#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা
তেরো
(বি.দ্র পড়ার অনুরোধ রইলো)
“আপনি আমায় ভালোবাসা দিলেন না তাই বোধহয় শরীরের মিলন হয়েও আমাদের অস্তিত্ব এলো না পৃথিবীতে৷মা শব্দটা শোনার সৌভাগ্য হলো না আমার৷”
চুলের বিনুনি করতে করতে বললো মিনারা৷ মুখ চোখ জুরে ক্লেশের রেশ৷ চক্ষুদ্বয় টলমলে৷ এ আঁখি ও বোধহয় ক্লান্ত কান্না করতে করতে৷
বেশ অনীহা নিয়ে চুল গুলো বিনুনি করছে৷ বাড়িতে মেহমান আছে এলোমেলো থাকলে শাশুরী রাগ করবে কথা শোনাবে৷ অবহেলা আর অযত্নে চুলগুলো ও কোমর থেকে কাধ অব্দি এসেছে৷ কতদিন পর পর যে এতে চিরুনী লাগানো হয় মিনারা মাঝে মাঝে ভুলে যায়৷ ময়ূরাক্ষী মাঝে মাঝে আঁচড়িয়ে দেয়৷ মিনারার আত্মাটা জুড়ায় তখন যেন নিজের অস্তিত্বই করছে৷
মানুষ বলে যত্নহীন সব কিছুই লুপ্ত হয় ব্যাবহারের অযোগ্য হয়৷ কিন্তু মিনারা যে অযত্নে রাখা সম্পর্কেই আছে যুগ পার হলো৷ এক জনের দ্বারা কি আর হয়? সে ভালোবাসতে বাসতে ক্লান্ত একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতইনা মরিয়া৷
তার পিছনে থাকা মানুষ টির ভালোবাসাযে অনেক দামি৷ অপাত্রে দান করে না৷ কিন্তু সে কি অপাত্র?
রুম্মন তার পিছনেই দাঁড়িয়ে কলার ঠিক করছে আরশিতে তাকিয়ে৷ মানুষ টা কি সুন্দর, ছোটো দুই খানা ভাই আছে তবুও তাদের চেয়েও যেন সুদর্শন৷ চুলে একটু একটু পাঁক ধরেছে৷
রুম্মন সত্যি সুদর্শন নাকি তার চোখেই এমন বোঝে না মিনারা৷
রুম্মন চৌধুরী মিনারার দিকে না তাকিয়েই তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
“শরীর এর মিলন কি আমি চেয়েছি নাকি?”
মিনারা আৎকে উঠলো৷ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো লোকটির দিকে৷ কি করে বলতে পারলো অনায়েসে? একটুও কি বাঁধলো না মুখে?
মানলো প্রতিবারই সেই কাছে এসেছে তবুও অপরজনের ইচ্ছে ছাড়া কি কিছু হয়?
আচ্ছা সে কি এতই ফেলনা? এ বারো বছরে একটু ও কি মায়া জন্মায়নি? সে শুনেছে কোনো কুকুরো যদি একজন মানুষের পিছে কিছু দিন ঘুর ঘুর করে তাহলে সে কুকুর এর জন্য ও মায়া জন্মে যায় মানুষের৷
আর তার জন্য এ মানুষ টার বারো বছরেও কি জন্মায়নি মায়া? তার কি হৃদয় নেই?
এ পুরুষটিকে নিয়ে আকাশ সমান কৌতুহল মিনারার৷ যদি ভালোই না বাসিস বিয়ে কেন করলি?
মিনারা ক্ষানিকটা কঠিন কন্ঠে শুধালো,
“আমার ত্রুটি কি বলবেন? আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না? আমায় কি কিঞ্চিৎ ও ভালোবাসা যায় না?”
