তিক্ত_প্রণয়ালাপ কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল #সূচনা_পর্ব

0
443

—“আমার সন্তানের মা হতে হবে তোমাকে…আগামী নয়মাস আমার সন্তানকে যাতে তুমি নিজের গর্ভে ধারণ করতে পারো তার জন্য তোমাকে এখানে আনা হয়েছে…”

কথাটা শুনে এক আকাশ পরিমাণ চমকে উঠলো অনামিকা…সে এখন একটা চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা হয়ে বসে আছে একটা বিশাল বড় অট্টালিকায়…ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের নামকরা ব্যবসায়ী প্রান্তিক মজুমদার..অনামিকা চেনে এই মানুষটিকে….ওর বাবার বন্ধুর ছেলে…যদিও প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি দুই পরিবারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই…কোনো একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছিলো…

— “আপনার মাথার ঠিক আছে প্রান্তিক ?? কি বলছেন আপনি নিজে শুনতে পাচ্ছেন তো??”

অনামিকার মুখোমুখি একটা চেয়ার নিয়ে বসলো প্রান্তিক…
–“ আমাকে তুমি চেনো অনামিকা, আমি মজা করার মানুষ নই, যা বলেছি সজ্ঞানে বলেছি…আমার বেবি চাই…”

ঘৃণায় গা টা গুলিয়ে উঠলো অনামিকার…তার চেনা প্রান্তিকের সাথে এই প্রান্তিকের আকাশ পাতাল তফাৎ…
— “বেবি লাগলে বিয়ে করুন আর নয়তো অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নিন একটা বাচ্চা…আমাকে কেনো তুলে এনেছেন??”

— “আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে, তাই আমি চাই আমার সন্তানের মা তুমিই হবে…”

প্রান্তিকের কথা শুনে বড্ড রাগ হলো অনামিকার…ছটফট করতে লাগলো দড়িগুলো খুলে নিজেকে মুক্ত করার জন্য…সেটা দেখে প্রান্তিক অনামিকার মুখের কাছে একটু এগিয়ে এলো…
— “লাভ নেই এসব করে,যতক্ষণ না আমি চাইছি ততক্ষন তুমি আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবেনা…”

— “আমি বিয়ে করবোনা আপনাকে,ছেড়ে দিন আমাকে…”

প্রান্তিক খানিকটা পিছিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে তাকালো অনামিকার দিকে…
— “বিয়ে?? কে বলেছে আমি তোমাকে বিয়ে করবো…”

অনামিকার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো…
— “সত্যি?? তাহলে আমাকে খুলে দিন…আমি বাড়ি যাবো..কাল আমার দাদাভাইয়ের জন্মদিন…”

প্রান্তিক একটা রহস্যময় হাসি হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো….অনামিকার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো…
— “তোমাকে তো আমি বিয়ে ছাড়াই আমার সন্তানের মা বানাবো…আগামী নমাস পর যখন আমার সন্তান ভূমিষ্ট হবে তখন তোমাকে মুক্ত করে দেবো…”

শৈশবের পাঁচটা বছর কাটিয়েছে অনামিকা এই প্রান্তিক নামক মানুষটার সাথে…দুজনের বয়সের পার্থক্য প্রায় সাত বছর…তবুও দুটিতে ভালোই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়েছিল নিজেদের মধ্যে…কিন্তু হঠাৎ করেই প্রান্তিকের বাবা পুরো ফ্যামিলি নিয়ে কাজের সূত্রে বাইরে চলে যায়…তারপর থেকেই প্রান্তিক আর অনামিকা অচেনা হয়ে যায়…তবে প্রান্তিক যে এতটা নিম্নরুচির মানুষ সেটা ভাবতেই অনামিকার গা গুলিয়ে ওঠে….
— “পশ্চিমা দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষায় মানুষ হয়ে কি নিজের শহরের শিক্ষাকে ভুলে গেছেন?? এত নিম্নরুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ আপনি?? মানুষ কেনো বলছি অমানুষ আপনি…”

তাছিল্যভরা হাসি হেসে প্রান্তিক অনামিকার একদম কাছে চলে আসে…অনামিকা ঘৃণায় একটু পিছিয়ে যায়…তাই দেখে প্রান্তিক হাসে…
— “পিছিয়ে কোনো লাভ হবেনা অনামিকা, শেষমেশ আমার কাছেই আসতে হবে…”

