সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব৪১

0
119

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৪১

মেঘলা আকাশ।সাথে মৃদু শীতল বাতাস বইছে। আজকে সকালের আবহাওয়াটা নাতিশীতোষ্ণ।গত কয়েকদিনের তাপদাহের পরে আজকের মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াটা বেশ চমৎকার। চমৎকার আবহাওয়ার মতই জারিফের মন মেজাজও বেশ চমৎকার আছে। ব্যালকনিতে বসে একহাতে কফির মগ ।অপর হাতে ফোনটা কানে ধরে আছে। ঠান্ডা বাতাস একটু পরপর জারিফের গা ছুঁয়ে দিচ্ছে।এমন সময় ব্যক্তিগত নারীটির ঘুমঘুম মিষ্টি কণ্ঠস্বর শুনে জারিফের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা প্রশস্ত হয়।জারিফ ঝলমলে গলায় বলল,

“শুভ সকাল,ম্যাম।”

লিয়া কাৎ হয়ে শুয়ে আঁখিযুগল বন্ধ করে একহাতে ফোনটা কানের সাথে ধরে আছে।জারিফের গলা শুনে মনটা পুলকিত হলো।সকাল সকাল মনটা ভালো লাগায় শিহরিত হলো।লিয়া বলল,

“শুভ সকাল,জনাব।”

একটু সময় নিয়ে লিয়া ফের বলল,”তা আজ হঠাৎ এত সকাল সকাল ফোন।কি মনে করে?”

জারিফ কফির মগে ঠোঁট ছোয়ালো।গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে মায়াময় স্বরে বলল,”তোমায় মনে করে।তোমার কথা ভাবছিলাম।তাই।”

“তা এত সকাল সকাল কি কারনে আমার কথা ভাবছিলেন, জানতে পারি?”

জারিফ চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো।দুই পা টানটান করলো।আলসেমি ছাড়ানোর ভঙ্গিমা করল। অতঃপর বলল,”তোমাকে ভাবার জন্য আমার কোনো কারনের দরকার পরে না।তুমি আমার এমন এক ভাবনা,যা সব সময় আমার মনমস্তিষ্কে গেঁথে আছো।তুমি আমার সেই ভাবনা,যেটা আমার থেকে কখনোই যায় না।আর ইউ ক্লিয়ার?মাই ডিয়ার বউ।”

লিয়া নিঃশব্দে চমৎকার হাসল।লিয়া উঠে বসল।একহাতের সাহায্যে একটা বালিশ নিয়ে কোলের উপর রাখল।বালিশের উপর কনুই ভর দিয়ে থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে ছোট করে বলল,”হুমম।”

“আজ এক সপ্তাহ হতে চলছে তোমাকে দেখি না। মনটা খুব ব্যাকুল হয়েছে তোমাকে দেখার জন্য।সময় যেনো কাটতেই চাইছে না।আমার দুচোখ তৃষ্ণার্ত তোমাকে কাছ থেকে দেখার জন্য।”

লিয়া মৃদু হাসল।বলল,”ওয়েট মিস্টার,ওয়েট।এতো ব্যাকুল হওয়ার কারন নেই।আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই আমাদের দেখা হচ্ছে।”

জারিফ নির্বিকার কণ্ঠে বলল,”অপেক্ষায়ই তো আছি।অপেক্ষার প্রহর যে শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। ইশশ্! কবে আসবে সেদিন।যেদিন তোমার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির সাথে ঘুমাবো।ঘুম ভেঙ্গে তোমাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ পাবো। প্রতিটা সকাল শুরু হবে তোমার মিষ্টি আদরে।”

লিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল,”আজ বাদে আর মাত্র একদিন।তার পরেই আপনার সব ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে, মিস্টার।”

“আ’ম এগারলি ওয়েটিং ফর

লিয়ার কথায় জারিফ থেমে যায়।কথাটা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।দরজায় নক করার শব্দ হয়।সাথে রাজিয়া সুলতানার গলার আওয়াজ আসল।জারিফের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে লিয়া তড়িৎ বলল,”আম্মু ডাকছে।এখন রাখছি।পরে কথা বলবো।”

“ওকে। আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

লিয়া ফোন কাটল।ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।সোজা হয়ে বসতে বসতে বলল,”আম্মু।দরজা লক করা নেই। এমনি চাপিয়ে দিয়ে রাখা।তুমি ভেতরে আসো।”

রাজিয়া সুলতানা ভেতরে আসলেন। টেবিলের উপর দেওয়ালের সাথে সুইচ বোর্ডের সাথে ফোনের চার্জার লাগানো ছিলো।হাতে থাকা ফোনটা চার্জে দিয়ে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে ব্যস্ত গলায় বললেন,”আমার ফোনের চার্জার তো আনা হয়নি।এদিকে ব্যস্ততার মাঝে আজ কদিন ফোনে চার্জ দেওয়াও হয়নি। বিভিন্ন সময় দরকারে ফোন হাতে নিলেও খেয়াল করা হয়নি।এখন তোর মামার সাথে কথা বলতে গিয়ে ব্যাটারি একদম লো দেখাচ্ছে।”

লিয়া বিছানা ছেড়ে নামছিলো।মায়ের শেষ কথাশুনে কপাল কুঁচকে পা ঝুলিয়ে বসল। উৎসুকভাবে শুধালো,”ও আম্মু!মামা কি বলল?কখন আসবে?নানুভাই আসবে কি?”

