ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:০৩ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
245

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০৩
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্তদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রোদসী দরজার তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে। রোদসী জিজ্ঞেস করে কিছু বলবে কিনা। বৃষ্টি মাথা ঝাঁকিয়ে বলে হ্যা। রোদসী বলে এসে বসো। বৃষ্টি বলে,

“না ভাবী বসবো না। আসলে আমি একটু বেরোবো আমার সাথে একটু যাবে?”

রোদসী পড়েছে বিপদে তার তো বের হতেও ইচ্ছে করে আবার ভয়ও হয় ওই দিন উচ্ছ্বাস যেমন করলো এখন ওকে না বলে বের হলে আবার কি না কি করে বসে একমাত্র উচ্ছ্বাস ভালো জানে।

রোদসী মিথ্যে বলে, “আসলে বৃষ্টি আই গট মাই পিরিয়ড। আমি বাহিরে যেতে পারবো না। আর”

বাকি কথা বলার আগেই বৃষ্টি থামিয়ে দেয়।

“বুঝেছি তুমি ভাইকে ভয় পাচ্ছো কিন্তু ট্রাস্ট মি, ভাইয়া কিছু বলবে না চলো আমার সাথে।”

এর মধ্যেই উচ্ছ্বাস এসে বলে, “ও কোথাও যাবে না। তুই যেখানে ইচ্ছে সেখানে যা।”

রোদসী উচ্ছ্বাস কে দেখে ঘাবড়ে যায়। তবুও চুপচাপ বসে থাকে। লোকটা বদ কখন কি করে বসে ঠিক নেই। বৃষ্টি উচ্ছ্বাসকে দেখে মুখ কালো করে ঘর থেকে চলে যায়। তা দেখে উচ্ছ্বাস মুচকি হাসে।

উচ্ছ্বাস রোদসীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কোথায় যাওয়া কথা বলছিলো ও? ওর সাথে কোথাও যাবে না। ওই মহিলা পাঠিয়েছে মনে হয়।”

এগুলো বলে উচ্ছ্বাস ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে চলে যায়। ওয়াসরুমের থেকে বের হবার পরও একই ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে কারণ জিজ্ঞেস করে। রোদসী জানায় বাসার সবার কথা মনে পড়ছে। তার যদি সময় হয় তাহলে যেন রোদসীকে নিয়ে একটু ঘুরিয়ে আনে।

এইসব কথা শুনে উচ্ছ্বাসের রাগ লাগে তবে মনে মনে খুশিও হয় যে রোদ তাকে এই অনুরোধ করার জন্য। সে জানায় এই সপ্তাহের শেষের দিকে যাবে। এখন উচ্ছ্বাস ব্যাস্ত।

রোদসী কিছু না বলে উচ্ছ্বাস কে খেতে আসতে বলে নিচে চলে যায়।

খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে রেস্ট করে। বিকালে রোদসী রজনী বেগমের রুমে যায়। ওখানে আগে থেকেই উষা, উদয়, বৃষ্টি বসা ছিলো। রোদসী কে দেখে বৃষ্টি উঠে চলে যায়। এটা দেখো রোদসী অবাক হয়ে উষাকে জিজ্ঞেস করে ও কেনো চলে গেলো? উষা জানায়,

“হয়তো ও তোমার কাছে কিছু চেয়েছিলো পায় নি বা অন্য কিছুও হতে পারে।

রোদসীর দুপুরের কথা মনে পড়ে। তারপর বলে,

“ও দুপুরের আগে আমার কাছে গিয়েছিলো, ও বেরোতে চায় আমাকে জোরাজোরি করলো এর মধ্যে তোমাদের ভাইয়া আসলো আর বললো জাবে না। ওমনি মুখ কালো করে চলে আসলো।”

“হ্যাঁ তোমাকে তো আগেই বলেছি স্বার্থে লেগেছে এমনই করবেই। আবার পরে এসে খুব ভাব করবে। ওর কথা বাদ দেও ভাইয়ার বলো, ভাইয়া অনেক রোমান্টিক না?”

