#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০৯
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সকাল সকাল রোদসীকে নিয়ে উচ্ছ্বাস যখন ঊষাকে দেখতে রওনা দিবে তখন বৃষ্টি আর ঊষাও বায়না ধরলো রুহিকে দেখতে যাবে। উচ্ছ্বাসও কোনো বাকবিতন্ডায় না যেয়ে রাজী হয়ে যায়।
—–
ওরা হসপিটালে রুহিকে দেখতে যায় তখন রুহি বায়না ধরে সে বাড়িতে যাবে সে হসপিটালে থাকবে না। তার ভাষ্যমতে সে যদি হসপিটাল থাকে তাহলে সে নাকি আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। এসব অযুহাত শুনে সবাই হাসলেও উদয়ের কেনো জানি মন খারাপ হয়। আচ্ছা উদয় কি রুহির প্রেমে পড়েছে? নাকি কঠিন মায়ায় পড়েছে? এই মায়া তো কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন। এসব ভাবনার মধ্যে দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে রুহির ওপর। হঠাৎ রুহিরও চোখ পড়ে উদয়ের ওপর ওমনি ওর হাসি বন্ধ হয়ে যায়। আচ্ছা সে যদি বাসায় চলে যায় তাহলে কি আর কখনো উদয়ের সাথে দেখা হবে? হবে! হয়তো। হয়তো না। এসব ভাবতেই রুহির মন খারাপ হলো। চোখ ফিরিয়ে আবারও রোদসীদের সাথে কথায় মশগুল হলো। আর উদয় বেহায়ার মতো তাকিয়েই দেখলো। আসলেই এ জীবন বড়ই অদ্ভুত কিছুদিন আগেই যে মেয়েটার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতো। আজকে সেই মেয়ের প্রতি মায়া জন্মেছে। দুপুরের দিকে রুহিকে ডিসচার্জ করে বাসায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হলো আর রোদসীরা নিজেদের বাসায় ফিরে এলো।
——-
সেদিন হসপিটালের থেকে এসে পড়ার অনেক দিন হলো। রুহির পায়ের অবস্থা এখন আগের থেকে ভালো বলা চলে। তবে এর মধ্যে একটা জিনিস বদল হয়েছে যা বাসার সবারই নজরে পড়েছে। তা হলো রুহির ছটফটানি। সে কিছুক্ষণ পর পরই ফোন চেইক করে। এটা নতুন না যেদিন থেকে সে হসপিটাল থেকে বাসায় এসেছে সেদিন থেকেই। এগুলো বাসার সবার চোখের পড়লেও কেউ এখনো তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
এদিকে উদয়ের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। সেও চায় রুহি যোগাযোগ করুক কিন্তু রুহিতো তার অপেক্ষা করছে। এমন অবস্থা যে কে আগে পা বাড়ায়। দু’জনেই দোটানায় ভুগছে। এতদিনের ইগো ফেলে রেখে উদয়ই কল দিলো রুহিকে। রুহিও বোধহয় এই কলটার অপেক্ষা করছিলো। কল রিং হতেই ওপাস থেকে রিসিভ হলো। কেউই কথা বললো না চুপ হয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ বাদের একটা মিষ্টি রিনরিনে কন্ঠ কানে আসলো উদয়ের। প্রথম কথাটা রুহি-ই আগে শুরু করলো। রুহি সালাম দিয়েই চুপ থাকলো। উদয় শুনলো হয়তো এই কন্ঠের তৃষ্ণাই ছিলো এতোদিন। বুকের মধ্যে যে ঝড়টা ছিলো তা হয়তো একটু থামলো। সে চুপ থাকলো। রুহি আবার জিজ্ঞেস করলো,
“কথা বলছেন না কেনো? আপনি কি শুনতে পারছেন?”
“তুমি কি এখন হাটতে পারো?”
