ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:১৫ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
206

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৫
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

সময়ের সাথে সাথে মিসেস বিপাশা বেগমের অবস্থা আরো বেগতিক হতে লাগলো। এতে সবাই চিন্তিত হয়ে উঠেছে। তবে উচ্ছ্বাসও মাঝে মাঝে হসপিটালে এসে সবকিছু দেখে যাচ্ছে। বাকিসব কার্যক্রমের ভার পড়েছে উদয়ের ওপর। রাশেদ সাহেব হসপিটালে এসে বিপাশা বেগমের এই অবস্থার কারণ জিজ্ঞেস করলে উদয় জানায়,

” চাচীর কাছে গিয়েছিলাম কিছু কথা ছিলো কিন্তু সব কথা বলতে পারিনি তারপর হঠাৎ ই কেমন যেন দেখালো উনাকে হঠাৎ করেই শরীরের বিবর্ণ হয়ে উঠলো তারপর জ্ঞান হারায়। আমি সবাইকে ডাকার পর হসপিটালে নিয়ে আসি।”

রাশেদ সাহেব শুনলেন শুধু কিছু বললেন না৷ তাই উদয়ও আর কিছু বলে নি। রোদসীকে নিয়ে যে কথা হয়েছে তা সবার থেকেই চাপিয়ে গেছে উদয়। সে চায় না এই ব্যপারটা আরো জল ঘোলাটে হোক। সমস্যার এমনিই অন্ত নেই। এই ব্যাপারে উচ্ছ্বাস জানলে কোনো না কোনো কান্ড ঘটবেই তাই উদয় চায় আপতত এই টপিক অফ রাখতে।

——

“ড. আসবো?”

শব্দ চোখ তুলে তাকায়। দরজায় উচ্ছ্বাস দাড়িয়ে আছে। শব্দ সামান্য হেসে মাথা নাড়িয়ে জবাব করে ভিতরে আসুন।

উচ্ছ্বাস এসে সামনে চেয়ারে বসে শব্দের দিকে তাকায়। তারপর কিছু সময় নিয়ে প্রশ্ন করে,

“পেসেন্ট কেমন দেখলেন? কি অবস্থা?”

“আমি আগেই বলেছি। আমাদের হাতে কিছু নেই। তারপর বলেন আপনার কি অবস্থা?”

এটা বলেই শব্দ হেসে উঠে সাথে উচ্ছ্বাসও হেসে উঠে জবাব দেয়,

“ভালো প্রফেশনালের মতো ব্যবহার শিখেছিস দেখছি। ফরমালিটিস তাই না, ভালোই। তা বল এই নাটকে কেনো?”

“নাটক না বন্ধু কলেজের পর ওভাবে আর দেখা হলো কোথায়? তুই ব্যাস্ত ভার্সিটি আর আমি মেডিক্যাল। তা বল তোর কি খবর? দিন কাল কেমন যায়?”

“এই তো আছি। ডাক্তার দেখাচ্ছি আবারো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”

“আ্যনক্সাজায়েটি, এংগার ইস্যু?”

“হ্যা, আবারো বেড়েছে।”

উচ্ছ্বাসের মুখটা পাংশুটে দেখালো তা দেখে শব্দ উঠে বসে জিজ্ঞেস করে,

“তুই কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস? কি হয়েছে খুলে বলতো।”

উচ্ছ্বাস কিয়ৎক্ষনণ সময় নিলো। তারপর জবাব দিলো

“হু। আমি বিয়ে করেছি।”

“গ্রেট। কনগ্রেচুলেশন।”

“বাট, আমার এই সমস্যার কারণে বউ আমাকে ভয় পেতো।”

“পেতো বলতে? এখন পায় না?”

“পাবে কি করে? সে তো পালিয়েছে।”

“মানে কি?”

“ও আমাকে অনেক ভয় পেতো। আর আমি তো জানিস কেমন? রাগ উঠলে কনট্রোল করতে পারি না। তারওপরে ইনসিকিউরড ফিল হতো। তাই ওকে কোথাও যেতে দিতাম না। কারো সাথে মিশতে দিতাম না। তাই ও নিজেও আমার থেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। আর একদিন দুম করেই হঠাৎ পালিয়ে গেলো। কোথায় গেলো খুঁজেই পেলাম না। খুঁজছি এখনো! আর ভাবলাম ডাক্তারও দেখাই।”

“আচ্ছা বুঝলাম ডাক্তার কি বললো?”

