়াজ এর রাজনীতিতে জোক বেশি৷
দেশের বাইরেই বেশি সময় পার করায় এ দিকটা হয়তো তেমন গ্রাহ্য করা হয়নি কখনো৷।
আকবর সাহেব গ্রামের মোড়ল হলেও পরের নির্বাচনে নাকি তার অন্য ভাবনা রয়েছে৷ দু-দিন যাবত এখানে এলেও বেশ কিছু জানা হয়েছে শাহওয়াজ এর৷ আর নির্বাচনের আগেই তার ভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে৷

বাড়ির চারোদিক চোখ বুলাতে বুলাতেই ছাদের কাছাকাছি চলে এলো৷
পুরোনো ধাঁচের বাড়ি গুলো অদ্ভুত সৌন্দর্যে মোড়ানো থাকে৷ বাড়ির দেওয়ালে নতুন রঙ না পড়লে মনে হয় এর সৌন্দর্য বোঝায় যেতো না৷ এত বছর বাড়ির অন্দরে পরিবর্তন আসলেও বাড়ির বাইরে কোনো পরিবর্তন করেনি আকবর চৌধুরী৷
কারু কাজের পিলার গুলোতে শেওলা ধরছিলো সবে নতুন রঙ করায় ঝলমল করছে৷ এ বাড়িটি দেখতে যেমন পুরনো তেমন অনেক ব্যাপার স্যাপার ও পুরোনো রয়েছে৷ এ বাড়িতে এখনো মশাল ধরানো হয়৷ বাগানের চারোপাশে সোডিয়াম লাইট থাকলেও এখনো মশাল জ্বালানো হয়৷
সোডিয়াম লাইট এর আলোয় দিনের মত ঝকঝকে হয়ে থাকে চারোপাশ৷

চিলেকোঠা যখন পেরোবে হুট করেই চিলে কোঠার ঘর টা খোলা পায়৷ ছাদটাও বাড়িটির মত সুন্দর মায়ের কাছে শুনেছে৷
চিলেকোঠার ঘরটিতে আলো জ্বলছে ভাবলো উঁকিঝুঁকি মারবে পরক্ষণেই ভাবলো কেউ যদি থেকে থাকে?
এ বাড়িতে আসার পর ছাদে প্রথম আসা৷

শাহওয়াজ এর ধ্যান ভাঙলো চুরির শব্দে৷ রুনঝুন শব্দ পেয়ে কৌতুহলী হলো৷
চারোপাশ দেখতে দেখতেই হুট করে চোখ গেলো ছাদের মাঝামাঝি৷ ভ্রু কুঁচকে এলো তার৷ কি যেন কি ভেবে দু-এক বার পলক ফেললো৷ না সব ঠিকঠাকই আছে৷ একটি মেয়ে বসে আলতা পরছে ই তার চুল গুলো বিছিয়ে আছে নিচে৷ এত্ত বড় চুল কখনোই দেখেনি সে৷ মুখের সামনে চুল এসে পরায় দেখতে পাচ্ছে না মুখটা৷ কে মেয়েটি?

ছাদের মাঝ বরাবর বসে আলতা পরছে ময়ূরাক্ষী৷ পরনে তার আটপৌড়ে জামদানী শাড়ি, শাড়িটি দিয়েছিলো রেহান৷ ময়ূরাক্ষী একটু আহ্লাদী একটু সৌখিন ধাঁচের! হুট করেই অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছে উদয় হয়, শাড়ি তার খুব শখের৷ তবে মাঝরাতে হুটহাট শাড়ি পরতে চাওয়ার ইচ্ছে খানা কেনো হয় তার বোধগম্য হয় না৷
তবে নিজের ইচ্ছেটা সে দমিয়েও রাখতে চায় না, মন কে সায় দিয়ে হুটহাট পরেই ফেলে৷

ময়ূরাক্ষী নিজের জন্য সাজে তার সাজগোছ করে আরশিতে তাকিয়ে থাকতে কি যে ভালো লাগে৷ নিজের জন্য তার অগাধ মায়া,অগাধ ভালোবাসা৷
“কে ওখানে?”
হুট করেই কারো কন্ঠ কর্ণকুহর হতেই ধ্যান ভাঙে ময়ূরাক্ষীর৷ নড়েচড়ে উঠে কিছুটা চকিত চমকায়, থমকায়৷
মেয়েটিকে নড়তে দেখে শাহওয়াজ কিছুক্ষণ আগের নিজের ভাবনায় হাসলো৷

