ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া মেঘলা চব্বিশ

0
161

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া মেঘলা

চব্বিশ

শুক্লপক্ষের শেষ তিথি, আবছা ঝলমলে তাই আকাশ৷ প্রগাঢ় আলো ও নয় প্রগাঢ় অন্ধকার ও নয়৷ শুক্লপক্ষ এবার বিদায়ের পালা তাই অম্বরে পূর্ণ পূর্ণিমার চাঁদ নেই৷ অনীল অম্বরের মাঝে এক টুকরো মোমের ন্যায় চাঁদ৷ সে চাঁদের আদল পানিতে স্পষ্ট বিদ্যমান৷ স্বচ্ছ আরশির ন্যায় মনে হচ্ছে নদীটা৷ যেন শিল্পীর আঁকা কোনো শিল্পকর্ম৷
সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টি অতুলনীয়৷
চারোদিক নিবিড় প্রগাঢ় নিরবতা৷ মাঝে মাঝে গাড়ির শব্দ কানে আসছে৷ তার সাথে পানির টলটলে শব্দ৷ মোহনীও পরিবেশ যেন৷ দুটি মানব মানবির নিশ্বাস ও যেন নিরবতায় বাড়ি খেয়ে বিকট শোনাচ্ছে৷ মুগ্ধ নয়ণে লক্ষ করছে চারোপাশ ময়ূরাক্ষী৷

মুগ্ধ আজ শাহওয়াজ ও, মেয়েটা দিন দিন তাকে পাগলাটে করে তুলছে তার সাথে লোভীও করে তুলছে৷ এখন শাহওয়াজ এর ভয়ংকর ভয়ংকর বাসনা জাগে, এ মেয়ে কে সামনে বসিয়ে চোখ জুড়ানো৷ কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার তাই না? অষ্টাদশী একটা মেয়ে তার হৃদয়ে শাসন চালাচ্ছে৷ দূর্বল করে তুলছে তাকে ক্ষণে ক্ষণে৷
প্রথম প্রথম নিজেকে সংযত রাখছিলো শাহওয়াজ এই ভেবে এই বাচ্চা মেয়েকে মন দেওয়া কি ঠিক হবে? নিতান্তই বাচ্চামি নয়কি?
পরক্ষণেই মন যেন আরো বেহায়া হলো, এ বাচ্চা মেয়েকেই চায় তার হৃদয়৷ এবং তার চাওয়া পাওয়াকে সে প্রাধান্য দিবেই৷ তার মন কে প্রসন্ন করবেই৷

আত্মার শান্তি, হৃদয়ের শান্তি যেন মেয়েটির মুখের আদল৷
ময়ূরাক্ষী নদীর আরেকটু কাছাকাছি গেলো চোখ বন্ধ করে পানির টলটলে আওয়াজ শ্রবণ করলো৷
মাথায় আকাশ সমান চিন্তা দাদি জানলে হয়তো গর্দান যাবে? তার নাতীকে হাত করছে ফাসাচ্ছে ভাববে?
এ ও ভাববে তার গায়ে পরা স্বভাব৷ সেঝো চাচি ছোটো মা ও অনেক কথা শোনাবে বিশ্রি বিশ্রি মন্দ কথা শোনাবে৷ মা আর চাচির সাথে একা পেয়ে হাসিও ছাড়বে না৷
ময়ূরাক্ষী লক্ষ করেছে হাসি শাহওয়াজ কে পছন্দ করে, আজ তো বাঁচানোর জন্য রুপাও নেই৷

সব যেন আজ ভাবনা থেকেও দূরে, ময়ূরাক্ষী আজ বেজায় সাহসী যেন৷ যা হোক হবে তা না হয় পরে ভাবা যাবে? মুক্ত পাখির ন্যায় আজ অনুভব করুক এ অমায়িক সৌন্দর্য৷ মুগ্ধ হোক সে!
ফের সেই মোমের ন্যায় চাঁদের পানে তাকালো আকাশ চুম্বি মগ্ধতা নিয়ে বললো,
“আজকের চাঁদটা সুন্দর না?”

