ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা এগারো

0
153

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

এগারো

সকাল সকাল চৌধুরী বাড়িতে বিশাল এক কান্ড ঘটেছে হাসি পা পিছলে সিড়ি থেকে পরে গেছে৷ ভাগ্য বসত শুধু পা মচকেছে বেশি কিছু হয়নি৷ আর মাথায় একটু ব্যাথা পেয়েছে৷
মেয়ের এহেন অবস্থায় তো হাসির মা রাহেলা পাগল প্রায়৷ তবে তা সবার ন্যাকা কান্নাই লাগছে৷ একটু বেশি নাটকিয় যেন সব৷ কাঁদছে ঠিকি চোখ দিয়ে পানি পরছে না৷
সবার বিরক্ত লাগলেও কেউ তা প্রকাশ করতে পারছে না৷
এই মহিলা যা মানুষ একটু কিছু বললেই ফস করে ফনা তুলবে সাপের মত৷
মৃদুলা সোফায় বসে বসে কলা খাচ্ছে আর মুখ টিপে হাসছে৷ বেশ হয়েছে তার ময়ূরাক্ষীবু কে কষ্ট দিয়েছে সে ও কষ্ট পেয়েছে৷
রুপা বার বার চোখ রাঙাচ্ছে কিন্তু মেয়েটা শুনছেইনা৷ একবার তো বলেই ফেলেছিলো,
“মেঝোমা আপনি কানতাছেন কিন্তু আপনার চোক্ষে পানি নাই কেন?”

মৃদুলার এমন কথায় আর কেউ মজা পাক আর না পাক খোদেজা বেশ মজা পেয়েছে৷ তবে এ কথাটি রাহেলার কান অব্দি পৌঁছায়নি৷ এ কথা শুনলে তুলকালাম বাজাতো এ মহিলা যা৷

রাহেলা তো মরা কান্না জুরে দিচ্ছে আর বলছে,
“এক মাত্র মেয়ে তার কিছু হয়ে গেলে পাগলই হয়ে যাবে৷”
পা ভাঙলেও মানুষ বোধহয় এমন করে না সে সাধারণ পা মচকানোতে যা করছে৷ বার বার কাঁদছে আর বলছে, “শাহওয়াজ কে ডাকো ও ঠিক করে দিবে আমার মেয়ে কে৷”

রুপার বলতে ইচ্ছে করে আমার ভাইজান কিছু করবে না৷ কিন্তু বলে না৷ তার এমন আহাজারি তে ডাক্তার ও আনিয়েছে৷ ডাক্তার বলেছে তেমন কিছুই হয়নি সাধারণ মচকে গেছে৷
ডাক্তার সবেই হাসিকে দেখে গেলো৷ আজ সকাল থেকেই শাহওয়াজ কে দেখা যাচ্ছে না৷
ফোনেও পায়নি তাই ডাক্তার আনাতে হয়েছে৷ রাহেলা বেগম মেয়ের এহেন অবস্থায় প্রথম একটু খুশিই হয়েছিলো বলা যায় মেয়েকে পরা অবস্থায় দেখে না তুলেই ছুটেছিলো শাহওয়াজ এর ঘরের দিকে৷
সে ভেবেছিলো শাহওয়াজ কে গিয়ে পাবে তারপর শাহওয়াজ এসে ময়ূরাক্ষীর মত হাসি কে ও কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যাবে৷
নিজে চিকিৎসা করবে কিন্তু সব ভাবনা যেন জলে গেলো৷ বরং ঘরে ছেলে মানুষ না থাকায় কাজের লোক দিয়ে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে৷
পরে যাওয়ায় তেমন একটা চো’ট পায়নি তবে রাহেলার হা-হুতাশ দেখে মনে হচ্ছে তার মেয়ের পা টাই বুঝি ভে’ঙে গেছে৷
ডাক্তার যেতেই প্রবেশ করলো শাহওয়াজ৷ বৈঠক খানায় ছিলোই রাহেলা শাহওয়াজ কে দেখে উৎকন্ঠা হয়ে কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে এসে বলে,
“শাহওয়াজ বাবা কোথায় গেছিলা তুমি? আমার হাসিরে বাচাও বাবা৷”
রাহেলার কথায় বিরক্ত হয় খোদেজা, রুপা ভরকায়৷ যাক বাবা চাচি এমন কেন করছে? মাত্রইতো ডাক্তার দেখে গেলো৷ বলেও গেলো চিন্তার কোনো কারণ নেই৷ আবার ভাইজান কে দেখে এমন হা-হুতাশ এর কি আছে?
খোদেজা বেগম অতি মাত্রায় বিরক্ত হয়ে উঠেই চলে গেলো৷
আদিখ্যেতা দেখলে গা পিত্তি জ্বলে৷ মানলো সে বলেছে শাহওয়াজ এর সাথে হাসির কথা তাই বলে এভাবে? এভাবে ছেলে কি পটবে? আরো উত্যক্ত হবে৷ মা মেয়ের ঢং দেখলে বাঁচে না৷
তার মনে অন্য চিন্তা ঘুরছে কাল ময়ূরাক্ষী পানিতে পরে গেলো৷ আজ হাসি এভাবে পরলো৷ ময়ূরাক্ষী কে যে হাসি ই ধাক্কা দিয়েছে বা ইচ্ছে করে ফেলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই৷
হাসি যে মা বাবার মতই কুটনৈতিক বুদ্ধি সম্পন্ন তা বেশ ভালো করেই জানে খোদেজা৷ কিন্তু ওই মেয়ে এক নিমেষেই কাজ শেষ করতে চেয়েছিলো৷ বোকা!
বুদ্ধি আছে তবে চলার মত না৷ এত তাড়াতাড়ি যদি সব শেষ করে দেওয়া যেতো তাহলে তো হতোই৷
আর শাহওয়াজ ছেলেটা যা বিচক্ষণী এর শেষ অব্দি না গিয়ে ছাড়বে না৷ এই দুটোর জন্য না অন্য কিছু বের হয়ে আসে৷ ভাবতেই গা রি রি করে উঠলো রাগে৷

