ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:১০ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
164

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১০
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রাত পর্যন্ত বাসার অবস্থা থমথমেই ছিলো। আর উচ্ছ্বাস সন্ধ্যার পরেই বাহিরে গিয়েছিলো। রোদসী বিছানায় সুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে ছিলো। দরজায় নক হতেই সে উঠে দরজা খুললে মিসেস বিপাশা বেগমকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। রোদসী একটু আশ্চর্য হয় তাকে এই রুমের সামনে দেখে। মিসেস বিপাশা বেগম সাধারণত রোদসীর সাথে কথা বলে না এতো তবে হঠাৎ এই ঘরে আসায় রোদসী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“আপনি? হঠাৎ এখানে! কিছু বলবেন?”

“হ্যাঁ। অনেক কিছু তো বলতেই চাই। শুনবে তো? আচ্ছা সরো আগে আমাকে ঘরে আসতে দেও। সরো।”

বলেই রোদসীর পাশ দিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় যেয়ে বসে। তারপর সারা রুমে চোখ ঘুরিয়ে এনে আবারও রোদসীর দিকে চোখ নিবদ্ধ করে। রোদসী মিসেস বিপাশা বেগমের কর্মকাণ্ড দেখছিলো। মিসেস বিপাশা বেগম বলতে শুরু করলেন,

“বুঝলে রোদসী। এতোদিন পর কাজের কাজ করলে তুমি একটা।”

“মানে?” রোদসী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে!

“এই যে প্রতিবাদ করলে। তা যাইহোক বলো তো আমারা পা গ ল কে পা গ ল বললে তো পাগল ক্ষেপে যায়। আর পাগল কি স্বীকার করে সে পাগল? তাই নয় কি?”

“হ্যাঁ। সে তো রাগ করবেই।”

“একদম ঠিক। তুমি ঠিক ধরতে পেরেছো।”

“মানে?”

“আজকে উচ্ছ্বাসের আচারন দেখেছো? বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে। দেখেছো তোমার সাথে সে কি ব্যবহারটা করেছে? তাই আমি বলি কি পালিয়ে যাও। আমি সত্যি বলছি। ওর দাদি চাচীরা এ কথা তোমার থেকে লুকিয়েছে যে ও পা গ ল। ওর মা ন ষি ক সমস্যা আছে। তবে আমি তোমার সাথে অন্যায় করতে পারলাম না বাবা। তাই সত্যিটা তোমাকে জানালাম। এখন তুমি কি করবে তোমার ব্যাপার। নিজের বুঝ পা গ লে ও বোঝে। তাই বলছি কথা শোনো। আর যদি বলো আমি জানলাম কই থেকে তাহলে বলি ওর যখন ছোটো তখন আমি রাশেদকে বিয়ে করি। আর তার আগে থেকে ওকে চিনি। তাই ওর সব কিছুই আমি জানি। অজানা কোনো কিছুই নেই। এখন তুমি বোঝো কি করবে। তোমার প্রতি মায়া লেগেছে তাই উপকার করলাম দেখো কি করবে। আর হ্যাঁ আমি যে এগুলো বলছি কাউকে বলো না আবার।

রোদসী এতক্ষণ বিপাশা বেগমের কথা শুনছিলো। তার কথা শেষ হতেই রোদসী জিজ্ঞেস করলো “সে কি করবে?” বিপাশা বেগম জানায়, “পালিয়ে যাও। যেখানে উচ্ছ্বাস খুজে পাবে না।”

“আমি যেখানেই যাই না কেনো ও আমাকে আকাশ- পাতাল ভেদ করে হলেও খুজে বের করবে। কোথায় যাবো আমি?”

“আরে আমি আছি কি করতে? সত্যি জানালাম। সাহায্য করবো না? এত অকৃতজ্ঞ হওয়া উচিত না। তাই আমিও পারলাম না। দেখি আমি একটা ব্যবস্থা করি। আর উচ্ছ্বাস কোথায়?”

রোদসী এক কথায় জবাব দেয় “জানিনা”।

——-

এদিকে রুহির আর উদয়ের মধ্যে চলছে মিষ্টি আলাপ।

রুহি কখনো কল্পনাও করেনি উদয় তার জন্য তার বাসায় সামনে আসবে। আচ্ছা উদয়ের সাথে ঝগরা করলে কেমন হয়। এখনও কি উদয় তাকে এই মেয়ে, ঝগড়ুটে আখ্যায়িত করবে। এসব ভেবে হাসলো রুহি। তারপর কানে ফোন ধরে বললো,

“অস্ত।”

“উমমম। উদয়।”

“না আপনি অস্ত।”

উদয় কিছুক্ষণ চুপ রইলো। সে রুহির শ য় তা নি ধরতে পেরেছে। রুহি যে ঝগরা করতে চাচ্ছে তা বুঝে বললো,

“এই মেয়ে।”

ওমনি রুহির মুখ কালো হয়ে গেলো। রুহি কপট রাগ নিয়ে বলে,

“এই যে মিস্টার উদয় না অস্ত। আমার নাম রুহি। ওকে?”