কিন্তু কে এই মেয়েটি? হাসি বা রুপা মনে হচ্ছেনা তো৷ হুট করেই ময়ূরাক্ষীর কথা মস্তিষ্কে এলো৷ তবুও না বোঝার ভান করে শাহওয়াজ এখানে থেকেই শুধালো,
“কে? কে ওখানে?কথা বলছেন না কেন?”
ময়ূরাক্ষী সবেই এসে বসে ছিলো৷ ঘরে ভালো লাগছিলোনা ভাবলো এখানে বসেই আলতা টা পরবে৷ চেনা গম্ভীর কন্ঠে হুট করেই ভরকালো৷ এ লোক এখন এখানে কেন? তড়িৎ গতীতে ঘোমটা টেনে উঠে দাঁড়ালো৷ হাটা ধরলো কম্পিত শরীরে, দাদি জানলে কেলেংকারী হবে৷ শাহওয়াজ আবারো বাধ সেধে বললেন,
“এই মেয়ে৷ আপনি এত রাতে পেত্নীর মত সেজে ছাদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন?? দূর্বল হৃদয়ের কেউ দেখলে তো হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যে কেউ দেহ থেকে প্রাণ খোয়াবে৷”

ময়ূরাক্ষী দাঁড়ালো আকস্মিক, মেজাজ তুরঙ্গে উঠলো৷ কি অভদ্র লোক মানুষ কে কেউ এসব বলে? সে পেত্নী? ঘুরে একেবারে মুখোমুখি দাঁড়ালো৷ রাগ নিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে এলো৷ মাঝে এখন কিঞ্চিৎ ফারাক ফস ফস করে ফুসে উঠলো মেয়েটা৷ ঘোমটা খানা সেই কখন ইশারা না পেয়ে পরে গেছে৷ সে কি আর এত বাঁধা মানে? ইশারাহীন সেও বাতাসে ধুলছে৷
থমকালো শাহওয়াজ, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হয়েও নিজের হৃদয়টা বোধহয় এ কঠিন ব্যামো থেকে রক্ষা করতে পারলো না৷ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো, হরিণী চোখের অধিকারী দুধে আলতা বরণের মেয়েটির পানে এদিকে ময়ূরাক্ষী আকাশ চুম্বী রাগ নিয়ে শুধালো,
“আপনি আমায় পেত্নী কেন বললেন? মানুষ পেত্নী হয় কি করে?”
বলে থামলো৷ লোকটা কি নির্লজ্জের মত তাকিয়ে আছে৷ তা দেখে ময়ূরাক্ষী বললো,
“কি অভদ্র লোক তাকিয়ে আছেন কেন? দাদিজানের প্রিয় নাতি বলে যে আমি ভয় পাবো ভাববেন না৷”
শাহওয়াজ এখনো তাকিয়ে৷ পলক ফেলছে না লোকটা, হুট করেই লজ্জা গুলো বিনা আমন্ত্রণে ভীর করলো৷ খেই হারালো ময়ূরাক্ষী হুস ফিরলো লোকটার মুখোমুখি সে তড়িৎ গতীতে প্রস্থান করতে চাইলো কিন্তুই রক্ষে হলো না৷ খপ করে চেপে ধরেলো শাহওয়াজ ময়ূরাক্ষীর হস্ত খানা৷ বাঁকা হাসি খানা চওড়া হলো মিনমিনিয়ে বললো,
“পেত্নীরও যে চোখ ধাঁধানো সুন্দর হয় তা তো জানা ছিলো না৷ ষড়যন্ত্র এঁটে এভাবে আমার সামনে এলেন নাকি মেয়ে?”
শাহওয়াজ এর এমন কন্ঠে শিউরে উঠলো অষ্টাদশী ময়ূরাক্ষীর দেহ৷ থমকালো৷ চোখ খিঁচে কোনো রকম হাত ছাড়িয়ে পালালো সে৷ নিচে রেখে গেলো ভাঙা কাচের চুরি গুলো যা শাহওয়াজ এর হাতের চাপেই ভেঙেছে৷ সে গুলো ও সযত্নে তুলে নিলো শাহওয়াজ৷

,,

আকবর চৌধুরীর সকাল শুরু হলো তার অভিমানী পূত্র কে দেখে৷ আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে সে যানে না তবে চাঁদ যে নিজ থেকে তার কাছে এসেছে তা ঢেঢ় টের পাচ্ছে৷ আকবর চৌধুরী যখন নিজের কক্ষ ছেড়ে বের হলো হুট করেই শাহওয়াজ এর আগমন৷ তাকে দেখেই মুখ খানা বাংলার পাঁচের ন্যায় করে বললো,
“আমার সাথে আপনার কিছু কথা আছে৷”

আকবর চৌধুরীর আজকাল বিশাল চিন্তা হয়৷ ছেলেটি কার মত হয়েছে? যত দূর জানে মধুলতা তো গোমরা মুখো নয় তবে এই ছেলে হাসে না কেন? পরক্ষণেই ভেতরের সত্তা যেন তার দিকেই ইশারা করে৷ নিজের ভাবিনায় তখন নিজেই ভরকে যায় আকবর চৌধুরী৷
সে ও ক্ষানিকটা নরম কন্ঠে বলে,
“ঘরে এসো আমার?”

