#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৯
রা’গে লিয়ার ফর্সা মুখটা মূহূর্তেই লাল হয়ে যায়।চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।লিয়া চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।অরিন দাঁত কিড়মিড় করে মেয়ে দুইটাকে উদ্দেশ্য করে কড়া কিছু বলবে। এমন সময় লিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করে নিষেধ করল।অরিন রাগে গজগজ করতে করতে নিশ্চুপ রইল।তবে কিছু কড়া কথা পেটের ভেতর গুড়গুড় করছিলো।এই লিয়া ইশারায় বারণ না করলে অরিন এতক্ষণ উপযুক্ত পাল্টা জবাব দিয়ে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ক্লিন করে দিতো,হু।অরিন মনেমনে এসব ভাবতে থাকল।লিয়া পিছন ফিরল।মেয়ে দুইটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,
“তোমরা সব কিছু জানো না।আর না জেনে এরকম কথাবলা সাজে না।কারন না জেনেশুনে কিছু বললে সেটা ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।আর এই মুহূর্তে তোমরা যেটা বললে,তা বলে নিজেদের কুরুচিপূর্ণ মনের প্রকাশ ঘটালে।একজন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে হলে,আগে তার সম্পর্কে জানা জরুরী।আর অবশ্যই জানাটা সঠিক হতে হবে।তুমি মনে করলেই,ভাবলেই সেটা রাইট হবে না। নোংরা কথা বলে নিজেদের নিচু মনেরই পরিচয় দিলে।এটা হচ্ছে কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। এছাড়া ভালো কিছুই খুঁজে পেলাম না তোমাদের কথায়।যার মন মানসিকতা যেমন,তার চিন্তা ভাবনাও তো সেরকমই হবে।”
লিয়ার কথাশুনে মেয়ে দুইটার মুখটা থমথমে হয়ে যায়। প্রত্যুত্তরে বলার মতো কিছুই খুঁজে পেলো না।সাথে অপমানিত বোধ করল।লিয়া ঠান্ডা মস্তিষ্কে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে এতে অরিন মনেমনে লিয়াকে বাহবা দেয়।মেয়ে দুইটা বেশ লজ্জিত হয়। দৃষ্টি আপনাআপনি নত হয়ে যায়।লিয়া আর কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে অরিনকে ইশারা করল যাওয়ার জন্য।অরিন ইতস্তত বোধ করে না করল। লিয়া এক প্রকার জোর করেই অরিনকে সাথে নিয়ে আসতে লাগল। করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় ফারহানের সামনা-সামনি পরে। লিয়া সালাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নেয়।এমন সময় ফারহান ডেকে উঠল,
“এই লিয়া?ওয়ান মিনিট, ওয়েট।”
লিয়া পা থামাল।ঘাড় ফিরালো।অরিন চিকন ভ্রু যুগল কুঁচকে চাইল। ফারহান দু কদম এগিয়ে আসল। ফারহান পকেট থেকে পায়েল টা বের করে লিয়ার সামনে মেলে ধরল।কিছুটা জড়তা নিয়েই বলল,
“ইয়ে মানে এটা তোমার?”
লিয়া পায়েলটা দেখে অবাক হলো। সাথে খুশিও হলো বটে। হারিয়ে যাওয়া জিনিস পাওয়া গেলে সবারই ভীষণ ভালো লাগে।হোকনা সেটা সামান্য দামী তাতে কি?আর এই পায়েলটা লিয়ার অনেক দিনের।রাজিয়া সুলতানা বানিয়ে দিয়েছিলেন। খুঁজে না পাওয়াতে লিয়ার ভীষণ মন খা’রাপ হয়েছিলো। এখন নিজের পায়েলটা ফারহানের হাতে দেখে লিয়ার চোখমুখ খুশিতে চকচক করে উঠল। পরক্ষণে কিছু ভেবে ঠোঁট কামড়ে ধরল।অবাক গলায় নম্রস্বরে ফারহান কে উদ্দেশ্য করে শুধালো,
“স্যার এটা আপনি কোথায় পেলেন?”
ফারহান স্মিত হাসল।সে বলল,”কোথায় পেয়েছি সেটা বড় কথা নয়। আগে বলো তোমার কিনা?”
লিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক বলল। ফারহান লিয়ার হাতে পায়েল টা ধরিয়ে দিতে দিতে বলল,
“এগ্রোনমির ফিল্ডে পেয়েছিলাম। মনে হলো তোমার পায়ে হয়তো দেখেছিলাম।তুলে রেখেছিলাম। ভাবলাম আগে তোমার থেকে শুনে নেই।তারপর তোমার না হলে গবেষণাগারের কোনো কমর্চারীর কাছে দিতাম।ওরা যা হয় তাই করতো।যাকগে,আমার ফাস্ট ধারণা তবে ঠিক হলো।এটা তোমারই।”
লিয়া মৃদুস্বরে বলল,”থ্যাংকস স্যার।এটা আমার খুব প্রিয় ছিলো।”
ফারহান বিনিময় মৃদু হাসল। অতঃপর নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো।লিয়া-অরিন দু’জনে জারিফের দিকে যেতে লাগল। রুমের কাছাকাছি আসতেই অরিন বলল,
“আ্যই লিয়া।আমি এখানে ওয়েট করছি।তুই ফাস্ট স্যারের সাথে দেখা করে আয়,কেমন।”
লিয়া বলার জন্য বলল,”তুইও চল।”
অরিন দুদিকে মাথা ঘুরালো। তৎক্ষণাৎ বলল,”উঁহু!স্যার তোকে ডেকেছে তুই যা।আমার নাম তো আর বলেনি।সো আমি ভেতরে যেতে পারবো না, ইয়ার।তবে স্যারের উপর ভরসা হচ্ছিল না।সেদিন মাত্র টেন মিনিটস দেরি হওয়ার জন্য পানিশমেন্ট দিলো।তাই তোকে একলা ছাড়তে ইচ্ছে করলো না। সেইজন্য এই পর্যন্ত তোর সাথে আসলাম।যা গিয়ে দেখ স্যার কি বলে।স্যারের খা’রাপ কোনো ইন্টেনশন থাকলে তুই সেসবের ছিটে ফোঁটাও যদি টের পাস।সাথে সাথে আমাকে ডাকিস।তখন আমি রকেটের গতিতে হাজির হবো।আমি বাইরে আছি।”
অরিনের কথা শুনে লিয়া ঠোঁট টিপে হাসলো।আর কথা না বলে লিয়া চোখের পলক ফেলল।ইশারায় ঠিক আছে বোঝায়। অতঃপর পা বাড়ায়।
.
মাথার উপর থাকা সিলিং ফ্যানটা শো শো শব্দ তুলে বাতাস দিয়ে যাচ্ছে।জারিফ চেয়ারের হেডে কাঁধটা রেখেছে। দুইহাত চেয়ারের হাতলের উপর।জারিফের মানসপটে বারংবার জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠছে সেদিন ফারহানের রুম থেকে লিয়ার বের হওয়ার দৃশ্য। আবার বিভিন্ন সময় লিয়াকে ফারহানের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখার দৃশ্য।জারিফের মনে হচ্ছে,একজন টিচারের সাথে তার ছাত্রী কথা বলতেই পারে।কোনো দরকারে তার চেম্বারে যেতেই পারে।এটা স্বাভাবিক বিষয়।এটাকে অস্বাভাবিক নজরে দেখার কোনো কারনই নেই।পরক্ষণেই জারিফের মনে আবার নেগেটিভ চিন্তার উদ্রেক হয়।পায়েল টা যদি লিয়ারই হয়।তবে সেটা ফারহানের কাছে কীভাবে?এটা কি শুধুই কো-ইন্সিডেন্সলি?
জারিফের ভাবনার ছেদ ঘটে মৃদু আওয়াজে।লিয়া দরজার দাড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে হালকা কেশে “এহেম এহেম”শব্দ করে জারিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।জারিফ সোজা হয়ে বসল।চোখ তুলে লিয়ার দিকে চাইল। লিয়া বিনিময় চমৎকার হাসলো।লিয়া এগিয়ে যেতে থাকল।লিয়া এগিয়ে গিয়ে টেবিলের কাছাকাছি দাঁড়াল। মিষ্টি হেসে মজার ছলে বলল,
“তো বলুন মাস্টারমশাই কীজন্য হঠাৎ জরুরী তলব পাঠিয়েছেন? হঠাৎ কী দরকার পড়ল?এমনি সময় তো চলাচল করেন সামনাসামনি পড়লেও চিনেন না এমন এটিটিউড নিয়ে থাকেন।তা আজ হঠাৎ?”
