ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা আটাশ

0
308

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

আটাশ

উত্তপ্ত বিভাবসু ফেকাসে আলো ছড়াচ্ছে৷ তবুও উত্তাপ কমেনি যেন৷ তীব্র তেজস্ক্রিয় গরমে কপাল চেঁপে দাঁড়িয়ে আছে রেজওয়ান৷ ঘাম ঝড়ছে শরীর থেকে তবুও তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
ভাই বোন আচ্ছা ধড়িবাজি তো৷ দুজনই ডাকাত যেন৷ মেয়েটা কি করলো এটা?

রেজওয়ান বন্ধু থেকে ভাই সুলভ বেশি শাহওয়াজ এর৷ এবং ডান হাত ও বলা যায় শাহওয়াজ এর৷ বাংলাদেশে আসার পর বিভিন্ন জায়গায় চেম্বার পরায় হিমশিম খাচ্ছিলো শাহওয়াজ৷ তখন রেজওয়ান নিজেই বলে শাহওয়াজ এর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হয়ে থাকতে চায়৷ এতে শাহওয়াজ এর অমত থাকলেও রেজওয়ান এর অনুরোধে নিতেই হলো৷
যেহেতু শাহওয়াজ এখানে আছে শাহওয়াজ এর সাথে ওর এখানেও থাকতে হচ্ছে৷
ইলেক্ট্রিসিটি সমস্যা হওয়ায় ভেবেছিলো পুকুর পার এসে বসবে কিন্তু হুট করেই এমন কিছু হবে ভাবতেই পারেনি৷
কপালে নুড়ি পাথরটি এসে লাগায় কপাল খানা ফেঁটে গেছে৷
এত তাড়াতাড়ি সব ঘটে গেছে সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেছে৷ কপাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রেজওয়ান৷ রুপা ভয়াতুর হয়ে তাকিয়ে আছে৷ ইশ ভাইজান জানলে নারাজ হবে নিশ্চয়ই? কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে করেওনি কিছু৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ময়ূর, মৃদুলাও নেই৷ দুটিতে মহা দুষ্টু৷ কি করে ওকে একা ফেলে যেতে পারলো?
রেজওয়ান এগিয়ে এসে কিছু বলবে রুপা তা দেখে ভয় পেলো আরো৷ ভীত হয়ে নিচের দিকে তাকালো৷ শুকনো ঢোক গিয়ে রেজওয়ান কে থামিয়ে দিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
“আ আমি কিছু করিনি৷ কে করেছে জানি না৷”
রেজওয়ান চোখ পিটপিট করে চাইলো৷ রেজওয়ানের দৃষ্টিতে থতমত খেলো৷ নিজের কথায় নিজেই বোকা বনে গেলো৷ রেজওয়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলবে রুপা ফের বললো,
“আমি ভাইজান কে গিয়ে বলবো আমি কিছু করিনি৷ ”
বলেই দাড়ালো না এক সেকেন্ড ও গুলাইল আর আম ফেলে ভো দৌড় লাগালো৷ এ অবস্থাতেও হেসে উঠলো হু হু করে৷ মেয়েটা চঞ্চল, অবুঝ, নাকি বুদ্ধিমতি বোঝা বড় দায়৷ মাঝে মাঝে এমন আচরণ করে মনে হয় কত বুঝদার আবার মাঝে মাঝে বাচ্চামি করে৷

,,
বাংলার পাঁচ এর মত মুখ করে বসে আছে রেজওয়ান৷ আর শাহওয়াজ ক্ষত জায়গায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে৷ রেজওয়ান আসার আগেই হুট করেই কোথ্যেকে যেন রুপা এলো হাপাতে হাপাতে বললো,
“ভাইজান তোমার বন্ধু কিছু বললে বিশ্বাস করবে না৷ আমি কিছু করিনি সব ওনার দোষ৷”
বলে এক মিনিট ও দাঁড়ায়নি, চলে গেছে৷ কিন্তু রুপা কি বলেছিলো তখন কিছুই বোধগম্য হয়নি৷ রেজওয়ান আসার পর আসল ঘটনা বুঝলো৷
বেশ ভালো ক্ষতই হয়েছে৷ রেজওয়ান এর মুখ দেখে হাসি পাচ্ছে শাহওয়াজ এর৷
ব্যান্ডেজ টা শেষ করে সামনে বসলো ধপ করে শাহওয়াজ৷ রেজওয়ান কাচুমাচু মুখ করে কপালে হাত বুলালো৷ তখন তো বুঝেনি এখন জ্বলছে জায়গাটা৷ রেজওয়ান তপ্ত শ্বাস টেনে বললো,
“শা*লা তোরা হলি মীর জাফরের বংশধর, তুই সারাদিন মাথা খাস আর বোন সুযোগ বুঝে মাথাই ফাটিয়ে দিলো৷”
রেজওয়ান এর কথায় এবার শাহওয়াজ হাসি দমিয়ে রাখতে পারলো না৷ মেজাজটা তখনকার ঘটনার জন্য বিগড়ে ছিলো রেজওয়ান এর মুখ দেখে হাসি পাচ্ছে৷