এতসময় পর উদয় মুখ খুললো তবে এই প্রশ্ন বোধহয় রুহি আশা করেনি। তবুও নিজেকে সামলে সে জানায় এখন একটু আধটু করে তবে দাঁড়িয়ে থাকলে পা ব্যাথা করে। উদয় একটু অস্বস্তি নিয়েই রুহিকে বললো,
“একটু বারান্দায় এসে দাঁড়াতে পারবে যদি না তোমার অসুবিধা হয়।”
রুহি অবাক হলো হঠাৎ এমন কথায় অবাক হয়। কোনো মতে সে হেঁটে বারান্দায় এসে দাড়ালো। অদূরে উদয় তার গাড়ির সাথে হলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উদয় এবার শান্তি পেলো।
উদয়কে দেখে রুহি কানের থেকে ফোন নামালো। উদয় রুহিকে দেখে হাসলো। বেচারী ভাবেওনি উদয় এমন পাগলামি করে বসবে।
——-
“ছেলেটা কে রোদসী?”
“কোন ছেলে।”
“যার সাথে ক্যান্টিনে বসে ছিলে?”
উচ্ছ্বাসের চোখের দিকে তাকিয়ে রোদসী ভয়ে চুপসে যায়। অনেক দিন ঠিক অনেকদিন পর উচ্ছ্বাসকে এমন দেখছে। উচ্ছ্বাস আবারো রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ছেলেটা কে? ওর সাথে বসে কি নিয়ে হাসাহাসি করছিলে? কই আমার সাথে তো ওভাবে হাসো না? এই তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? ছেলেটার পরিচয় কি রোদসী জবাব দেও”
রোদসী ভয়ে পেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জোড় এনে বলে,
“আমার ক্লাসমেট। নোটস এর ব্যাপারে কথা বলছিলাম। আর কিছুই না।”
এবার উচ্ছ্বাস এসে রোদসীর চুলের মুঠি ধরে কাছে টেনে এনে রোদসীর মুখের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায়। এহেন তাকানিতে রোদসী অনেক ভয় পায়। উচ্ছ্বাস কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
“যা লাগবে বলি নি আমাকে বলতে। ওই ছেলের কাছে কি? ওই ছেলে আমার থেকেও হ্যান্ডসাম? আমাকে দিয়ে মন ভরে না? কতগুলো চাই?”
এটা শুনে রোদসী চোখ বন্ধ করে ফেলে। সময় নিয়ে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে এক ধাক্কায় উচ্ছ্বাসকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়। মউচ্ছ্বাস অবাক হয়ে রোদসীর দিকে তাকায়।
“ব্যাস! অনেক বলেছেন। আচ্ছা বলুন তো আপনার আমাকে কি মানুষ মনে হয়? মানে এত্ত সন্দেহ কেনো? আমি কখনো পালিয়ে গিয়েছি? খারাপ কিছু করেছি? তবুও এমন ব্যাবহার কেনো করেন? বলেন তো? আমি এতো কষ্ট করে আপনার সাথে মানিয়ে নিলাম তাও আমার মনে একটা সন্দেহ রয়েই গেছে। আপনি আমাকে ভালোবাসেন আমি বুঝি কিন্তু তার থেকে সন্দেহ বেশি করেন। কারণ কি?”
উচ্ছ্বাস চরম অবাক হয় এই রোদসীকে দেখে সে কখনোই ভাবেনি রোদসী এভাবে কথা বলতে পারে। সে রোদসী চন্ঞ্চলস্বত্তা দেখেছে। বিয়ের পর শান্তা স্বত্তাও দেখেছে।তবে এ কোন রোদসীকে দেখে দেখলো। উচ্ছ্বাসের মাথা আরো গরম হয়ে যায়। সে এসে রোদসীর হাত পিছনদিক দিকে মুড়ে ধরে তারপর জিজ্ঞেস করে,
“ভার্সিটিতে ভর্তি করার পর অনেক কথা ফুটেছে তাই না? কই এতোদিন তো কোনো জাবাব দেও নি? তবে আজকে এতো কথা কিসের? কেনো জাবাব দিলে? হাতির পাঁচ পা দেখেছো? এই কে তোমাকে এতো সাহস দিলো? ওই ছেলে? কি হয় ও তোমার? পরকীয়া করছো? ওই ছেলে আমার থেকেও ভালো?”