কথাটা শেষ করে লিয়া ঘনঘন চোখের পলক ফেলে উত্তরের আশায় রইল।জারিফ ইশারা করে সামনের চেয়ার দেখিয়ে বলল,”বসো।”
লিয়া চেয়ারে বসল।জারিফ দুইহাত টেবিলের উপর ভাঁজ করে রাখল।জারিফ দোটানায় পরল।এখন লিয়াকে কীভাবে বলবে?সরাসরি পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করলে লিয়া কী ভাববে? সরাসরি পায়েলের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা আদৌতেও ঠিক হবে কি?জারিফ দুই ভ্রুয়ের মাঝে ভাঁজ ফেলে এসব হেনোতোনো ভাবনায় নিমজ্জিত হয়। লিয়া জারিফের থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কিঞ্চিৎ বি’র’ক্ত হলো।কাঠের টেবিলের উপর মোটা কাঁচ দেওয়া। কাঁচের নিচে সাদা তুলতুলে ফর্ম জাতীয় কিছু রাখা।মোটা কাঁচ টা খুব স্বচ্ছ দেখাচ্ছে।লিয়া টেবিলের উপর হাতের কনুই ভর দিয়ে থুতনিতে হাত রাখল। মৃদুস্বরে বলল,
“জারিফ।”
লিয়ার ডাকে জারিফের ধ্যান ভাঙল।জারিফের কেমন যেনো এলোমেলো লাগছে।না পারছে সহজেই প্রশ্ন টা করতে।আর না পারছে লিয়ার সাথে সহজ হতে। অজান্তেই কোথা থেকে যেনো অদৃশ্য এক বেড়া এসে ঠেকেছে দু’জনের মাঝে।সেই অদৃশ্য বেড়াজাল রাখতে চায় না জারিফ। মনেমনে সিদ্ধান্ত নেয়, কোনোকিছু না দেখে অনুমানের উপর ভিত্তি করা ঠিক নয়। পায়েলের এই বিষয়টা মাথা থেকে ঝে’ড়ে ফেলে দেওয়াই বেটার হবে।লিয়াকে এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে,লিয়ার মনে আমার প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হতে পারে।লিয়া ভাবতে পারে, আমি হয়তো ওকে সন্দেহ করছি।তাই এই চ্যাপ্টারটা মাথা থেকে ফেলে দেওয়াই ভালো।এসব কথা মনেমনে ভেবে মাথা ঝা’ড়’ল জারিফ।লিয়ার মুখশ্রীতে পূর্ণ দৃষ্টিতে চাইল।মজার ছলে বলল,
“ক্যাম্পাসে আছো তুমি।টিচার হই তোমার।তাই এভাবে ডাকা শোভা পাচ্ছে না। রেসপেক্ট দিয়ে অন্তত কথা বলো।”
লিয়া মুখ বাকালো।দুইহাত টেবিলের উপর রাখল। ঠোঁট উল্টে বলল,”ছাত্রীকে যদি চেম্বারে বসিয়ে নিষ্পলক চাহুনিতে চেয়ে থাকেন।তাহলে ছাত্রী তো স্যার হিসেবে টিট না করে প্রেমিক হিসেবে টিট করবেই।আগে নিজের ক্যারেক্টার ঠিক করুন, মিস্টার।তারপর রেসপেক্ট আশা করবেন,হু।এর আগে নয়। স্যা…র।”
শেষে একটু টেনে বলল লিয়া।জারিফ চমৎকার হাসল।জারিফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লিয়া ফের শুধালো,”কিজন্য ডেকেছেন বলুন। ক্লাসের সময় হয়ে আসছে। ফাস্ট বলুন।”
জারিফ একহাত চুলের মধ্যে আঙুল চালনা করে নিলো।ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু ভেবে নিয়ে বলল,”মা বলছিলো তোমাকে নিয়ে জুয়েলার্সে যাওয়ার কথা। আগামীকাল রেডি থেকো।আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”
লিয়া অবাক হলো।এই কথাটা বলার জন্য লোক দিয়ে ডেকে এইখানে এনেছে। অদ্ভুত!লিয়া অবাক গলায় বলল,”এটা বলার জন্য!এই কথা তো ফোনেও বলতে পারতেন।বা যাওয়ার সময় গাড়িতেও বলা যেতো। এরজন্য কেউ ডেকে পাঠায়। আশ্চর্য!”