শাহওয়াজ এর দৃষ্টি কাল পর্যবেক্ষণ করেছে খোদেজা, কি যেন অদ্ভুত ব্যাথা দেখতে পেয়েছে৷ এসব কি ময়ূরাক্ষীর জন্য? মৃদুলা কে তো কাল কোনো মতে থামিয়েছে রাহেলা আর হাসি তবুও মধুলতার ছেলে কি এতই নির্বোধ?

আর আরেকটা ভাবনার বিষয় খটকার বিষয় হলো আজ হাসি সিড়ি থেকে পরলো কি করে? ওর পায়ের নিচে তেল চিপচিপে ছিলো বলেছি হাসি কিন্তু সিড়িতে তেল কোথ্যেকে থাকবে? ওরা তো তেল দেখেনি৷ অদ্ভুত তো৷

শাহওয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রাহেলার দিকে৷ সে কিছু ঠাহর করতে না পেরে রুপার পানে তাকায়৷ রুপা তপ্ত শ্বাস টেনে ইশারা করে বলে,
“শুধু শুধু করছে এমন৷”
শাহওয়াজ বুঝতে পারে না ইশারা৷ অবুঝের মত রাহেলা বেগম কে শুধায়,
“কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?”
রাহেলা শাহওয়াজ এর প্রশ্ন শুনে আরো জোরে কেঁদে উঠে৷ যেন ম’রে গেছে কেউ৷ এত বড় মহিলা এমন কাঁদছে দেখে বিরক্ত লাগলো শাহওয়াজ এর৷ ন্যাকা লাগছে ব্যাপার টি শাহওয়াজ এর কাছে৷ মহিলাটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে সব কিছুতে৷ রাহেলা শাড়ির আচল দিয়ে নাক মুছে৷ কাদো কাদো গলায় বলে,
“শাহওয়াজ বাবা আমার মাইয়ার পা ভাইঙ্গা গেছে৷ তুমিতো বিলেত ফেরত ডাক্তার? তুমি একটু আসো না৷”
শাহওয়াজ বুঝলো এবার৷ এ মহিলা বড়ই অদ্ভুত, শাহওয়াজ কৌতুহল বা ইচ্ছা পেলো না তেমন মঅহইলার কথায়৷ তার সামনে দিয়েই ডাক্তার গেলো৷ শাহওয়াজ ফোন ঘাটতে ঘাটতে বললো,
“মাত্রই ডাক্তার কে বের হতে দেখলাম, আমাকে আবার কি দরকার?”
রাহেলা থতমত খেলো৷ ভারি বজ্যাত তো ছেলে৷ ময়ূরাক্ষীর বেলায় তো টালবাহানা করেনি৷ পুকুরে ঝাপ দিয়ে দিয়েছে আর সে তো পুকুরে ঝাপ দিতে বলেনি৷ রাহেলা আবার নাক ছিঁটকাতে ছিঁটকাতে বললো,
“তবুও তুমি যদি একটু দেখে যেতে স্বস্তি পেতাম আমি৷”
শাহওয়াজ হামি তুললো৷ ফোনে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন পৃথিবীর সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফোনেই হচ্ছে৷ সামনের দিকে পা বাড়ালো উপরে যেতে যেতে বললো,
“ফ্রেশ হয়ে আসছি৷”
বলে চলে গেলো৷ রুপার বেশ আনন্দ লাগছে৷ শাহওয়াজ এর এহেন ব্যাবহারে রাহেলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো৷

..