শাহওয়াজ উঠে হাত ক্লিন করতে করতে বললো,
“শা*লা বলছিস? আমার বোনের বর হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছিস বোনের মার সহ্য করতে পারবি না? এসব তো তাহলে অহরহ ঘটবে তখন কি করবি?”

হুট করেই অবাক নয়নে তাকালো রেজওয়ান৷ “আমার বোন” বললো শাহওয়াজ? তাহলে কি স্বাভাবিক হচ্ছে? রেজওয়ান এর দৃষ্টিতে শাহওয়াজ বিব্রত হলো৷
নিজের কথায় নিজেও অবাক হলো৷ কি যেন কি ভাবলো বেসিনের সামনে যেতে গিয়েও থেমে গেলো মিনমিনিয়ে বললো,
“মেয়েটা আকবর চৌধুরীর মতই চালাক তাই না বল? ঝোপ বুঝে কো প মে’রে আমার মন ও গলিয়ে দিলো৷ মায়ের মত আচরণ, আর মুখের আদল হওয়ায় যেন না চাইতেও গলে গেছি৷ আমি মানি আর না মানি ও তো আমার বোনই তাই না?”
রেজওয়ান হাসলো৷ উঠে দাঁড়ালো শাহওয়াজ এর কাঁধে হাত রেখে বললো,
“ওটা কে ঝোপ বুঝে কো প বলে না পাগল৷ ওটাকে ভালোবাসা আর মায়া বলে৷ ও নিজের জায়গায় নিজে বিজয়ী ভাই কে নিজের ভালোবাসায় অর্জন করে নিয়েছে৷ কিন্তু যা বুঝলাম রুপা আর সবার মত না৷ তাই অন্য সবার মত সৎভাই না হয়ে সৎ ভাই হ৷”
শাহওয়াজ প্রসস্থ হাসলো৷ সবাই তো এক হয় না? মেয়েটা আসলেই অনেক ভালো৷ আর শাহওয়াজ নিজেও কখনো ভাবেনি ক্ষতি করবে ওদের৷

..
কাচুমাচু খেয়ে বসে আছে রুপা রসুই ঘরের মাঝ বরাবর দুই চেয়ার বিশিষ্ট গোল টেবিলটায়৷ সেগুন কাঠের টেবিলটার বয়স প্রায় পঁচাত্তর, আশি বছর৷ কালচে রঙ ধারণ করেছে৷ টেবিলটা এখনো শক্তপোক্ত আছে টেবিলটা আকবর চৌধুরীর মায়ের বিয়ের সময় তার বাবার বাড়ি থেকে দিয়ছিলো৷ টেবিলটা শক্তপোক্ত থাকলে চেয়ার খানা কটকট শব্দ হয় নড়েচড়ে উঠলেই৷
রুপা বসে বসে হাসফাস করছে নড়ছে তার সাথে টেবিলটাও নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে৷ শব্দটা ময়ূরাক্ষীর কাছে বিরক্ত লাগে৷ রুপার ভাবনার মাঝেই মৃদুলা ছুটে এলো৷ একে তো ঘরেই থাকতে বলেছে আজ৷ এ আবার নামলো কেন? এর মাঝেই মৃদুলা বললো,
“জানো বড় মা রুপা বু না রেজওয়ান ভাই এর মাথা ফা’টায় দিছে৷”

রাবেয়া খুন্তি নাড়ছিলো তরকারির এর মাঝেই থেমে গেলো৷ অবাক হয়ে মৃদুলার পানে তাকালো৷ রুপা বিস্মিত হলো৷ আচ্ছা বদ তো এই মেয়ে বলে দিলো মা কে? এখন মা যদি মারে?
রাবেয়া এগিয়ে এসে বললো,
“কি বলছিস মৃদু? ঠিক করে বল তো৷”