রোদসী কি বলবে। সে দ্বিধাবোধ করলো। তাদের মধ্যে ওই ধরনের সম্পর্ক এখনো তৈরি নি। যে বলা যায় বা কিছু তাই সে কোনো জবাব না দিয়ে চুপ থাকে।

ওর অন্যমনষ্ক থাকায় সবাই মিটিমিটি হাসে। দাদু আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,

“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ। আমি জানি তো আমার দাদুভাই অনেক ভালোবাসতে জানে। তুমিও ওকে আগলিয়ে রেখো। ছোটো থেকে একা বড় হয়েছে তো। বোঝাই সময় দেয়ার মতো আমিই ছিলাম ওর সব কিছুর সঙ্গী।” বলেই হতাশ নিশ্বাশ ত্যাগ করে

সবাই উৎকন্ঠা হয়ে জিজ্ঞেস করে, “বড়মায়ের কি হয়েছিলো। আর এই মহিলা কিভাবে এই পরিবারে আসলো?” সবাই একটু ইতস্তত বোধ করলো।

দাদু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করে,

“রাশেদ আর উচ্ছ্বাসের মা ঊর্মিলা ভার্সিটি লাইফ থেকেই একই ক্লাসে পড়তো এবংতারা সমবয়সী হবার কারনে ঊর্মিলার বাড়ির সবাই তাদের সম্পর্ক মানতে নারাজ ছিলো। ওদের সম্পর্কের কথা যখন ঊর্মিলার বাবা জানতে পারে তখন থেকেই ঊর্মিলার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে। যখন আমরা এই বিষয়ে অবগত হই তখন আমরা তাদের কাছে রাশেদ আর ঊর্মিলার বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেই। তারা সরাসরি আমাদের নাকচ কররে দেয়। তাদের বাড়ি মানতে নারাজ কারণ একটাই ওরা সমবয়সী। আমরাও তো বুঝি সমবয়সী কিন্তু কি করার ভালোবাসার প্রতি কি আর জোর চলে। ঊর্মিলার বাবা ঊর্মিলাকে আটকে রাখে তার জন্য প্রায় ১মাস ওদের মধ্যে যোগাযোগ ছিলো না। পরে হঠাৎ একদিন রাতে ঊর্মিলা আমাদের বাড়ি এসে উঠে। ওকে দেখে আমরা সবাই অবাক হই। কারণ যেভাবে আমরা ঊরৃমিলাকে দেখেছি কিন্তু ওইদিন ওকে অনেক অসুস্থ দেখাচ্ছিলো। ওর থেকে আমরা জানতে পারি ও পালিয়ে এসেছে আর ওর ছোটো ভাবী ওকে সাহায্য করেছে। আমরা তখনই বুঝেছিলাম ওর আসা নিয়ে ঝামেলা হবে তাই আগে পরে না ভেবে ছেলের ভালো থাকার জন্য ওই রাতেই ওদের বিয়ে পড়িয়ে দেই। আমি মা হিসেবে বড্ড স্বার্থপর ছিলাম। কি করবো বড়ছেলে তো আদরের ছিলো। এটুকু বলে তিনি থামলেন

“তারপর” সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে একটু হকচকিয়ে যায়। ওখানে হাত ভাজ করে মনোযোগী শ্রোতার মতোন উচ্ছ্বাস দাড়িয়ে ছিলো। ওকে দেখে মিসেস রজীনা বেগম একটু ইতস্তবোধ করে কারণ এসবের কোনো কিছুই উচ্ছ্বাস জানে না। অবশ্য ও কখনো জানতেও চায় নি তাই বলাও হয় নি।

“কি হলো দিদুন বলো তারপর কি হলো?” উষা জিজ্ঞেস করে।

“হ্যাঁ দাদু বলো এরপর কি হয়েছে?” এবার উদয়ও বলতে শুরু করে।

এবার দাদু আবার বলতে শুরু করলেন,,

“পরেরদিন সকালেই ঊর্মিলাদের বাড়ি থেকে লোক এসে অনেক ঝামেলা করে তবে। ঊর্মিলা এক কথায় বলছে এখান থেকে ও এক পা-ও কোথাও যাবে না। এতে ওদের বাড়ির মানুষেরা অনেক বাজে আচারন করে। সম্পর্ক ছিন্ন করে। এতে ঊর্মিলা কষ্ট পেলেও কিছু চুপচাপ মেনে নেয়। কারণ এই সব কিছুর জন্য ও নিজেকে দায়ী মনে করতো। এভাবেই দিন কাটতে লাগলো। ও আগের কথা ভুলে নতুন করে নিজেকে গড়তে লাগলো পড়াশোনাও কমপ্লিট করলো। তবে বলে না সুখের দিন বেশি দিন থাকে না। তেমনই রাশেদ আর ঊর্মিলার মধ্যে একটু একটু কথা কাটাকাটি, রাগারাগি দিনকে দিন বাড়তে লাগলো। আমি বল্লাম হয়তো নজর পড়েছে এক কাজ করো বাচ্চা নেও সব আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। জানি না কেন যে এই পরামর্শ দিলাম এটাই ছিলো আমাদের জীবনের সব থেকে বাজে সিদ্ধান্ত। ৫ মাস থাকা কালীন ওটা মিসকারেজ হয়ে যায়। ঊর্মিলা পাগল প্রায় তখন। প্রথম বাচ্চা কি করবে না করবে অনেক ডাক্তার দেখালাম সবাই জানালো ৩ মাস পর থেকে আবার চেষ্টা করতে আর যে ঔষধ দিয়েছে সেগুলো ঠিক ঠাক মতো খেতে। এভাবে দেখতে দেখতে ৪ মাসের মাথায় আবার কনসিভ করলো তবে প্রথমবারে এতো ধকলের কারণে শরীর তখনও ঠিক মতো ভালো হয়ে ওঠেনি।”