শাহওয়াজ দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকালো৷ তবে আকাশ পানে না জমিনে থাকা মানুষটির দিকে যে ওই আসমানের চাঁদের নুয়ায় ফুটফুটে সুন্দর৷
ওই আসমানের চাঁদের ন্যায় তার অহংকার নেই, সে তো অদুরে নিজের জায়গা করে নিয়েছে যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় না৷ সে চাঁদ পাবার বাসনা তো করে সবাই কিন্তু কাছ অব্দি পৌঁছাতে পারে না৷ কিন্তু শাহওয়াজ এর সামনে থাকা জমিনের চাঁদ শাহওয়াজ হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবে চাইলেই নিজের করে নিতে পারবে৷
তবে এটা শুধু তার জন্যই প্রযোজ্য বাকি সবার জন্য এ চাঁদ ও নিষিদ্ধ৷ আসমানের চাঁদ কে চাইতে পারে সবাই আর শাহওয়াজ এর চাঁদ কে চাইলেই তাকে ধ্বংস করে দিবে শাহওয়াজ৷ এ মেয়ে একান্ত তার৷চাওয়াও যাবে না এ চাঁদ কে, ভাবাও যাবে না তাকে নিয়ে৷

শাহওয়াজ ময়ূরাক্ষীর পানে মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভারী কন্ঠে উত্তর দিলো,
“ওই চাঁদ থেকেও আপনি বেশি সুন্দর ময়ূরাক্ষী৷”

ময়ূরক্ষীর কর্ণকুহরে পৌছালো বাক্য গুলো৷ রিনরিনিয়ে যেন বাজলো কানে তার সাথে মস্তিষ্ক ও যেন ষড়যন্ত্র এটে কথাটা গেঁথে নিলো, তৎক্ষনাৎ যেন অন্তঃকরণে তীরের মত বিঁধলো কিছু৷ তটস্থ হলো সে হৃদয়, ধুরুধুরু কম্পন ধরলো৷ ঠোঁট কাঁটা লোকটা আই অব্দি যে মৌন ছিলো এইতো অনেক বেশি৷

ফের তার ভয়ংকর ভয়ংকর কথা শুরু হয়েছে৷ লোকটার কি লাজ সরম নেই? ইশ কি লজ্জা লজ্জা কথা বলে৷ ময়ূরাক্ষীর মাটি ফাঁক করে নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করে৷ তার না হয় লাজ সরমের বালাই নেই ময়ূরাক্ষীর তো আছে৷ ময়ূরাক্ষীর বেশ ইচ্ছে করে এই লোকের মুখে তালা লাগিয়ে দিতে৷
ময়ূরাক্ষী চুপ রইলো৷ মৌনতা যেন আজকের সঙ্গী, এইযে সে কুলুপ আটলো বাড়ি যাওয়ার আগে একটা কথাও বলবে না ময়ূরাক্ষী৷ পরে দেখা গেছে এ লোক আরো ভয়ংকর কথা বলবে? তখন দিশা না পেয়ে ময়ূরাক্ষীর এ নদীতে ঝাপ দিতে ইচ্ছে করবে৷ সাতার জানে না সে এইটুকু বয়সে প্রাণ হারাতে চায় না৷

আচ্ছা লোকটা বেশি বেশি বলে না চাঁদ থেকে সুন্দর হয় নাকি মানুষ? কি ঝলসানো সে রুপ চাঁদের৷ আলোকিত করে রাখে আঁধার আচ্ছন্ন ধরণী৷ আর তার? পুরো জীবনটাই আঁধার৷

সন্তপর্ণে কাছে পাছে গেলো মেয়েটির তাতে দূরত্ব যেন ঘুঁচলো ঢেড় তবে সীমা লঙ্ঘন করলো না৷
সামনে থাকা হরিণী আঁখির মানবিটি কি বুঝলোনা শাহওয়াজ এর চাওয়া পাওয়া?

ময়ূরাক্ষীর নসারন্ধ্রে তীক্ষ্ম সুগন্ধির ঘ্রাণ পৌছালো৷ সংকুচিত হলো মেয়েটি জড়সড় হলো৷ শ্বাসপ্রশ্বাস এর মাত্রা দ্বিগুণ বাড়লো৷ আঁখিদ্বয় থেকে মুগ্ধতা নিমেষে কেটে জড়তায় তলিয়ে গেলো৷
ভেবে ছিলো কথা বলবে না কিন্তু সে ব্রত অব্যাহত রাখতে পারলো না৷ মিনমিনিয়ে নমনীয় কন্ঠে তড়িৎ গতীতে বললো,
“কাছে আসবেন না৷ দয়া করে কাছে আসবেন না৷”