ময়ূরাক্ষী রুপার সামনের চেয়ারেই বসা ছিলো৷ সে ও অবাক হলো৷ মৃদুলা কে বলেছিলো বলতে না, মেয়েটা বলে দিলো? এই মৃদুলার পেটে কিছুই থাকে না৷ ময়ূরাক্ষী কিছু বলবে তার আগেই মৃদুলা এক এক করে খুলে বললো সব কিছু৷

রাবেয়া শুনে মেয়ের উপর বেজায় চটলো৷ তার সাথে আফসোস করলো রেজওয়ান এর জন্য৷ অসুস্থ মেয়ে চেয়েও কিছু বলতে পারলো না হলুদ দুধ করে দিয়ে রুপা কে বললো,
“যা করেছিস পূন্যের কাজ করেছিস৷ শাহওয়াজ এখন কি ভাবছে? তোরা শান্তি দিলি না আমায় আর৷ না শান্তি পেলো শাহওয়াজ ছেলেটা এখানে এসে কত কি সহ্য করছে৷ এখন রেজওয়ান কে এ দুধ টা দিয়ে আয় আর ক্ষমা চেয়ে আয়৷”
মায়ের কথায় থমথমে মুখে তাকালো মায়ের দিকে রুপা৷ সে কিছুতেই ক্ষমা চাইতে যাবে না৷ দুধ নিয়ে ময়ূরাক্ষীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
“যা তো ময়ূর দুধ টা দিয়ে আয়৷ পায়ে ব্যাথা করছে আমার৷ এখন যেতে পারবো না৷”
ডাহা মিথ্যা বললো রুপা৷ সে জানে ব্যাথার কথা বললে মা দমবে৷ এদিকে মা মেয়ের লড়াইয়ে বলি হতে হলো ময়ূরাক্ষীকে৷ অগত্যা তাকেই যেতে হলো উপরে৷

ভাবলো রেজওয়ান এর ঘরেই যাবে পরক্ষনেই শব্দ পেলো শাহওয়াজ এর ঘরে৷ এখন তো বুক ধুরু ধুরু করে কাঁপছে৷ লোকটার সাথে সে ঘটনার পর একবার দেখা হয়েছিলো৷ তাকে এড়িয়ে গেছে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে ময়ূরাক্ষী৷ এখন কি করে যাবে বোধগম্য হচ্ছে না৷
সাত-পাঁচ না ভেবে এগোলো শাহওয়াজ এর ঘরের দিকে৷ কেন যেন সে লোকটা তার ওপর রেগে আছে৷ কিন্তু তার উপর রাখবে কেন৷ শাহওয়াজ এর ঘরের কপাট আজ খোলাই মাথা নিচু করে দাঁড়ালো মিনমিনিয়ে বললো,
“আসবো? ”
শাহওয়াজ মেয়েলী চেনা কন্ঠে একবার গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো৷ অতঃপর পাশ কাটিয়ে ময়ূরাক্ষীকে উপেক্ষা করেই বেরিয়ে গেলো নিজ কক্ষ ছেড়ে৷ ময়ূরাক্ষী অবাক নয়ণে তাকিয়ে রইলো সে দিকে৷ কি হলো?
রেজওয়ান এগিয়ে এলো৷ সে ও বিস্মিত! বুঝতে পারছে না এর আবার কি হয়েছে৷ রেজওয়ান খানিকটা হাসির রেশ টেনে তাকালো ময়ূরাক্ষীর দিকে৷ ময়ূরাক্ষী দুধের গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ভাইয়া রুপাবু পাঠিয়েছে৷ দুধটা খেয়ে নিতে বলেছে৷ আর সে লজ্জিত তাই আপনার সামনে আসতে পারছে না৷”
থমকালো রেজওয়ান৷ যাক বাবা অই মেয়ে আসলেই অনুতপ্ত? আবার দুধ ও পাঠিয়েছে? অদ্ভুত তো৷ ভাই বোন আসলেই অদ্ভুত কখন কি ভাবে কখন কি করে বোঝা বড় দায় যেন৷

চলবে,

[এ গরমে আপনাদের খবর কি? আমি তো মাথার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ প্রায়৷ তার উপর রাইটিং ব্লকে আছি৷ খাপছাড়া হয়েছে লেখা৷ ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here