— “কোনোদিনও না, আমি এখানে বাঁধা অবস্থায় মরে যাবো…তবুও নিজের সতীত্ব খোয়াতে পারবোনা…”

প্রান্তিক নিজের মোবাইল ফোনটা পকেট থেকে বের করে অনামিকার সামনে ধরে…ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠে অনামিকা…
— “গুবলু, গুবলুকে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেনো??? ও কষ্ট পাবে…প্লীজ ছেড়ে দিন…”

— “আমি জানতাম তুমি আমার প্রস্তাবে কিছুতেই রাজি হবেনা,তাই এটাই আমার সেকেন্ড অপশন …তোমাকে বারো ঘণ্টা সময় দিলাম ভাবার জন্য… বারো ঘণ্টা পর যদি তোমার উত্তর নেতিবাচক হয় তাহলে তোমার ভাইপোর আয়ু তখনই শেষ হয়ে যাবে…”

অনামিকা কেঁদে ফেললো…ছোটো থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে ও ওর ভাইপোকে…তার এমন অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর…
— “ও ছোটো,কষ্ট হচ্ছে ওর…প্লীজ ওকে ছেড়ে দিন…”

— “সবটাই তোমার ওপর নির্ভর করছে অনামিকা…আমি এখন যাচ্ছি… বারো ঘণ্টা পর আসবো…মনে রেখো আমার কিন্তু ইতিবাচক উত্তর চাই…আর এই বারো ঘণ্টা তোমার ভাইপো নিরাপদে থাকবে…”

প্রান্তিক রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে রুমটা লক করে দিলো…সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই একজন কালো জামা পরা লোক প্রান্তিকের কাছে এলো…

— “স্যার উকিলবাবু এসেছেন…ওনাকে কি ভিতরে আনবো??”

— “হুম আমি স্টাডি রুমে আছি…ওনাকে পাঠিয়ে দাও …”

প্রান্তিক একবার নিচে থেকে ওপরে অনামিকাকে যেই ঘরে রাখা হয়েছে সেদিকে তাকালো…একটা তির্যক হাসি দিয়ে নিজের স্টাডি রুমের দিকে চলে গেলো…কিছুক্ষন পর উকিল সেখানে এলো….

— “কি ব্যাপার প্রান্তিক, আজ আমার বাবাকে ছেড়ে আমাকে ডাকলে যে??”

— “আমার কিছু কোর্ট পেপার লাগবে…যেটা আঙ্কেলকে বলা যাবেনা…”

— “কি পেপারস লাগবে বলো,আমি দুদিনের মধ্যে রেডী করছি…”

— “দুদিন নয়, বারো ঘণ্টার মধ্যে আমার সেগুলো চাই…”

— “বারো ঘণ্টার মধ্যে তো সম্ভব হবেনা, কাল কোর্ট বন্ধ থাকে…কম করে হলেও চল্লিশ ঘণ্টা তো লাগবেই…”

— “আজই যাও,কোর্ট বন্ধ হতে এখনও এক ঘন্টা বাকি আছে…আমার আজই পেপারস গুলো লাগবে…”

— “ঠিকাছে দেখছি, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো…”

…………
কেটেছে অনেকক্ষণ…কিন্তু কতটা সময় পার হয়েছে সেটা অনামিকার অজানা…সে নিজেকে মুক্ত করতে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি… একটাসময় পর ক্লান্ত হয়ে চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছিল ও…..ঘুম ভাঙ্গে দরজা খোলার আওয়াজে….দরজা খুলে প্রান্তিক ঘরে ঢুকলো কিছু কাগজপত্র হাতে নিয়ে…

— “আর পাঁচমিনিট আছে তোমার হাতে,তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে ঠিক পাঁচ মিনিট পর…”

অনামিকা করুন চোখে তাকালো প্রান্তিকের দিকে….
— “কেনো করছেন আপনি এরকম…?? কিভাবে করছেন আমার সাথে এরকম.??? শৈশবে যে আমার গায়ে ফুলের টোকাও সহ্য করতে পারতো না,আজ সে নিজেই আমাকে আঘাত করছে….”

প্রান্তিকের রাগটা মুহূর্তেই মধ্যেই ওর চোখে প্রকাশ পেলো…প্রান্তিকের জ্বলন্ত লাল চোখ দেখে ভয় পেয়ে গেলো অনামিকা…দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো ওর শ্যামবর্ণ গালে….

