#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৪০
কবিতা বি’র’ক্তি’ক’র মুখশ্রীতে দাঁতে দাঁত চেপে নিশ্চুপ বসে আছে। ফারহান অবাক চোখে লিয়ার দিকে চেয়ে আছে।লিয়ার ফেস দেখে বোঝা যাচ্ছে,লিয়া বেশ স্বাভাবিক আছে। সবার মাঝে জারিফের এভাবে লিয়াকে ডাকাতে লিয়া যেনো একটুও অবাক হয়নি। বরং লিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসল।অরিন ভ্রু কুঁচকালো।কোনো জটিল সমীকরণ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে এমন ভাবসাব অরিনের।জারিফ লিয়ার দিকে সুগভীর নজরে চাইল। অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে পাশে থাকা অরিনকে উদ্দেশ্য করে চেয়ারের দিকে ইশারা করে বলল,
“অরিন বসো।”
অরিন অপ্রস্তুত হলো। হঠাৎ স্যার কেনো তাদের টেবিলে বসতে বলছে। স্ট্রেন্জ!এইভেবে দ্বিধায় পরল অরিন।অরিন ঠোঁট কামড়ে ধরে একবার লিয়ার দিকে চাইল।লিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করল।অরিন বুঝল লিয়াও বসতে বলছে।অরিন ভেতরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বসল।জারিফ লিয়ার দিকে ফের তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“কি হলো?তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি। প্লিজ, টেক আ সিট।”
লিয়া হাসিমুখে বলল,”শিওর।”
লিয়া বসল। জারিফ লিয়ার পাশে বসল।কবিতা আড়চোখে সবটা অবলোকন করছে।আর মেজাজটা ক্ষিপ্ত হচ্ছে তার।কি দরকার ছিলো? এভাবে টিচারদের মাঝে স্টুডেন্টদেরকে আনার। আর জারিফের হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয় লিয়া নামক মেয়েটার উপর উনার দূর্বলতা আছে।জারিফের চোখের নজরে তা স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকের ক্রাশ লেকচারার আয়মান জারিফ কিনা শেষমেষ তার ছাত্রীর উপর দুর্বল হলো। উফ্!মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।মেয়েটা ফাস্ট ইয়ারের দু’জনের বয়সের ব্যবধানও বেশ ভালোই হবে।আর মেয়েটারও কোনো পার্সোনালিটি নেই।মানছি ছেলে মানুষ সুন্দরী মেয়ে দেখে ফিদা হয়েছে।তাই বলে টিচারের সাথে? উফ্! ডিসগাসটিং।এমন একটা লো পার্সোনালিটি সম্পন্ন মেয়ের সাথে এক টেবিলে বসে আমাকে লাঞ্চ করতে হবে। জাস্ট ভদ্রতার খাতিরে উঠে চলে যেতেও পারছি না।আবার হজমও করতে পারছি না।এসব ভেবে কবিতা আড়ালে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল।
জারিফ পকেট থেকে টিস্যু বের করে লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ইশারায় মুখটা মুছে নিতে বলল। এইটুকু হেঁটে আসতে গিয়ে গরমে লিয়ার কপাল থেকে ঘামের রেখা ভ্রু যুগলের কোণা বেঁয়ে গালে এসে পরছে।লিয়া মুখটা মুছে নিলো। টিস্যু ঘামে ভেজার ফলে সাদা খুঁত খুঁত ছোট্ট অংশ কপালের উপর ছিলো।জারিফ এক আঙ্গুলের সাহায্যে লিয়ার কপাল থেকে খুঁত খুঁত টিস্যুর অংশটা ফেলে দেয়। অরিনের চোখ যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।অরিন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল।স্যার লিয়াকে টাচ করল।অথচ লিয়া নির্বিকার।ফারহানের হাতের আঙ্গুলগুলো আপনাআপনি মুঠো হয়ে যায়। ফারহানের প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে।জারিফ লিয়াকে পাশাপাশি দেখে। ফারহান ভাবছে,লিয়া কি জারিফের পরিচিত না-কি?জারিফ যথেষ্ট ভদ্র মানুষ তবে লিয়ার সাথে তার এখনকার করা আচরণ অদ্ভুত লাগছে।লিয়া চুপচাপ না থাকলে।লিয়া যদি একটু বি’র’ক্তি ভাব প্রকাশ করতো জারিফ সাহেবের এহেন ব্যবহারে।তাহলে আমি প্রতিবাদ করতাম। ছাত্রীর সাথে কেয়ারের নামে এমন আচরণ অসভ্যতামিই প্রকাশ করে।ফারহানের ভাবনা ভাঙ্গে জারিফের কথায়।জারিফের কথায় লিয়া বাদে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়।জারিফ হালকা কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল।কোনো প্রকার ভণিতা ছাড়াই স্পষ্ট গলায় বলল,
“আই ওয়ান্ট টু ইন্ট্রোডিউস মাই ওয়াইফ ইউদ ইউ।”
একসাথে তিনজোড়া চোখ জারিফের দিকে বিস্ফোরিত হয়ে চাইল।জারিফের কথায় কবিতা হতবাক হয়ে বিস্ময়কর চাহনিতে তাকাল।অরিন যা বোঝার সবটা বুঝে যায়।লিয়ার দিকে ব্যাকা চোখে তাকাল। ফারহান অবাক হয়ে বলল,
“হোয়াট!ওয়াইফ মানে?”