জারিফ অপ্রস্তুত হলো।আমতা আমতা করে বলল,”ইয়ে আসলে। মা গতকালকে বলেছে।মনে থাকে না।এখন মনে পড়লো তাই তোমাকে জানিয়ে রাখলাম।”
প্রসঙ্গ পাল্টাতে জারিফ তড়িৎ বলে উঠল,”তোমার ক্লাস আছে না এখন।কি ক্লাস আছে?সময় হয়ে গিয়েছে তো।”
লিয়া সময় দেখে নিয়ে প্রত্যুত্তরে বলল,”এইতো সময় হয়ে গিয়েছে প্রায়।এখন সয়েল সায়েন্স ক্লাস।”
লিয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে হঠাৎ বলে উঠল,”এই রে আপনাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি।আমার পায়েলটা হারিয়ে গিয়েছিলো।তবে কপাল ভালো পাওয়া গিয়েছে।হারালেও অবশেষে ঘুরে ফিরে পায়েলটা আমার কাছেই আসে।বিষয়টা ইন্টারেস্টিং না?”
শেষের কথাটা বলে লিয়া জারিফের মুখায়বে চেয়ে রইল।সয়েল সায়েন্স ক্লাসের কথা শুনে জারিফের মাথায় ফের ফারহানের বিষয়টা দপ করে উঠল।সাথে লিয়ার মুখে পায়েল হা’রা’নো’র ঘটনা শুনে জারিফ শিওর হয়। ফারহানের কাছে থাকা পায়েলটাই লিয়ার ছিলো। অটোমেটিক রা’গের সৃষ্টি হতে থাকে জারিফের।
লিয়া বলল,”ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে।আমি আসছি এখন।পরে আপনাকে সবটা বলবো।”
এই বলে লিয়া যেতে নিবে।এমন সময় জারিফ গম্ভীর গলায় বলল,”ক্লাস করতে হবে না তোমাকে।”
জারিফের এহেন কথায় লিয়া অবাক হলো।লিয়া ভাবল জারিফ মজা করছে হয়তো।লিয়া জারিফের দিকে একপল চাইল।জারিফের মুখায়ব গম্ভীর দেখাচ্ছে।খানিক আগের মানুষটার ফর্সা মুখে মূহূর্তেই যেনো আমাবস্যা নেমেছে।লিয়া অবাক গলায় ফের বলল,
“আপনি নিশ্চয় মজা করছেন। হঠাৎ এখন ক্লাস করতে নিষেধ করছেন যে।”
“এই ক্লাসটা করার দরকার নেই।বাকি ক্লাস করে নিও।”
“কিন্তু কেনো?”
কেনোর জবাব জারিফের জানা নেই।তারপরেও কেনো জানি ফারহানকে জারিফের সয্য হচ্ছে না।জারিফের ইচ্ছে করছে ফারহানের থেকে লিয়াকে শতশত মাইল দূরত্বে রাখতে।লিয়ার আশেপাশে ফারহানকে আর সয্য করতে পারছে না। ফারহানের ক্লাসটাই করতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না জারিফের।জারিফ চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে নিলো।জারিফের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে।জারিফ নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। পরক্ষণে জারিফের মনেহয়,একটু বেশিই হয়তো ভাবছে জারিফ। টিনেজারদের মতো চিন্তা ভাবনা হয়ে যাচ্ছে।এভাবে লিয়াকে জোর করে বলে,হয়তো ক্লাসটা না করাতে পারে।তবে এটা কোনো বুদ্ধি বিবেক সম্পন্ন মানুষের কাজ নয়।জারিফ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
“এমনি মজা করে বলেছি।দেরি হয়ে যাচ্ছে। ক্লাসে যাও তুমি।”
কথাটা শেষ করে জারিফ জোর করে হাসার চেষ্টা করলো।লিয়া বিনিময় মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। গুটিগুটি পা ফেলে প্রস্থান করল। লিয়ার যাওয়ার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল জারিফ।লিয়ার সাথে স্বাভাবিক কথা বললেও ভেতরে ভেতরে জারিফকে খুব ভাবাচ্ছে।জারিফ মনেমনে আওড়ায়,লিয়াকে যতটা চিনি, জানি ও-তো ওরকম ক্যারেক্টারের মেয়ে না। শুধুশুধু সন্দেহ করা ঠিক হবে কি?আবার মস্তিষ্ক বলে উঠল, বিভিন্ন আড্ডায় বন্ধুরা বলতো মেয়ে মানুষকে যে পাত্রেই রাখা হয়, সেই পাত্রেরই নাকি আকার ধারণ করে।মেয়ে মানুষের মন পাল্টাতে নাকি সময় লাগে না।জারিফের সত্ত্বা তড়িৎ বলে উঠল,তবে সব কথাই সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।এটা মানতে হবে।জারিফের আর কোনো কিছু ভাবতে ইচ্ছে করলো না।যতো ভাবতে যাচ্ছে ততো নিজেকে এলোমেলো লাগছে।কোনো কিছুই ভালো লাগছে না।
.
