#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:২০
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
“চায়ছো কি তুমি?”
ঊষার হাত শক্ত করে ধরে শব্দ জানতে চাইলো। ঊষা ছলছল চোখে বলে,
“আপনাকে!”
“পাগল হয়ে গেছো তুমি ঊষা? কি বলছো? ঠিক আছো তুমি?”
“হ্যাঁ। পাগল হয়ে গেছি। আপনি বোঝেন না? আর কত নিচে নামাবেন আমায়? বলেন তো কি কমতি আছে আমার?”
“কমতির ব্যাপার না”
“তাহলে?”
“তোমাকে অনেক বার বুঝিয়েছি ঊষা আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু। আর তুমি যে পাগলামি করছো তা অহেতুক।”
“আপনার কাছে আমার ভালোবাসা অহেতুক?”
“এইসব কথা বলতেই এখানে এসেছো?”
“ভালোবাসার কথা বলতে মানা নেই। বলতে পারেন এসব বলতেই এখানে এসেছি।”
শব্দ আশেপাশে থাকায়। হসপিটালের বেশিরভাগ মানুষ তাদের দিকে বাঁকাচোখে তাকিয়ে আছে। তাই শব্দ ঊষার হাতটা ছেড়ে দিলো। মেয়েটা রোজ আসে হসপিটালে আর এসেই এমন পাগলামি করে। যেমন ভাই তার তেমন বোন। শব্দ ভেবে পায় না তার জন্য এই মেয়ে এতো পাগল কনো? শব্দ এবার নরমাল হবার চেষ্টা করে বলে,
“বাসায় যাও আর এখানে কোনো সীন ক্রিয়েট করো না সবাই দেখছে। আর আমারও পর পর তিনটি অপারেশন আছে।”
শব্দ এতটুকু বলেই স্থান ত্যাগ করে
আর ঊষা এবারো আগের মতো হতাশ হয়৷ শব্দের জন্য ঠিক এই ছয় থেকে সাত মাস ধরে এমনই পাগলামি করে আসছে। ছেলের মন গলছেই না। এই ছেলে কি দিয়ে তৈরি ঊষার বুঝে আসে না। এবারও হতাশ হয়ে ঊষা হসপিটাল থেকে বের হতেই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খায়। ঊষা নিজেকে সামলে ছেলেটাকে “সরি” বলে। ছেলেটিও কোনো মতে নিজে সামলে বলে,
“আ’ম সরি মিস। আসলে একটু পরেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে হবে। তাই তাড়ায় ছিলাম।”
ঊষা এবার ছেলেটির দিকে ঠিক মতো পর্যবেক্ষণ করে দেখে পাশেই ব্যাচে লিখা ড.সাঈফ আকন। ঊষা বুঝলো এই ছেলে তাহলে ডক্টর। ঊষা বলে,
“আসলে আমিও দুঃখিত। আমি অন্যমনষ্ক ছিলাম তাই আপনাকেও খেয়াল করি নি।”
সাঈফ হেসে বলে, আচ্ছা সমস্যা নেই। এবার আমি আসি। বলেই সাঈফ সেখালন থেকে বিদায় নেয়। ঊষাও মাথা নাড়িয়ে হেসে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে।
—–
আবিদ আর বৃষ্টি এসেছে বিয়ের শপিং করতে সাথে রুহি এবং উদয়ও এসেছে। ঊষাকেও জোড় করে ধরে নিয়ে আসে বৃষ্টি এতে ঊষা যাহাপরানই বিরক্ত ঊষা। সে আছে তার চিন্তায় আর এদিকে এরা আছে নিজেদের বিয়ের খুশিতে। সবাই সেই কখন থেকে বিয়ের জন্য শাড়ি লেহেঙ্গা দেখেই চলছে এতে ঊষার বিরক্তির শেষ নেই। ঊষা বিরক্ত নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই তার চোখে পড়ে একটা সবুজ শাড়ির ওপর। চোখটা মনে হচ্ছে সরছেই না। ঊষাও মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় উঠে এসে শাড়ি দেখে। তারপর কি যেনো মনে কটে শাড়িটা নিয়ে ট্রায়াল রুমে