— “কাঁদবেনা,একদম কাঁদবেনা…এইসব ন্যাকাকান্না আমার একদম সহ্য হয়না…আর শৈশবে কি করেছি না করেছি সেটা এখানে তুলে এনে সিম্পাথি নেওয়ার চেষ্টা করবেনা…তুমি আমার কেউ হওনা…তোমার টাইম শেষ…মতামত কি তোমার….”

নিজের কলিজার টুকরো ,নিজের ভাইপোকে বাঁচাতে ওকে নিজেকে বলি দিতেই হবে…
— “রাজি আমি…”

প্রান্তিকের মুখে হাসি ফুটলো…অনামিকার চেয়ারে বাঁধা দড়িগুলো খুলে মুক্ত করলো ওকে…তারপর ওর সামনে কিছু পেপারস রাখলো প্রান্তিক…অনামিকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো…

— “এগুলো কিসের পেপারস??”

— “সকালে যে যে কথাগুলো হয়েছে সেগুলোই লেখা আছে এখানে…তুমি আগামী দেড় বছরের জন্য নিজেকে আমার আছে বিক্রি করেছো…আর এর বিনিময়ে তুমি আমার কাছ থেকে প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে নেবে…”

— “কিন্তু আমি তো……”

— “এখানে যদি সাইন না করো ওখানে তোমার ভাইপো…..”

আঁতকে উঠলো অনামিকা….
— “না,আমি করছি সাইন…করছি…”

কাঁপা কাঁপা হাতে প্রান্তিকের থেকে কলমটা নিয়ে অনামিকা ভাবে তার সাইনটা করা ঠিক হবে কিনা…

— “সাইনটা করো অনামিকা…”

অনামিকা সাইন করে…পাতা উল্টে উল্টে তিনটে পাতায় সই করে ও…চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল পাতার ওপর পরে ভিজে যায় কিছুটা অংশ…প্রান্তিক অনামিকার হাত থেকে পেপারস গুলো কেড়ে নেয়….
— “আপনি খুব খারাপ মানুষ প্রান্তিক…খুব খারাপ মানুষ আপনি…”

— “I know that, তোমার ভাইপো দশ মিনিটের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাবে… হ্যাঁ তবে তুমি পালানোর চেষ্টা করতে যেওনা…লাভ হবেনা…আমার এই পুরো বাড়ির সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই..তাই আমি যেমনভাবে বলবো তেমনভাবে চলবে..”

— “আমার বাবা আপনাকে ছাড়বেনা প্রান্তিক…একবার এখান থেকে বের হই…আপনাকে আমি দেখে নেবো…”

— “আগে ছাড়া তো পাও…”

প্রান্তিক ওই রুমে থাকা আলমারি থেকে একটা গ্রিন কালারের শাড়ি বের করে এনে অনামিকাকে দিলো…অনামিকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো প্রান্তিকের দিকে…
— “এটা কি??”

— “আজ থেকে এই রুমটা তোমার, কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আলমারিতে রাখা আছে…আর যদি কিছু প্রয়োজন হয় আমার ম্যানেজারকে বলবে…এখন এই শাড়িটা পড়ে নিচে আসো…”

অনামিকা শাড়িটা ছুঁড়ে মারলো প্রান্তিকের মুখের ওপর…প্রান্তিক শাড়িটা মুখ থেকে সরিয়ে অনামিকার গাল দুটো চেপে ধরলো…
— “তুমি আমাকে চেনোনা অনামিকা, ফারদার আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবেনা…পৃথিবীর সবথেকে খারাপ মানুষ আমি…আমার উদ্দেশ্য সফল হয়ে গেলে তোমাকে মেরে ফেলতে আমার এক সেকেন্ডও সময় লাগবেনা…”

অনামিকা জোর করে প্রান্তিকের হাত টা নিজের গাল থেকে সরিয়ে দেয়…
— “এখনই মেরে ফেলুন না,কেনো বাঁচিয়ে রেখেছেন আমায়?? ”

প্রান্তিক অনামিকার কানের কাছে মুখটা নিয়ে আসে…অনামিকার একটু পিছিয়ে যায়…
— “তোমায় ভোগ করবো বলে, বললাম না আমার বেবি চাই…”

প্রান্তিকের মুখের ভাষা শুনে ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় অনামিকা…
— “ছি…”

গল্পঃ #তিক্ত_প্রণয়ালাপ
কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here