ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা শেষাংশ,

0
165

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

শেষাংশ,

“ভাইজান তুমি বুবুরে চুমু খাও তাহলে বুবুর জ্ঞান ফিরা আসবো৷”
বলেই খিলখিলিয়ে হাসলো মৃদুলা৷ শাহওয়াজ ভরকালো খানিকটা লজ্জায় পরে গেলো যেন৷ মেয়েটা ভারি দুষ্টু, তবে বেশ বুঝদার তাকে যে স্বাভাবিক রাখার জন্য এসব বলছে ঢের বুঝলো৷

মেয়েটার চোখ মুখ জুরে মেয়েটার মলিনতা বিদ্দমান কিন্তু শাহওয়াজ কে দেখাচ্ছে সে যেন খুশি৷
মেয়েটা দুপুর অব্দিও উত্তেজিত হয়ে বুবু বুবু করছিলো৷ ভেবেছিলো ময়ূরাক্ষী যে এই হসপিটালে আছে বলবে না কেউ কিন্তু তা আর পারলো কই?
মেয়েটা কে বার বার বলেছিলো “ময়ূরাক্ষী ঠিক আছে৷”
ঠিক আছে শুনে সে বার বার বলছে “তাহলে বুবু আমারে দেখতে আসে নাই কেন?”
উপায় না পেয়ে রুপা বলেছে,
“ময়ূরাক্ষী অসুস্থ এ হসপিটালেই আছে৷”
মেয়েটা তাতেও ক্ষান্ত হয়নি দেখেছে তারপর শান্ত হয়েছে৷ তাকে অতকিছু না বললেও সে ঠিক বুঝেছে তার বুবুর কঠিন কিছু হয়েছে নয়তো চোখ বন্ধ করে আছে কেন?

“ও ভাইজান কথা বলো না কেন?”
মৃদুলার কথায় হাসলো শাহওয়াজ, পাশেই ছিলো রুপা হুট করেই যেন মন খারাপ ভালো হয়ে গেলো৷
শাহওয়াজ মৃদুলার কপালে উষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো এর মাঝেই রুপা বললো,
“মৃদু আস্তে বাইরে মানুষ আছে শুনবে তো৷”
মৃদুলা ফের মুখ টিপে হাসলো শুয়ে থেকেই হাত বাড়িয়ে বসে থাকা শাহওয়াজ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“মন খারাপ করো না ভাইজান৷ বুবু ঠিক হইয়া যাইবো৷”
শাহওয়াজ আর রুপা অবাক হলো৷ এইটুকুনি মেয়ের হাবভাব যেন বড় কারো থেকে কম না৷
নিজে যান্ত্রিক ঘরে অসুস্থ হয়ে পরে আছে আরেক জন কে শান্তনা দিচ্ছে৷
হুট করেই যেন শাহওয়াজ এর মন ভালো হয়ে গেলো৷

—–

বড় একটা ঘরে টিমটিমে লাল আলোর একটা লাইট জলছে, মাঝেই চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে নিহান, চোখ টা ও বাঁধা মাথাটা টেবিলে এলানো৷ জ্ঞান আছে কি নেই বোঝা যাচ্ছে না৷
জেলের চার দেয়ালের মাঝে পিনপতন নিরবতা৷ ঘরটা অদ্ভুত গুমোট বাইরের আলো আশার পথ নেই তাই রাত কি দিন বোঝার উপায় নেই৷

ছোটো দরজা টা কট কট করে খুলতেই প্রবেশ করলো দু-জন পুলিশ একজন সামনে গিয়ে দেখলো জ্ঞান আছে কি না৷ চোখের পট্টি টা খুললো৷ নিহানের চোখ নিভু নিভু দেখার সাথে সাথেই চোখের পট্টি টা লাগিয়ে দিলো৷ দরজার সামনে গিয়ে দাড়াতেই সুঠাম দেহের অধিকারী এক যুবক প্রবেশ করলো মুখে মাস্ক পরা৷ সে যুবকটি প্রবেশ করতেই কনস্টেবল বললো,
“স্যার এটাতো বে-আইনি ?”
মাস্ক পরা যুবকটি হাসলো৷ একটা বান্ডেল সামনে ধরে কনস্টেবল এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এখনো বেআইনি?”
কনস্টেবল একবার টাকার দিকে তাকালো তারপর নিজের স্যার এর দিকে তাকালো৷ তার স্যার হাসলো ক্ষানিকটা৷ কনস্টেবল তড়িৎগতিতে টাকাটা হাতে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,
“কি যে বলেন? বেআইনি হবে কেন?”

