#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা
নয়
“মরদ এক গলে রুপে আরেক গলে গুনে তোমার মাইয়ার কোনোটাই নাই আমার নাতী কি দেইক্ষা তোমার মাইয়ার দিকে তাকাইবো সেঝো বউ?”
পান চিবোতে চিবোতে বললো খোদেজা রাহেলা কে৷ মহিলার চুলে পাঁক ধরেছে চামড়া কুঁচকে আসছে এখনো মিষ্টি কথা বলতে জানে না৷ যখন পারে মানুষকে হেয় করে কথা বলতে ছাড়ে না৷
মহিলাটার বয়স বাড়লেও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে যেন পরিপূর্ণ৷ তার কাছে বয়স ও যেন সংখ্যা মাত্র৷
রগরগে যুবতী কে ও হার মানাবে তার চাল চলন৷ নিজের দিক দিয়ে মহিলা বেশ যত্নশীল৷ এখনো রঙিন কাপর ছাড়া কাপড় শরীরে জড়ায় না৷
নিঃসংকোচে মানুষ কে ছোট করে সে৷ নিজের রুপ আছে বলে অন্যকে রুপ নিয়ে কটুক্তি করতে ছাড়েন না৷ যেন তার কাছে এসব ডাল ভাতের মত৷ খারাপ লাগা তার শব্দ ভান্ডারে নেই৷
রাহেলার মাঝে মাঝে ভিষণ রাগ হয়৷তার মেয়ে কি কম সুন্দর? রঙটা শুধু ময়ূরাক্ষীর মত না৷ কিন্তু এখন রাগ হচ্ছে ওই ময়ূরাক্ষীর উপর৷ ওর রুপ একদিন রাহেলা ঝলসে দিবে৷
আকাশচুম্বী রাগ হলেও রাহেলা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো বললো,
“আম্মা আপনিইতো বলেছেন হাসি যেন শাহওয়াজ এর আগে পিছে ঘুরঘুর করে৷ এখন আপনি কোনো পথ বলে দেন৷”
শাহওয়াজ কে ছাড়া যাবেনা৷ পাত্র হিসেবে সুযোগ্য৷ জমিদার নিয়মে এ বাড়ির বড় পূত্রই সব পায়৷ সবাই এখানে থাকতে পারলেও তারা সব নিতে পারবে না৷ তবে বড় ছেলে যদি নিজ থেকে দেয় তা অন্য ব্যাপার৷ সে যুগ না থাকলেও দলিল দস্তগীরে সাফ সাফ আইনি ভাবে উল্লেখ রয়েছে৷
এ দিক দিয়ে বলতে গেলে শাহওয়াজ সোনার ডিম পারা হাস৷ নানা বাড়িও বিশাল বিত্তশালী, আবার পেশায় ডাক্তার৷ একে কি করে ছেড়ে দেয়? শাশুড়ী একটু বেশি বুঝে, পুরুষ মানুষ তার উপর থেকেছে বিলেতে রুপ, গুন ছাড়া অন্য কত কি দিয়ে মন ভোলানো যায়৷ ভেবেই হাসলো রাহেলা, খোদেজা আঙুল থেকে চুন মুখে পুড়ে পান কিছুক্ষণ চিবোলো আবার৷ যেন ভাবলো কিছু অতঃপর পিক ফেলে বললো,
“তা তো কইছিলাম ময়ূরাক্ষী কে দেখার আগে এখন শাহওয়াজ ময়ূরাক্ষীরে দেখছে৷ এখন কি আর আমার নাতী সোনা থুইয়া পিতলে মুখ দিবার যাইবো?”
রাহেলার রাগ বাড়লো, এ মহিলা বার বার তার মেয়েকে ছোটো করছে৷ তার মেয়ে পিতল? আর অই চাল চুলোহীন ময়ূর সোনা? রাহেলা নিজেকে সংযত করতে পারছে না আর৷ তবে রাগ দেখালে চলবে না৷ ঠান্ডা মাথায় মানুষ কে অনেক কিছু বলা যায়৷ রাহেলা নিজের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে ঠান্ডা মাথায় নত মুখে বললো,
“আম্মা বার বার যেভাবে ‘আমার নাতী, আমার নাতী’ করতাছেন মনে হইতাছে শাহওয়াজ আসলেই আপনার নাতী৷”
রাহেলার কথায় স্তম্ভিত ফিরলো খোদেজার৷ বিস্মিত না হয়ে পারলো না৷ তার বিড়াল তাকেই বলে মেও? খই ফুটছে আজকাল এ রাহেলার৷ আশে-পাশে দৃষ্টি বুলিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
“নিজের মুখে লাগাম দাও সেঝো বউ৷ দেওয়ালেরো কান আছে জানো না? আর এ বাড়িতে কে আছে ভুইলা গেছো? মধুলতার পোলা, মধুলতার মতই ফনা তুলবো তখন টিকবার পারবা?আর ও আমার নাতী নয়তো কি? জন্ম দিবার পারছো একটা পোলা?”