জারিফ স্মিত হাসল। বলল,”আসলে আপনারা বোধহয় জানেন না।আমি ম্যারিড।শী ইস মাই ওয়াইফ। মিসেস জারিফ।”
লিয়ার দিকে তাকিয়ে একহাত দিয়ে দেখিয়ে শেষের কথাটা বলল জারিফ।লিয়ার কেমন জানি লজ্জা অনুভব হতে থাকে।যতই হোক বাকি দু’জন স্যার ম্যামের সামনে এভাবে জারিফের বউ বলে পরিচিত হতে লজ্জা লাগছিলো।লিয়া লজ্জায় দৃষ্টি নত করে নেয়। উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিশ্চুপ রয়।ফারহানের মনের আকাশে ঘনকালো মেঘ খানিক আগেই জমা হয়েছিলো।ঘনকালো মেঘের ঘনঘটা যেনো লহমায় বেড়ে গেলো। তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ চমকালো,ভারী বাজ পরলো। ফারহানের মনের আকাশে যেনো বিকট আওয়াজ তুলে বাজ পরলো। সাথে সাথেই বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল।মনে হলো হৃদস্পন্দন যেনো কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্টপ হয়ে গিয়েছে। র’ক্ত চলাচল বোধহয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।গা টা কেমন জানি হিম শীতল হয়ে আসছে। উফ্!নিজেকে বড্ড এলোমেলো লাগছে।সব কিছুই ঠিক আছে।অথচ মনে হচ্ছে কিছুই যেনো ঠিক নেই। ফারহান বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।কিছু স্বপ্ন যেনো দুঃস্বপ্নে হারিয়ে যাচ্ছে।সদ্য জন্ম হওয়া ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশ করার আগেই অপ্রকাশিত রয়ে যাবে। ফারহান চোখ বন্ধ করে ছোট করে শ্বাস টেনে নিলো। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল।
কবিতার কিছুটা খা’রাপ লাগলেও মনেমনে লজ্জিত হলো।একটু আগে লিয়াকে নিয়ে ওরকম ব্যাড ধারণা করার জন্য।কবিতা জোর করে হাসির রেখা টেনে এনে বলল,
“ওহ্।তাই নাকি! জানতাম না।তবে লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়েটা কবে করলেন মিস্টার জারিফ?তাও আবার ছাত্রীকে।রিলেশন করে নাকি?আপনাকে দেখে আমি অন্তত ধারণা করতে পারেনি আপনি রিলেশন করতে পারেন।আপনাকে দেখে আমার বরাবরই মনে হয়েছে এসব প্রেম ট্রেম থেকে আপনি হয়তো হাজার গজ দূরে থাকেন।”
শেষের কথাটা খোঁচা মে’রে বলল কবিতা। জারিফ বেশ বুঝতে পারল।কারন কবিতা বিভিন্ন সময় কথা বলার সময় তার আচরণ দিয়ে প্রকাশ করতে চেয়েছিল সে জারিফের উপর দুর্বল।জারিফ বুঝেও না বোঝার এক্টিং করে থাকতো।আর একটা আনম্যারিড মেয়ে একজন পুরুষকে তার ভালো লাগতেই পারে।এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।জারিফ সেসব কখনো মাথায়ই ঢুকায়নি।জারিফ স্বাভাবিকভাবে প্রত্যুত্তরে বলল,
“মিস কবিতা।আমাদের রিলেশন করে বিয়ে নয়।আর ছাত্রী বিয়ের আগে ছিলো না।বিয়ের পরে ছাত্রী হয়েছে।লিয়া ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগেই আমাদের বিয়ে হয়েছে।আমাদের বিয়েটা হঠাৎ করে হয়।শুধু আকদ করে রাখা হয়।এখনো তেমন কাউকে জানানো হয়নি।এই মাসের**তারিখে সবাইকে জানিয়ে নতুন করে বিয়ের প্রোগ্রাম করা হবে।”
জারিফ এর থেকে বেশি কিছু আর বলে না। কি দরকার ঘরের কথা বাইরে বলার। বিয়েটা কীভাবে হয়েছে যেসব কথা বলার প্রয়োজন বোধ জারিফ করল না।লিয়া জারিফের উপর সন্তুষ্ট হয়।বিয়েটা যে একটা দূর্ঘটনা ছিলো সেসব কাউকে না বলে, বিষয়টা সুন্দর করে হ্যান্ডেল করে নিলো জারিফ।এইজন্য লিয়া কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে জারিফের দিকে চাইল।জারিফ লিয়াকে ইশারা করল।লিয়া বুঝল।লিয়া তড়িৎ ব্যাগ থেকে কার্ড বের করল।জারিফের দিকে বাড়িয়ে দিলো।জারিফ একটা কার্ড হাতে নিয়ে ফারহানের দিকে বাড়িয়ে বলল,
“ফারহান সাহেব**তারিখে আমাদের রিসিপশনে আশাকরি উপস্থিত থাকবেন। আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।আপনাদের দোয়া কামনা করছি,সাথে উপস্থিতি।”
ফারহান কার্ডটা হাতে নিলো।জোর করে হাসার চেষ্টা করে ব্যাথাতুর হৃদয় নিয়ে বলল,”শিওর। নিশ্চয় যাবো।আর আপনাদের নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।”