যাওয়ার সময় গাড়িতে লিয়া জারিফকে লক্ষ্য করল।কেমন জানি চুপচাপ। মুখটা মলিন হয়ে আছে।লিয়া ম্লান স্বরে শুধালো,”আপনার কি শরীর খা’রাপ লাগছে?না মানে কেমন যেনো ঠিকঠাক লাগছে না।নাকি কোনো কিছু নিয়ে টেনস?”
জারিফ ড্রাইভ করতে করতে দৃষ্টি সামনে রেখেই রাশভারী কণ্ঠস্বরে বলল,”না ঠিক আছি।মাথাটা ধরেছে।”
গাড়ি লিয়াদের বাসার সামনে থামল। লিয়া সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলল,”আজকে নামুন।ভেতরে চলুন।মাথা ধরেছে যেহেতু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার দিকে যাবেন।”
জারিফ লিয়ার দিকে চেয়ে বলল,”না লিয়া।বাসায় গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন একটা শাওয়ার নেওয়া খুব প্রয়োজন। সেইজন্য হলেও বাসায় যেতে হবে।আসি।এমনিতেও কালকে আসতে হবে।”
লিয়া মৃদুস্বরে বলল,”আচ্ছা। ঠিক আছে।দেখে শুনে যাবেন।গিয়েই ফোন করে জানাবেন, কিন্তু।”
.
জারিফ বাসায় গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়।সাদা টাওয়েল দিয়ে চুলগুলো মুছতে থাকে এমন সময় বিছানার উপর থাকা ফোনটা ছন্দে বেজে উঠল।জারিফ রিসিভ করে বলল,
“হ্যা বলো।”
“বাসায় গিয়ে জানালেন না তো।আমি আপনার ফোনের জন্য ওয়েট করছিলাম।”
“মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।”
“কথা ছিলো গিয়েই জানাবেন। আচ্ছা যাগগে,এসব বাদ দেন। আপনার হেডেক কমেছে?না কমলে মেডিসিন নিন।”
“মেডিসিন নিতে হবে না।ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।আচ্ছা লিয়া। ঠিক আছে।আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।এখন রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
জারিফ কল কাটল।ফোনটা বিছানায় রাখল।গায়ে টিশার্ট জড়াল। চুলগুলো পরিপাটি করে নিলো।মাথাটা সত্যিই জারিফের ধরেছে খুব।মাথার ভেতর ধপধপ করছে। এখন একটু বিশ্রাম খুব করে প্রয়োজন।জারিফ দরজার দাড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে হাঁক ছেড়ে ডেকে বলল,
“মা।চারুকে দিয়ে একমগ কফি পাঠিয়ে দাও তো।কড়া করে দিতে বলো।”
জারিফ বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো।দুইহাত বিছানার সাথে ঠেস দিয়ে রাখল।এর আগে কখনো এতটা খারাপ লাগা উপলব্ধি হয়নি জারিফের।আজকে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।পেপার পত্রিকা,সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এখন অহরহ অসামাজিক কার্যকলাপের নিউজ থাকে। কেনো জানি না চাইতেও আজ সেসব নিউজ বারবার মনে উঠছে।আর অদ্ভুত সব চিন্তা হচ্ছে।এমন অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা হওয়ায় জারিফ নিজের উপর নিজেই বি’র’ক্ত হচ্ছে।এমন সময় জাহানারা বেগম দরজার দাড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে বললেন,
“জারিফ বাবা ভেতরে আছিস।”
জারিফ ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে চেয়ে বলল,”হ্যা,মা।আসো।”
জাহানারা বেগম জারিফের সামনে দাঁড়িয়ে কফিটা জারিফের হাতে দিলেন।জারিফ কফির মগটা হাতে নিয়ে বলল,”চারুকে দিয়ে বানিয়ে পাঠালেই হতো।এই গরমে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।”