“হ্যা।তোর নানুভাই,মামা-মামীসহ সবাই আসছেন। রাস্তায় কোনো সমস্যা না হলে।বারোটা নাগাদ চলে আসবে।”

“ওহ্।”বলে স্যান্ডেলের ভেতর পা দিতে গিয়ে লিয়ার কিছু মনে হতেই ফের বলল,”আম্মু।তোমার কাছে না আমার পায়েল ঠিক করতে দিয়েছিলাম।পায়েলটা কর্মকারের শপ থেকে এখনো আনোনি নাকি।আজ কতদিন হয়েছে আমার পা টা খালি।”

রাজিয়া সুলতানা লিয়ার দিকে এগিয়ে আসলেন।এমন সময় লিয়ার মুখে পায়েলের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেন,”এই রে!পায়েলটা তো বাসায়ই আছে।সেরে এনেছি তো।তোকে দেবো ভুলে গিয়েছিলাম।আসার আগের দিনই ঠিক করে এনেছিলাম। ইদানিং সব কিছু ভুলো মন হয়েছে আমার দেখছি। আচ্ছা ঠিক আছে।আমি দেখছি কাউকে দিয়ে বাসা থেকে আনানো যায় কিনা।তুষারের সাথে রাহবার কে পাঠাবো। রাহবারকে বলে দিবো কোথায় রাখা আছে। রাহবার তাহলে খুঁজে পাবে।”

লিয়া রাজিয়া সুলতানার কোমড় দুইহাতে জড়িয়ে ধরল।পেটে মুখগুজে আহ্লাদি স্বরে বলল,”ও আম্মু।তোমাকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না।থাক লাগবে না এখন।ও বাড়ি থেকে যখন বাসায় যাবো তখন নেবো।”

‘ও বাড়ি’ কথাটা শুনে রাজিয়া সুলতানার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।এত আদরের মেয়ে কালকে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে।এরপর বাবার বাড়ি নাইওরে আসবে। যেখানে বেঁধে দেওয়া থাকে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ।এরপর আবার স্বামীর ঘরেই ফিরতে হবে।মেয়েটা ছাড়া পুরো বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা নিষ্প্রাণ মনে হবে তা ভাবতেই, দুচোখ ছলছল করে উঠল।চোখের কার্নিশ গড়িয়ে দুফোঁটা নোনাজল গাল বেয়ে পরতেই মেয়ের অলক্ষ্যে সন্তর্পণে মুছে নিলেন।মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন।নিজেকে কোনো রকমে স্বাভাবিক রাখলেন। মেয়ের মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদূরে গলায় বললেন,

“লিয়া সোনা মা আমার।যা ফ্রেশ নে। ব্রেকফাস্টে কি খাবি বল।যা খেতে মন চায় ,আমাকে বল।আমি নিজে রান্না করবো।”

লিয়া মাথাটা উপরের দিকে তুলে চাইল।মাথা ঘুরিয়ে বলল,”উঁহুম!লাগবে না আম্মু।এমনিতেই তুমি খুব ব্যস্ত।সব মেহমানদের আ্যপায়ন করতে গিয়ে এক দন্ড জিরানোর সময় পাচ্ছো না। সেখানে এখন তোমাকে কষ্ট করে কিছুই রান্না করতে হবে না।আর সত্যি বলতে আমার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না, আম্মু।দেখা গেলো তুমি কষ্ট করে রান্না করলে,অথচ আমি খেতেই পারলাম না।”
.
বিকাল চারটে বাজতে চলছে। এতক্ষণে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা।আর সন্ধ্যায় মেহেন্দি পর্ব হবে।দুই পরিবারের লোকেরাই কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই।একসাথে এসব করার পেছনে দুইবাড়ির বাচ্চা পার্টিরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।মূলত এরকম ডিসিশনের মূল উদ্যোক্তা তারাই।লিয়াকে একটা রুমে পার্লারের দুইজন মেয়ে সাজাচ্ছে।লিয়ার সাথে জারিফের এখনো দেখা হয়নি। জারিফ বাইরে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।সবুজ পার বিশিষ্ট হলুদ শাড়ি লিয়াকে পড়ানো হয়। কাঁচা ফুলের গহনা লিয়ার গায়ে।হলুদ গোলাপ আর হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে সুন্দর করে লিয়াকে সাজানো হয়েছে। সিঁথি ছাড়া চুলগুলো সুন্দর করে খোঁপা করা। খোঁপায় শোভা পাচ্ছে কাঁচা ফুলের মালাটা।লিয়ার চুলগুলো বাঁধতে গিয়ে আর্টিস্ট মেয়ে দুইটা সে কি লিয়ার চুলের প্রশংসা করা।’ম্যামের চুলগুলো খুব ঘন আর স্লিকি।আমার তো ম্যামের চুলগুলো দেখে ভীষণ হিংসে হচ্ছে।”আরো হেনোতোনো কথা বলতে থাকে মেয়ে দুইটা।লিয়া নিঃশব্দে হাসল। দীর্ঘ সময় নিয়ে লিয়াকে সাজানো হয়।দক্ষ হাতে লিয়াকে সাজানো হয়েছে। ধবধবে সাদা গায়ে হলুদ শাড়ি, ঠোঁটে খয়েরি রঙের গাঢ় লিপস্টিক র’ক্ত জবার ন্যায় দেখাচ্ছে ।পাতলা চিকন ওষ্ঠজোড়া বেশ নজর কাড়ছে।চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া।শাড়ির আঁচলটা চুলের খোঁপার সাথে পিন দিয়ে সেট করে দেওয়া হয়।এবার একদম পরিপূর্ণ সাজ।মেয়ে দুইটার একজন বলল,