যখন সময় এগিয়ে আসলো উচ্ছ্বাস জন্ম নেবার। ওই টাইমে ডাক্তার কন্ডিশন জানালো যে, আগে মিসকারেজ গেছে তাই এখনো ও মানসিক ভাবে ওতো ভালো প্রস্তুত না সাথে শরীরের যে ঘটতি গুলো ছিলো ওটাও পূরণ হয় নি। তাই আমাদের বন্ড পেপার সাইন করা লাগবে। সেদিন রাশেদ ঊর্মিলাকে পাবে না যেনে যেমন কেদেছিলো ঠিক ওই রকম পাগলামি করে। আমরা বুকে পাথর চেপে সাইন করি। ওনারা আগেই জানিয়ে রাখে হয় বাচ্চা বাঁচবে নাহলে মা। আমদের সব ভরসা শেষ করে উচ্ছ্বাস আসলো ঠিকি ঊর্মিলা আসলো না। রাশেদ পাগলের মতো হয়ে গেলো। আমি কোনটা সামলাবো উচ্ছ্বাস কে নাকি রাশেদকে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এদিকে প্রেগ্ন্যাসির সময় অনেক মানসিক সমস্যা দেখার সাথে ওর অসুস্থতার জন্য যে ঔষধ গুলো ঊর্মিলা নিয়েছিলো তার প্রভাব পড়ে উচ্ছ্বাসের উপর আমরা পাগল প্রায় এর ওপর মরার ওপর খারার ঘা ছিলো ব্যাবসায় লস খেলো রাশেদের আব্বা। এদিকে ঊর্মিলাদের বাড়িথেকেও আমাদের নামে কেস ফাইল করে কি থেকে কি করবো বুঝে উঠার আগেই রাশেদের আব্বা স্ট্রোক করেন এবং ১ সপ্তাহ পড়ে মারা যান।”

উচ্ছ্বাস এতো কিছু জানতো না। জানার ইচ্ছেও হয় নি কখনো তবে এতো কিছু একসাথে। সে ভাবেই পাড়ছে না। সে অবাকের পর অবাক হচ্ছে।

“দাদু তারপর কি হলো?” রোদসী জিজ্ঞেস করলো, মিসেস রবেয়া বেগম আবার বলতে শুরু করলো,,

জামনো টাকা দিয়ে উকিল আনিয়ে ডাক্তার সার্টিফিকেট দেখিয়ে কেস এর ব্যাপারটা সামলাই। কিন্তু তখনও আমাদের ব্যাবসার অবস্থা নাজেহাল। এই ক’মাসে রাশেদও নিজেকে কিছুটা সামলে নেয়। ২ ভাই চিন্তা করে একজন দেশের কাজ সামলাবে আরেক জন বিদেশ যাবে।

রাশেদ বাহিরে গুলো উচ্ছ্বাস কে আমি সামলাতে লাগলাম। আর দেশের কাজে হাত লাগায় মাসুদ। একটু একটু করে সব দেনা-লস কাটিয়প উঠেছি তখন উচ্ছ্বাসকে কেবল ভর্তি করিয়েছি। একদিন খবর আসে রাশেদ বিপাশাকে বিয়ে করেছে। খবর শুনে আমার হতবাক ছিলাম। কিভাবে যে কি হলো।

“এই যে এই রুমে এসে ঢুকেছো সবাই রাত তো অনেক হলো তোমরা কি খাবে না? বাকি গল্প পড়ে করো।” কথাটা বলতে বলতে উষার মা মিসেস মালিহা বেগম দাদুর ঘরে প্রবেশ করে।

সবাই এতোক্ষন এভাবেই বসে ছিলো। সবার এই না জানা কথা গুলো শুনে খারাপ লাগছিলো।তবে পরে কি হয়েছিলো তা এখন আর জানা যাবে না তাই সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলো৷ আজকে উচ্ছ্বাস কে কেমন ভয়ংকর রকমের শান্তাগছে। রোদসী খাচ্ছে আর বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে। উচ্ছ্বাস কোনো মতে খেয়ে উঠে চলে গেলো।

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here