রাহেলা মুখ বাঁকালো৷ এবার একটু জোরেই বললো,
“আম্মা এমন কইরা বলতাছেন যেন মধুলতা জানে না আপনি…..!!
রাহেলা এইটুকু বলতেই থামিয়ে দিলো খোদেজা৷ এই মেয়ের দিন দিন সাহস আকাশ ছুঁচ্ছে৷ পাখনা গজাচ্ছে পাখনা কাটতে হবে৷ খোদেজা হুংকার তুললো কন্ঠ খাদে নামিয়ে কঠিন স্বরে বললো,
” মধুলতা আর উমার কথা মনে আছে সেঝো বউ? আমার মুখের উপর কথা বললে আর আমার লগে লাগবের আইলে ওদের থেইকা খারাপ অবস্থা করবো কিন্তু তোমার৷”
বলেই হাসলো খোদেজা,হাসিটা কেমন ভয়ংকর৷ দেখলেই শিরদাঁড়া চমকায়৷ খোদেজা প্রস্থান করলো এখান থেকে৷ রাহেলা ঠায় বসে রইলো৷ শুকনো ঢোক গিললো মানুষ এত নিকৃষ্ট হয় কি করে?
_________
তেঁতুল তলায় বসে পেয়ারা চিবোচ্ছে মৃদুলা, ময়ূরাক্ষী, আর ইতি৷ ইতি হলো মৃদুলার বান্ধুবী৷ পেয়ারা চিবোচ্ছে আর গাছের দিকে তাকাচ্ছে ময়ূরাক্ষী৷ পাশের তার বিড়ালছানা যার নাম চাঁদ৷ আশেপাশে ঘুরে বেরাচ্ছে মাঝে মাঝে ময়ূরাক্ষীর পায়ের কাছে এসে বসছে৷ তেতুলগাছটি একেবারে পুকুরের পাশ ঘেঁষে এবার গাছে এত্ত তেঁচবতুল ধরেছে দেখলেই লোভ লাগে৷
সহজে তেতুল খাওয়া হয়না, তবে কাজের লোক দিয়ে বেশি করে পেরে রেখে দেওয়া হয় ইদে বাসন কাসন মাঝা ঘষার কাজে লাগে৷
আজ কলেজ থেকে আসার সময় একটা গাছের থেকে চুরি করে এনেছে ময়ূরাক্ষী৷
চুরি করা জিনিস খাওয়ার স্বাদই ভিন্ন৷ এখন তারা বুদ্ধি এঁটেছে এখানে বসে সবাই মিলে তেঁতুল মাখা খাবে পেয়ারা দিয়ে৷ কিন্তু কথা হচ্ছে গাছে উঠবে কে?
ময়ূরাক্ষী শুনেছে তেঁতুল গাছে ভুত থাকে৷ বড়মা আর রুপাবু বলেছে সন্ধ্যায় আর ভরদুপুরে তাকে তেঁতুল তলায় আসতে না৷
তাই তো আজ বাড়িতে না ঢুকে কলেজ থেকে এখানেই এসে বসেছে৷ ইতিকে মাঝপথে পেয়েছিলো মৃদুলাকে ইতিকে দিয়েই ডেকে পাঠিয়েছে৷
মৃদুলা হলো ময়ূরাক্ষীর তোতাপাখি যাকে ছাড়া চলেই না তার৷
এর মাঝেই এলো হাসি৷ হাসি এবার মাধ্যমিক পরিক্ষা দিয়েছে৷ আপাতত ছুটি কাঁ৷ টাচ্ছে বাড়িতে, হাসি আসতেই ময়ূরাক্ষীর হাত থেকে একটা পেয়ারা ছিনিয়ে নিলো৷
হাসির ময়ূরাক্ষীকে মোটেও পছন্দ না৷ ময়ূরাক্ষীর সব জিনিসে হাসির নজর থাকে৷ ময়ূরাক্ষী আশ্রিতা হওয়া শর্তেও তার বড় চাচা সব সময় ময়ূরাক্ষীকেই বেশি যত্ন করে৷ মুখে টু পরিমানে কথা বলে না এ মেয়ের সাথে কিন্তু যত্নের বেলায় নিজের মেয়ের মতই রাখে৷
সব কিছুতেই সেরা৷ কেন এমন করে? সুন্দর বলে? নয়তো এ আশ্রিতার জন্য তাদের এত কিসের মায়া? রেহান ভাইয়ের তো ‘ময়ূরাক্ষী, ময়ূরাক্ষী’ করেই সময় কাঁ’টে বড় চাচিও তাই৷ আর মেঝো চাচি? সে তো মেয়ের মত করে আগলে রাখে কি সুন্দর নুপুর জোড়া দিলো সে বার৷ হাসি মুখ ফুটে চাইলো হাসিকে বললো তোকে অন্য একটা বানিয়ে দিবো ক্ষন৷