“ম্যামকে একদম হলুদ পরী লাগছে।ম্যাম আয়নায় দেখুন একবার। দেখুন।”

লিয়া চোখ তুলে চাইল।উঠে দাঁড়াল।আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে লিয়া লজ্জা পেলো।জারিফ নিশ্চয় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে।আর উল্টাপাল্টা বেফাঁস কথা বলবে।এই ভেবে লিয়া লজ্জায় লাল,নীল হলো।
.
লিয়াকে স্টেজে বসানো হয়। লিয়ার পাশে বাচ্চা পার্টি মেয়েরা বসে খোশ গল্প করছে।বড়রা এখানে তেমন কেউ নেই। আলাদা স্পেসে তারা কথাবার্তা বলছে হয়তো।লিয়ার ক্লোজ দুই ফ্রেন্ড আজ এসেছে। অনেকদিন পর আজ রুপন্তীর সাথে লিয়ার দেখা হলো। অনেকদিন পর প্রিয় বান্ধবীকে দেখে লিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে পরে। রুপন্তীকে জড়িয়ে ধরে। হরিণী আঁখিযুগল টলমল করে উঠে লিয়ার। রুপন্তী একটা পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।অন্য জেলায় থাকার সুবাদে লিয়ার সাথে অনেকদিন দেখা হয় না।তবে ফোনে সব সময়ই যোগাযোগ হয়।অরিনকে রুপন্তীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় লিয়া।অরিন সাদা আর হলুদের কম্বিনেশনের চুড়িদার পরেছে।গায়ে সাদা কামিজ, হলুদ ওড়না,হলুদ চুড়িদার ফর্সা গায়ে দারুণ লাগছে। চুলগুলো ঝুঁটি করে উপরে বাধা। কাঁধের একপাশ দিয়ে চুলগুলো সামনে রেখে দেওয়া।বেশিরভাগ মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরেছে।আর ছেলেদের কেউ কেউ হলুদ পাঞ্জাবী। ছোট্ট নাতাশাও আজকে হলুদ শাড়ি পরেছে,ফুল দিয়ে সেজেছে। লিয়ার পাশে বসে আছে।

হালকা ভলিউমে মিউজিক চলছে।অরিন মুচকি হেসে টিপ্পনি কে’টে বলল,”এই লিয়া স্যার কই রে?স্যারকে এখনো দেখছি না যে।স্যার তার ছাত্রীর এহেন হলুদ সাজে সজ্জিত অনিন্দ্য রূপসী রুপে দেখেছে কি? মনে তো হচ্ছে এখনো তোকে দেখেনি।স্যার তোকে এই মারাত্মক লুকে দেখলে বেহুঁশ হয়ে না পরে।

আমি জ্ঞান হারাবো ম’রে’ই যাবো বাঁচাতে পারবে না কেউ।”

এক্টিং করে লিয়ার গায়ে ঢলে পরে সুর করে গাইল অরিন।লিয়া কটমট চোখে চাইল।অরিন সোজা হয়ে বসে ঠোঁট টিপে ফের বলল,”এটা আমার কথা ছিলো না, দোস্ত।আমি তো স্যারের কথা বলছি।স্যার হয়তো এরকম রিয়াকশন দেবে।তার সুন্দরী ছাত্রী প্লাস বউকে দেখে।”

লিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”স্যার হয় না তোর।তাই এভাবে বলা সাজে না তোর।”

“আজকে নো স্যার।আজকে শুধুই বান্ধবীর বর হিসেবে স্যারকে টিট করবো।”

