ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা একুশ

0
437

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

একুশ

ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে ময়ূরাক্ষী৷ যে মেয়ে গর্জে উঠা অম্বর দেখলে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে সে বিষন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাদেরকোনে৷
আকাশ আপন তালে গর্জে উঠছে এখনো৷ আঁধার আচ্ছন্ন অম্বর দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি বৃষ্টি নামলো বলে৷
এলোমেলো কেশ গুলো বাঁধাহীন উড়ছে৷ যেন আজ ছাড়া পেয়েছে, মুক্ত পেয়েছে৷ আর মুক্ত হয়ে পাখির ন্যায় ডানা ঝাপটাচ্ছে৷
সামনে আসা অবাদ্ধ কেশ গুলোকেও আজ নিজের মত ছেড়ে দিয়েছে৷ সে কেশ গুলো ও যখন ইচ্ছে হচ্ছে বাতাসের বেগে সামনে এসে মুখশ্রী জুড়ে বিচরণ করছে৷

কিছুক্ষণ পর পর মৃদুলা আসছে৷ এটা ওটা জিগ্যেস করে চলে যাচ্ছে৷ হসপিটাল থেকে এখনো বড়রা কেউ আসেনি৷ তবে হাসি আর রেহান এসেছে, রেহান হাসিকে দিয়ে বাইরে থেকেই কোথায় যেন চলে গেছে৷ কিছু আর জিগ্যেস করার সুযোগ পায়নি৷ কাউকে ফোন করার সাহস ও পাচ্ছে না ময়ূরাক্ষী!
বাড়িতে কেউ নেই তাই হাসিকেও কিছু জিজ্ঞেস করেনি ময়ূরাক্ষী৷
হাসি ওকে এমনি পছন্দ করে না, যদি আবার কোন কথা শুনিয়ে দেয়? ময়ূরাক্ষীর মাঝে মাঝে রাগ হয় যদি রাগের ছলে কিছু বলে দেয় হাসিকে তাই এ ভেবে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি৷ শুধু শুধু ঝামেলা করতে চায় না খালি বাড়িতে৷ ওর সাথে কথা বলতে গেলেই ঝামেলা হবে৷

“আরে আমি থাকতে এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো সুন্দরী৷ ”
হুট করেই পুরুষালী কন্ঠে হুশ ফিরে ময়ূরাক্ষীর পেছন ফিরে তাকায়৷ পিছনে তাকাতেই নাহিনের দেখা মিলে এ লোকটা বেজায় অভদ্র ময়ূরাক্ষীর একদম পছন্দ না৷ লোকটাকে যখনই দেখে গায়ে পড়া ভাব নিয়ে থাকে অদ্ভুত এমন কেন লোকটা? সে দিন ও হাত ধরেছিলো ভাগ্যক্রমে রেহান ভাই চলে এসেছিলো কিন্তু আজ তো কেউ নেই বাড়িতে৷

ভারী নেত্রপল্লব ঝাপটিয়ে এদিক ওদিক তাকাই ময়ূরাক্ষী আশেপাশে কেউ নেই৷ এ লোকটা কি দেখলে কেমন রাগের সাথে ভয় ও হয় ময়ূরাক্ষী৷
মাথায় কাপড় টেনে শুকনো ঢোক গিলে ময়ূরাক্ষী নিচু ধাতস্থ কন্ঠে শুধালো,
“ভাইয়া আপনি এখানে? আপনার কি কিছু লাগবে? ”

ময়ূরাক্ষীর কথায় ঠোঁট বাঁকিয়ে ক্রুর হাসে নাহিন৷ লাগবে মানে কি? মেয়ে বড়ই বোকা৷ তাকেই তো লাগবে ওর! এত সুন্দর একটা মেয়ে দেখলে কি আর হুশ থাকে? তারপর আবার সদ্য যৌবনে পা রাখা রগরগে যুবতী৷ আর এই মেয়ে কিনা বলে কি লাগবে, বলতে পারেনা আমায় লাগবে নাকি?গ্রামের মেয়ে গুলো কি বোকা হয়৷

নাহিন এগিয়ে আসে এক পা দু পা করে৷ একেবারে ময়ূরাক্ষীর পাশ ঘেঁষে রেলিং ধরে দাঁড়ায় নাহিন৷ দৃষ্টি তার ময়ূরাক্ষীর শরীরে বিচরণ করছে৷ লোলুপ দৃষ্টি! ভীত হয় আরো ময়ূরাক্ষী৷ ভাবে লোকটা এত সামনে আসছে কেন? ময়ূরাক্ষী নিজে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ায়৷ নমনীয় কণ্ঠে কাঁপা গলায় বললো,
“ভা ভাইয়া আ আপনার কি কিছু প্রয়োজন? বলুন আমি এনে দিচ্ছি৷ আর নিচে তো অনেক কাজের লোক আছে৷ আপনি কষ্ট করে এখানে আসতে গেলেন কেন? ওদের বললেই আপনার কি দরকার তা দিয়ে দিতো৷”