“থ্যাংকস।”
অতঃপর জারিফ লিয়াকে ইশারা করল কবিতা আর অরিনকে কার্ড দেওয়ার জন্য।লিয়া হাসিমুখে কবিতার দিকে কার্ড দিয়ে বলল,
“ম্যাম। অবশ্যই কিন্তু আসবেন।আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”
কবিতা হাসিমুখে কার্ড নেয়। ঠোঁট মেলে বলল,”মিস্টার জারিফ আমি তো দ্বিধায় পরে গেলাম।একদিকে ছাত্রী অন্যদিকে কলিগের ওয়াইফ। সেদিক দিয়ে ধরলে ভাবী হবে লিয়া।তো বুঝতে পারছি না লিয়াকে কী বলে সম্বোধন করবো নাম ধরেই নাকি ভাবী বলে।”
জারিফ স্পষ্ট স্বরে বলল,”ক্যাম্পাসে যখন থাকবে তখন লিয়া আপনার ছাত্রী । আবার ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলেও লিয়া আপনার ছাত্রীই থাকবে।তবে যখন আমার দিক হতে লিয়াকে ধরবেন তখন আমার পরিচয়েই লিয়া পরিচিত হবে।”
একটু থেমে জারিফ বলল,”আচ্ছা।আপনাদের অনেক সময় লস করালাম।এবার অর্ডার দেওয়া যাক।”
সবাই মিলে একসাথে খাবার খেতে থাকে।লিয়ার সামনে চিংড়ি মাছ ভুনা ছিলো। জারিফ চিংড়ি ভুনার বাটি টা সরিয়ে রাখল।আর লিয়াকে বলল,”তোমার না চিংড়িতে এলার্জি।কখন ভুলে প্লেটে নিয়ে নিবে।ভুল করে খেয়ে ফেলবে।আর অসুস্থ হয়ে পরবে।সাথে আমাকে টেনশনে ফেলবে।”
লিয়া অবাক হয় জারিফের এখনো মনে আছে সেদিনের কথা। ফারহান আড়চোখে জারিফের কেয়ারগুলো দেখতে থাকে।খাওয়ার সময় জারিফের লিয়ার প্রতি কেয়ার দেখে ফারহানের বুকের মাঝে হালকা ব্যাথা অনুভব হয় ।কিছুটা কষ্ট হলেও ভালোও লাগল।যাক লিয়া একজন ভালো মনের মানুষকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। দু’জনকে দেখে মনে হচ্ছে মেইড ফর ইচ আদার।ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল বাস্তবতা মানতে হবে। এখানে একজনকে ভালো লাগতেই পারে।তবে তারমানে এই নয় যে,আমাকে তাকে পেতেই হবে।ডু অর ডাই এমন নয়।এসব গল্প সিনেমায়ই মানায়।তবে প্রাথমিকভাবে একটু কষ্ট হয়। এটা অস্বীকার করার নয়।সেটাও সময়ের সাথে সাথে সয়ে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষে জারিফ বিল পে করে। লাঞ্চের পরের ক্লাসের সময় অরিন লিয়াকে এটাসেটা বলতেই থাকে,”তোর বর চোখের সামনে থাকতেও আমি কিকরে টের পেলাম না।তোরা দু’জনে কীভাবে ঘোল খাওয়ালি বলতো।স্যার যখন তোকে বউ বলে পরিচয় দিলো,তখন আমি তো জোরেশোরে একটা ঝটকা খেয়েছি।”অরিনের এসব কথায় লিয়া ঠোঁট চেপে শব্দহীন চমৎকার হাসল।
.
জারিফ অন্যান্য আরো কয়েকজন কলিগকে ইনভাইট করেছে।এগ্রিকালচার ফ্যাকাল্টির বেশ কয়েকজন টিচারসহ অনেক স্টুডেন্টসরাই জারিফ-লিয়ার সম্পর্কের কথা এখন জানে।কোনো কোনো স্টুডেন্টস তো জেলাসি ফিল করে ব্যাকা চোখে লিয়ার দিকে তাকায়।তবে মুখে কিছু বলার সাহস পায় না।
.
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।আপন গতিতে চলতে থাকে।দেখতে দেখতে বিয়ের ডেট ঘনিয়ে এসেছে।আজ বৃহস্পতিবার। আগামী শুক্রবার জারিফ-লিয়ার বিয়ে।ঘড়ির কাঁটা তিনটার ঘর ছুঁইছুঁই।জারিফ লিয়াদের ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে।রাজিয়া সুলতানা সিঙ্গেল সোফায় বসে ভালোমন্দ কথাবার্তা বলছেন।রাজিয়া সুলতানা শুধালেন,
“তোমার বাবা মা কেমন আছেন?বাসার সবাই ভালো আছে তো?নাতাশাকে আনতে পারতে।”
জারিফ নম্র স্বরে বলল,”আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে।আসলে আন্টি নাতাশা নীল আর জারার সাথে সরাসরি মলে আসবে।ও’কে আর এদিকে আনলাম না।”
“ওহ্। আচ্ছা বাবা।লিয়া রেডি হচ্ছে ততক্ষণে তুমি অল্প করে হলেও কিছু খাও।আমি খাবার রেডি করছি।তুমি বসো।বেশি দেরি হবে না।”
এই বলে রাজিয়া সুলতানা উঠে দাঁড়ালেন। জারিফ আসার পরপরই খাওয়ার কথা বললে না করে।রাজিয়া সুলতানা ফের বললেন।জারিফ অমায়িক হাসল।বলল,”আন্টি ব্যস্ত হবেন না, প্লিজ।আমি মাত্রই খেয়ে আসছি।এখন কিছুই খেতে পারব না।”
রাজিয়া সুলতানা আর জোর করলেন না।জারিফ বলল,”আঙ্কেল কে দেখছি না। বাসায় নেই। আঙ্কেলের শরীর স্বাস্থ্য এখন কেমন আছে?”