আর আজ সকালে শাহওয়াজ কি করলো? ময়ূরাক্ষীকে চা বানিয়ে আনতে বললো শাহওয়াজ ও যেন ওকেই প্রাধান্য দিলো অথচ সে রাতে ও কত শখ করে খাবার নিয়ে গেলো কেমন করে না করে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো৷ ভাবতেই শরীর রাগে শিরশির করে উঠে৷
“ছিনিয়ে নিলি কেন হাসিবু? ময়ূরবুর কাছে চাইলেতো এমনিই দিতো পেয়ারা টা৷”
মৃদুলার কন্ঠে ভাবনার সুতো কাঁ’টে হাসির৷ আড় চোখে একবার ময়ূরাক্ষীর দিকে তাকালো অতঃপর মৃদুলার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি কারো কাছে চাইতে পছন্দ করিনা৷ যা আমার ভালো লাগে ছিনিয়ে নেই৷”
বলেই হাসলো৷ ময়ূরাক্ষী তপ্ত শ্বাস টানলো৷ এসবে ময়ূরাক্ষীর মাথা ব্যাথা নেই৷
হাসি যে কিছু অন্তত চাইবে না তা ভালো করে জানে৷ হাসি পেয়ারায় কামড় দিতে দিতে ময়ূরাক্ষীর উদ্দেশ্যে বললো,
“তুই যে কলেজ থেকে এসে বাড়িতে না গিয়ে ভর-দুপুরে মৃদুকে নিয়ে তেঁতুল তলায় এসেছিস বলবো ছোটো চাচি জানে এটা?”
হাসির কথায় ভীত হয়ে তাকালো ময়ূরাক্ষী৷ ছোটো মা জানলে রক্ষে নেই৷ ময়ূরাক্ষী আমতা আমতা করে বললো,
“আমি এখনি যেতাম বাড়িতে৷”
হাসি ঠোঁট বাকিয়ে হেসে পেয়ারায় কামড় বসাবে ঠিক তখনি পেয়ারা টা পরে গেলো হাত থেকে৷
সাথে সাথেই পেয়ারা টা তুললো ময়ূরাক্ষীর দিকে এগুয়ে দিয়ে বললো,
“পেয়ারা টা ধুঁয়ে এনে দে তো ময়ূর৷”
ময়ূরাক্ষী পেয়ারাটা নিতে গিয়েও থেমে গেলো৷ এ পুকুরের ঘাট অনেক পিচ্ছিল৷ বাড়ির ভেতরের টা ঝকঝকে তাই ভয় হয় না কিন্তু এখানে যদি পরে যায়? শুনেছে এ পুকুরে অনেক মানুষ পরে মারাও গেছে৷
ময়ূরাক্ষী সাতার জানে না৷ পেয়ারাটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাড়িতে চল ধুয়ে দিচ্ছি৷ ”
হাসি আবারো হাসলো৷ কিছু একটা ভেবে বললো,
“তুই যদি এখান থেকে পেয়ারা ধুয়ে দিতে পারিস কথা দিচ্ছি ছোটো চাচি কে কিছু বলবো না৷ নয়তো এখনি গিয়ে বলবো তুই মৃদুলাকে নিয়ে তেঁতুলতলায় এসেছিস৷”
হাসির কথায় ময়ূরাক্ষী পরলো বিপাকে৷ এ মেয়ে ইচ্ছে ইচ্ছে করে এমন করছে ঢেড় বুঝলো৷ মেঝোমা ওকে বকবে এটা ওর ভয় না মৃদুলাও ওর জন্য মা’র খাবে এটাই ভাবছে৷ তপ্ত শ্বাস টেনে এগিয়ে গেলো ঘাটের দিকে৷ পিছু পিছু হাসি মৃদুলা ও আসছে৷ মৃদুলা বার বার বললো,
“বুবু যাওয়া লাগবে না আজ একটু মা’র খাবো বাড়ি চল৷”
শুনলো না ময়ূরাক্ষী ঠিকঠাক মতো বসলো কিন্তু বিপত্তি ঘটলো নিচু হয়ে ধোঁয়ার সময় পা টা সত্যি পিছলে গেলো৷ পাশেই বাশ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো হাসি চিৎকার করে বললো,
“হাসি আমার হাত ধর৷”
তবুও শেষ রক্ষা হলো না থপাস করে পরলো পুকুরে৷
চলবে ইনশাআল্লাহ,
[কাল ব্যাস্ত থাকবো একটু তাই কাল গল্প দিতে পারবো না৷ আশাকরি বুঝবেন৷ ]
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/sL2qA4q5VGJmtJ2U/?mibextid=Nif5oz