রুম্মন চৌধুরী মিনারার কথা শুনে চুপ করে নিষ্পলকে চায় এক বার৷ মিনারাও তার পানে তাকিয়ে৷
নিশ্বাস ভাড়ি হয় আবার৷ ইনহেলার খানা প্রয়োজন বুঝি এখনি৷ নারী জাতী বড্ড বেইমান৷
দৃষ্টি ফেরায় স্থান ত্যাগ করে৷ ভালোবাসা এক কঠিন ব্যাধি৷ তাকে এ ভালোবাসা হৃদয়ের ব্যামো দিয়ে গেছে সারা জীবনের জন্য৷ মানুষ চিনতে না পারার আফসোস তার আজন্ম থেকে যাবে৷ সে আর কাউকে ভরসা করতে চায় না৷
মিনারা পথ পানে চেয়ে রইলো৷ আহারে জীবন, অতঃপর নিজের দিকে তাকালো৷ এক সময় নিজের প্রতি কতইনা যত্নবান ছিলো অথচ চোখের নিচে এখন কালো পরেছে সেই সাদা রঙটা আর নেই৷ আদলে রঙ পাল্টেছে কালসিটে হচ্ছে দিন দিন!
রুপ হীন একটা মানুষ সে৷ গুন যে কি ছিলো তা ও বেমালুম ভুলেছে৷
চৌধুরী বাড়ি চাকচিক্য আর বিলাশ বহুলতায় পূর্ণ হলেও এ বাড়িটি ভালোবাসাহীন৷ এ বাড়ির মানুষ ভালোবাসাহীন৷ আর ভালোবাসাহীন কি কোনো বাড়ি বাড়ি থাকে? ইট-পাথরের দালান হয়ে যায় না? সুখ সকলের হাতের মুঠোয় থাকলে সুখকে তারা ছুঁতে পারে না৷ এ বাড়িটি জানে হাজার মন ভাঙার গল্প৷
সর্বোপরি যেন প্রশ্ন আসে আসলেই কি টাকা থাকলেই সুখ থাকে? টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায়? বিলাসবহুল জীবন পার করলেই কি সুখী হওয়া যায়?
” এ ধরণীতে বাইরেটা দেখে মনের খবর কে রাখে?
এখানে যে আড়ালে আবডালে মনকে মনের গল্পরা সুখ খুঁজতে থাকে”
এর থেকে বোধহয় কুড়ে ঘরেই সুখ মিলতো? অন্তত কিঞ্চিৎ ভালোবাসাতো পেতো? ভালোবাসার জন্য মরিয়েও হতে হতো না৷ এখন যেন জীবনের প্রতিও মায়াটা উঠে গেছে৷ অতঃপর দীর্ঘশ্বাসে ছেয়ে গেলো কখহ খানা৷ ভারী হলো হাওয়া কান্না হয়ে এলো কষ্ট গুলো৷
..
ছাদে আজ জম্পেশ আড্ডা জমেছে, মাঝে শীতল পাটি বিছানো সেখানে বসা রেজওয়ান, শাহওয়াজ৷ এ দুই বন্ধু থাকলে তাদের আসরে বার্তি মানুষ প্রয়োজন পরে না৷
শাহওয়াজ বেশ চঞ্চল আর চটপটে ধাঁচের ছেলে৷ তবে এ বাড়ির মানুষের সাথে ইচ্ছে করেই মেশে না৷ বহুরূপী মানুষ পশুর থেকে অধম৷ আর এ বাড়ির মানুষ গুলো বহুরূপী৷
নামের পাশে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ট্যাগ টা লেগে গেলেও কোনো কালেই সে পড়াকু ধাঁচের ছেলে ছিলো না৷
রেজওয়ান শাহওয়াজ এর ডান হাত বলা চলে৷
এর একটু দুরেই ময়ূরাক্ষীর ঘর৷ এত্ত বড় খা খা করা ছাদে একটা ঘর আর সেখানেই থাকে ময়ূরাক্ষী৷ মাঝে মাঝে কত ভয় করে৷ তবে রাতে খুব একটা এ রুমে ঘুমানো হয় না তার যখন ইচ্ছে হয় তখন এসে থাকে না হয় রুপাবুর সাথেই ঘুমায় সে৷ যেদিন পড়া চুরি করতে চায় সে দিনই এসে নিজের ঘরে আগে আগে ঘুমিয়ে পরে৷