“ওকে!”

এটা বলেই উদয় উচ্চশব্দে হেসে উঠলো। আর রুহি তা শুনে মুচকি হাসলো।

———

আমি যদি পালিয়ে যাই যাবো কোথায়? কার কাছে যাবো? যদি উচ্ছ্বাসের কাছে আবারও ধরা পড়ি? তাহলে সেই শাস্তি হবে চরম কঠিন। এমনিতেই উচ্ছ্বাস তাকে সন্দেহ করে যে রোদসী তাকে রেখে পালিয়ে যাবে। তার মাথা কাজ করছে না সে কি করবে না করবে। এসব ভাবনার মাঝেই একটা শক্তপোক্ত পুরুষালী হাত রোদসীকে পিছন দিক থেকে জরিয়ে ধরলো রোদসী চমকে উঠলো। তা দেখে উচ্ছ্বাস হেসে রোদসীর কাধে মাথা রেখে ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“এত গভীর মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিলে পাখি?”

রোদসী একটু থতমত খেয়ে বলে,

“কই কিছু না তো!”

“আসলোই কিছু না তো?”

“হু”

উচ্ছ্বাস কিছুক্ষণ চুপ রইলো আর রোদসী মিসেস বিপাশা বেগমের কথা ভাবতে লাগলো। এরি মধ্যে উচ্ছ্বাস তাকে কোলে তুলে নিলো। রোদসী হকচকিয়ে উচ্ছ্বাসের শার্ট খামচে ধরে। তা দেখে উচ্ছ্বাস হেসে বলে,

“তুমি কি যেনো ভাবছিলে তাই তুমি ভয় পেলে। বলো তো কি ভাবছিলে।”

এই বলেই রোদসীকে বিছানায় নামিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে উদ্যত হয়। রোদসী কিছু না বলে উচ্ছ্বাস দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর তা দেখে উচ্ছ্বাস হাসে। রোদসী কিছু বলতেই যাবে তখনই উচ্ছ্বাস রোদসীর উষ্ঠ নিজের আয়ত্বে করে নেয়। রোদসীকে যখন ছাড়ে তখন রোদসী হাপিয়ে উঠে বড় বড় শ্বাস নিয়ে আবারও মুখ খুলতে যাবে তখন আবারও উচ্ছ্বাস রোদসীর ঠোঁট আকরে ধরে। তার হাত বিচরণ করে রোদসীর পুরো শরীরে। ধীরে ধীরে উচ্ছ্বাসের ঠোঁট নিচে নামে। রোদসীর মনে হয় সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এই উচ্ছ্বাসকে সে চেনে না। কেমন অদ্ভুত ভাবে আজকে পাগলামি করছে। রোদসীর চোখের কার্নিশ থেকে চোখের জল গরিয়ে পড়ে।

——

রোদসী সুয়ে আছে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আর উচ্ছ্বাস রোদসীর বুকের ওপর মাথা রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে। আহা কি শান্তির ঘুম। রোদসী সিলিং থেকে চোখ নামিয়ে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকালো তারপর চোখ সরিয়ে আয়নায় তাকালো। আচ্ছা তারা কি আর পাঁচটা সুন্দর সম্পর্কের মতো হতে পারে না? আচ্ছা উচ্ছ্বাস কি আসলেই অসুস্থ? তাহলে ওকে ডাক্তার দেখাবো নাকি নাকি সে নিজেই পালিয়ে যাবে? ও কি আদোও সুস্থ হবে? নাকি সব সময় এমন পা গ লা মি ই করে বেড়াবে। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ বন্ধ করলো। কখন যে ঘুমিয়ে গেলো টেরই পেলো না।

——

“তোমাকে আমি যে ঠিকানা
দেব সেই ঠিকানায় চলে যাবে।”

“কিন্তু যা বুঝলাম মাহাদী অসুস্থ আর আমি পালিয়ে যাবার পর যদি ও আমাকে পেলে ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলবে।”

মিসেস বিপাশা বেগম বিরক্তবোধ করেন। সে নাকমুখ কুচকে বলে,

“শোনো মেয়ে তোমাকে সাহায্য করেছি কারণ তোমাকে আমার দেখতে মায়া লাগে। আমি নিজের হাতে তোমার জীবন নষ্ট করতে পারি না। তাই সত্যি বলেছি। তারওপরে কোথায় যাবে থাকবে সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছি তারপরও যদি তোমার মনে হয় উচ্ছ্বাসের সাথে থেকে নিজেও পাগল হবে। তাহলে আমি আর কি করতে পারি?”