“মেডিসিন চলবে। অনিয়ম করা যাবে না।”

“তাই কর তাহলে। তুই একটু কেবিনে বস। আমি বিপাশা আন্টির রুম থেকে ঘুড়ে আসি।”

উচ্ছ্বাস কোনো জবাব না দিয়ে শুধু মাথা নাড়লো। শব্দ চলে গেলো আর উচ্ছ্বাস ভাবতে লাগলো। পৃথিবী আসলেই গোল। শব্দের সাথে উচ্ছ্বাসের হোস্টেল লাইফ শুরু। কলেজ পর্যন্ত একসাথেই ছিলো। তারপর দুইজন দুইদিকে উচ্ছ্বাস ভার্সিটি আর শব্দ মেডিক্যাল। তারপর থেকেই যে যার মতো ব্যাস্ততায় ভালো যোগাযোগ ছিলো না। গতকাল হঠাৎ ই শব্দের সাথে উচ্ছ্বাসের দেখা হয়। দুজনেই অবাক হয়। আহা! জীবনটা কত অদ্ভুত। আচ্ছা এমন করে যদি একদিন হঠাৎ রোদসীর সাথে দেখা হয় কেমন হবে? রোদসী কি আবারো চলে যাবে? এসব ভেবে উচ্ছ্বাস দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে।

—–

“ডা. পেসেন্টের কি অবস্থা? উন্নতি হচ্ছে? নাকি!”

শব্দ একটা মিষ্টি নারীকণ্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকায় শব্দ। একটা উনিশ বছর বয়সী মেয়ে উত্তরের আশা উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে শব্দের মুখের দিকে। শব্দ আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি একটা চেয়ারে বসে আছে সাথে একটি ছেলে। বৃষ্টির বর হয়তো। শুনেছে উচ্ছ্বাসের সৎ বোনের বিয়ে হয়েছে। শব্দ চোখ ফিরিয়ে আবারো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কে আপনি? কার আপডেট জানতে চাইছেন?”

প্রচন্ড কাঠকাঠ শোনালো জবাবটা৷ মেয়েটিও এমন আশা করে নি তবে সে শুনেছে যে ডাক্তারদের ব্যবহার কেমন রুড রুড হয় ক্যাটক্যাটে হয়। এখন দেখেও নিলো। তবুও মেয়েটি নিজেকে সামলে শব্দের চোখে চোখ রেখে বলে,

“আমি ঊষা। আর যার কেবিন থেকে চেকআপ করে বের হলেন। আমি উনার কথা জিজ্ঞেস করলাম সে আমার চাচী হয়।”

“ওহহো এবার চিনেছি। তুমি তাহলে উচ্ছ্বাসের কাজিন। এম আই রাইট৷ মি.. হোটএবার। উনার কোনো উন্নতি দেখছি না। এবার সরো আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।”

ঊষা যাহাপারণই অবাক হয়ে তাকালো শব্দের দিকে তাকে কিভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে লোকটা। এ নাকি দায়িত্বশীল ডক্টর। ঊষা মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে শব্দকে যাবার জায়গা করে দেয়। শব্দ প্রস্থান করে আর ঊষা তার অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে তা দেখতে থাকে। শব্দ চলে গেলে চোখে ঘুড়িরে অদূরে বেঞ্চে বসে থাকা বৃষ্টির দিকে তাকায়। একদিনেই মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। ঊষা হেঁটে বৃষ্টির কাছে যে দাঁড়ালো। বৃষ্টিও মুখ তুলে ঊষার দিকে তাকালো। কেমন নির্জীব ঠেকলো চাহনীটা। ঊষার বুক মুচরে উঠলো। ঊষা বৃষ্টির পাশে বসলো। বৃষ্টি এতোক্ষণে জিজ্ঞেস করলো,

“ডাক্তার কি বললো?”

শব্দোর কথা শুনে ঊষা মুখ বকালো। এতো বদ ঠিক মতো আপডেটই জানালো না। বৃষ্টি ঊষাকে ধাক্কা দিয়ে আবারো একই কথা জিজ্ঞেস করলো,

“কি বলছিনা কেন আপু?”