“তোমার আঙ্কেল অফিসে।শরীর স্বাস্থ্য আছে আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি।এই ভালো তো এই খা’রাপ। এইভাবে চলছে। ঠিকমতো সব কিছু মেইনটেইন করে না জন্য প্রবলেম গুলো একটু বেশিই হয়।”
এরকম ভালোমন্দ কথাবার্তা চলতে থাকে।এমন সময় লিয়া এসে বলল,”আমি রেডি। চলুন।”
জারিফ লিয়ার দিকে একপল চাইল। কিয়ৎক্ষন পরে রাজিয়া সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে ভদ্রভাবে বলল,
“আন্টি রাহবারকেও বলুন রেডি হতে।রাহবারও আমাদের সাথে যাবে।”
“তোমরা যাও বাবা। রাহবারের কোচিংএ পরিক্ষা আছে।ও একটু পরই কোচিং এ যাবে।”
“এই রে ভুল হয়ে গেলো। ফোনে আগে থেকেই বলে রাখা লাগত।তাহলে ভালো হতো।রাহবারের এক্সামের কথা জানলে ডেটটা আজ ফিক্সড না করে কাল করলে ভালো হতো।”
রাজিয়া সুলতানা আদূরে গলায় বললেন,”সমস্যা নেই বাবা।তোমরা যাও। রাহবার এমনিতেও মার্কেটে যেতে তেমন চায় না।ওর জন্য পোশাক কেনার সময়ই জোর করে নিয়ে যেতে হয়। বেশিরভাগ সময় আমি আর লিয়াই ওর পোশাক কিনে আনি।ওর তো সারাদিন দাও বন্ধুদের সাথে খেলতে। ক্রিকেট,ফুটবল হাবিজাবি আরো যত খেলা আছে।সেখানে রাহবার আছে।”
.
রাজিয়া সুলতানার থেকে বিদায় নিয়ে এসে গাড়িতে বসল লিয়া-জারিফ।গাড়িতে বসে লিয়া শুধালো,
“আপনি না ফোনে বললেন নীল,জারা ওরাও থাকবে।তাহলে ওদের আনলেন না যে।”
জারিফ ড্রাইভ করতে করতে বলল,”ওরাও থাকবে বলেছি যখন। নিশ্চয় থাকবে।”
জারিফের হেঁয়ালিপূর্ণ কথা শুনে লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,”আমরা যাচ্ছি তো।ওরা তাহলে কই?ওরা কি মলে ওয়েট করছে?”
“না।আমি নীলের কাছে ফোন করার পর,নীল নিয়ে আসবে জারা আর নাতাশাকে।”
“এখনই ফোন করে নিন।”
“আরেকটু পরে করবো।আগে একটা কাজ আছে।”
“কী কাজ?”
জারিফের থেকে উত্তর পাওয়ার আগেই লিয়া চঞ্চল কণ্ঠে বলল,”এই আপনি এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন বলুন তো। শর্টকাট দিয়ে গাঙ্গিনাপাড়ে না গিয়ে।কোথা দিয়ে যাচ্ছেন,হ্যা।”
জারিফ নির্বিকার গলায় বলল,”গাঙ্গিনাপাড়ে এখন যাচ্ছি না। বললাম না আগে কাজ আছে। কাজটা শেষ করে,দেন গাঙ্গিনাপাড়ে যাবো।এখন তোমার বোনের বাসায় যাচ্ছি।”
লিয়া কপাল কুচকালো। ঠোঁট উল্টে বলল,”বোনের বাসা মানে? মানে আপুদের ওখানে।এখন! কিন্তু কেনো?”
লিয়া একটু জোরে বলল।জারিফ লিয়ার দিকে একবার তাকাল।ফের দৃষ্টি সামনে রেখে বলল,”আমি কানে শুনতে পাই।সো এতো জোরে তোমাকে কথা বলতে হবে না। হ্যাঁ, তোমার আপুর বাসায় যাচ্ছি। ডক্টর খাঁনের পুরো পরিবারকে ইনভাইট করতে।”
লিয়া সরু চোখে চাইল।অবাক হয়েই ফের বলল,
“আমার আপু আমাদের বাড়িতে না গিয়ে আপনাদের ওখানে দাওয়াত খেতে যাবে কখনো?আপনিই বলুন এও সম্ভব! আপনার মাথা ঠিক আছে তো।”
জারিফ বলল,”ও লিয়া।তুমি এতো বেশি কথা কেনো বল? ডক্টর খাঁনের ফ্যামেলিকে ইনভাইট করতে যাচ্ছি।সেখানে যাবে কি যাবে না,সেটা বড় কথা নয়। ডক্টর খাঁন আমার আগে থেকেই পরিচিত।সেইজন্য হলেও ওনার ফ্যামেলিকে ইনভাইট করতে হবে।বুঝেছো?”
