#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৮
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
-“ডা. আসবো?”
শব্দ দরজার দিকে তাকায়। ঊষা হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। শব্দ মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিয়ে আবারো ফাইল দেখতে শুরু করে। ঊষা এসে দাড়ায়। শব্দ আবার তার মুখের দিকে তাকায়। একটা হালকা গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ পড়ে আছে। কি মিষ্টি দেখতে লাগছে মেয়েটাকে ঠিক যেনো ছোট্টো একটা পুতুল। শব্দ মাথা নাড়ায় কি সব আজেবাজে ভাবছে। শব্দ ঊষাকে জিজ্ঞেস করলো বসছো না কেন? উষা বোধহয় এই কথাটারই অপেক্ষা করছিলো। বলার সাথে সাথেই টুক করে বসে শব্দের দিকে গাঢ়দৃষ্টিতে তাকালো। ঊষার এভাবে তাকানো দেখে শব্দ থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে আবারো ফাইলে রাখে তারপর জিজ্ঞেস করে,
“হঠাৎ আমার কেবিনে কি? তাও এমন প্রেসেন্ট দেখার সময়?”
শব্দ চোখ ফাইলে রেখেই ঊষাকে প্রশ্নটা করলো। ঊষা এবার বিরক্ত বোধ করলো। এই মনের ডাক্তার কেমন জেরা করছে এর ডাক্তার না হয়ে উকিল হওয়া উচিত ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে মুখ ভেঙচালো। ঊষা কথার উত্তর দিচ্ছে না দেখে এবার শব্দ চোখ তুলে চাইলো। ঊষা শব্দের দিকেই তাকিয়ে ছিলো শব্দ হঠাৎ এভাবে তাকাতেই বেচারি যায় যায় অবস্থা। তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া না করে তাকিয়েই রইলো। ঊষাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শব্দ বিব্রতবোধ করলো। তবুও আবারো প্রশ্ন করলো,
“কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায়?”
ঊষা মাথা নাড়ায় তারপর জবাব দেয়,
“আমিই প্রেসেন্ট।”
শব্দ মনে মনে চমকায়। এই মেয়ে কি বলছে। কি হয়েছে এই মেয়ের। সুস্থই তো দেখা যাচ্ছে। তবুও কথা না বাড়িয়ে শব্দ বলে,
“সমস্যা কি?”
বলবো?
বলো?
ঊষা সময় নিয়ে লাজুক হাসে। ওকে এমন হাসতে দেখে শব্দ মনে মনে ভরকায়। পরিচয়ের এত মাসেও ঊষাকে আজকের মতো লাগেনি। আজকে কেমন সদ্য কিশোরীর ন্যায় লাগছে। ঊষা শব্দের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনি তো হার্টের ডক্টর তাই না?”
কি আজগুবি প্রশ্ন করছে এই মেয়ে।ধমকাতে নিয়েও ধমকায় না। মেয়েটা কেমন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। শব্দ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝালো। সে হার্টের ডক্টর-ই। এবার ঊষা সাহস পেলো এমন করে বললো,
“বুঝলেন ডক্টর, আমার হৃৎপিন্ডটা কেমন যেন সময় অসময়ে কেমন ধরাস ধরাস করে। মাঝে মাঝে মনে হয় মরেই যাবো। আর, আর একটা ছেলে।”
এবার ভয় পেলো একটু ঊষা। একটু শব্দের কাছাকাছি এসে বলে, “আগে বলেন ভাইয়াদের বলবেন না? ওরা জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে।” ঊষার মুখভঙ্গি দেখছিলো শব্দ একটা মেয়ে হঠাৎ করেই কেমন বাচ্চামি করছে। এসব ভেবেই মনে মনে হাসে। তারপর মুখে সিরিয়াস ভাব এনে বলে,
“আপনার সমস্যা গুলো বলুন। সমস্যা না জানলে সমধান করবো কি করে। আর উচ্ছ্বাস, উদয়ের কথা আসছে কেনো? এখন আপনি আমার প্রেসেন্ট তাই নির্দ্বিধায় বলুন। আপনার সমস্যা কি?”
