তিক্ত_প্রণয়ালাপ কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল পর্ব:2

0
301

গল্পঃ #তিক্ত_প্রণয়ালাপ
কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল
পর্ব:2

প্রান্তিক মজুমদারের বিশাল বড়ো অট্টালিকায় আজ বসেছে তারকার হাট…কলকাতার সব নামিদামি ব্যবসায়ীরা উপস্থিত হয়েছে প্রান্তিক মজুমদারের ড্রয়িং রুমে…তিনতলার একটা কোনের রুমে থাকায় অনামিকা কোনো হইহট্টগোল শুনতে পায়নি…কিন্তু প্রান্তিকের দেওয়া শাড়িটা পড়ে নিচে আসতেই দেখে পার্টি চলছে…তাই অনামিকা আবার নিজের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য এগোতেই ডাক পড়ে ওর…

— “অনামিকা…”

ঘুরতেই দেখে ওর সামনে প্রান্তিক দাঁড়িয়ে আছে,হাতে হার্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাস নিয়ে…পল্লবী গন্ধে নাক চেপে ধরলো…
— “প্লীজ গ্লাসটা সরান,অ্যালকোহলের গন্ধ আমি নিতে পারিনা….”

প্রান্তিক হো হো করে হেসে উঠলো…অনামিকা ভরকে গেলো…
— “একজন ওয়েটার লাস্ট মোমেন্টে জানায় সে আসতে পারবেনা, তাই আমাকে একটু প্রবলেমে পড়তে হয়েছে…তুমি একটু সার্ভ করে দাও বাকিদের…”

অনামিকা করুন চোখে তাকালো প্রান্তিকের দিকে…
— “আমি সার্ভ করবো??”

— “হ্যাঁ ওই যে ঐখানে ড্রিঙ্কসের ট্রে গুলো আছে…যাও…”

অনামিকা চমকে উঠলো…ছোটবেলা থেকেই অ্যালকোহলের গন্ধ ও নিতে পারেনা…ওর বাবা যতবারই ড্রিঙ্ক করে বাড়ি ফিরতো ততবারই অসুস্থ হয়েছে পড়েছে ও… তাই ওর কথা ভেবে ওর বাবা মদ নামক বস্তুটাকে সারাজীবনের মত ত্যাগ করেছেন..

— “আপনাকে তো বললাম আমি এইসবের গন্ধ নিতে পারিনা…”

প্রান্তিক অনামিকার হাতটা চেপে ধরে…
— “তোমার কথামত চলার জন্য তোমাকে এখানে আনিনি আমি অনামিকা…যেটা বলছি সেটা করো…”

অনামিকা করুন চোখে তাকালো প্রান্তিকের দিকে কিন্তু প্রান্তিক সেটা পাত্তা না দিয়ে আবার মেতে উঠলো নাচগানে… অনামিকাকে এই করুন অবস্থায় দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে ওর…

— “আমার আগুনে তুমি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে অনামিকা, প্রান্তিক মজুমদার প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছে…আর তুমিই আমার সেই প্রতিশোধের প্রথম গুটি…জীবিত অবস্থাতেই তোমাকে নরক দেখাবো আমি….তুমি কল্পনাও করতে পারছোনা পরবর্তীতে কি অপেক্ষা করছে তোমার জন্য….জাস্ট ওয়েট আন্ড ওয়াচ…”

অনামিকা প্রান্তিকের কাছে এলে প্রান্তিক একটা গ্লাস নেয় আর ওর সামনে থাকা একটা মেয়ে গ্লাসটা নিতে গিয়ে ইচ্ছে করে অনামিকার শাড়িতে ফেলে দেয় পুরোটা…গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে অনামিকার…হাত থেকে ট্রেটা পড়ে যায়…প্রান্তিক ভীষণ রেগে যায়…অনামিকার হাতটা চেপে ধরে ওকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানার ওপর ঠেলে ফেলে দেয়…

— “তুমি জানো ওগুলো কত এক্সপেন্সিভ… ওগুলো ফেলে দেওয়ার সাহস হলো কিভাবে তোমার??”