জাহানারা বেগম জারিফের পাশে বসলেন।মৃদু হেসে বললেন,”মায়েরা কখনো সন্তানের জন্য কিছু করতে কষ্ট পায় না।এখন তো খুব বড় হয়ে গিয়েছিস।মুখ ফুটে কোনো আবদার করিস না।রাতে মাঝে মাঝে কফি নিজেই বানিয়ে নিস দেখি। মা’য়ের ঘুম ভাঙিয়ে ডাকিস না।মা’য়ের কষ্ট হবে দেখে। বাবা, মা সহ পরিবারের সবার জন্য দায়িত্ব পালন করিস।আমার বাচ্চাটা দেখতে দেখতে কতো বড় হয়ে গিয়েছে। এখনো মনে পরে তোদের ছোট বেলার কথা।মনেহয় এইতো কদিন আগের কথা।”
জাহানারা বেগম পুরানো স্মৃতি চারণ করতে থাকেন।জারিফ মগে থাকা শেষ কফিটুকু ঢকঢক করে গিলে নেয়।মগটা টেবিলের উপর রেখে জারিফ বিছানায় মা’য়ের কোলের উপর মাথাটা রাখল। জাহানারা বেগম জারিফের চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে দিলেন। জাহানারা বেগম ছেলের চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।জারিফ মা’য়ের কোলে মাথা রেখে চোখদুটো বন্ধ করল। জাহানারা বেগম বুঝতে পারলেন ছেলের কিছু একটা হয়েছে। জাহানারা বেগম কণ্ঠে শীতলতা নিয়ে আদুরে স্বরে বললেন,
“জারিফ বাবা।”
“হু।”
“তুই কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?নাকি শরীর খা’রাপ।তোকে কেমন জানি অন্যমনষ্ক লাগছে।”
জারিফ ছোট করে শ্বাস টেনে নিয়ে বলল,”না মা।ঠিক আছি। মাথাটা ধরেছে একটু। এছাড়া তেমন কিছুই না।”
জারিফের কথাটা জাহানারা বেগমের তেমন বিশ্বাস হলো না।ছেলে বড় হয়েছে যথেষ্ট ভালো মন্দ বোঝার
জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে। তাই আর জোর করলেন না। কোনো সমস্যা হলে ছেলে নিজেই ঠিক করতে পারবে। এটা ভেবে নিজেকে আশ্বস্ত করলেন জাহানারা বেগম। জাহানারা বেগম জারিফের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফের বললেন,
“লিয়াকে বলেছিস কালকে যাওয়ার কথা?”
জারিফ ছোট করে বলল,”হুঁ।”
জাহানারা বেগম ফের মায়াময় স্বরে বললেন,”জারিফ বাবা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলতে চাচ্ছি।বড় হয়েছিস। উচ্চ শিক্ষিত হয়েছিস। ভালোমন্দ বাছ বিচার করার ক্ষমতা তোর আছে।তবে সংসার জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হয়তো খুব কমই আছে।সংসার জীবন শুরু করতে যাচ্ছিস। সংসার করা এতটা সহজ বিষয় নয়।আবার হয়তো খুব সহজও। দু’জন দু’জনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, শ্রদ্ধা,সমীহ থাকতে হয়।তাহলে একসাথে চলাটা সহজ হয়ে যায়। সংসার করতে গিয়ে ভুলবোঝাবুঝি, কথাকাটাকাটি এসব হয়েই থাকে।তবে ইগোটাকে বড় করে না দেখে নিজে থেকে সব কিছু মিটমাট করে নিতে হয়।আর নিজেদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি হলে তৃতীয় পক্ষকে কখনো সুযোগ দিতে নেই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে এসকল বিষয় কারো কাছে শেয়ার করতে নেই।এখনকার সময় মানুষ এসবের সুযোগ নিয়ে আরো উস্কানি মূলক কথা বলে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধন হলো বিশ্বাস। শুধু স্বামী স্ত্রীই নয় প্রত্যেকটা সম্পর্কেরই আলাদা আলাদা জায়গা থেকেই বিশ্বাস থাকাটা জরুরী।আর সবশেষে বলবো কখনো কোনো কিছু নিয়ে হতাশ হতে নেই। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে সবুর করতে হয়।জীবন কখনো স্মুথলি হয় না।জীবনের বাঁকে বাকে সমস্যা থাকে।তবে আমাদের সবারই উচিত বুদ্ধি দিয়ে ধৈর্য্যর সাথে সকল সিচুয়েশনে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া।আর সমস্যার সমাধান করা।”