রেহান মাস্ক খুললো এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো৷ ফোন তুলতেই ওপাশের মানুষ টির কন্ঠ শোনা গেলো,
“একে বারে মে’রো না৷ ছুচো মে’রে হাত নষ্ট করতে হবে না৷”
রেহান আক্রোশ নিয়ে শ্বাস টানলো বললো
“ভাইজান ওরে দেইক্ষা আমার শরীর এর র’ক্ত যে টগবগ করতেছে৷ ওরে তো আমি জানেই মাইরা ফেলমু৷”
ওপাশের মানুষ টি ফের বললো,
“মা’রার হলে জেলে দিতাম নাকি? শান্ত হও, মে’রে ফেললে তো বেঁচে গেলো৷ ও বেঁচে থেকেও যেন মরার জন্য আকুতি মিনতি করে এমন পরিস্থিতি করো৷ ও যন্ত্রণায় কাতরাবে যেমন আমার ময়ূর কাতরেছে৷ ও যেন নিজের চোখে নিজের করুন পরিস্থিতি দেখে৷”
বলেই বাঁকা হাসলো শাহওয়াজ, রাগে ফেঁটে পরা রেহান এর মস্তিষ্ক ও সচল হলো পৈশাচিক হেসে উঠলো ফোন কাঁটলো৷ এবার যে শাস্তি দিতে হবে৷ যেন প্রতি মুহুর্ত নিজের পাপের কথা নিজেই স্মরণ করে অনুতপ্ত হয় আর নিজের মৃ’ত্যু কামনা করে কাতরায়৷

..

দীর্ঘ বাইশ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরেছে তার৷ ভাগ্য সহায় ছিলো প্যারালাইজড হয়নি৷ সব নর্মাল তবে স্ট্রেস কম দিতে হবে৷
জ্ঞান ফিরেছে আরো আট ঘন্টা আগে৷

ভাবুক হয়ে তাকিয়ে আছে ময়ূরাক্ষী৷ মনে মনে আকাশ কুসুম ভাবনা তার৷ বক্ষ জুরে কত যন্ত্রণা নিজের প্রতি এক আকাশ ঘৃণা৷
অথচ নিজের জন্য তার অশেষ মায়া ছিলো৷ নিজেক কতই জা ভালোবাসতো ময়ূরাক্ষী?
শরীর ঘিনঘিন করে উঠছে বারংবার৷
সে যে অপবিত্র এখন এ অপবিত্রতা এ ঘৃণা নিয়ে বাঁচবে কি সে? এ কলংকে ভরা জীবন যে বড়ই বোজা সবার কাছে৷

কিন্তু অদ্ভুত বিষয় সবাই বেশ স্বাভাবিক আচরণ করছে৷ হয়তো এসব তাকে ঠিক রাখার জন্য?
রুম্মন চৌধুরীর হুট করে এত পরিবর্তন যেন মানতে কষ্ট হচ্ছে৷
জ্ঞান ফেরার পর থেকে দেখছে কত আদর যত্ন করছে৷আর একটা বিশেষ ব্যাপার হলো শাহওয়াজ এর মা এসেছে৷ কত্ত আদর করলো৷

ওইতো তখন এলো কান্নারত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চুমু খেলো কপালে মুখে মলিন স্বরে বললো,
“তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা মা তোকে নিয়ে আমি ঢাকা চলে যাবো৷”
তার বোধগম্য হচ্ছে না কেন ঢাকা যাবে ওকে নিয়ে? সবাই এসে দেখা করেছে৷ হাসি আর সেঝো চাচি যে আসবে না এ যে বেশ ভালোই জানে ময়ূরাক্ষী৷
ওরা দু-জন বাদে সবাই এলেও শাহওয়াজ আসেনি এখনো৷
ভেবেই তাচ্ছিল্য হাসলো ময়ূরাক্ষী৷ শাহওয়াজ এর না আসায় না নিজের প্রতি হাসলো৷ যে মেয়েকে আরেকজন পুরুষ বাজে স্পর্শ করেছে তাকে কি মানুষ ভালো নজরে দেখে?