লিয়া বিষয়টা বুঝল। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল।কিছু মনে হতেই ফের বলল,”আমাকে কেনো সাথে নিচ্ছেন?আপনি একাই তো গিয়ে কার্ড দিয়ে আসতে পারতেন।”
“হুম পারতাম।তবে ভাবলাম ডক্টর খাঁন তো এখন আর একা থাকেন না। ওখানে ওনার বউ,মা এককথায় পরিবারের লোকজন আছেন।একটু লজ্জা লাগছিলো।তাই ভাবলাম তুমি সাথে গেলে ভালো হবে।আর এও ভাবলাম তোমার তো অনেক দিন তোমার আপুর সাথে দেখা হয় না।তাই দেখা করাও হবে।ভালো আইডিয়া না।”
লিয়া জারিফের কাঁধে মাথা রাখল।একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,”থেংকিউ। অনেক অনেক থ্যাংকস।সত্যিই অনেক দিন দেখা হয় না আপুর সাথে।আপুকে অনেক মিস করি।”
“খুশিতে মিষ্টি মুখ করাও। রিটার্ন গিফট হিসেবে এটা তো পেতেই পারি।কি বলো?”
লিয়া জারিফকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসল। ঠোঁটের দিকে এক আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে বলল,”এখন মিষ্টি টিষ্টি কিছুই পাবেন না।আমার লিপিস্টিক ন’ষ্ট হয়ে যাবে।”
জারিফ দুষ্টুমির স্বরে বলল,”আমার থেকে তোমার কাছে লিপিস্টিক বড় হয়ে দাঁড়াল। ভেরি ব্যাড। আচ্ছা এখন বাদ দিলাম।তবে শেষে মিষ্টি টা যেনো না চাইতে হয়।নিজ থেকেই দিবে,কেমন?”
.
কলিংবেলের শব্দ হওয়ায় তাসনিম দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলে লিয়াকে দেখে অবাক হয়।লিয়া তাসনিমকে জড়িয়ে ধরল। তাসনিম অবাক গলায় বলল,”লিয়া তুই।এই সময়। হঠাৎ আসলি।কার সাথে এসেছিস?একাই?”
লিয়া তাসনিমকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে একহাত দিয়ে ইশারা করে বলল,”উঁহু,একা নয়।জারিফ নিয়ে এসেছে।”
জারিফের হাতে ফলমূল আর মিষ্টির প্যাকেট।জারিফ কয়েক কদম এগিয়ে আসল।জারিফ প্রথমে সালাম দেয়। তাসনিম ভেতরে আসতে বলল।জারিফ লিয়া সোফায় পাশাপাশি বসে আছে। এরমধ্যে আতিকা বেগম এসে ভালোমন্দ কথাবার্তা বলতে থাকেন।জারিফ তাসনিমকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আলিফ ভাই বাসায় নেই?”
“হ্যা আছে।আলিফ রুমে আছে ।তোমরা কথা বলো।আমি ডেকে দিচ্ছি।”
আলিফ ঘুমাচ্ছিল। তাসনিম ডেকে দেয়।আলিফ ফ্রেশ হয়ে এসে কুশলাদি বিনিময় করতে থাকে। জারিফ আলিফের হাতে বিয়ের কার্ড দেয়। অতঃপর জারিফ তাড়া দিতে থাকে। তাসনিম নাস্তা নিয়ে আসে।জারিফ ইতস্তত গলায় বলল,
“আসলে ভাই আমাদেরকে এখন উঠতে হবে।হাতে অনেক কাজ আছে।”
সবার জোড়াজুড়িতে হালকা নাস্তা করল ওরা। অবশেষে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বের হয়। তাসনিম আর আলিফ দু’জনে নিচে নামে।ওদের সাথে গাড়ি অব্দি আসে।লিয়া গাড়িতে উঠার আগে তাসনিমকে ফের জড়িয়ে ধরল। তাসনিম লিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“তোরা বাড়ি যাচ্ছিস কবে?”
“আগামীকাল যাবো।আপু তুমি কবে যাবে? তুমিও আমাদের সাথেই বাড়িতে চলো না।”
তাসনিম মৃদু হাসল।আলিফের দিকে একপলক চাইল।বলল,”কাল নয়। মেডিকেল থেকে ছুটি নিতে হবে।তবে তাড়াতাড়িই যাবো।সোনা বোন আমার মন খা’রাপ করিস না, কেমন। পাক্কা প্রমিজ দ্রুতই যাবো।”
বিদায় নিয়ে জারিফ লিয়া গাড়িতে বসল।মূহূর্তেই গাড়ি চোখের আড়ালে চলে যায়।এতক্ষণ ছোট বোনকে পাশে পেয়ে তাসনিমের ভীষণ আনন্দ লাগছিলো।চলে যেতেই মনটা খা’রাপ হতে থাকে। অজান্তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে তরল কিছু গড়িয়ে পরল।আলিফ একহাতে তাসনিমের গাল বেয়ে পরা পানিটুকু মুছে দিতে দিতে বলল,”মন খা’রাপ করো না।আর ক’দিন পরেই তো যাচ্ছো।যাও এবার বেশিদিন থাকবে।তোমার যতদিন খুশি ততদিন।তোমার একটাই অভিযোগ আমি নাকি থাকতে দেইনি। বারবার ফোনে আসার কথা বলি। এবার আর বলবো না।”
তাসনিম ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,”ড্রামাবাজ একটা।একটা রাত যেতে না যেতেই আপনার ফোন কলের জন্য থাকা দায় হয়ে পরে। তাসনিম কখন আসবে?কবে আসবে?এই প্রবলেম হচ্ছে সেই প্রবলেম হচ্ছে।এরকম অজুহাত দিতেই থাকে।সে কিনা এখন এরকম বলছে।এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।”
.
