ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:১৩ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
177

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৩
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ঝা চকচকে সকাল। কালকে রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় নি রোদসীর। তাই শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। কাল রাতে শব্দের সাথে রোদসীর তুমুল কথা কাটাকাটি হয়। শব্দ সেই থেকে রাগ করে রোদসীর সাথে কথা বলছে না। এই সমস্যার কারণ হলো শব্দ চায় রোদসী নতুন করে জীবন শুরু করুক কিন্তু রোদসী সেটা চায় না। হয়তো মনে মনে এখনো উচ্ছ্বাসকে ভালোবাসে। রোদসী উঠে কিচেনে যায় এবং তার জন্য কড়া করে এক কাপ কফি বানায়। তা নিয়ে আবার রুমে যেয়ে বারান্দায় এসে বসে। কফি খেতে খেতে শব্দের সাথে পরিচয় হওয়া থেকে এই পর্যন্ত সব ঘটনা একবার মনে করে। চোখ বোঝে তারপর হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মানুষের জীবন কত অদ্ভুত আমারও তাদের সাথে কিভাবে যেন জড়িয়ে যাই।

শব্দ ভালো মানুষ তবে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। শব্দেরও সুন্দর একটা পরিবার ছিলো। মা, বাবা, বোন আর শব্দ। শব্দ যখন স্কুলে ভর্তি হয় তখন হঠাৎ একদিন শব্দের বাবা স্ট্রোক করে মারা যায়। সে শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আটারো দিনের মাথা শব্দের মা’ও মারা যায়। রয়ে যায় শব্দ আর তার ছোট বোন। শব্দকে হোস্টেল দিয়ে দেওয়া হয়। আর বোন তার নানু মনির কাছে নিয়ে যায়।

রোদসী আবারো চোখ খোলে। একটা মানুষ কতটা দুঃখ পেলে এমন শক্ত হতে পারে। শব্দের এমন ব্যক্তিত্ব রোদসীকে বরাবরাই মুগ্ধ করে। শব্দ যেন ধাড়ালো কাচঁ যা দেখা তো যায় সুন্দর তবে ধরতে গেলেই কেটে র ক্ত গড়িয়ে পড়বে।

——

রোদসী শব্দের বাসায় থাকার ঠিক তিন দিন পর,

রোদসী শব্দের রিডিং রুমের সামনে যেয়ে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ দেমোনা করে দরজায় নক করে। তাতে শব্দ দরজার দিকে তাকায়। রোদসী দেখে হেসে ভিতরে আসার অনুমতি দেয়। তাই রোদসী গুটিগুটি পায়ে সামনে আসে। শব্দ চোখের রিডিং চশমাটা খুলো রেখে রোদসীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কিছু বলবে?”

“হুম।”

“বলো!”

রোদসী পাশের চেয়ারে বসে। তারপর রুমটা ভালোমতো চোখ ঘুরিয়ে দেখে তারপর বলে,

“আপনার সাথে কিছু বলার আছে।”

“বলো।”

“আপনার আমার পরিচয় না জেনেই বাসায় জায়গা দিলেন। এটা কি ঠিক?”

“তুমি অসুস্থ ছিলে সাথে প্যানিক ছিলে। যেহেতু আমি একজন ডাক্তার এইসব ব্যাপার গুলো আমার ভালোই আয়ত্বে আছে। তাই প্রেশারাইজ করিনি। দেখো সুস্থবোধ করতেই এই প্রশ্নটা তুমি নিজেই করলে। আমি এটাই চাচ্ছিলাম। আর তুমি সেটাই করলে।”

রোদসী হাফ ছাড়ে। তারপর বলতে শুরু করে,

“ভাইয়া আমি বিবাহিত।”

শব্দ চকিতে রোদসীর দিকে তাকায়। তবুও প্রথমে কিছু আচ করেছিলো। এখন সিওর হলো আর কি। শব্দ নিজেকে সামলে বলে,

“তাহলে সে কোথায় আর একাই বা কোথায় যাচ্ছিলো?”

প্রশ্নটা গম্ভীর অথচ সবাবলীল শোনালো। রোদসী নিজেকে সামলে তারপর বলে শুরু করে।

“মাহাদী আমার এক কাজিন রেদোয়ান ভাইয়ের বন্ধু। তাকে আমি ভাইয়ার বিয়ের সময় প্রথম দিকে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তার সাথে প্রথম দেখাটাই একটা বাজে পরিস্থিতিতে হয়।”

এটুকু বলেই রোদসী থামে আর শব্দ একটু নড়েচড়ে বসে। রোদসী শব্দের দিকে চোখ তুলে তাকায়।

“তারপর? থামলে যে?”