রুম থেকে উঁকিঝুঁকি মারছে ময়ূরাক্ষী, বাইরে যাওয়ার জন্য প্রয়াস চালাচ্ছে ময়ূরাক্ষী৷ কিন্তু এখন বের হতে গেলেই অভদ্র লোকটার মুখোমুখি হতে হবে৷ এ অভদ্র লোকের সামনে সে পরতে চায় না৷ শাহওয়াজ ব্যাপারটা লক্ষ করেছে৷ বেশ উপভোগ করছে এ ব্যাপারটি৷
অষ্টাদশী একটা মেয়ে আটাশ বছরের শাহওয়াজ কে টেক্কা দিতে চায়৷ সাহস যেন আকাশচুম্বী! মেয়েটা তাকে দেখলেই কেমন গুটিয়ে থাকে৷ চোখ ভরে মন ভরে দেখতে পারে না৷ অতিথি পাখির ন্যায় তাকে যেন হুটহাট দেখে৷ মেয়েটি ইচ্ছে করেই সামনে পরতে চায় না বেশ বুঝে শাহওয়াজ৷ ভাবা যায় বাচ্চা মেয়েটি তাকে এড়িয়ে চলে? শাহওয়াজ প্রহর কে ইগনোর করার শাস্তি এ মেয়েকে দিবেই শাহওয়াজ৷ এইটুকুনি মেয়ে হাবভাব যেন বুড়ির মত৷ মেয়েটা শাহওয়াজ কে দেখলেই মুখ লুকায়৷
চাঁদ মুখ খানা সে দিন যে একবার মন ভরে দেখলে আর দেখাই পেলো না৷ সামনে পরলেও মুখ লুকাবে নয় নিজেই পালাবে৷ ওই আঁখি যুগলে যেন কি আছে যা টানে শাহওয়াজ কে৷
এর মাঝেই এলো রুপা৷ মেয়েটা আজ বেশ আঁটসাঁট হয়ে আছে৷ লজ্জা লজ্জা আভা মুখশ্রীতে৷ কারো চোখের দিকেও তাকাচ্ছে না৷ পরণে শাড়ি মনে হচ্ছে চব্বিশ পঁচিশ বছরের যুবতী৷
রুপা এসে শুধালো,
“ভাইজান এখন কি রাতের খাবার খাবে নাকি কফি দিবো?”
রেজওয়ান তাকালো এ বাড়ির মেয়ে গুলো কি আসলেই এত সুশ্রী নাকি ওর চোখেই লাগছে? শাহওয়াজ একবার পিছন ঘুরলো ময়ূরাক্ষী সাথে সাথেই ভেতরে ঢুকে গেলো৷ যা দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো শাহওয়াজ৷ মেয়ে লাজুক, ভীতু নাকি রাগী জানে না শাহওয়াজ৷ শাহওয়াজ রুপাকে বললো৷
“আমরা নিচে যাবো, কিছু আনতে হবে না৷”
রুপা সায় দিলো৷ এ মেয়েটা একদম তার মায়ের অন্যরুপ যেন, ভেবেছিলো এ বাড়ির কারো প্রতি মায়া দেখাবে না কিন্তু এ মেয়েটা যেন হার মানালো তাকে৷ প্রথম দিন কি ভয়ে ভয়ে ঢুকলো ঘরে উপহার খানা দেওয়ার পর যেন সাহস পেলো৷ এখন তো আপনি থেকে তুমি করে বলে৷
চৌধুরী বাড়ির নিয়ম টা সবার জন্য সমান হলেও শাহওয়াজ আসায় একটু পরিবর্তন হয়েছে৷ এতে সবার অভিযোগ ব্যাপক৷ এ বাড়িতে তো নিয়ম ভঙ্গ করেনি কেউ৷ ভাইয়ের শশুর বাড়ি থেকে মানুষ আসলেও নিয়মে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন হতো না৷ নয়টা বাজে যার যেখানেই রাজকার্য থাকুক এক সাথে খাবার খেতে হবে রাতে৷ এমনকি সকালেও আটটায় নাস্তা সারতে হবে৷ অন্যথা হলে সে দিন বাড়িতে আর খাবার জুটতো না কিন্তু শাহওয়াজ এর বেলায় কোনো বালাই নেই৷ কেন? সয়ং আকবর চৌধুরীর পূত্র বলে?