নীল পালসার বাইকটা বের করে গেটের সামনে দাঁড় করাল।পাশে নাতাশা আর জারা দাঁড়িয়ে।বাইকের আয়নায় মুখ দেখে একহাতে চুলগুলো ঠিক করছে আর শিষ বাজাচ্ছে নীল।জারা বি’র’ক্তি’ক’র কণ্ঠে বলল,”এই নীল ভাইয়া এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি।যাবি না?”
নীল কটমট চোখে জারার দিকে চাইল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”এইযে দুই ভাই বোন সমান হয়েছে।এর ভাই যেমন আমাকে বেকায়দায় ফেলে।ঠিক তেমনি এও আজকে আমাকে বেকায়দায় ফেলতে যাচ্ছে।আর এই সব দোষ তোর গুনধর ভাইয়ের।”
জারা নাক মুখ কুঁচকালো। ঝাঁঝালো গলায় বলল,”খবরদার আমার ভাইয়াকে নিয়ে আজেবাজে কিছু বলবি না।একদম বলবি না।আমার ভাইয়া তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে যে,তুই এরকম বলছিস।”
নীল প্রত্যুত্তরে বলল,”তোর ভাই কোন পাকা ধানে মই দেয়নি তাই বল রে,তাই বল।তোর ভাইয়ের জন্য উঠতে বসতে আম্মুর কাছে ব’কু’নি খেতে হয়। আম্মুর মুখে তোর ভাইয়ের ফুলচন্দন ঝরে।আর নিজের ছেলেকে আচ্ছা মতো ব’কে।ঠিক করলা আর নিম পাতার মতো তেতো ওয়ার্ড গুলো আমার জন্য থাকে।আমার আম্মুর ডিকশনারিতে।”
জারা এতক্ষণে বুঝল।ভাব নিয়ে বলল,”তা তো হবেই।ছোট আম্মু আমার ভাইয়ার সুনাম করবেই তো।সুনামের মতো কাজ কর্ম করতে হয়।আর ব’কু’নি খাওয়ার মতো কাজ কর্ম করলে ব’কু’নি শুনতেই হয়, হুঁ। অ’ক’র্মা’র ঢেকি।সে আবার গুনগান আশা করে।ভাবা যায়!”
নীল ধমক দিলো।জারা নির্বিকার রইল।নীল দাঁতে দাঁত পিষে ফের বলল,”বাসায় যতক্ষণ থাকি আম্মু সারাক্ষণ কানের পাশে একই ভা’ঙ্গা টেপ রেকর্ডার বাজিয়ে যাবে, বাড়ির একটা ছেলে কীরকম?আরেকটা কীরকম বাউন্ডুলে।নীল জারিফকে দেখেও তো শিখতে পারিস।বড় হয়েছিস।এবার একটু সিরিয়াস হবি তো।”
নীল নিরুপমা বেগমকে কপি করে এরকম বলতে থাকে।জারা এসব শুনে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।সাথে নাতাশাও।নীল ধমক দিলো।জারা হাসি থামাল।নীল বলল,
“এতদিনের বিষয়গুলো বাড়িতে ছিলো মানা যাচ্ছিল। কিন্তু আজকের বিষয়টা আর মানা যাচ্ছে না। উফ।এখন আমার শখের বাইকটায় কিনা এই শাকচুন্নীটাকে বসাতে হবে।ও নো!”
জারা ছোট ছোট চোখ করে চাইল।বোঝার চেষ্টা করল।কি বলতে চাইছে নীল।জারা কিছু ভেবে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,”এতক্ষণে বিষয়টা বুঝতে পারলাম।আমাকে বাইকে চড়ালে।এই দৃশ্য তোর ডজন খানেক গার্লফ্রেন্ড দেখলে ব্রেক আপ হয়ে যাবে।তাই তোর এত চিন্তা হচ্ছে।তোর তো পাড়ার,এই অলিতে,ঐ গলিতে, মোড়ের এপাশে , ওপাশে, এখানে , সেখানে ডজন খানেক গার্লফ্রেন্ড।কেউ না কেউ তো আমাকে বাইকে দেখবে।আর ভুলভাল ভাববে।আর সোজা ব্রেক আপ করিয়ে দেবে এই জন্য তোর চিন্তা হচ্ছে।তাইতো?”
“যেমনি উদ্ভট এলিয়েন একটা।তেমনি তার চিন্তা-ভাবনা।যা কথা বলা বাদ দিয়ে উঠে বস।”
কথাটা বলতে বলতে নীল বাইকে বসলো।জারা মুখ বাকালো। নাতাশাকে বাইকের মাঝে বসালো। অতঃপর জারা বসলো।জারা বসে নড়াচড়া করতে থাকে।নীল পিছনে ঘাড়টা কিঞ্চিৎ ঘুরিয়ে বলল,”এই এভাবে নড়াচড়া করছিস কেনো?কি সমস্যা তোর,হ্যা?”