এরমধ্যে রুপন্তী বলল,”জারিফ ভাইয়াকে তো বাইরে দেখলাম।রোহান ভাইয়া সহ আরো কয়েকজনের সাথে গল্প করতে দেখলাম।আমাকে ভেতরে দিয়ে আমার ভাইয়াও তো সেখানে যোগ দিলো।ওনারা বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে। এখনো লিয়াকে দেখেনি বোধহয়।”

এরমধ্যে জারা হাতে করে মিষ্টির ট্রে এনে রাখল।লিয়ার সামনে কয়েক রকমের মিষ্টি, ফলমূলের ট্রে রাখল।তুলি জারাকে হাতে হাতে হেল্প করল সব কিছু সাজিয়ে রাখতে।সবশেষে হলুদের তত্ব এনে রাখতে রাখতে জারা নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,”এই নাতাশা যাও তো বাইরে থেকে তোমার মামাকে ডেকে আনো।মামাকে গিয়ে বলো,নানুমনি ডেকেছে।হলুদ অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে।মা তাড়া দিচ্ছে।এদিকে ভাইয়ার কোনো হেলদোল নেই নাকি।আ’জ’ব! সন্ধ্যার পর আরেক প্রোগ্রাম আছে।তারপর ভাবীদেরকে আবার ওতটা পথ যেতে হবে।”

নাতাশা উঠে যাবে এমন সময় সামনে তাকিয়ে জারিফকে দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,”ঐতো মামা চলে এসেছে।”

জারিফের সাথে ওর ফ্রেন্ডরা। লিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য জারিফ আসছিলো।যদিও সবাই লিয়াকে আগে থেকেই দেখেছে এবং জারিফের বউ তা জানেও।তবে কখনো সামনাসামনি পরিচয় হয়নি।রুপমের বিয়ের মধ্যে যতটুকু জেনেছিলো এই। স্টেজের দিকে আসতেই সবার মাঝে জারিফের শান্ত নজরজোড়া থমকে যায় লিয়াকে দেখে।জারিফ সুগভীর নিষ্পলক চাহুনিতে লিয়ার দিকে ঠাঁই তাকিয়ে রয়।হলুদ শাড়িতে ব্যক্তিগত রমণীকে একদম অপ্সরা লাগছে।জারিফের একহাত আপনাআপনি বুকের উপর চলে যায়। শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়ে যায়।হরিণী আঁখিযুগলে গাঢ় কাজল। দারুণ আকর্ষণীয় লাগছে। অনেক আগেই ঐ মায়াবী চোখে নিজেকে হারিয়েছে জারিফ।ঐচোখে তাকিয়ে জারিফের চোখে নে’শা ধরে যাচ্ছে। মা’তাল হাওয়া বইছে যেনো হৃদয় কুঠরিতে। উফ্! নিজেকে বড্ড বেসামাল ঠেকছে জারিফের।নাতাশার মুখে মামা আসছে শুনে লিয়া সামনে তাকাল।খানিকটা দূরে জারিফকে দেখতে পায়।জারিফের গায়ে সাদা পাঞ্জাবি উপরে হলুদ কটি। পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। ফর্সা হাতে কালো ব্রান্ডের ঘড়ি।জারিফকে ভীষণ আকর্ষণীয়, হ্যান্ডসাম লাগছে। লিয়া তাকাতেই জারিফের সাথে চোখাচোখি হয়। জারিফ থ্যাম্বলস আপ দেখিয়ে ইশারায় বোঝাল, “দারুণ লাগছে।”লিয়া লজ্জা পেলো।মাথাটা নুইয়ে নিলো।পেছন থেকে রোহান দুষ্টুমির স্বরে বলল,

“আরে জারিফ দোস্ত।ভাবীকে পরে মন ভরে দেখিস।ভাবীকে দেখার জন্য সামনে পুরো জীবনটাই পরে আছে তোর।এখন আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দে।সাথে তোর যত শালিকা আছে তাদের সাথেও।আমাদেরও তো এবার সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হতে হবে নাকি?”

জারিফ রোহানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।রোহান থামল। অবশেষে জারিফ লিয়ার সাথে ওর ফ্রেন্ডদের পরিচয় করিয়ে দেয়। লিয়া নম্রস্বরে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করল।রোহান,শাওন এটাসেটা কথা বলল।লিয়া কার্টেসি মেইনটেইন করতে হ্যা, হুঁ দুই একটা কথা বলল।

জারা জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলল,”এই ভাইয়া ভাবীর পাশে বস।মা, আন্টিরা এক্ষুনি চলে আসবে। এখন হলুদ ছোঁয়ানো হবে।”

জারিফের নজর হলুদের বাটির দিকে যায়।জারিফ জারার কথার উত্তর না দিয়ে কয়েক পা এগিয়ে গেলো।সামনে থেকে একটা ট্রে একটু সরিয়ে রাখল।সেখানে বসল।জারা হইচই করে উঠে বলল,”ওখানে বসছিস কেনো? এখানে ভাবীর পাশে বস।”

জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,”ওয়েট।দেখ।”