শাহওয়াজ এর ব্যাপারটা স্বাভাবিক৷
আকস্মিক ময়ূরাক্ষী উত্তেজিত হলো৷ এ কলংক ভরা জীবন সে সহ্য করতে চায় না৷ সে বাঁচতে চায় না৷ টান দিয়ে মুখের অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে ফেললো অতঃপর হাতে লাগানো ক্যানেল টা ও খুললো৷ এর মাঝেই প্রবেশ করলো রুপা এগিয়ে এসে বললো,
“হায় আল্লাহ ময়ূর কি করছিস? পাগল হলি নাকি?”
রুপা আরেকটু এগিয়ে যেতে নিলেই ময়ূরাক্ষী চিৎকার করে বললো,
“আপা কাছে এসো না আমার৷ আমি অপবিত্র৷ তুমিও কাছে এলে অপবিত্র হয়ে যাবে৷ আমি বাঁচতে চাই না আপা বাঁচতে চাই না৷”
রুপা হন্তদন্ত হয়ে বাইরে ছুটলো চিৎকার করে বললো,
“ডাক্তার, নার্স৷ ভাইজান এসো না৷ ময়ূর উত্তেজিত হয়ে পরেছে প্লিজ কেউ আসুন৷”

শাহওয়াজ এদিকেই আসছিলো রুপার আওয়াজ পেয়ে ছুটে আসে৷ ময়ূরাক্ষীর কক্ষে ঢুকতেই দেখে ময়ূরাক্ষী ওঠার চেষ্টা করছে৷ হুট করেই শাহওয়াজ কে দেখে শান্ত হয়ে যায়৷ইতমধ্যে সবাই এসে উপস্থিত হয়েছে৷ টইটম্বুর আঁখিতে তাকিয়ে রয়৷ শাহওয়াজ এগিয়ে গেলো৷ ক্যান্যাল টা টান দিয়ে খোলায় র’ক্ত বের হচ্ছে৷ তপ্ত শ্বাস টানে শাহওয়াজ ধরতে নিলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে উত্তেজিত হয়ে বলে,
“ধরবেন না আমায়৷ দয়া করে ধরবেন না৷ ”
শাহওয়াজ শুনে না ময়ূরাক্ষীর কথা৷ শাহওয়াজ জানতো অপরেশন এরপর এমন পরিস্থিতি হবে ডাক্তার বলে ছিলো৷
সে বেশ ক্লান্ত এখন মোটেও এ মেয়ের সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না৷ মেয়েটা তাকে অনেক জ্বালিয়েছে৷ শাহওয়াজ র’ক্তটা মুছতে নিলেই উত্তেজিত হয়ে যায় বেশি৷ উঠতে চায় সরে যেতে চায়৷ এখন যেন শরীর এর জোর দ্বিগুণ হয়ে গেছে৷ শুধু বিছানা থেকে উঠতে পারছে না তাই নয়তো ধরতেও হয়তো পারতো না কেউ৷ না পেরে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েই স্বাভাবিক করতে হলো৷
শান্ত হলো মেয়েটা শাহওয়াজ এতক্ষণ টু শব্দ পর্যন্ত করেনি নার্স ছিলো সাথে শাহওয়াজ শুধু ইনজেকশন টাই দিলো৷

শাহওয়াজ কে থমথমে দেখে রুপার মাথায় ভয় ঝেকে বসলো৷ ভাইজান কি মেয়েটা কে? না না ভাবতে পারলো না আর রুপা৷
মেয়েটা এখন শান্ত চোখ বন্ধ করে আছে৷ শাহওয়াজ প্রস্থান করার জন্য পা বাড়ালো দরজার বাইরে যাওয়ার আগেই থামলো থমথমে কন্ঠে বললো,
“ওর ঘুম ভাঙার পরই বিয়ে করবো ওকে আমি৷ মতামত নিচ্ছিনা কারো থেকে জানিয়ে রাখছি৷ শাহওয়াজ কারো মতামত এর পরোয়া করেনা আশাকরি বুঝেছেন সবাই?আসছি৷”