নাহিন আবারও কেমন করে হাসলো তার হাসিতে কেমন একটা শয়তানি শয়তানি ভাব আছে৷ কি জঘন্য লাগলো সে হাসি ময়ূরাক্ষীর কাছে৷ ময়ূরাক্ষী লক্ষ্য করলো! তার বলতে ইচ্ছা করলো “আপনি কি সুন্দর করে হাসতে জানেন না? কি বিচ্ছি হাসেন৷ ”
কিন্তু না এ বললে যে দাদিজান জানলে তার গর্দান নেবে৷ নাহিন আরেকটু কাছে এলো খপ করে হাতটা ধরে ফেললো ময়ূরাক্ষীর অতঃপর বললো,
“কাজের লোক কি আর সব দিতে পারবে? তুমি যা পারবে তা তো আর কাজের লোক দিতে পারবে না৷ আমার তো তোমাকে প্রয়োজন৷”

কেঁপে উঠল ময়ূরাক্ষী এ লোক সেদিনও তার হাত ধরেছে মাথা চারা দিল রাগে কত বড় সাহস অভদ্র কোথাকার৷
হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিল ময়ূরাক্ষী কর্কশ কন্ঠে বললো,
“কি অদ্ভুত হাত ধরছেন কেন এ কেমন অভদ্রতামো? সুন্দর করে কথা বলছি তাই ভাববেন না চুপ থাকবো৷ সে দিনো হাত ধরেছেন৷ ”
ময়ূরাক্ষীর এহেন কাণ্ডে অবাক না হয়ে পারল না নিহান৷ পা থেকে মাথা অব্দি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকালো কেমন করে৷ যেন চোখ দিয়ে গিলে খাবে৷
মেয়েটার সাহস দেখে হতবাক! নিহান কে চোখ রাঙ্গাচ্ছে এই মেয়ে? ইচ্ছে তো করছে এখনই চোখটা উপরে দিতে৷ কিন্তু না! সুন্দর জিনিসের ঝাঁজ একটু বেশিই থাকে ব্যাপার না৷ নিহান একই ভাবে হেসে বলল,
“আরে এ সুন্দর শরীরে তেজও আছে দেখছি! সমস্যা নেই মধু খাব আর মৌমাছি হুল ফোটাবে তা সহ্য করবো না?”
বলেই ময়ূরাক্ষীর কোমর বিচ্ছিরি ভাবে আঁকড়ে ধরলো৷ অতঃপর খানিকটা নিজের দিকে টানলো আর তৎক্ষণাৎ ঠা!স করে থাপ্পর পড়ল গালে৷ গর্জে উঠল ময়ুরাক্ষী আকাশের মতন বজ্র কণ্ঠা হলো কর্কশ ধ্বনিতে ক্রুদ্ধ হয়ে বললো,
“আরেকবার অভদ্রতামো করতে এলে আরেকটা পরবে বলে দিলাম৷”
নিহান বিস্মিত হল টগবগিয়ে উঠলো তার শরীরের র’ক্ত যেন এখনই এই মেয়েকে খুন করে দিবে কি সাহস এম এর নিহানের সাথে লাগতে আসে৷ ময়ূরাক্ষী তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করল দৌড়ে ছাদ থেকে নামলো৷

ময়ূরাক্ষীর যাওয়ার পানে অগ্নি দৃষ্টিতে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে নাহিন৷ মেয়ের এত সাহস? এ সাহস যদি না ভাঙে তার নাম ও নাহিন না৷