ঊষা এবার মিনমিন করে বলে উঠলো,
“সমস্যাই তো আপনি ডক্টর শব্দ।”
তবে শব্দ তা শুনতে পায় না। তাই সে বলে একটু জোরে বলুন। তাই ঊষা একটু নড়েচড়ে বসে মুখটা সিরিয়াস করে বলে,
“আমার মনে হয় আমি আর বেশিদিন ঠিক থাকবো না ডক্টর। আমার মনে হয় আমি আমার মাঝেই নেই। একটা ছেলে। হ্যাঁ একটা ছেলে আমাকে পাগলে করে ফেলেছে ডক্টর। আমি উঠতে বসতে শুধু তাকেই দেখতে পাই আর তার কথা মনে পড়লেই মনটা কেমন ধরাস ধরাস করে উঠে। আমার মনে হয় কি আমি ওই ছেলেকে ভালোবাসি। কিন্তু সমস্যা হলো এটা ওই ছেলেকে বলতে আমার ভয় করছে। সে যদি ভাইয়াদের বলে দেয়।”
এটুকু বলেই ঊষা থামে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে শব্দের দিকে তাকায়। কিন্তু বিপরীত পাশে শব্দ প্রতিক্রিয়াহীন। ঊষা অবাক হয়। শব্দ কিছুক্ষণ ঊষাকে পরক্ষ করে একটা ফাইল নিয়ে কিছু একটা লিখে তারপর ওটা ঊষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“বুঝিছে, তবে আপনি যে রোগে আক্রান্ত তা হলো মনোরোগ। বা এগুলো টিনেজার দের বেশি হয়। পড়ালেখায় মন দিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এগুলো মন থেকে বের করে ক্যারিয়ারে সময় দিন দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। আর প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধ গুলো দিয়েছি সেগুলো সময় মতো খাবেন। এবার আপনি আসুন।”
ঊষা অবাক হয়। এভাবে লোকটা তার অনুভূতির কোনো দাম দিলো না? আচ্ছা এই ছয়মাস? এই ছয় মাসে কি একটুও ঊষাকে বুঝতে পারে নি? নাকি সে তার অনুভূতি বোঝাতে অক্ষম। ঊষার চোখ ফেটে কান্না আসে। তবুও নিজেকে সামলে বাহিরে চলে আসে। ঊষা কেবিন থেকে বের হতেই শব্দ হাফ ছাড়ে। মেয়েটা নিতান্ত্যই বাচ্চা একটা মেয়ে। তাও তাকে নিয়ে পাগলামি করছে। এ না বোঝার মতো কিছু নেই। তবে শব্দ ঊষাকে আশকারা দিতে চায় না। জীবন যেমন চলছে তেমন চলুক। এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে ভাবে তার মতো একটা এতিম, ছন্নছাড়া একটা মানুষের জন্যও কেউ এভাবে পাগলামি করতে পারে। শব্দ তাচ্ছিল্য হাসে।
—–
রোদসীর প্রেগ্ন্যাসির প্রায় সাত মাস হয়ে গেছে। শব্দ ড্রইংরুমে বসে এগুলো ভাবছিলো আর রোদসীকে দেখছিলো। আচাড় খাচ্ছে বসে বসে। মেয়েটা কেমন গুলুমুলু হয়ে গেছে আগের থেকে। পেটটাও আগের থেকে ভালোই ফুলেছে। এই খানের একটা বাবু আছে এইসব ভাবতে ভাবতেই শব্দ হাসি আসলে। সে নিজেই ডক্টর হয়েও এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা তার মাথায় আসছে না জানি তাবাসসুমের মাথায় সারাদিন কি কি আশে। সে একটু সময় নিয়ে রোদসীকে ডাকে,
তাবাসসুম?