রোদসীর মাথায় রক্ত চড়ে যায় এমন আজেবাজে কথা শুনে। সে চিৎকার করে বলে,
” আগে হাত ছাড়ুন। ওই ছেলে যাই হয়ে যাক না কেনো আপনার মতো অ মা নু ষ না। ছোটো খাটো একটা বিষয়কে আপনি টেনে বড় করছেন।”
উচ্ছ্বাসকে অ মা নু ষ বলায় উচ্ছ্বাস আরো ক্ষেপে যায়। সে হাত ছেড়ে রোদসীকে ঘুরিয়ে আবারো চুলের মুঠি ধরে। তারপর সে রক্তলাল চোখ নিয়ে তাকালো রোদসীর দিকে। তবে আজকে রোদসী ভীত হলো না। সেও চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রাখলো।
“এই আমি অ মা নু ষ? কি করেছি আমি? বলো? কি চাও? তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি তবুও তোমার মনে হয় আমি তোমাকে সন্দেহ করি? কেনো? কারণ বলো তো? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। পাগলের মতো ভালোবাসি।”
এই বলেই উচ্ছ্বাস রোদসীর পুরো মুখে চুমুতে চুৃুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো। রোদসী উচ্ছ্বাসকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিলো। উচ্ছ্বাস কিছুটা দূরে সরে এলো উচ্ছ্বাস এগিয়ে যেতে নিলেই উচ্ছ্বাসকে অবাক করে দিয়ে রোদসী এক কান্ড করে বসলো টেবিলে একটা কাচের গ্লাস ভেঙে সেই টুকরো হাতের সাথে চেপে বললো,
“কাছে আসবেন না বলে দিলাম। আপনি কাছে আসলে এটা দিয়ে আমি হাত কেটে ফেলবো।”
“দেখো রোদপাখি। পাগলামি করে না। উই কেন ফিক্সড। লেট ইট গো। মাথা ঠান্ডা করো। পাগলামি করো না।”
“আমি পাগলামি করছি না। পাগলামি গুলো শুরুই করেছেন আপনি। আপনি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসেন না। আমি নিজেই পাগল। মানষিক রোগী। আর অত্যাচার করছেন আমার ওপর।”
এগুলো শুনে উচ্ছ্বাস নিজেকে যতটুকু শান্ত করেছিলো ঠিক ততটাই আগুলে ঘি ঢালার মতো রেগে উঠলো। উচ্ছ্বাস রোদসীর গাল চেপে ধরে উচ্চ কন্ঠে বলে উঠল,
“আমি মা ন ষি ক রো গী? আমি পা গ ল? শা লা র এতো ভালোবাসার পরও আমিই পা গ ল? এই চাস তুই বল? জবাব দে।”
“ছাড়েন আমাকে। আপনি একটা পাগল। কিছু হলেই অ মা নু ষে র মতো ব্যাবহার করেন। আপনার চিকিৎসা নেয়া উচিত।”
ওদের এমন চিৎকার চেচামেচিতে বাসার সবাই এসে হাজির হয়। মিসস রাবেয়া বেগম ওটা থামায়। উচ্ছ্বাস রোদসীকে ছেড়ে বারান্দায় চলে যায়। আর রোদসী মেঝেতে বসে কান্না করে। মিসেস রাবেয়া বেগম বিছানায় বসে রোদসীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রোদসী তাকায় রাবেয়া বেগমের দিকে। মিসেস রাবেয়া বেগম, মালিহা বেগম, ঊষা, বৃষ্টি সবাই এখনো দড়জায় দাড়িয়ে আছে। কেউ রুমে আসার সাহস পাচ্ছে না। উচ্ছ্বাস বারান্দায় যেয়ে সিগারেট ধরায় পরপর অনেক গুলো তারপর ঘুরে রুমের দিকে তাকায় এখনো রোদসী মেঝেতে বসে কান্না করছে আর মিসেস রাবেয়া বেগম ওর পাশেই বিছানায় বসে আছে।
চলবে…….
ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।