রুপা চলে গেলো৷ রেজওয়ান হা করে রুপার দিকে তাকিয়ে ছিলো৷ তার এ মেয়েটাকেই হুট করে মনে ধরলো কেমন কিন্তু মেয়েটার কার বাগদান৷ তার কপালি বুঝি এমন৷ রেজওয়ান আর শাহওয়াজ ও উঠে দাঁড়ালো৷ রেজওয়ান এর ফোন আসায় কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেছে৷ চিলেকোঠার রুমটার কাছে আসতেই ক্ষানিকটা দাঁড়ালো যেন কি মনে করে ঠিক তখনি মেয়েটা ধুম করে দুয়ার খানা আটকে দিলো৷ ভ্যাবাচেকা খেলো শাহওয়াজ, এ মেয়ে আচ্ছা পাজী তো৷ দাঁড়ালো না সে আর সামনে হাটা ধরলো৷
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক রাত যেন নিস্তব্ধতা বাড়িয়ে দিচ্ছে আরো৷ বাইরে আর কারো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না হাফ ছাড়লো ময়ূরাক্ষী৷ যাক লোকটা গেছে মাথায় উর্না টেনে বের হলো৷ ছাদের লাইট টা বন্ধ৷ অদ্ভুত তো৷ ওরা কি যাওয়ার সময় লাইট নিভিয়ে গেছে? সচকিত দৃষ্টিতে তাকালো৷ ভীত হলো চোখ জোড়া মরিচা বাতিও নিভানো কাজ করলো কে? বাইরের আলোতে আবছা আলোকিত চারোপাশ তবে সিড়ির ধারে যে অন্ধ কার যাবে কি করে? সিড়ির ধারে অন্ধকার নাকি এখানকার দরজাটা বন্ধ বুঝতে পারছে না৷ সামনে এগোতে নিবে হুট করেই কেউ আঁকড়ে ধরলো হস্ত খানা কেঁপে উঠলো দেহ৷ আরেকটু টান পরলো হাতে৷ সুঠাম বুকে গিয়ে ঠেকলো ময়ূরাক্ষীর পিঠ এর মাঝে কর্ণপাত হলো ফিসফিসানি পুরুষালি কন্ঠ,
“শাহওয়াজ কে এড়িয়ে চলেন মেয়ে? সাহস তো আকাশচুম্বী৷ নো প্রব্লেম আই লাইক ইট তবে এড়িয়ে চলার শাস্তি যে তোমাকে পেতেই হবে৷”
চমকালো চেনা কন্ঠে ময়ূরাক্ষী৷ এ ঠান্ডা হাওয়াতেও ঘাম ছুটলো তার৷ মিনমিনিয়ে কম্পিত কন্ঠে বললো,
“ছ ছাড়ুন ব বলছি অভদ্রলোক৷”
বলেই ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো৷ কিন্তু লাভ হলো না৷ রাগে ফুসে উঠলো ময়ূরাক্ষী হুট করেই চিৎকার করে বললো,
“আরে রুপাবু…!!”
বলেতে ক্ষানিকটা হাল্কা হয়ে এলো শাহওয়াজ এরহাত৷ ভো দৌড় দিলো দরজার কাছে৷ কিন্তু ঘটলো বিপত্তি দরজা বন্ধ থাকায় এমন ধাক্কা খেলো “আহ” করে উঠলো তবুও দাঁড়ালো না তড়িৎ গতিতে দরজা খুলে পালালো৷ সব কিছু এত তাড়াতাড়ি হলো শাহওয়াজ এর মাথার উপর দিয়ে গেলো৷ মেয়েটা নিশ্চয়ই ব্যাথা পেয়েছে? শাহওয়াজ হাক তুলে বললো,
“ময়ূরাক্ষী দাঁড়ান, কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন দেখবো আমি৷”
কিন্তু কে শুনে কার কথা? ময়ূরাক্ষীকে কি আর ধরা যায়? সে তো পালিয়েছে সেই কখন৷
চলবে,
[বি.দ্রঃদেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত৷ আমাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আংকেল স্ট্রো’ক করেছে মাঝরাতে৷ তারা ঢাকা শহরের কিছুই তেমন চেনে না বলা যায়৷ কাল মাঝ রাত থেকে হসপিটালে নিয়ে দৌড়াচ্ছি৷ সারাদিন রোজা রেখে বাইরে ছিলাম, ইফতারের পাঁচ মিনিট আগে বাসায় ফিরেছি৷ ওই হসপিটালে বসেই লিখেছি আশাকরি বুঝবেন?রিচেক হয়নি]
নোট:১৩৫০ শব্দ