রোদসী মন দিয়ে আচাড় খাচ্ছিলো। শব্দের ডাকে নাক মুখ কুঁচকে শব্দের দিকে তাকায়। এতে শব্দের আরো হাসি পায় তবুও নিজেকে সামলে বলে,
জানিস তোকে একটা কার্টুনের মতো লাগছে। লাইক গুলুমুল হয়েছিস তো তাই দেখ গাল গুলো কেমন ফুলে গেছে। এইসব বলেই শব্দ হেসে উঠে। রোদসী রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই শব্দ ফোনটা যান্ত্রিক আওয়াজে বেজে ওঠে। শব্দ হাত দেখিয়ে থামতে বলে রোদসীকে। উচ্ছ্বাস কল দিয়েছে। অসময়ে উচ্ছ্বাসের কল পেয়ে অবাক হয়। রোদসীকে কিছু না বলে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।
রিসিভ করতেই উচ্ছ্বাসের গম্ভীর কন্ঠ শোনা যায়।
তোর সাথে কিছু কথা আছে। আমি তোর বাসায় আসতে চাচ্ছি। ঠিকানাটা পাঠিয়ে দে।
শব্দকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে মুখের ওপরেই উচ্ছ্বাস কল কেটে দেয়। শব্দের মুখ চিন্তিত দেখায়। হঠাৎ এভাবে উচ্ছ্বাস আসবে এদিকে আজকে তাবাসসুমকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। আজকেই চেইক-আপের ডেইট। রোদসী শব্দের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো কেমন চিন্তিত দেখালো। তাই রোদসী জিজ্ঞেস করে,
কি হয়েছে ভাইয়া? চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো তোমায়? কে কল করেছিলো? কি বললো?
শব্দ রোদসীর মুখের দিকে তাকালো কেমন উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে। তাই মাথা নাড়িয়ে বলে,
তেমন কিছু না। আমার একটা ফেন্ড কল দিয়েছিলো। ও বাসায় আসতে চাচ্ছে। ও কখনো আমার বাসায় আসেনি তাই না-ও করতে পারি না। এদিকে আজকে তোর চেইক-আপ।
রোদসী এবার চিন্তা মুক্ত হয়। ভেবেছিলো কি না কি হয়েছে। রোদসী হেসে বলে,
আরে সমস্যা নেই তোমার ফ্রেন্ডকে আসতে বলো। আর সাঈফ সাহেবকে কল করে বলো আসতে। সে আমার সাথে গেলেই হয়। সমস্যার সমাধান।
শব্দ এবার হাসলো। এই কথাটা তার মাথা থেকে বেরই হয়ে গিয়েছিলো। তাই শব্দ সাঈফকে কল দিয়ে বলে যাতে রোদসীকে নিয়ে সে একটু হসপিটাল থেকে চেইক আপ করিয়ে আনে। শব্দ আজকে একটু ব্যাস্ত। সাঈফও দ্বিমত পোষণ না করে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে। রোদসীও রেডি হয়ে কেবলই নিচে নামে। সাঈফ রোদসীকে দেখে স্বচ্ছ হাসে। রোদসীও তা দেখে হাসে। লোকটা ওতোও খারাপ না। শুধু হঠাৎ করেই প্রেগ্ন্যাসির খবর পেয়ে পাগলামি করেছিলো। তার মনে হয় মনেই ছিলো না যে প্রেগ্ন্যাসির সময় ডিভোর্স হয় না। আর যদি রোদসী উচ্ছ্বাসের কাছে ডিভোর্স লেটার পাঠায় উচ্ছ্বাস রোদসীকে বা সাঈফকে কি করবে তা রোদসীর ভাবনার বাহিরে। রোদসী এসব ভাবতে ভাবতে সাঈফ আর শব্দের কাছে এসে দাঁড়ালো। তারা বিদায় নিয়ে বের হতে যাবে তখনই কলিং বেলটা বেজে ওঠে। রোদসী আর সাঈফ প্রশ্নবোধক চাহনী নিয়ে শব্দের দিকে তাকায় আর শব্দ দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।