জারা মুখটা শুকনো করল।ঢোক গিলে নিয়ে একটু কম্পিত স্বরে বলল,”এই রে আমার ভীষণ ভ’য় হচ্ছে।তোর বাইকে চড়া মোটেও উচিত হয়নি আমার।নাতাশাকে নিয়ে রিকশা করে গেলে তাও সেফটি থাকতাম। ভ’য় হচ্ছে। তোর চালানোর সাইজ আমার ভালো ঠেকছে না। মনে হচ্ছে সাপের মতো এঁকেবেঁকে যাচ্ছিস।কোনো খালে -টালে নামিয়ে দিস না,ভাই। দোহাই তোর। জীবনটা শুরু করার আগেই শেষ করে ফেললাম আজ বুঝি। শ্বশুরের ছেলে মাফ করে দিও। তোমার সাথে সাক্ষাৎ টা আর হলো না আমার।”
জারা এর আগে কখনো বাইকে চড়েনি।এই প্রথম বাইকে চড়েছে।তাই কেমন জানি মাথা ঘুরছে।নীল ধমক দিয়ে বলল,”নাতাশা এইটুকু বাচ্চা কত সুন্দর চুপচাপ বসে আছে।আর এত বড় মেয়ে কিনা বাচ্চাদের মতো ভ’য় পাচ্ছে।লাইক সিরিয়াসলি?”
শেষের কথা বলে নীল হাসতে থাকে।জারা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,”নীল ভাইয়া সত্যি আমার মাথাটা কেমন ঘুরছে।”
নীল বাইক থামালো। নিজের মাথার হেলমেট খুলে
জারাকে পড়িয়ে দিলো।নাতাশার পাশ দিয়ে হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরতে বলল।জারা তাই করল। নাতাশার পাশ ঘেঁষে হাত দিয়ে নীলের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।নীল স্লো গতিতে বাইক চালালো।
.
জারিফ লিয়া মলের সামনে ওয়েট করছিলো। অবশেষে ওরা আসল। প্রথমে ওরা শাড়ির দোকানে ঢোকে।জারিফ বিয়েতে লিয়াকে শাড়ি নিতে বলে। লেহেঙ্গার থেকে শাড়িতেই নাকি লিয়াকে ভালো লাগে।তাই লিয়াও দ্বিমত না করে জারিফের পছন্দকে ফাস্ট প্রায়োরিটি দিলো। গোল্ডেন কালারের ভারী শাড়ি নেয়।জারিফের জন্য সাদা শেরওয়ানি। সাদা শেরওয়ানির গলার দিকে গোল্ডেন কালারের সুতির দারুণ কারুকার্য করা। অতঃপর একএক করে কসমেটিকস থেকে শুরু করে সব কেনাকাটা শেষ করতে করতে রাত হয়ে যায়।জারিফ রাহবারের জন্যও পোশাক কিনে।জারিফ জারিফদের বাসার সবার জন্য পোশাক কিনলো।নীল,জারা ওদের পছন্দমতো পোশাক নেয়।রাতে ওরা একটা রেস্তোরাঁয় ঢোকে ডিনার করতে।
নীল,জারা পাশাপাশি বসেছে।লিয়ার একপাশে নাতাশা আরেক পাশে জারিফ।জারা মেন্যু কার্ডটা নিয়ে দেখছে কি অর্ডার দিবে।নীল বসে ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল,”এই জারা। তাড়াতাড়ি অর্ডার দে। কতক্ষন ধরে এভাবে দেখেই যাচ্ছিস।এমনিতেই রাত হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি কর।”
অবশেষে ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করা হয়।নাতাশা বড় করে হামি দেয়।লিয়া তা দেখে নাতাশার দিকে চেয়ে বলল,”ঘুম পাচ্ছে সোনা।”
নাতাশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।নাতাশার কপালে ঘাম জমেছে।লিয়া নিজের ওড়না দিয়ে নাতাশার কপালের ঘাম মুছে দিতে থাকে।এমন সময় অপর পাশ থেকে ওড়নায় টান লাগে।লিয়া ঘাড় ফিরাল। জারিফ লিয়ার ওড়না দিয়ে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতে থাকে।লিয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে চাইল।জারিফ ফিসফিসিয়ে বলল,”আমার দিকে তোমার তো নজর নেই।আমাকে তো কেউ আদর করে মুছে দিবে না।তাই নিজেই মুছে নিলাম।”
লিয়া নিজের মুখের সামনে এক আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে থামতে বলল জারিফকে। সামনে নীল জারা আছে।নীল এমন কিছু শুনলে টিপ্পনি কাটতে দু সেকেন্ড দেরি করবে না।এরমধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে আসে।খাবার শেষে জারিফ বিল পে করতে যায়।আর ওরা বাইরে বের হতে থাকে।জারিফ বিল পে করে বাইরে এসে নীলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“নীল তুই গাড়ি নিয়ে যা।নাতাশা আর জারাকে নিয়ে এখন রাতে বাইকে যাওয়া ঠিক হবে না।এমনিতেই নাতাশার ঘুম পাচ্ছে।আমি লিয়াকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরছি।”