চেচামেচির শব্দে বেরিয়ে এসেছিলো ময়ূরাক্ষী৷ নাক মুখ গুলো এখনো লালচে হয়ে আছে৷ চোখ গুলো ফুলে আছে, রাহেলার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে৷ কাল রুপার সাথে ঘুমালেও ভোরের দিকে নিজের ঘরে এসেছে ময়ূরাক্ষী৷
শাহওয়াজ তাকে বাঁচিয়েছে সবার সামনে অভদ্র লোকটা অভদ্র কাজ করেছে শোনার পর থেকেই লজ্জা তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে৷ ইশ লোকে কি ভাবছে? তা নিয়েও ভয় ব্যাপক৷
সকাল থেকে আল্লাহ আল্লাহ করছে যেন অই অভদ্র লোক টি যেন তার সামনে না আসে৷ তাই রুপার ঘর থেকে নিজের ঘরে এসে দুয়ার দিয়েছে৷
তবে লোকটির কাছে সে চিরকৃতজ্ঞ৷ জীবন দেওয়ার মালিক সৃষ্টি কর্তা এ মানুষ টির উছিলায় তার সৃষ্টিকর্তা তাকে প্রাণ দিয়েছে৷ লোকটি যখন তাকে বুকে আগলে নিলো তখন চোখ আদো আদো খোলা৷ প্রথম কেউ তাকে এমন করে ছুঁয়েছে৷ লোকটি রাতে রুপার ঘরে এসেছিলো তখন ময়ূরাক্ষী ইচ্ছে করেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে শুয়েছিলো৷
লোকটির কথা মাথায় আসতে বক্ষ কেমন ধুরু ধুরু করে কাঁপছে৷
আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে দ্বিধা নিয়ে পা বাড়ালো ময়ূরাক্ষী৷ শরীর কেমন ঝিমাচ্ছে শুধু দূর্বল এখনো৷ বার বার আল্লাহ আল্লাহ করছে যেন শাহওয়াজ নামক লোকটার সামনে না পরে৷
কিন্তু সে গুড়ে বালি, দোতলায় আসতেই হলো বিপত্তি কেউ গম্ভীর মুখে শুধালো,
“সকালে আপনি কোথায় গিয়েছিলেন মেয়ে?”
বুকের কম্পন বাড়লো৷ লজ্জা আর জড়তারা বিনা নিমন্ত্রণে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো৷ গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো ঘুরলো না সামনে৷ শাহওয়াজই এগিয়ে এলো একই স্বরে বললো,
“আপনি বেরিয়েছেন কেন রুম থেকে? আমাকে দেখার জন্য নাকি?”
শেষের কথা খানা দুষ্টূ কন্ঠে বললো শাহওয়াজ৷ ময়ূরাক্ষী চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো৷ লোকটা অভদ্র, অভদ্র, অভদ্র৷
তড়িৎ গতিতে বললো,
“সামনে আসবেন না আপনি৷”
শাহিওয়াজ প্রসস্থ হাসলো৷ মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে ঢেঢ় বুঝলো৷ ইচ্ছে করেই এগিয়ে গেলো মুখোমুখি দাঁড়ালো মুখশ্রী পানে তাকালো ময়ূরাক্ষীর৷
ময়ূরাক্ষীর এবার প্রাণ যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম৷ মাটিটা ফাঁকা হলে যেন এখনই ঢুকে যেতো৷ শাহওয়াজ এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
“আমিতো আসতে চাইনি মেয়ে৷ আপনিইতো আনেন, বলেছিলাম পরের বার দেখা হলে সত্যিই চুমু খাবো পরে ভেবে চিন্তা করে বাচ্চা বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম৷ কিন্তু কাল নিজেই বাধ্য করলেন৷”
শাহওয়াজ এর কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো শাহওয়াজ এর দিকে৷ শাহওয়াজ বাঁকা হেসে শিষ বাহাতে বাজাতে পাশ কাঁ’টিয়ে চলে গেলো৷ ময়ূরাক্ষী তাকিয়েই রইলো৷ মিনমিনিয়ে বললো,
“অসভ্য, অসভ্য৷”

চলবে,

[রিচেক করিনি রোজা রেখে লিখতে বেশ কষ্ট হয় আশাকরি বুঝবেন৷]

নোট:১১৪০ শব্দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here