“অবস্থা আগের মতোই! উন্নতি হচ্ছে না।”

উত্তরে এমন কিছুই আসবে জানতো তবুও মুখে অন্ধকার নামলো বৃষ্টির তা দেখে খারাপ লাগলো ঊষার। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির হাতের উপর রাখলো ভরসা দেয়ার চেষ্টা করলো। হতাশানিঃশ্বাস ত্যাগ করে ভাবলো। ভাবী যাবার পর থেকেই একটা না একটা সমস্যা লেগেই রয়েছে। কে জানো কোথায় আছে। ভালো আছল না মন্দ। এসব ভাবতে ভাবতেই মুখ ভরে নিশ্বাস টেনে নিলো। তাকে শান্ত থাকতে হবে। বৃষ্টিকে সামলানোর জন্য এখন সে ছাড়া কেউ নেই তাই তাকে শান্ত থাকতেই হবে।

——-

রোদসী ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলো। সন্ধ্যায় ইদানীং মেজাজ খিঁচিয়ে থাকে। অল্পতেই অনেক ক্লান্ত লাগে। ঘুম আসে, কিছু খেতে ইচ্ছে হয় না। আর জোর করে খেয়েই কেমন বমি বমি পায়। কি এক মুসিবতে পড়লো রোদসী। একবার ভেবেছিলো শব্দকে বলবে কিন্তু শব্দ চিন্তা করবে বিধায় বলা হয় নি। এমনই সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। রোদসী আশেপাশে মিলি খালাকে ডাকাডাকি করার পরেও কোনো সাড়া পায় না। এদিকে যে ডোরবেল বাজাচ্ছে তারও বোধহয় ধৈর্য অনেক কম। একটু দেড়িও সে মানতে নারাজ। এতে রোদসীর মেজাজ আরো খিঁচিয়ে উঠে। নিজেই কষ্ট করে ওঠে বিরবির করে বকতে বকতে দারজা খুলে একটা কিছু বলতে যাবে। দড়জার ওপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটা কে দেখে থেমে যায় রোদসী। মুখ থেকে ছিটকে বের হলো,

“আপনি?”

——–

দিন যায় দিন আসে কিভাবে কিভাবে কেটে গেলো অনেক গুলো দিন। রোদসী পালানোর পর রোদসী এবং উচ্ছ্বাসদের বাড়ির কারোই শসন্তিতে ঘুম উবে গেছে। সবার একটাই চিন্তা রোদসী কোথায়? আদোও বেচেঁ আছে তো? থাকলেও কোথায় আছে। উচ্ছ্বাসও পাগল প্রায় তবুও এখন নিয়মিত সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে কাউন্সিলিং করছে। বদলেছে রুহি আর উদয়ের সম্পর্কোও তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাতের সম্পর্কের শুরুটা বেশি খারাপও যায়নি। রুহির পা ভাঙার পর হঠাৎ উদয় বাড়ির সামনে আসলে তা রুহি চাচার নজরবন্ধী হয় তারপর সরাসরি রুহির বাবার থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং রুহি জানায় তারা একে ওপরে ভালোবাসে এতে রুহির বাবাও দ্বিমত পোষণ না করে রুহিকে বলে তাদেরকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে। রুহি যখন উদয়কে এ বিষয় জানায় তখন ব্যপারটা এমন হলো যে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। পরে তারা কথাবার্তা ঠিক করে প্রস্তাব রাখে আগে আকদ করবে তারপর বৃষ্টির সাথে অনুষ্ঠান করা হবে। কিন্তু বেঁকে বসে রুহি সে জানায় যতদিন না রোদসী খুঁজে পাওয়া যাবে সে বিয়ের পিড়িতে বসবে না।ব্যাস সবার চিন্তা এখন থেকে আরো জোড়ালো হলো সাথে সবার ঘুমও কার্পুরেট ন্যায় উবে যায়। তার ওপরে মারার ঘা হয়ে উদয় জানতে পারে রোদসী নিজে থেকে পালায় নি তাকে ফুসলিয়েছে বিপাশা বেগম। কিন্তু রোদসী কোথায় আছে কেউ জানে না। এর ওপরে হঠাৎ মৃতদশা বিপাশা বেগমের এহেন অসুস্থতায় সবার মাথা থেকে রোদসীর ব্যাপারটা বেড়িয়েই গেছে। এখন সবার দোয়া আগে বিপাশা বেগম সুস্থ হয়ে উঠুক তারপর নাহয় আবারো রোদসীকে খোঁজার দায়িত্বে সবাই নেমে পড়বে।

চলবে……

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়। ছোটো হবার কারণে দুঃখিত। বাসায় কারেন্ট নেই। তাই ফোনে চার্জ অনেক কম ছিলো। তাই ছোটো করে লিখে পোস্টালাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here