রোদসী কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসলো।

——–

আজকে সারাটাদিন রোদসী ভাবতে ভাবতে চলে গেলো তাই রোদসীর মনে সময় কত দ্রুত চলে গেলো খেয়ালই হলো না। রাতে মিসেস বিপাশা বেগমের রুমে সামনে দাড়িয়ে ছিলো রোদসী তার মধ্যে দোটানা কাজ করছে। তার কি পালানো উচিত নাকি থাকবে। যদি পালায়ও তাহলে যদি উচ্ছ্বাস তাকে পায় তাহলে ভয়ংকর কিছু করে বসবে। কি শাস্তি দিবে সে ভেবেও পাচ্ছে না। এই ভেবে সে ঘুরে রুমে যাবার জন্য পা বাড়ায় ঠিক তখনই বিপাশা বেগম দরজা খুললেন। রোদসী পিছনে ফিরে তাকায়। মিসেস বিপাশা বেগম এখানে রোদসীকে দেখে অবাক হয়। সে ভেবেছিলো তার দেয়া বুদ্ধি কাজ হবে না। তবে রাতের মধ্যেই যে রোদসী হাজির হবে তা ছিলো তার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। সে রোদসীকে দেখে হাসলো। তারপর বলল সে বাহিরে কেনো ঘরে এসে বসতে। রোদসী আশেপাশে তাকিয়ে ঘরে যেয়ে বসে। তারপর সে একটু চুপ থেকে মুখ খোলে।

“আপনি যা বলেছেলন তা সারাদিন ভাবলাম। আসলেই মাহাদীর চিকিৎসার প্রয়োজন তবে আমি আর এভাবে নিতে পারছিলা। দিনে দিনে ওর পাগলামি বেড়েই চলেছে। আর চলবেও তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বিপাশা বেগম রোদসীর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। রোদসীর হাব ভাবে বোঝা যাচ্ছে সে সিরিয়াস। যদি সে না যায় তাহলে বিপাশা বেগমের প্লান কাজ করবে না। সে মুখ কালো করে তখনও রোদসীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছিলো। কিছু বুঝতে না পেরে বিপাশা বেগম জিজ্ঞেস করে,

“কি সিদ্ধান্ত?”

“পালাবো।”

বিপাশা বেগম চমকে উঠলো। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

“কি বললে?”

“পালাবো।”

“তুমি কি আসলেই পালাবে? মানে তোমাকে দেখে আমি ভেবেছি তুমি থেকে যাবে তাহলে? বুঝে শুনে বলছো তো?”

“হ্যা। আমি সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিয়েছি। কিন্তু আমার তো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই আপনি বললেন জায়গা ম্যানেজ করেছেন। সেই ঠিকানাটা দিন। আর আমাকে কিছু টাকা দিন। আমি আজকে রাতেই বের হবো। আপনি রাতে আমাকে সদর দরজা খুলে দিবেন। এইটুকুই সাহায্য আপাতত করেন আমায়। আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।”

মিসেস বিপাশা বেগম মনে মনে হাসলো। তাহলে পাখি ফাঁদে পা দিয়েছে। এবার শুধু রাশি ধরে টান দেয়ার পালা। এবার যা করবে বা হবে সব মিসেস বিপাশা বেগমের হাতে। এই বলেই সে রহস্য হাসলো।

“আচ্ছা তা নাহয় করবো। যদি উচ্ছ্বাস বুঝে যায়?”

“না ও বুঝবে না। যা করার আজকেই করতে হবে। আপনি সব রেডি রাখুন। আমি রুমে যাই। মাহাদী রুমে এসে আমাকে না পেলে আবারো তামাশা করবে।”

এই বলেই রোদসী রুমের দিকে যেয়ে উদ্যত হয়।

রুমে এসে দেখে রুমে কেউ নেই, ওয়াসরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে। রোদসী একটু স্বস্তি পেলো। এখন প্লান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। প্রথমে এক গ্লাস পানি নিয়ে তাতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে বেডের পাশেই রাখলো। নতুন একটা শিফন জর্জেটের লালশাড়ি পড়লো। যখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে রোদসী চুলে চিরুনি চালাচ্ছিলো তখন ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজ হয় তবুও রোদসী ফিরে তাকায় না। ওয়াসরুম থেকে বের হয়েই উচ্ছ্বাসের নজর যায় আয়নার সামনে দাড়ানো রমনীর উপর। সে কিছুক্ষন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। সে ওভাবেই এগিয়ে এসে রোদসীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ঠান্ডা হাতে ছোঁয়া পেয়ে রোদসী একটু কেপে ওঠে উচ্ছ্বাস তা দেখে হেসে আরো গভীর হয়ে সে রোদসীর ঘাড়ে মুখ ডোবায়।

চলবে……..

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here