বলেই ডাগর ডাগর নেত্র যুগল ঘণ ঘণ পলক ফেললো চঞ্চল হয়ে৷ হাসফাস শুরু হলো কেমন৷ হুট করেই ভাবনারা ভীর করলো লোকটা কি কিছু মনে করলো? নিজের ভাবনায় নিজেই বিস্মিত হলো৷ তার কেন এসব নিয়ে চিন্তা? সে এমন কেন ভাবছে? যা ইচ্ছে তাই মনে করুক ওর কি? লোকটার খারাপ লাগলে তার কি?
ময়ূরাক্ষী বললো তো ঠিকি কিন্তু শাহওয়াজ শুনলো কি তা? তার কাজে সে বাঁধা মানে না৷ খোদ প্রেয়সীর কথাও যেন কর্ণে পৌছালো না, সে এগিয়ে এলো কাছে, সান্নিধ্যে৷ ময়ূরাক্ষী হাসফাস করতে করতে কিছু বলবে তার পূর্বেই শাহওয়াজ থামালো৷ মাদক মিশ্রিত অদ্ভুত নেশালো কন্ঠে বললো,
“হুস, কথা বলবে না ময়ূর৷ আমি তোমায় ছুঁইনি সীমা লঙ্ঘন করিনি৷ মূহুর্তটা অনুভব করো৷আমায় অনুভব করো, স্মৃতি কুড়াও যেন আমায় অনুভব করতে পারো আমার অনুপস্থিতিতে৷”

ময়ূরাক্ষীর শ্বাস প্রশ্বাস যেন মিসাইলের গতীতে ছুটছে৷ এ কেমন যন্ত্রণা? ক্ষুদ্র মনটাকে ক্ষতবিক্ষত না করলে কি হতো না? “তার অনুপস্থিতি” কথা টা শুনেই কেমন লাগলো৷
এর মঝেই তার যন্ত্রণা আর অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়ে কেশের হাত খোপাটা হালকা হয়ে খুলে গেলো৷ আছড়ে পরলো পিঠময়৷ এলোকেশ যেন মুক্ত পেলো মুখুশ্রী খানায় বাড়ি খেলো৷ পিঠ জুড়ে কেশ গুলো বিরাজ করছে হিংসাত্মক হয়ে উঠলো শাহওয়াজ এর প্রেমিক মন৷ চুল গুলো ও প্রেয়সীকে ছুঁয়ে দিতে পারছে সে পারছে না৷

শাহওয়াজ অস্থির হলো কিঞ্চিৎ এগোলো তাতে আরো একটু দুরত্ব ঘুচলো৷ ফিসফসিয়ে বললো,
“তুমি আমায় অনুভব করতে পারো মেয়ে? আমার নিশ্বাস আছরে পরুক তোমার এলোকেশে, উত্তাপ শ্বাসপ্রশ্বাস ছুঁয়ে দিক তোমার পৃষ্ঠদেশ৷ আমি হাত দিয়ে না স্পর্শ করেও ছুঁয়ে দেই তোমার মন, হৃদয় অন্দর৷ ”

,,

ময়ূরাক্ষীরা এসেছে বেশ ক্ষানিক্ষণ আসার পরই দেখা হয়েছে হাসির সাথে৷ শাহওয়াজ কে ময়ূরাক্ষীর সাথে ঢুকতে দেখে অগ্নীচোখে তাকিয়ে ছিলো ময়ূরাক্ষীর দিকে যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে৷
ময়ূরাক্ষী সে দিকেমাথা ঘামায়নি৷ আজ তার মন অকারণেই ভাল৷
শাহওয়াজ লোকটা বড়ই অদ্ভুত সবার অগোচরে ঠোঁট কাঁটা হলেও সবার সামনে একেবারে ভিন্ন৷ ভিন্ন এক মানুষ৷ যেন চেনেই না ময়ূরাক্ষীকে৷ এইতো যখন গাড়ি থেকে নামলো তখন মুখ খানা গম্ভীর করে হনহনিয়ে ময়ূরাক্ষীকে রেখেই বাড়িতে আসে৷ গাড়িতে যে আরেকজন আছে সে বোধহয় বেমালুম ভুলেছিলো৷ হুট করেই মানুষ এত পরিবর্তন হয় কি করে? অভদ্র লোক একটা৷ সবার সামনে ভাজা মাছ যেন উলটে খেতে জানেনা৷ বদ লোক!
কত কষ্ট করে ময়ূরাক্ষী গাড়ির দরজাটা খুললো৷

অন্দরেও ঢুকলো অচেনা মানুষের মত৷ যদিও এ বিষয়টা ময়ূরাক্ষীর জন্য বেশ ভালো৷ নয়তো লোকে মন্দ কথা বলবে না? বাড়িতে কত রকমের কাজের লোক রয়েছে কত মানুষের আসা যাওয়াও রয়েছে৷ তা ছাড়া দাদিজান তো এমনিই খেপে তার উপর৷ বলেছিলো প্রথমেই যেন তার নাতীর কাছে না যায়৷