রোদসী একটু শ্বাস ভিতরে টেনে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে তারপর আবারো বলতে শুরু করে,

“ওই পরিস্থিতিতে আমি মাহাদীকে ভুল বুঝি এবং ওখানে একটা বাঝে পরিস্থিতি তৈরি হয়। ও আমাকে বোঝাতে চায় তবে আমি রাগ করে ওকে চড় দিতে বসি। আমার মনে হচ্ছিলো ও নিজে ইচ্ছে করে কাজটা করেছে।”

কথাটা বলে আবারো নিচের দিকে তাকায় রোদসী। শব্দ হাফ ছেড়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,

“যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমি কি জানতে পারি সে কি করেছিলো?”

“বিয়ে বাড়ি কে কোথায় বুঝতে পারে নি। আমি আমার রুমে শাড়ি বদলাচ্ছিলাম। আমার কাজিনও ছিলো সাথে। ওর শাড়ি পড়া হয়ে গেলে ও চলে যায়। আমার আর দরজা লাগাতে খেয়ালা ছিলো না। আর মাহাদী আমাদের বাসায় নতুন এসেছিলো হয়তো ভুলবশত আমার রুমে এসে পড়েছিলো। তাই আমি রাগ করে ওকে থাপ্পড় মেরে বসি। তারপর..! তারপর কি করলো জানিনা তারপরের দিন বাবা জোড় করে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। তারপর মাহাদী তাদের বাসায় নিয়ে যায়। থাকলাম তবু ও কারো সাথে মেশা পছন্দ করতো না তাই আমি কারো সাথে মিশতাম না। দেবর ননদদের সাথেও না। তারপর ওর সন্দেহ দিনদিন বেড়েই চলেছে। মারধোর তো আছেই। ধীরে ধীরে মেনে নিতে চেয়েছিলাম তবে ওর দিন দিন এমন পাগলামি পজেসিভ নেস আমার অনেক ভয় হতো। আমার.. আমার মনে হতো ওর কোথাও সমস্যা আছে। ওর ডাক্তার দেখানো উচিত। ওর মানষিক সমস্যা আছে। তারপর সৎ মা আছে একজন কিন্তু ও পছন্দ করতো না তাকে আর না কথা বলতো। আমাকেও কথা বলতে দিতো না। ও টোটালি রুম থেকেই বের হতে দিতো না। আমার দিন দিন ভয় বেড়েই চলেছিলো। তাই ওর সৎ মায়ের বুদ্ধিতে আমি পালিয়ে আসি।”

রোদসীকে একনাগাড়ে এতগুলো কথা বলে থামলো। শব্দ রোদসীর দিকে তাকিয়ে ছিলো। রোদসীকে কেমন অস্থির দেখালো। শব্দ কিছুক্ষণ পর মহখ খুল্লো,

“আর তুমি তার বুদ্ধিতে পালিয়ে গেলে? যদি তিনি একটা খারাপ চক্রান্ত করতো? বা তুমি যেখানে যাচ্ছো সেখানে খারাপ কিছু হতো? বা তারা লোকই খারাপ? তখন নিজেকে মাফ করতে পারতে তো?”

এটুকু বলেই শব্দ থামলো। রোদসী অবাক হয়ে তাকালো। আসলেই তার এসব কিছু ভাবা হয় নি। সে যদি যেত আর এই কথা গুলো সত্যি হতো তাহলে? ভাবতেই রোদসীর শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো। শব্দ আবারো বলতে শুরু করলো,

“তুমি বুঝেছো তোমার স্বামী অসুস্থ। তাহলে তাকে ডাক্তার না দেখিয়ে তুমি পালিয়ে এলে? এটা কি ঠিক হলো? আসলে এটা কি কোনো স্ত্রীর দায়িত্বের নয়? যে অসুস্থ স্বামীকে সেবা না করে পালিয়ে এসেছো। আচ্ছা তাও বুঝলাম এখন তুমি বলো তার কাছে ফিরে যেতে চাও?”

রোদসীকে আতংকিত দেখালো। সে চকিতে জবাব দিলো।

“না, আমি তার কাছে ফিরতে চাই না। আমি মানছি পালানো উচিত হয় নি। তবে এখন ফিরে গেলে সে আমাকে মেরে ফেলবো।”

“আচ্ছা বুঝলাম। তাহলে? ভবিষ্যতের কথা কি ভাবলে?”

“মানে?”