অনামিকা উঠে বসলো বিছানায়…
— “আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি আমি অ্যালকোহলের গন্ধ নিতে পারিনা…প্লীজ আমাকে চেঞ্জ করতে দিন…প্লীজ…”

— “যাও, চেঞ্জ করে তাড়াতাড়ি নিচে আসবে… ভাঙা গ্লাসের টুকরোগুলো পরিষ্কার করতে হবে…”

অনামিকা বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়ে…প্রান্তিকের থেকে ছাড়া পেতেই ও একছুটে এই রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়…দরজা বন্ধ করে আলমারি থেকে শাড়ি বার করার উদ্দেশ্যে আলমারি খুলতেই ভীষণ অবাক হয় ও…অনেক শাড়ি আর জামার সম্ভার আছে এখানে…যেনো এগুলো সব ওর জন্যই রাখা আছে…

— “অনেকদিন ধরেই এই পরিকল্পনাটা সাজিয়েছেন আপনি…একটা বাচ্চার জন্য আমার মত অসুন্দরী একটা মেয়েকে তুলে আনবেন এতটাও বোকা নন আপনি…এর পিছনে অনেক বড়ো কোনো কারণ আছে…আমাকে সেটা জানতে হবে… তারজন্য আপনার সব কথা শুনে চলতে হবে আমাকে…”

অনামিকা আলমারি থেকে একটা নীল রঙের সিম্পল শাড়ি বের করলো…শাড়িটা শরীর থেকে পুরোটা খোলার আগেই গন্ধে গা টা গুলিয়ে উঠলো ওর…ওয়াশরুমে গিয়ে বেসিনে গলগল করে বমি করে কিছুটা স্বস্তি হলো ওর…নাক টিপে কোনরকমে শাড়িটা খুলে ওয়াশরুমের বালতিতে রেখে রুমে এসে নতুন শাড়িটা পড়ে ফেললো…

প্রায় বিশ মিনিট পর রেডী হয়ে নিচে নামে অনামিকা…নিচে এসে দেখে ড্রইং রুম পুরো ফাঁকা…প্রান্তিক সোফায় বসে আছে…ধীরপায়ে প্রান্তিকের কাছে এসে দাঁড়ালো অনামিকা…
— “সবাই কোথায় গেলো??”

প্রান্তিক কান থেকে হেডফোনটা সরিয়ে অনামিকার দিকে তাকালো… শ্যামবর্নি অনামিকাকে নীল শাড়িতে চমৎকার দেখতে লাগছে …প্রান্তিক মুগ্ধ নয়নে কিছুক্ষন যাবত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনামিকার দিকে…অনামিকার একটু অস্বস্থি হলো…প্রান্তিকের চাওনি দেখে নিজেকে যথাসাধ্য ঢেকে নিলো অনামিকা…সেটা দেখে ঘোর কাটলো প্রান্তিকের….

— “কাগজে কলমে তুমি এখন আমার,তাই আমার সামনে নিজেকে ঢেকে রেখে কোনো লাভ হবেনা মিস সুন্দরী…”

অনামিকার ভেবেই কেমন লাগে সে বিক্রি হয়ে গেছে প্রান্তিকের কাছে…প্রান্তিক সোফা ছেড়ে উঠে অনামিকার সামনে দাঁড়ালো…অনামিকার পুরো মুখটায় নিজের হাতের ছোঁয়া দিতে শুরু করলো…অনামিকা প্রান্তিকের ছোঁয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠলো…ঘোর লাগানো কন্ঠে প্রান্তিক বললো….

— “নারীদের এই আবেদনময়ী রূপই যথেষ্ট পুরুষদের মস্তিষ্ক ঘোরানোর জন্য…তুমি কি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছো অনামিকা??”

দু পা পিছিয়ে গেলো অনামিকা…কি বললো প্রান্তিক!!! তাহলে কি ও নিজেকে প্রান্তিকের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হবে…আজকে রাতেই কি তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে…দু ফোঁটা অশ্রু ঝড়ালো অনামিকার দুই নয়ন…প্রান্তিক অনামিকার কোমর ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে…দুজনের মধ্যে বায়ুচলাচল করার জায়গা টুকুও রাখলোনা প্রান্তিক…

— “আমার এত বড়ো সর্বনাশ করবেন না প্রান্তিক..আমাকে নিয়ে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন…সেটা এভাবে শেষ করে দেবেননা…”

প্রান্তিক অনামিকার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চুপ করালো ওকে…
— “একটাও কথা নয়,এই মুহূর্তটা উপভোগ করো শুধু…এই এত বড়ো বাড়িতে শুধু তুমি আর আমি…এসো আমার সঙ্গে…”

অনামিকা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো…প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আছে সে…প্রান্তিক বুঝতে পারলো অনামিকা এত সহজে তার কথা মেনে নেওয়ার মেয়ে নয়, তাই আর এক মুহূর্তও দেরি করলোনা ও, অনামিকাকে কোলে তুলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো…অনামিকা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো…

— “এটা ঠিক হচ্ছেনা প্রান্তিক,এতটা মনুষ্যত্বহীন হবেননা, এটা আপনার চরিত্রের সাথে যায়না…”

— “আমার চরিত্র সম্পর্কে কতটা জানো তুমি অনামিকা?? তোমার চেনা সেই দশ বারো বছরের প্রান্তিক নই আমি, ষোলোটা বছর কেটে গেছে মাঝখানে”

— “প্লীজ ছেড়ে দিন,একবার আপনার সুতপা কাকিমার কথা ভাবুন, মা মরে যাবে এসব শুনলে…”

— “তাতে আমার কিছুই হবেনা, তোমার মা মানে সুতপা পাল আমার কেউ হননা,বেকার ওনার কথা ভাবতে যাবো কেনো আমি…?”

অনামিকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, মুহূর্তেই মনে পড়লো প্রীতমের কথা। প্রান্তিকের কথা মেনে নিলে তো প্রীতমকে ঠকানো হবে, না যে করেই হোক প্রীতমের সাথে একবার কথা বলতে হবে…

— “আমার একটা অনুরোধ রাখবেন??”

— “প্রীতমকে ফোন করবে তাইতো???”

অনামিকা বিস্মিত হলো ওর মনের কথা প্রান্তিক কিভাবে জানলো এটা ভেবে, পরক্ষণেই আবার ভাবলো প্রীতমকে প্রান্তিক চেনে কিভাবে…
— “আপনি প্রীতমকে কিভাবে চিনলেন??”

প্রান্তিক দরজা খুলে নিজের রুমে অনামিকাকে নিয়ে ঢুকলো, বড়ো একটা রুম,বেশ সাজানো গোছানো…অনামিকা এই প্রথম প্রান্তিকের ঘরে এলো…চারিদিকটা চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতে প্রীতমের কথাটা বেমালুম ভুলে গেলো ও…

প্রান্তিক অনামিকাকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসালো…তারপর বসে পড়লো ওর পাশে…
— “নাওয়া,খাওয়া ভুলে যার সঙ্গে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলে সেই প্রীতমই তোমাকে আমার কাছে পৌঁছে দিয়ে গেছে…”

চমকে উঠলো অনামিকা, প্রায় তিনটে বছর ধরে যার সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ সে তাকে অবিশ্বাস করতে পারবেনা প্রান্তিক নামক এই নোংরা মানুষটার কথায়…
— “প্রীতমকে আমি ভালবাসি প্রান্তিক,আপনি ভাবলেন কি করে আপনার এই বানানো মনগড়া কথায় আমি ওকে অবিশ্বাস করবো?”

অনামিকার প্রতি করুণায় প্রান্তিক চ সূচক শব্দ করলো…
— “বিশ্বাস অবিশ্বাস টা তোমার হাতে অনামিকা,আমার হাতে এখন যেটা আছে সেটা তুমি আর সুযোগে সৎ ব্যবহার করতে প্রান্তিক মজুমদার একটুও দেরি করেনা…”

অনামিকা ভয় পেলো, খানিকটা পিছিয়ে বসলো ও..কিন্তু এই মুহূর্তে ওর ভয় পেলে চলবেনা…
— “একটা মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে লজ্জা করছেনা আপনার? নারী শরীরের দরকার হলে প*তি*তালয়ে যান না,আপনার তো অনেক টাকা…”

প্রান্তিক অনামিকার মুখের কাছে ঝুঁকে পড়লো..অনামিকা নিজের মাথাটা পিছিয়ে নিলে প্রান্তিক আরও এগিয়ে গেলো..
— “তারা তো আমাকে বেবি দিতে পারবেনা, সেটা তো দেবে তুমি…”

— “প্লীজ আমার কাছে আসবেননা, আপনারও তো বোন আছে,তার সাথে যদি কেউ এরকমটা করতো…একবার আমার জায়গায় প্রনতিদিকে বসিয়ে দেখুন…”

কথাটা অনামিকার মুখ থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তিকের দান হাতের পাঁচ আঙুলের দাগে অনামিকার গালটা লাল হয়ে গেলো…প্রচণ্ড ব্যথায় গালে হাত দিয়ে কেঁদে ফেললো অনামিকা…প্রান্তিক ওর দুটো গাল চেপে ধরলো…

— “আমার বোনের সাথে নিজেকে তুলনা করার সাহস তোকে কে দিলো অনামিকা? তোর ওই মুখে আমি আমার বোনের নাম যদি দ্বিতীয়বার আর শুনেছি তাহলে মেরে পুঁতে ফেলবো তোকে..”

প্রান্তিকের এমন রূপ দেখে গলাটা শুকিয়ে গেলো অনামিকার…ভয়ে আবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো…প্রান্তিক রেগে অনামিকার হাত ধরে টানতে টানতে ঠেলে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দেয় অনামিকাকে…তারপর ওর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here