তবে যে ভয়টা পেয়েছিলো তা হয়নি বিপরীত সব কিছু৷ পরিস্থিতি ও স্বাভাবিক, শান্ত ছিলো৷ সেঝো চাচিও কিছু বলেনি৷ তা ছাড়া সেঝো চাচি এমনিও তাকে দেখলে বাংলার পাঁচ এর মত মুখ করে রাখে আজ নতুন না তবে কোনো মন্দ কথা শোনায়নি৷
মেঝো চাচি কখনো ময়ূরাক্ষীকে ভালো চোখে দেখে না৷ ময়ূরাক্ষী ছোটো বেলা থেকে সবাইকে বড়মা, মেঝোমা বলে৷ ছোটো বেলা যখনি তাকে সেঝোমা বলে ডাকতো তখনি ধমক দিয়ে বলতো “আমায় সেঝো মা ” বলবি না তুই৷ একদিন চড় ও দিয়েছিলো এর পর থেকেই আর সেঝো মা ডাকে না৷ তবে ছোটো মা তাকে পছন্দ না করলেও ডাকায় কোনো বারণ করেনি৷

আসার পর দাদিকে আশেপাশে দেখেনি ময়ূরাক্ষী৷ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নিজের কক্ষের দিকে এগোবে ঠিক তখনি রেহান এসে মুখোমুখি দাঁড়ালো৷
গম্ভীর তার মুখশ্রী কাটকাট কন্ঠে বললো,
“এক কাপ চা দে আমায় ময়ূর৷চা নিয়ে আমার রুমে আসবি মাথা ব্যাথা করছে মাথাটা টিপে দিবি৷”
ময়ূরাক্ষী মিহি হাসলো৷ অতঃপর বললো,
“আমি বাইরে থেকে এসেছি ভাইয়া, হাত মুখ ধুয়ে বানিয়ে দেই?”
রেহানের মুখশ্রী কেমন শক্ত হলো৷ ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
“না, এখনি বানিয়ে দিবি৷পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার রুমে চা চাই৷”
ময়ূরাক্ষী ফস করে নিশ্বাস ছাড়লো৷ যাক বাবা এই লোকের আবার কি হলো? এ বাড়ির মানুষ গুলো এত অদ্ভুত কখন কি হয় বোঝা যায় না৷ রেহান ভাই এখন আবার এমন করে কথা বলছে কেন? কি এমন হয়েছে তার? সে তো কখনো ময়ূরাক্ষীর সাথে এভাবে কথা বলে না তাহলে?
ময়ূরাক্ষীর শরীর যেন গিজগিজ করছে বালুতে৷ ওখানে এত বালু ছিলো বাতাসের বেগে সব যেন শরীরে লেগে আছে৷
চোখ গুলো ছোটো ছোটো করে দৃষ্টি মেঝেতে নিক্ষেপ করলো৷ মিনমিনিয়ে বললো,
“আমার শরীরে বালু ভাইয়া৷রাগ করবে না আমার কথায় পাঁচ মিনিট দাও চা বসিয়েই আমি ফ্রেশ হতে যাবো৷”
রেহান যেন গললো৷ মিষ্টি স্বরে কেউ না গলে? নিজের কাজে নিজেই অবাক হলো৷ এই বাচ্চা মেয়েটিকে সে ধমকালো? আনমনে সে সায় দিলো ততৎক্ষনাৎ আঁখিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো কিছুক্ষণ আগের দেখা সেই দৃশ্য৷ ময়ূরাক্ষী রসুইঘরের দিকে এগিয়ে গেলো৷ রেহান ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই ফিসফিসিয়ে বললো,
“অন্যের চোখে তোকে নিয়ে প্রশান্তিযে আমার জন্য ভয়ংকর রে ময়ূর৷ সে তোর প্রশান্তি হওয়ার আগে যেন তোকেই শেষ করে দেই,অতঃপর আমিও নিঃশেষ হই৷”

চলবে,

[ইদ অতঃপর অসুস্থতা কাটিয়ে ফিরলাম৷ এখন থেকে তাড়াতাড়ি গল্প পাবেন ইনশাআল্লাহ৷ আমার উপর রাগ করবেন না ভালোবাসি আপনাদের🖤🥹]

নোট:১৪০০+ শব্দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here