এতক্ষণে বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্ট টা যেনো মূহূর্তেই কমতে লাগল।জারিফের নিজেকে একটু হলেও হালকা মনে হচ্ছে।লিয়া এমন একটা মেয়ে যাকে কিনা একবাক্যে সবাই আদর্শ , ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একটা মেয়ে বলতে বাউন্ড। যাচাই-বাছাই না করে তার প্রতি হুট করে সন্দেহ করা মোটেই ঠিক নয়।জারিফ ভাবে আগে লিয়ার সাথে এব্যাপারে কথা বলা দরকার। ফারহানের সাথে বিভিন্ন সময় কথা বলা, চেম্বারে যাওয়া,আর পায়েলটা ফারহানের কাছে থাকা।এসব বিষয় ক্লিয়ার হওয়া জরুরী।
জাহানারা বেগমের কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে জারিফ ঘুমিয়ে পরে। জাহানারা বেগম কোল থেকে জারিফের মাথাটা বালিশের উপর আলতো করে রাখলেন। সারাদিন ব্যস্ততার মাঝে থাকে ছেলেটা আজ বোধহয় একটু বেশিই ক্লান্ত ছিলো।আজ অবেলায় ঘুমিয়ে পড়লো।এসব ভাবতে ভাবতে জাহানারা বেগম জানালার পাশে দাঁড়ালেন। পড়ন্ত বিকেলের এক ফালি রোদ জানালা গলিয়ে রুমে এসে পড়ছে।জানালার দামি আভিজাত্যপূর্ণ রুচিশীল সফেদ রঙা পর্দাটা বাতাসে মূদু দোল খাচ্ছে। জাহানারা বেগম পর্দাটা একহাতে টেনে দিলেন।এসির পাওয়ার একটু কমিয়ে দিলেন। পড়ন্ত বিকেল হলেও বাইরে অসহনীয় গরম পড়ছে।ঘরে যান্ত্রিক যন্ত্র গুলোর জন্য গরমের তীব্রতা ওতোটা উপলব্ধি হয় না।রুমটা এবার একটু অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখলেন।ছেলেটা ঘুমাক মনেমনে আওড়িয়ে জাহানারা বেগম জারিফের দিকে ফের একনজর চেয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলেন।
.
শুক্রবারের দিন বিকেলে লিয়াকে জুয়েলার্সে গহনার অর্ডার দিতে নিয়ে গিয়েছিল জারিফ। জাহানারা বেগম, নিরুপমা বেগম আর জারা আগে থেকে ওয়েট করছিলো।জারিফ লিয়াকে আনতে আসে।লিয়াকে নিয়ে যাওয়ার সময় জারিফ লিয়াকে প্রশ্ন করে পায়েল টা ফারহানের কাছে কীভাবে ছিলো।লিয়া প্রাকটিক্যাল ক্লাসে হারিয়ে ফেলে বলে।আর ওখান থেকেই ফারহান পেয়েছে সেটা জানায়।জারিফ কৌশলে এও বলে,”তোমাকে একদিন ফারহানের রুম থেকে আসতে দেখলাম।সয়েল সায়েন্স সাবজেক্টে তোমার প্রবলেম হচ্ছে কি?”লিয়া স্বাভাবিকভাবে জানায়,”আসলে প্রবলেম আমার নয়। প্রবলেম আমার ফ্রেন্ড অরিনের।”লিয়া অরিনের পা’গ’লা’মি’র কথা বলতে থাকে।সব শুনে জারিফ নিজেই লজ্জিত হয়।আসলে চোখের দেখা আর সঠিক বিষয়টা জানার মধ্যে অনেক সময় আকাশ পাতাল তফাৎ থাকে।সবাই মিলে গহনার অর্ডার দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে স্ন্যাকস করে সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরে।জারিফ লিয়াকে ড্রপ করে দিয়ে যায়।
.