“হায় আল্লাহ ভাইজান সামান্য আশ্রিতা আপনাকে মে রে গেলো ভাইজান? আর আপনি দাঁড়িয়ে আছেন?”
মেয়েটি কন্ঠে ভাবনার সুতো কাঁটে নাহিন এর৷ রক্ত যেন মাথায় উঠে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে হাসির দিকে তাকায়৷ হাসি ছাদেই এসেছিলো ময়ূরাক্ষীকে খুঁজতে কিন্তু এসব দেখে দুরে এক কোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো৷
নাহিন ক্রুদ্ধ দষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“বেশি কথা বললে জীব টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলবো মেয়ে৷”
হাসি হেসে উঠে৷ বয়সে ছোটো হলেও বুদ্ধি আর জ্ঞানের দিক দিয়ে বেশ পটূ বলা যায়৷ হাসি বুদ্ধি খাটিয়ে ওর কথার প্রেক্ষিতে বলে,
“আর থাপ্পড় দিলে কি করবেন ভাইজান?”
নাহিন বিচ্ছিরি একটা বকা দিয়ে বলে,
“মে’রে ফেলবো৷”
হাসি ক্ষানিটা সামনে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তাহলে বসে আছেন কেন ভাইজান বাড়িতে তো কেউ নেই যাচ্ছেন না কেন?”
হাসির কথায় পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় নাহিন৷ তার মেয়েদের শরীরের প্রতি আকর্ষণ ব্যাপক হাসির পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করলো একবার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
“ওরেতো মারবো না সুন্দরি৷ ও তো আসমানের চাঁদ ওরে যে আমার লাগবো৷”
হাসি ক্ষানিকটা ভয় পেলো তবে তটস্থ হলো না৷ শুকনো ঢোক গিলে ধাতস্থ ভঙ্গিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“আমি ময়ূরাক্ষী না ভাইজান আমি হাসি৷”

..

সে কি করল আজ নিজেও জানে না কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না কিন্তু যা করেছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য করেছে৷ এ বাড়িতে থাকে বলেকি সব সহ্য করে নিবে নাকি?
আর সে যানে সে যা করেছে কেন করেছে তা শুনলে বড় বাবা আর বড় মা তাকে কিছু বলবে না৷
এ মানুষ দুটো আছে বলেই এ বাড়িতে টিকে আছে ময়ূরাক্ষী৷ গা ঘিন ঘিন করছে তার৷ গা কেমন গুলিয়ে আসছে৷ অন্য একটা পুরুষ তাকে আবার নোংরা ভাবে স্পর্শ করলো৷মানুষ এমন কেন হয়?

অতঃপর অঝোর ধারার মত সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মুষলধারে বৃষ্টির আগমন৷ বৃষ্টির আগমনে বারংবার গর্জে উঠা অম্বর যেন শান্ত হচ্ছে৷ এতক্ষন গর্জন তুলে সে ও বুঝি ক্লান্ত আজ৷ মেঘ যেন কাঁ’টতে শুরু করেছে৷ ক্ষুন্ন মন বুঝি ভালো হচ্ছে?
কিন্তু ময়ূরাক্ষীর আঁখি যে ভরাট আজ? বাঁধ ভাঙা কষ্টে আজ আগলে নেওয়ার জন্য রুপা নেই যে৷
এখন যে তার রুপাবু কে দরকার৷ তার বুকে রাজ্যের শান্তি পায় যে ময়ূরাক্ষী৷
রুপাবু কি বুঝতে পারছে না তার ময়ূর তাকে কত চোখে হারাচ্ছে? সবাই তো সেখানে রেহান ও তো পারতো তাকে নিয়ে যেতে কিন্তু নিলো না৷ কেন?
রেহান ভাই এর ও আজ দেখা নেই৷ নিজের প্রতি কেমন ঘৃণা জন্মালো তখনকার কথা মনে পরতেই৷
লোকটা তাকে বিচ্ছিরি ভাবে স্পর্শ করেছে৷ এ স্পর্শ মুছবে কি করে ময়ূরাক্ষী? তার চামড়া কেঁটে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে৷
দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো ময়ূরাক্ষী বৃষ্টির পানি গুলো নিমেষে ভিজিয়ে দিলো৷ পুকুরপাড় গিয়ে বসলো৷
এ পুকুরপাড় টা কেন যেন তার বড়ই আপন আপন লাগে৷ যেন আপন কারো কাছে এসে বসেছে৷

বৃষ্টির পানি পুকুরে পরায় রিনঝিন শব্দ হচ্ছে৷ নিশব্দে কাঁদছে ময়ূরাক্ষী ডাগরডাগর আঁখি গুলো লাল হয়ে ফুলে আছে৷
হুট করেই যেন কেমন লাগলো ষষ্ঠ ইদ্রিয় জানান দিচ্ছে তার পিছনে কেউ আছে৷ ভীতি তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো৷ কে পিছনে? নিহান? লোকটা আবার এসেছে? ভাবনার মাঝেই হাত দিলো কেউ তার কঁ’ধে৷
আরাও ফুসে উঠলো ময়ূরাক্ষী৷ এ লোক আবার এসেছে এবার জান নিবে ময়ূরাক্ষী এ ছেলের৷ভেবেই সামনে পায়ের কাছে থাকা লাঠিটা নিয়ে পিছন ঘুরে উট করে বাহুতে লাঠিটা দিয়ে বাড়ি দিলো৷

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here