..
বিয়ে নামক সম্পর্ক শুরুটা কাগজে কলমে ধর্মীয় ভাবে হলেও কাগজে কলমের আগে মনে মনে মিলন হয়৷ তবে সে মনের সাথে মনের সম্পর্ক যখন ছিন্ন হয় কাগজ যেন তখন ফিকে৷ মধুলতা আর আকবর চৌধুরীর সম্পর্কের ইতি ত্রিশ বছর আগে ঘটে গেলেও সে সে সম্পর্কের বৈধতা এখনো রয়েছে৷
কাগজে কলমে এখনো তারা স্বামী স্ত্রী৷
তখ সব কিছু পিছু ফেলে অদুরে পারি জমালেও সম্পর্ক টার ভার বহন করে চলেছে দু-জনই৷ একজনের কাছে সম্পর্কটা মূল্যহীন তো আরেকজনের কাছে মূল্যবান৷ আকবর চৌধুরী এখনো মনে প্রাণে বিশ্বাস কপ্রেন তার মধুলতা এখনো তারই আছে৷

এদিকে সবার শাস্তি হলেও আড়ালে আবডা আসল দোষী যে সে যেন আড়ালে আবডালেই পার পেয়ে যাচ্ছে৷
মধুলতা মনে করেন সে বোধহয় ঠিকমতো ভালোবাসতে পারেনি তাই আকবর চৌধুরী তার নেই৷
পরক্ষণেই ভাবে লোকটা তো এক দিন হলেও ভালোবাসি বলেছে তাহলে তা কেমন ভালোবাসা ছিলো ঠুনকো এক ঝড়ে সব তছনছ করে দিলো? সে চাইলেই পারতো না সে দিন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে? সে তো বাচ্চা নয় জোর করে আটকে রেখেছে হাত পা চালিয়ে সে আসতে পারেনি৷

ময়ূরাক্ষীর ঘুম ভেঙেছে আধঘন্টা আগে৷ কাজী এসেছে হসপিলে শাহওয়াজ নিয়ে এসেছে মেয়েটা বিছানা থেকেও উঠতে পারে না সে মেয়ের নাকি বিয়ে৷
ময়ূরাক্ষী ফের উত্তেজিত হয়ে পরেছিলো হুট করেই একা শাহওয়াজ কি যেন বোঝালো মেয়েটা চুপ হয়ে গেলো৷ ভা’ঙা গড়ার খেলায় যেন জীবন৷
কাজী কিছু লিখলো খাতায় অতঃপর ময়ূরাক্ষীর উদ্দেশ্যে বললো,
“বলো মা কবুল৷”
ময়ূরাক্ষী ড্যাবড্যাব করে অবুঝের মত শাহওয়াজ এর পানে তাকালো শাহওয়াজ চোখ রাঙালো৷ অতঃপর তড়িৎগতিতে ময়ূরাক্ষী বললো,
“আ আলহামদুলিল্লাহ কবুল৷”

শাহওয়াজ প্রশস্ত হাসলো৷ শাহওয়াজ ও বললো পবিত্র বাক্যটি৷ ময়ূরাক্ষী সই করতে পারলোনা তাই টিপ সই নেওয়া হলো৷ শাহওয়াজ এর সাইন এ কাগজে কলমে ময়ূরাক্ষী হলো তার৷
ময়ূরাক্ষী এখনো ঘোরের মাঝে আছে যেন ময়ূরাক্ষীকে রুম্মন চৌধুরীর কথা বলা হয়েছিলো৷ হুট করেই যেন মেয়েটা অত্যাধিক ম্যাচুর হয়ে গেলো গুরগম্ভীর কন্ঠে বলেছিলো শাহওয়াজ কে “আমি ওই বাড়িতে যেতে চাই না৷”