জারা ঠোঁট উল্টে চুপচাপ রইল।সবাই জারিফের দিকে উৎসুক চোখে চেয়ে।জারিফ দুই আঙ্গুলে হলুদের গাঢ় প্রলেপ জড়িয়ে নিতে নিতে বলল,”সবার আগে আমিই শুরুটা করি।”

“হাওয়া কেনো আজ হয়েছে মাতাল কানে কানে বলে..”গানটা চলছিলো। চমৎকার একটা পরিবেশ বিরাজ করছে।এমন সময় জারিফ দুই আঙ্গুলে হলুদ জড়িয়ে নিলো। অতঃপর লিয়ার ফর্সা গালে ছুঁইয়ে দিলো।গালে ঠান্ডা অনুভব হতেই লিয়ার সর্বাঙ্গে শিরশিরানি বয়ে যায়। অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি হয়।লিয়ার হরিণী টানাটানা নজরজোড়া জারিফের শান্ত চাহনিতে আবদ্ধ হয়।নীল ওর আইফোনে সুন্দর এইদৃশ্যের ফটাফট পিক তুলতে থাকে।নীল ছবি তুলতে তুলতে বলল,

“ওয়াও! গ্রেটস ব্রো!”

সবার মাঝে জারিফের এহেন কাজে লিয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হয়।লিয়ার ভীষণ লজ্জা লাগতে থাকে।তবে জারিফ নির্লিপ্ত আছে।জারিফ লিয়ার অপর গালেও হলুদ ছুঁইয়ে দেয়।জারিফ টিস্যু দিয়ে হাতটা মুছে নেয়। কাঁটা চামুচটা ডান হাতে নিয়ে একটা কালো জাম তুলল।লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো।লিয়া লজ্জায় মূর্ছা যাওয়ার ন্যায় হয়েছে। এখন সবার মাঝে জারিফের হাত থেকে খেতে হবে। উফ্!জারিফ নিশ্চয় তাকে আজ লজ্জায় পি’ষ্ট করার পণ করেছে। লিয়ার দুইগালে লাল আভা ছড়িয়ে পরল।লিয়া অবশেষে মুখটা সামান্য হা করল। মিষ্টির একপাশ থেকে সামান্য একটু বাইট দেয়।হাতের বাকি মিষ্টিটুকু জারিফ নিজের গালে পুরে নিলো।নীল, অরিন অনেকে মজা নিতে ভুললো না।তবে জারিফ সেসবে পাত্তা দিলো না। জারিফ পকেট থেকে একটা লাল রঙের বক্স বের করল। বক্স থেকে স্বর্নের একটা ব্রেসলেট বের করল। লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল,

“আমার তরফ থেকে এটা তোমার হলুদের গিফট। এই সামান্য গিফটটা গ্রহণ করলে খুশি হবো।”

লিয়ার ভীষণ ভালো লাগলো। আনন্দে লিয়ার দুচোখ ছলছল করে উঠল।লিয়া ওর হাতটা জারিফের সামনে বাড়িয়ে দিলো।জারিফ মৃদু হাসল।জারিফ ব্রেসলেটটা লিয়ার হাতে পরিয়ে দিলো।লিয়ার ফর্সা হাতে সোনালি রঙের ব্রেসলেট ঝলমল করছে। দারুণ দেখাচ্ছে ।জারিফের প্রচন্ড ইচ্ছে করছিলো লিয়ার হাতে ঠোঁট ছোঁয়াতে।এখানে ফ্রেন্ডরাসহ,ছোটো অনেকে আছে বিধায় ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখল।লিয়া একবার হাতের দিকে চাইল। আরেকবার জারিফের দিকে চেয়ে কোমল স্বরে বলল,

“থ্যাংকস।খুব সুন্দর হয়েছে।”

জারিফ ফিসফিসিয়ে বলল,”শুধু থ্যাংকস শুনে আমি স্যাটিসফাইড নই।এরজন্য কড়া মিষ্টি পাওনা রইলো।”

এইটুকু বলে জারিফ সোজা হয়ে বসল।তারপর বলল,”আমার কাজ আপাতত শেষ।তোমরা ইনজয় করো।আমি বাইরে আছি।”

জারা কপাল কুঁচকে তড়িৎ বলল,”বাইরে আছি মানে।তোকেও তো হলুদ দিতে হবে।”

“ছেলেরা আবার হলুদ টলুদ মাখে নাকি।যাইহোক আমাকে বাদ দে বোন।তোরা ইনজয় কর।আমি আসছি।”

“এই জারিফ তাই বললে হয় নাকি।যদিও এটার বাধ্যবাধকতা নেই।তবুও সাধারণত বিয়েতে এসকল রিচুয়াল হয়ে থাকে।”