“এই যে নতুন করে শুরু করবে কিনা বা কিছু।”

রোদসী জবাব দিলো না। চুপচাপ বসে রইলো কিছু সময়। তারপর সময় নিয়ে শব্দের মুখের দিকে চাইলো সাহস করে প্রশ্ন রাখে শব্দের কাছে,

“আপনি আপনার বোনের কথা এখনো বলেন নি।”

শব্দ হাসলো। মেয়েটা কথা ঘুড়াতে চাইছে। তাই কথা না বাড়িয়ে সে জবাব দেয়,

“সে অনেক বড় কাহিনী। তোমাকে দেখলেই আমার বোনের কথা মনে পড়ে। ওই যে তোমার থুতনির তিলটা? বাসে প্রথম দেখে সর্বপ্রথম আমার শ্রেয়ার কথা মনে পড়ে। একসেকেন্ডে মনে হলো আমি আমার বোন শ্রেয়াকেই দেখছি।”

এটুকু বলেই শব্দ থামে। রোদসী অনেক অবাক হয়। উচ্ছ্বাসও রোদসীর এই থুতনির তিলটা অনপক পছন্দ করে আর এখানে আরেকজন তার বোনের সাথেই মিল পেলো। হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আবারো শব্দের দিকে তাকালো,

“শ্রেয়া আমার চার বছরের ছোটো বাবা-মা মারা যাবার পর আমি হোস্টেল আর ও নানুমনির কাছেই বেড়ে ওঠে। ওর ইচ্ছে ছিলো অনেক বড় ফ্যাশন ডিজাইনার হবে আমরাও মানা করিনি। উৎসাহিত করতাম। তারপর দিন আমাদের ভালোই কাটতে লাগলো। হঠাৎ একদিন শুনি শ্রেয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তখন আমি কেবল ডাক্তার হয়েছি। আমার চোখের সামনে ওই প্রথম মৃত্যু দেখলাম। জানো কার? আমার বোনের! আহা সে কি করুন দৃশ্য। রিপোর্ট বের হলো সি ইজ গ্যাং র‍্যাপড। ফাইলটার দিকে আমি তাকিয়েই ছিলাম। পরে জানতে পারলাম এমনিই পাবলিক ট্যান্সপোর্টেই এই সর্বনাশ টা করলো। আমার জীবনের মা বাবার দেয়া শেষ চিহ্নটুকুও আমি হারিয়ে ফেল্লাম। কেস ফাইল থেকে কোর্ট পর্যন্ত সব করলাম তাও কিছু হলো না। হার মেনে নিলাম কি করবল বলো? এদেশের আইন আছে?”

“সেইদিন বাসে তোমাকে প্রথম দেখে আমার শ্রেয়ার কথা মনে পড়লো। আমি ভয় পেয়েছিলাম। আর তোমার মুখেও আতঙ্ক ছিলো। তাই আমার মনে হচ্ছিলো আবার ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে। তাই ভয় কাটানোর জন্য তোমার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে যখন তুমি প্যানিক এট্যাক করো আমি ভীষণ ভয় পেয়েযাই তারপর তুমি অজ্ঞান হলে আমার ভীষণ চিন্তা হয়। যখন তোমার হাত ধরি দেখি তোমার জ্বর এসেছে তাই কিছু না ভেবেই বাশায় নিয়ে আসি। আর তুমি বললে না যে যদি তোমার উদ্দেশ্য খারাপ হয়। তাহলে আমি বলবো বোনেরা কখনো ভাইয়ের কাছে খারাপ হয় না। তোমার মাঝে আমি আমার শ্রেয়াকে খুঁজে পেয়েছি। তাই আমি এতকিছু ভাবি না।”

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে শব্দ থামলো। রোদসী চোখ থেকে পানি ঝড়ছে। যা দেখে শব্দ আলতো হেসে উঠে দাড়িয়ে রোদসীর মাথায় হাত রেখে বলে,

“এতো নরম হলে হয় না তাবাসসুম। নিজেকে শক্ত করে গড়ে তোলো। নিজেকে সময় দেও। আমি রুমে যাচ্ছি।”

এবলেই শব্দ নিজের রুমের দিকে চলে যায়। আর রোদসী মুখ তুলে শব্দ কে দেখে। একটা মানুষ কতটা শক্ত হলে কারো সাথে এভাবে ইমোশনান ছাড়া শক্ত কন্ঠে এভাবে সব বলতে পারে। রোদসী শব্দকে যতবার দেখে ততবার অবাক হয়।

——

মিলি খালার ডাকে রোদসী ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে। রোদসী মিলি খালাকে ঈশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। মিলি খালা জানায় শব্দ রোদসীকে রেডি হয়ে নিচে যেতে বলেছে। এতে রোদসী অবাক হয়। রেডি হবার কি আছে? তাও মিলি খালাকি ঠিক আছে বলে বিদায় করে নিজেও শাড়ি আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।

চলবে……

ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

( আজকে ভার্সিটির প্রথম ক্লাস ছিলো তাই প্রচুর ক্লান্ত তবুও আপনাদের অপেক্ষা করাই নি। দোয়ায় রাখবেন আমাকে। ভালোবাসা অবিরাম🤍)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here