আজ রবিবার। মধ্যদুপুর। টিএসসির ক্যান্টিনে বসে আছে কবিতা,ফারহান পাশাপাশি অপর পাশে জারিফ।জারিফ বারবার ঘাড় ফিরিয়ে চাইছে। এরমধ্যে কবিতা টিস্যু দিয়ে কপালটা মুছতে মুছতে বলল,
“মিস্টার জারিফ।আজ হঠাৎ নিজে থেকেই লাঞ্চের অফার দিলেন।ব্যাপার স্যাপার কি? ট্রিট দিলেন নাকি? কোনো বড়সড় গুড নিউজ আছে নিশ্চয়।”
জারিফ মৃদু হাসল। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,”হয়তো।”
ফারহান বলল,”জারিফ সাহেব কি কারো জন্য ওয়েট করছেন নাকি? বারবার গেইটের দিকে তাকাচ্ছেন যে।তাই বললাম আরকি।”
জারিফ কিছু বলার আগেই কবিতা বলে উঠল,”ওহ্। তারমানে আজকে লাঞ্চের দাওয়াত শুধু আমরা দু’জনই পাইনি।আরো কেউ আছে।তবে সে কে মিস্টার জারিফ। আমাদেরই কলিগ?নাকি বাইরের কেউ?”
“ওয়েট। মিস কবিতা।চলে আসবে এক্ষুনি।”
কবিতা ঠোঁট উল্টে বলল,”ওকে।”
জারিফ কল লিস্টে গিয়ে সবার উপরে থাকা কাংখিত নম্বরে কল করল।রিসিভ করে ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠস্বর ভেসে আসল,”এই তো এসে গিয়েছি।ওয়ান মিনিটের মধ্যেই।”
“ওকে। তাড়াতাড়ি আসো। অপেক্ষায় আছি।”
জারিফ কল কাটল। ফারহান,কবিতার সাথে হাসিমুখে কথা বলতে থাকল।জারিফ লিয়া দু’জনে মিলে একসাথে ইনভাইটেশন কার্ড দিবে। মিনিট খানেক পরই জারিফ ঘাড় ফিরিয়ে ফের চাইতেই লিয়া আর অরিনকে দেখতে পায়। জারিফ উঠে দাঁড়ালো।একহাত কিঞ্চিৎ উঁচু করে ডাকল,”এই লিয়া।এদিকে।”
লিয়া ডাকটাকে ফলো করে তাকিয়ে জারিফকে দেখে স্মিত হাসলো।এগিয়ে আসতে লাগলো।অরিন অবাক হলো।লিয়া বলল আজ ওর বরের সাথে আলাপ করিয়ে দিবে।আর স্যার, ম্যামরা একসাথে বসে আছে।সেখান থেকে জারিফ স্যার কেনো লিয়াকে ডাকছে? অদ্ভুত!সেদিন লিয়াকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো।জারিফ স্যার কি বলল।লিয়া বলেনি,এড়িয়ে গিয়েছিলো। লিয়া জারিফের সামনাসামনি দাঁড়ালো। ফারহান অবাক হলো। জারিফ লিয়াকে কেনো ডাকলো এইভেবে।কবিতা মুখটা কালো করলো। মনেমনে আওড়ালো,”মিস্টার জারিফ আমাদের মাঝে স্টুডেন্টদেরকে কেনো আনছে। আশ্চর্য!এই মেয়েটাও কি আমাদের টেবিলে বসবে নাকি! নিশ্চয় এর জন্যই ওয়েট করছিলো জারিফ।তবে আমাদের কলিগদের মাঝে এই মেয়েটাকে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”
এসব কথা মনেমনে ভাবতে থাকে কবিতা। ভদ্রতার খাতিরে মুখে এসব বলতে পারল না।তবে মুখটা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে বি’র’ক্ত হচ্ছে। ফারহান অবাক চোখে চেয়ে আছে।জারিফকে যতটুকু চেনে জানে তাতে কোনো মেয়ের সাথে কখনো খোশ গল্প করতে দেখা যায়নি। তবে আজ হুট করে জারিফের লিয়াকে এইভাবে ডাকাটা কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে ফারহানের কাছে।
চলবে,,,