কথাটা বলতে বলতে জাহানারা বেগম জারিফের কাছে এগিয়ে আসলেন।সাথে রাজিয়া সুলতানা, নিরুপমা বেগমসহ লিয়ার চাচিমারা।জারিফ বেকায়দায় পরল।এসব হলুদে জারিফের কোনো ইন্টারেস্ট নেই।তবে মা যখন বলল তাই আর সরাসরি না করতে পারল না।তাই বলল,
“আচ্ছা।বাধ্যবাধকতা যখন নেই বলছো।আর সাধারনত সবাই করেই থাকে।তাই বলছি হালকা করে একবার ছুঁইয়ে দাও।তাহলেই তো হবে।”

জাহানারা বেগম স্মিত হাসলেন।একপাশে বসলেন বললেন,”আচ্ছা তোকে জোর করবো না।তবে অল্প করেই দিচ্ছি।”

জাহানারা বেগম জারিফের দুইগালে হালকা করে হলুদ ছোয়ালেন।ছেলেকে মিষ্টি মুখ করালেন। অতঃপর লিয়াকে।জারিফ ওর বন্ধুদের সাথে ওখান থেকে বাইরে চলে আসে। প্রথমে বড়রা অতঃপর ছোটরা লিয়াকে হলুদ ছোঁয়ায়।তবে হলুদের স্পেসে শুধু মেয়েরাই আছে।ছেলে মানুষরা আলাদা জায়গায় নাস্তা পানি খাচ্ছে আর গল্প গুজব করছে।জারিফ ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো ছেলে মানুষ লিয়াকে হলুদ ছোঁয়ায়নি।লিয়ার দুই গাল কপালে হাতে হলুদে মাখামাখি।হলুদে মুখরিত হয়ে উঠেছে পরিবেশটা।হলুদ শেষে লিয়াকে গোসল করানোর কথা বললে লিয়া বলে একাই করবে।ভেতরের বড়সড় ওয়াশরুমে লিয়া একাই গোসল সেরে নেয়।জারা একটা নামিদামি শপিং ব্যাগ নিয়ে আসল। আর্টিস্ট মেয়ে দুইটার হাতে দিয়ে এটা পরাতে বলল।ব্যাগের ভেতর স্লিকের সবুজ শাড়ি সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ,পেটিকোট।হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে লিয়ার চুল শুকাচ্ছে পার্লারের মেয়েরা।তাসনিম একটা চেয়ারে বসে ফোন স্ক্রল করছে আর লিয়ার সাথে এটাসেটা কথা বলছে।আলিফের সন্ধ্যার দিকে আসার কথা আছে।এখান থেকে একসাথে শ্বশুর বাড়ি যাবে।

বড়রা পাশের মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে যায়।আর মহিলারা ভেতরে নামাজের জন্য জায়গা আছে সেখানে নামাজ আদায় করে নেয়।কিছু আত্বীয় সন্ধ্যার আগেই চলে যায়।এখন দুই পরিবারের নিকট আত্মীয়রা আছে।

সন্ধ্যার পর চতুর্থদিক ঝলমলে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে।সব কিছু ঝকঝকা ফকফকা লাগছে।অরিন ফোন কানে ধরে কথা বলতে বলতে হাটছিলো।ওদিকে নীল শরবতের ট্রে হাতে নিয়ে ত্রস্ত পায়ে হাটছিলো।বড়মা নীলকে বলেছে,ওদিকে লিয়ার নানুভাই আর মামাসহ বড়রা আছেন বেশ গরম পরছে।তাই শরবত টা দিতে।নীল নিয়ে যাচ্ছিল।এমন সময় বেখেয়াল বশত কারো সাথে ধা’ক্কা লাগল।সাথে সাথেই মেয়েলি ঝাঁঝালো গলার আওয়াজ আসল,

“এটা কি করলেন?চোখে দেখেন না নাকি?চোখ কোথায় রেখে ঘোরাফেরা করেন, হ্যা।”

ধা’ক্কা লাগার ফলে গ্লাসে থাকা শরবত কিছুটা উপচে অরিনের গায়ে পরে।নীল এমন কর্কশ গলা শুনে থতমত খায়। অরিনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আমতা আমতা করে বলল,”সরি, ম্যাম।খেয়াল করিনি।”

অরিন ধমক দিয়ে বলল,”রাখেন আপনার সস্তা সরি।দিলেন তো আমার এত সাধের জামাটা ন’ষ্ট করে।”

এই বলে অরিন একহাতে সাদা জামায় লাগা শরবতে ভেজা অংশটা ঝাড়তে থাকল।নীল মুখটা কাচুমাচু করে বিড়বিড় করে বলল,”শুনেছি মেয়ে মানুষের মন খুব নরম হয়।বাপরে বাপ এতো নরম মনের, এতো গরম মেজাজ আমি আগে দেখিনি কখনো। উফ্ফ!জানা ছিলো না।”

অরিন চোখমুখ কুঁচকে বলল,”এই যে হ্যালো।কি বিড়বিড় করছেন,হ্যা?”