শাহওয়াজ বললো,
“উত্তরে আমি একটা জমি দেখে এসেছি৷ তা নিয়েই কথা বলবো বৈঠকখানায় আসুন, আমি ওখানেই অপেক্ষা করছি৷”
বলেই এক মুহূর্ত ও দাঁড়ালো না, হন হনিয়ে নেমে গেলো নিচে৷

বৈঠক খানায় প্রবেশ করতেই আকস্মিক এক কান্ড ঘটলো, ঢুকতে যাবে ঠিক তখনি কারো সাথে ধাক্কা খেলো৷ ময়ূরাক্ষী সবেই দাদিজান এর জন্য চা দিয়ে বের হচ্ছিলো এর মাঝে শাহওয়াজ ও ঢুকছিলো হুট করেই দুজন ধাক্কা খেলো৷
ময়ূরাক্ষী পরেই যাচ্ছিলো প্রায় তৎক্ষনাৎ হাত ধরে ফেললো শাহওয়াজ৷ শাহওয়াজ ময়ূরাক্ষী মুখোমুখি দেখে খোদেজা বেগমের মুখের রঙ পালটে গেলো কেমন৷ তবুও কিছু ভেবে স্বাভাবিক রইলো৷ এর মাঝেই শোনা গেলো
শাহওয়াজ এর গম্ভীর কন্ঠ,
“দেখে চলতে পারেন না মেয়ে?”

কাল রাতে চুরি ভেঙে যে জায়গাটা কেঁ’টে গিয়েছিলো সেখানেই ধরেছে শাহওয়াজ৷ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো ময়ূরাক্ষী৷ এর থেকে ভীতি ভর করলো দাদিজান পেছনেই আছেন ভেবে৷ তড়িৎ গতিতে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো৷ বৈঠকখানা ছাড়বে এর আগেই শাহওয়াজ কৌতুহলী কন্ঠে শুধালো,
“আপনার নামই তাহলে ময়ূরাক্ষী? এত দিন কোথায় ছিলেন? দেখিনি যে একবার ও?”

শাহওয়াজ এর প্রশ্নে বিস্মিত হলো ময়ূরাক্ষী৷ লোকটার সাথে কাল রাতেও দেখা হয়েছে অথচ এমন ভাব করছে যেন আজই দেখলো৷ খোদেজা পরলো মহা বিপাকে৷ কি উত্তর দিবে? সেই তো লুকিয়ে রেখেছিলো৷ তবে শাহওয়াজ কে দেখে স্বাভাবিক লাগছে তার মনে যে ভয়টা ছিলো নিমেষে মিহিয়ে গেলো৷ নিজের ভাবনায় ক্ষানিকটা নিজেই হাসলো৷
তবে এ ব্যাপার টা সামলাবে কি করে? খোদেজা আমতা আমতা করে বললো,
“ময়ূর? ও তো ঘরকুনো মেয়ে আর পড়া লেখা করে ভাই৷ কলেজ থেইকা আইসা যতটুকু সময় পায় নিজের ঘরে নাহয় রসুই ঘরেই থাকে৷”
বলেই তপ্ত শ্বাস টানলো শাহওয়াজ বিশ্বাস করেছে কি না তা বোঝার জন্য পরখ করলো৷ বুঝতে পারছে না কিছু৷ শাহওয়াজ কিছু বললো না বোধহয় বিশ্বাস করেছে৷
সে ইশারা করলো ময়ূরাক্ষীকে চলে যাওয়ার৷ ময়ূরাক্ষী পা বারাবে যাওয়ার জন্য ঠিক তখনি শাহওয়াজ ফের বললো,
“আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে আনুন তো ময়ূরাক্ষী৷”
ময়ূরাক্ষী দাঁড়ালো ইচ্ছে করলো বলতে পারবো না আমি৷ কিন্তু নিজেকে সংযত করে মিনমিনিয়ে বললো,
“কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি৷”

শাহওয়াজ মাঝ বরাবর টেবিলটা থেকে ম্যাগাজিন খানা নিয়ে ময়ূরাক্ষীর পানে তাকালো৷ চোখাচোখি হলো, মেয়েটা চোখ নামিয়ে নিলো৷ শাহওয়াজ বললো,
“আমি আপনাকে বলেছি ময়ূরাক্ষী আপনি নিয়ে আসবেন৷”

চলবে ইনশাআল্লাহ ,

[নোট:১২০০ শব্দ]

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/3CXkiWFZZozPbmKN/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here