“ঠিক আছে ব্রো।তুই তাহলে বাইক নিয়ে যা।এমনিতেও জারার অভ্যাস নেই বাইকে বসার।খালি নড়াচড়া করে।”
নীল ড্রাইভিং সিটে বসলো।জারা সামনের সিটে বসে নাতাশাকে পাশে বসালো।জারিফ জারার পাশের ডোর আটকিয়ে দিতে দিতে বলল,”এই নীল দেখে ড্রাইভ করিস।আর কোথাও কিন্তু নামিস না।এমনিতেই অনেক রাত হয়েছে।সোজা বাসায় যাবি।”
“ঠিক আছে ব্রো।ভাবী ভালো থাকবেন আসি।সামনের সপ্তাহে দেখা হচ্ছে।”
লিয়া বিনিময় মৃদু হাসলো।জারিফ বাইকে বসলো।লিয়াকে ইশারা করল বসতে।লিয়া উঠে বসল। প্রায় রাত দশটা বাজে ।শহুরের যানজট পূর্ণ রাস্তাটা এখন একটু ফাঁকা।দিনের মতো কোলাহলপূর্ণ নয়।লোকজনের চলাচলও কম। শহুরে রাস্তা ছেড়ে বাইক যত হাইয়ে দিয়ে যেতে থাকল। বাতাসের গতি তত বাড়তে থাকল।রাতে বাইরের বাতাসটা বেশ সুন্দর ঠান্ডা ঠান্ডা। আকাশের বুকে নক্ষত্ররাজি মৃদু আলো ছড়াচ্ছে। ফাঁকা রাস্তায় শো শো করে বাইক চলছে।লিয়া জারিফ দু’জনের কাছেই সময়টা বেশ এনজয়েবল।লিয়া একহাতে জারিফের কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।জারিফ লিয়াকে উদ্দেশ্য করে মৃদুস্বরে বলল,
“লিয়া।”
“হুম।”
“কালকেই বাড়ি যাবে?বাড়ি গেলে এরমধ্যে তো তোমার সাথে আর দেখা হবে না।এখানে থাকলে তাও দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।”
লিয়া জারিফের কাঁধে থুতনি রাখল।চোখ বন্ধ করে বলল,”এক সপ্তাহেরই তো ব্যাপার।দেখতে দেখতে চলে যাবে।”
“ইশশ্!বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে।এই শুক্রবার বিয়ের ডেট হলে ভালো হতো।”
বাইক এসে বাসার সামনে থামল।লিয়া নামল।বলল,”নামতে বলেও নামবেন না জানি।তাই আজ আর বললাম না। যেহেতু নামবেন না।আর বেশি রাত হয়ে গিয়েছে তাই বলছি দেখেশুনে যাবেন।বাসায় গিয়েই কল করবেন।আমি আপনার কলের অপেক্ষায় থাকব।”
“নিশ্চয় জানাবো।তবে এখন যাওয়ার সময় অন্তত মিষ্টি করে একটা কিস তো দাও।”
লিয়া লজ্জা পেলো।আমতা আমতা করে বলল,”এভাবে বাইরে।কেউ দেখবে।”
জারিফের সোজাসাপ্টা উত্তর,”রাত এগারোটা বাজতে চললো।এতো রাতে তোমার আমার রোমান্স দেখার জন্য কেউ হয়তো বেলকনিতে বসে নেই।সো ফাস্ট।”
লিয়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলল।জারিফের গালে আলতোকরে ঠোঁট ছোয়ালো।জারিফ এক আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে অপর গাল দেখালো।লিয়া ফের ঠোঁট ছোয়ালো।জারিফ এবার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে ইশারা করল।লিয়া দুদিকে মাথা ঘুরিয়ে না করল।লিয়া জারিফের দিকে ঝুকেই ছিলো।আচমকা জারিফ লিয়ার ঠোঁটে কিস করল।লিয়া চোখ বড় বড় করে চাইল। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে ঠোঁট মুছে নিয়ে জারিফ বলল,
“সরি।একেবারে সাতদিনের টা আজকে নিলাম।তাই টাইমটা একটু বেশি।”
এতক্ষণ লিয়ার দম আঁটকে ছিলো যেনো।লিয়া বড়করে শ্বাস টেনে নিলো। অতঃপর বিদায় নিয়ে লিয়া বাসায় আসে।
.
আজ বৃহস্পতিবার। আজকে লিয়া জারিফের হলুদ আর মেহেন্দি। কমিউনিটি সেন্টারে একসাথে দু’জনের হলুদ, মেহেন্দি হবে।এটার মূল প্ল্যানে ছিলো নীল,জারা।ভোরের আলো ফুটেছে অনেকক্ষণ আগেই। লিয়ার ঘুম ভাঙ্গে ফোনের ভো ভো শব্দে। ঘুমঘুম চোখে লিয়া ফোনটা বালিশের পাশ থেকে হাতে নিলো। ঘনপল্লব দ্বয় টেনে তুলে স্ক্রিনে জারিফের নাম দেখে,এক চিলতে হাসি ফুটল লিয়ার ঠোঁটের কোণে।লিয়া রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠস্বরে বলল,
“হ্যা,বলুন।”
চলবে,,,