হলুদের সময় অরিনকে লিয়ার পাশে দেখেছিলো। আলাপ হয়নি। তবে অনুমান করেছিলো লিয়ার রিলেটিভ হবে হয়তো।লিয়ার রিলেটিভ এটা ভেবে নীল বিষয়টা এড়িয়ে গেল।আর এখন আগে কাজটা করা লাগবে।তাই অরিনের সাথে খামোখা কথা বাড়াল না।নীল কিছু না বলে বড় কদম ফেলে চলে যায়। নীলের এভাবে চলে যাওয়াতে অরিন বেশ অবাক হল।অরিনের ইগোতেও লাগল।ছেলেটা তাকে কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো। স্ট্রেইন্জ!অরিন ভেবেছিলো।ছেলেটা ইচ্ছে করে ধা’ক্কা দিয়েছে। কোনো খা’রাপ ইন্টেনশন ছিলো হয়তো।তবে নীলের এহেন ভদ্র চিত্ত দেখে অরিন নিজেকে ভুল ভাবে।নীল কিছুই বলল না,এতে অরিন মনেমনে অপমানিত বোধ করল।ঘাড় ফিরিয়ে নীলের যাওয়ার দিকে একপল চাইল।মুখটা বেঁকিয়ে ফের ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। কাঁধের উপর দিয়ে সামনে থাকা চুলগুলো একহাত দিয়ে পিছনে উড়িয়ে দিয়ে,’মেরে পিছে জামানা ছারা..’গাইতে গাইতে হিলে খটখট আওয়াজ তুলে যেতে থাকল।নীল কৌতুহল বশত ঘাড় ফিরিয়ে চাইল।অরিনের এহেন ভাব দেখে মনেমনে আওড়ালো,”মাথায় গন্ডগল আছে নিশ্চয়। ধাক্কা আমার একার দোষে লাগেনি ।সেও তো আমারই মতো বেখেয়াল হয়ে চলছিলো।তাই তো এক্সিডেন্টটা হলো।আর হুদাই কিনা আমাকে ঝা’ড়ি খেতে হলো।যাগগে,পরে দেখে নিবো।”এই ভেবে নীল ঠোঁট গোল করে শিষ বাজাতে বাজাতে যেতে থাকল।
.

মিউজিক বাজছে,
মেহেন্দি লাগাকে রাখনা ঢোলি সাজাকে রাখনা,
লে নে তু’ঝে ও গোরি আয়েংগে তেরে সাজনা….

লিয়ার হাতে মেহেদী দিয়ে আর্ট করা হচ্ছে। পার্লারের একটা মেয়ে আর্ট করে দিচ্ছে। সুনিপুণতার সহিত খুব সুন্দর নজরকাড়া ডিজাইন করছে।লিয়া মনোযোগ দিয়ে দেখছে।এমন সময় জারিফ এসে বলল,

” এসকিউজমি আপু।”

আর্টিস্ট মেয়েটা মাথা তুলে চাইল।জারিফের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,”জ্বি বলুন।”

জারিফ মেহেদি টিউবটা ইশারায় চাইল। মেয়েটা হাসিমুখে জারিফের দিকে বাড়িয়ে দিলো।লিয়া জারিফের ভাব বোঝার চেষ্টা করছে। পাশ থেকে অরিন বলল,”স্যার নিজে ডিজাইন করে দেবেন। ওয়াও!ভেরি ইন্টারেস্টিং বিষয়টা!”

জারিফ লিয়ার পাশে বসল। ইশারায় হাতটা বাড়িয়ে দিতে বলল।লিয়া ঠোঁট উল্টাল।হাত বাড়িয়ে দিলো।জারিফের হাতটা মৃদু কাঁপছিল। কখনো এসব হাতে ধরা হয়নি।কলম হলে দক্ষ হাতে কিছু লেখা বা আঁকা কোনো ব্যাপার ছিলো না।তবে টিউব হাতে নিয়ে বুঝল,আসলে এসবের জন্য দক্ষ হতে হয়।তবুও জারিফ থামল না।লিয়ার হাতের মাঝে জারিফ আর লিয়া দু’জনের নামটা লিখে দিলো।একটু সময় লাগল বটে।কলমের মতো অতটা গোটাগোটা অক্ষর না হলেও বেশ ভালোই হয়।নিজের কাজ সেরে জারিফ উঠে দাঁড়াল। টিউবটা মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“সরি। সময় লস করালাম।”

মেয়েটা তড়িৎ হাসিমুখে বলল,”ব্যাপার না স্যার।ঠিক আছে।”