শাহওয়াজ বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছে৷
শাহওয়াজ, ময়ূরাক্ষীর এর একটা সই এ যেমন নতুন একটা সম্পর্কের সূচনা হলো তেমন মধুলতার একটা সই এ একটা সম্পর্কের ইতি ঘটলো৷ অতঃপর সকলের সামনে বুক বুলিয়ে আকবর চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিলো ডিভোর্স পেপার টা৷ বললো,
“তালাকনামা, সই করে দিন এখানে৷”
মধুলতার কথায় যেন ব’জ্রপাতের মত বাড়ি খেলো আকবর চৌধুরীর কর্ণে৷ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো৷ কম্পিত কন্ঠে বললো,
“ক কি বলছো মধু?”
মধুলতা হেসে বললো,
“যে সম্পর্ক ত্রিশ বছর আগে ইতি ঘটেছে এটা দেখে হুট করে অবাক হওয়ার কিছু নেই মিস্টার চৌধুরী৷ সই করে দিন৷”

আকবর চৌধুরী দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলো হুট করেই পরে যেতে নিলো৷ রাবেয়া গিয়ে আকবর চৌধুরী কে ধরতে নিলো ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলো হাত৷ মধুলতার পানে তাকিয়ে রইলো আকবর চৌধুরী৷
“সই করে এখানে আমার উকিল আছে জমা দিয়ে দিন৷”
বলেই মধুলতা স্থান ত্যাগ করলো৷

মধুলতা যেন আজ মাথা থেকে কয়েক টন বোঝা সরালো৷ জয়ী হলো৷ হয়তো আকবর কে ঘটা করে শাস্তি দেওয়া হয়নি তবে যে শাস্তি টা দিয়েছে এর বোঝাইতো সারাজীবন বয়ে বেড়াতে পারবে না৷ আর রাবেয়া? সে তো সারাজীবনই শাস্তি পেয়ে গেলো না পেলো স্বামীর ভালোবাসা না পেলো মর্যাদা৷
জোবেদার যাবত জীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷নিহান এর ও যাবতজীবন হয়েছে খোদেজা সে দিন হুট করেই হার্ট এট্যাক করে তার অবস্থাও শোচনীয়৷

..
চেয়ারে বসে চিৎকার করছে নিহান৷ হাত দুটো বড় বড় প্যারেক দিয়ে কাঠের টেবিলে গাথে চোখ বাঁধা সর্বাঙ্গ কেউ ব্লেট দিয়ে আঘাত করে রেখেছে চুঁয়ে চুঁয়ে র’ক্ত পরছে৷ বারংবার চিৎকার করতে করতে বলছে,
“আমায় মেরে ফেলো দয়া করে তবুও এমন শাস্তি দিয়ো না৷”
সে কন্ঠ কর্ণপাত হতেই রেহান বার বার প্রশান্তির শ্বাস ফেলছে৷ ফোনে থাকা ওপাশের শাহওয়াজ কে বলছে,
“শুনতে পাচ্ছো ভাইজান? আহা শান্তি৷ ”
শাহওয়াজ ও পৈশাচিক হেসে উঠছে৷ ইশ এমন শান্তি যেন কোথাও নেই৷
হুট করেই শাহওয়াজ চোখ বন্ধ করলো কর্ণপাত হলো ময়ূরাক্ষীর সে আর্তনাদ,
“ছেড়ে দিন আমায় দয়া করে ছেড়ে দিন৷”
দাতে দাত চেঁপে রাগ সংবরন করলো বললো,
“হয়নি হয়নি ওরে যন্ত্রণা দাও রেহান আমার ময়ূর যে আরো যন্ত্রণায় কাতরেছে৷ ”

রেহান ও চোখ মুখ কঠিন করে উঠলো কাছেই টেবিলে থাকা মরিচের গুরা গোলানো পানিটা ছুড়ে মা’রলো নিহান এর শরীরে নিহান সর্বশক্তি দিয়ে ছুড়ে মা’রলো শরীরে নিহান চিৎকার দিয়ে উঠলো৷

পরিশিষ্ট:

লাল টুকটুকে জামদানী পরে আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে ময়ূরাক্ষী৷ চোখে মুখে যেন উপচে পরছে লজ্জা৷ আজ যত্ন করে কাজল দিয়েছে, এ কাজল ও যেন জানে এ অষ্টাদশী হৃদয়ের আলাপন৷ টইটুম্বুর অনুভুতির কথন৷ মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা টানা যেন সদ্য বিয়ে হলো মেয়েটার৷ আজ মুখে প্রসাদনি নেই অলংকার নেই দেহে৷ আজ দেহের বড় অলংকার শাহওয়াজ৷ এবং তার ভালোবাসা৷ ইশ কি লজ্জা৷
শাহওয়াজ এখনো হসপিটালে সে দিনের মত আজ ও অপেক্ষারত ময়ূরাক্ষী জানলা দিয়ে বার বার নিচে তাকাচ্ছে৷
জীবনে কত পরিবর্তন এসেছে এ তিনমাসে৷ শাহওয়াজ ট্রান্সফার হয়েছে৷ ওখানে এতিমখানা আর হসপিটালের কাজ চলছে তার দায়িত্ব রেহান এর কাছে৷ রেহানের এখানে আসা যাওয়া লেগেই থাকে৷
শাহওয়াজ ও যায় সপ্তাহে একবার চৌধুরী বাড়িতেই থাকে৷ রুম্মন চৌধুরী ও এসেছিলো ময়ূরাক্ষী দেখা করেনি৷

শাহওয়াজ এলো সারে এগারোটায়৷ ঘামে জুবুথুবু শরীর ময়ূরাক্ষী দরজা খুলতেই ভুবন ভুলানো হাসি দিলো সে৷ ময়ূরাক্ষী গিয়ে ঝাপটে ধরলো৷
লোকটার গায়ের গন্ধ ময়ূরাক্ষীর বেজায় ভালো লাগে৷ হুট করেই বউ কে এ রুপে দখে তটস্থ হলো শাহওয়াজ এর বক্ষ৷ বিনাবাক্যে বাড়িতে প্রবেশ করলো৷
ফ্রেশ হয়ে যখন বের হয়ে নিজের কক্ষের আশেপাশে তাকালো শুকনো ঢোক গিললো কয়েকবার৷ ময়ূরাক্ষী তখন বারান্দায়৷ গিয়ে দাঁড়ালো কাছে পাশে৷ মেয়েটা ফের বুকের কাছে মিশে গেলো৷ শাহওয়াজ যেন দেখেও অদেখা করে আছে ময়ূরাক্ষীর সাজপোশাক৷
পুরুষ সত্বা জেগে উঠলে মেয়েটা সামলে উঠতে পারবে? অসুস্থ বউকে ভালোবাসার টর্চার করতে যায় না শাহওয়াজ৷
মেয়েটা যেন নাছোরবান্দা৷ কি হলো তার লাজুকলতার? ঘুমন্ত সিংহ কে কেন জাগাচ্ছে?
শাহওয়াজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো,
“ক কফি খাবে বউ?”
মেয়েটা যেন আরো লেপ্টে গেলো বুকে নাক ঘষলো মিনমিনিয়ে বললো,
“ভালোবাসি৷”
অধৈর্য হলো শাহওয়াজ আকষ্মিক কোলে তুলে নিলো ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বললো,
“অনেক সামলেছি নিজেকে, এবার আমাকে তুমি সামলাতে পারবে তো বউ? আজ তো সর্বনাশ হবে তোমার৷ ভয়ংকর সর্বনাশ!”

সমাপ্ত

[অতঃপর সমাপ্তি, এ গল্পটা লেখার আগে কতকি ভেবে রেখেছিলাম৷ গল্পটা লিখতেও বেশ আনন্দ পেয়েছি এটা আমার লেখা ভিন্ন ধাঁচের একটা গল্প৷ আগে এমন টাইপ লিখিনি কখনো৷ গল্পটা কেমন লাগলো অবশ্যই গঠনমুলক মন্তব্যে জানাবেন৷ অনেক ভুলত্রুটি ছিলো ক্ষমা করবেন৷ আবারো শিঘ্রই হাজির হবো নতুন গল্প নিয়ে৷ ফ্যান্টাসি the hunted lover এর কথা মনে পরে? আপনারা চাইলে ওটার সিজন টু আনবো৷ কে কে ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন জানাবেন৷ ভালো থাকবেন সবাই৷ ভালোবাসি৷ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here