লিয়া নিষ্পলক চাহুনিতে নিজের হাতের দিকে চেয়ে থাকল।মেয়েটা ফের তার কাজে মনোযোগ দিলো।
.
জারিফ লিয়া পাশাপাশি বসে আছে।বাকিরা আড্ডা দিচ্ছে সাথে এটাসেটা খাচ্ছে।আবার অনেকে হাতে মেহেদি পড়ছে।জারা জারিফকে মেহেদি লাগানোর কথা বলতেই জারিফ ধমক দিয়ে বলে,”ছেলেদের রঙ লাগাতে হয় না।”জারা আর কিছু বলে না।এখন জারা হাতে মেহেদি নিচ্ছে। তাসনিম নাতাশার হাতে দিয়ে দিচ্ছে।লিয়া দুইহাত টানটান করে বসে আছে।রঙ গাঢ় করার জন্য।সবাই বলেছে আরেকটু সময় পর হাত ধুতে। হঠাৎ লিয়ার ঘাড়ের পাশে চুলকাতে থাকে।হাত জোড়া থাকলে এসব চুলকানি বিষয় যেনো আরো তীব্র বেগে ক্ষেপে উঠে।দুইহাত ভর্তি মেহেদিতে ।ঠিক এমন সময় লিয়ার চুলকানি বাড়তে থাকল।লিয়া বসে উসখুস করছে।লিয়ার নড়াচড়া আর মুখাবয়ব দেখে জারিফ কিছু আন্দাজ করে বলল,

“এ্যনি প্রবলেম লিয়া।”

লিয়া ইশারা করে দেখিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল,”চুলকাচ্ছে।হাতে তো মেহেদী।এবার বরং ধুয়ে ফেলি।”

জারিফ তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
“এই না না।এখনই ধুয়ে ফেলার দরকার নেই।আমি আছি তো।দেখি কোথায়?”

এই বলে জারিফ লিয়ার পিঠের দিকে ঘাড়ে হাত দিয়ে চুলকিয়ে দিতে থাকল।এমন সময় জারিফের দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করল।লিয়া হঠাৎ নড়েচড়ে উঠল।চোখ কটমট করে জারিফের দিকে তাকিয়ে বলল,

“জারিফ।”

জারিফ লিয়ার মুখশ্রীতে শান্ত চাহনিতে চাইল। ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় বোঝাল,”কী?”ফের জারিফ দুষ্টুমি করতে থাকে।লিয়া নড়েচড়ে বসল।চোখ রাঙিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলল,”সুড়সুড়ি লাগছে তো।জানি ইচ্ছে করে ফা’জ’লা’মো করছেন।থামুন এবার।আর লাগবে না আপনার হেল্প।থামুন প্লিজ। থামুন।”

জারিফ দুষ্টুমির স্বরে বলল,”এখনো তো তেমন ভাবে ছুইইনি।তাই এভাবে কাঁপাকাপি শুরু করে দিলে। গভীরভাবে স্পর্শ করলে কি হবে!”

লিয়া জারিফের সামনে দুইহাত মেলে ধরে বলল,”বেশি দুষ্টামি করলে কিন্তু এই মেহেদী লাগানো হাত আপনার সারা মুখে লেপ্টে দেবো। মুহুর্তেই আপনার সাদা মুখ লাল হয়ে যাবে।হাজার বার সাবান দিয়ে ঘষলেও দুই দিনের আগে রঙ যাবে না।আর রঙ মুখ নিয়ে বাইরে কীকরে বের হবেন?আর বিয়ে করতে কাল কীকরে আসবেন?”

এই বলে লিয়া ঠোঁট টিপে হাসতে লাগল।জারিফ একহাত দিয়ে লিয়াকে নিজের দিকে একটু টেনে নিলো। লিয়ার পিছন হতে একহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরল।লিয়া বড়বড় চোখ করে চাইল। ফিসফিসিয়ে বলল,”কী করছেন কি?কেউ দেখবে তো।ছাড়ুন।”

লিয়ার শাড়ির আঁচল ভেদ করে জারিফের হাত লিয়ার উন্মুক্ত পেট স্পর্শ করতেই লিয়া কেঁপে উঠল।জারিফ দুই আঙ্গুল দিয়ে পেটে স্লাইড করতে করতে বলল,”কালকে বরের ঘরে আসছো। সংসার শুরু করবে।এখনও কিনা তোমার বাচ্চামো স্বভাব গেলো না। বাচ্চাদের মতো ভ’য় দেখাচ্ছো।লাইক সিরিয়াসলি!আমার তো ভীষণ হাসি পাচ্ছে।তোমার শিশুসুলভ কথাবার্তা শুনে।”

লিয়া ছোট ছোট চোখ করে চাইল। জারিফের হাসি দেখে গা জ্বালা দিয়ে উঠল। উফ্!জারিফ তার কথা নিয়ে হাসছে।এইভেবে লিয়া গাল ফুলিয়ে রাখল।
.
রাত নয়টা বেজে যায় লিয়াদের বাড়িতে ফিরতে ফিরতে। ফ্রেশ হয়ে লিয়া বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। লিয়ার পাশে রুপন্তী,অরিন বসে এটাসেটা গল্প করছে। লিয়ার ভীষণ ক্লান্ত লাগছিলো।ওদের সাথে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পরে।
.
বিয়ে বাড়ি চারিদিকে সাজসাজ রব।লোকে মুখরিত চারিপাশ।লিয়াকে সাজানো হচ্ছে। এরমধ্যে ছোটরা হৈ-চৈ শুরু করে দিলো,”এই বর এসেছে।বর এসেছে বলে।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here