যায়। শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছিলো। আচ্ছা তাকে শব্দ বারবার কেনো রিজেক্ট করে দেয়? সে কি সুন্দর না? তারপর কি মনে করে চুলটা খুলে দেয়। টিপ থাকলে ভালোই হতো। কিছুক্ষণ নিজেকে অবলোকন করে বাহিরে বের হয়ে আশে। বাহিরে আসতেই ঊষার চোখ ছানাবড়া। সে বিষ্ময়কর চোখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে তার বিশ্বাস হচ্ছে না উচ্ছ্বাস এসেছে সাথে আবার শব্দ ও? আচ্ছা সে কি দিন দুপুরে তারা দেখছে। ঊষা সামনে চোখ রেখেই হেটে আসতে থাকে। শব্দও কি নিয়ে যেনো কথা বলছে হঠাৎ তার চোখ যায়সামনের দিকে এক রমনী সবুজ রংয়ের শাড়ি পড়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। শব্দের কথা বন্ধ হয়ে যায়। সবুজ রংটা তার পছন্দ না হলেও এই রংটা মনে হচ্ছে শুধু মাত্র এই মেয়ের জন্যই তৈরি। শব্দের মনে হলো তারও ঊষার মতো মনের মধ্যে ধরাস ধরাস রোগ হয়ে যাচ্ছে। হৃয়দটা বোধহয় এবার চিঁড়ে বেড়িয়েই আসবে। শব্দ কে কথা বন্ধ করতে দেখে সবাই অবাক হয়ে শব্দ যে দিকে তাকানো সেদিকে তাকায়। ঊষা এগিয়ে এসে সামনে দাড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইচ্ছেকৃতভাবে কাশি দেয়। এতে শব্দ চোখ নামিয়ে অন্য দিকে তাকায়। ঊষা তা দেখে হেসে সবাইকে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগছে? সবাই জানায় তাকে মানিয়েছে। কিন্তু শব্দ কোনো কথা বললো না তাই ঊষার অনেক খারাপ লাগলো তবুও তা প্রকাশ করলো না। ঊষা তখনও আগ্রহী দৃষ্টি নিবন্ধন করে রেখেছিলো শব্দের দিকে কিন্তু শব্দ তার আশায় পানি ফেলে অন্যদিকে চলে যায় আর ঊষা এবারও হতাশ হয়। কি করলে যে এই ছেলের মন গলবে কে জানে!
——
তাদের শপিং করতে করতে রাত হয়ে যায় তাই বাকিরা সবাই প্লান করে বাহিরে খাবে কিন্তু শব্দ মানতে নারাজ তার একটাই কথা তার বোন অপেক্ষা করছে। শেষে উচ্ছ্বাস মুখ খোলে,
“তুই আমাদের সাথে ডিনার করে যা। আর তোর বোনের জন্য নিয়ে যা। যতটুকু শুনছি তোর বোন প্রেগন্যান্ট। রাইট?”
সবাই এক কথা বললে শব্দ আর কোনো কথা পেলো না অগত্যা রাজি হলো। আর রোদসীকে কল করে বললো, সে বাহিরে খাবে আর আশার সময় নিয়ে আসবে। রোদসীও মেনে নিলো।
খাবার সময় শব্দ বসেছিলো উচ্ছ্বাসের পাশে তবে ঊষা বসে শব্দর ঠিক বিপরীত পাশে শব্দের মুখোমুখি। ঊষাকে দেখে মনে হচ্ছে খাবার খাচ্ছে কম চোখ দিয়ে শব্দকে গিলছে বেশি। শব্দ হঠাৎ করে এমন লুক দেখে কেশে উঠে। সবাই অবাক হয় আর ঊষা তারতারি মুখের সামনে পানি ধরে। অগত্যা সেই পানি খেতে হলো। তারপর ঊষা বেহায়ার মতো তাকিয়েই আছে। এতে শব্দের অস্বস্থি হয়। শব্দ চোখ রাঙিয়ে তাকালে ঊষা চোখ টিপ দেয়। এতে শব্দ আরো অবাক হয়। একরত্তির মেয়ে দেখো তার বেহায়াপানা। বড় ভাইয়ের বন্ধুকে লাইন মারছে। শব্দ আর কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মন দেয়। আর ঊষা মিটিমিটি হাসে। এগুলো সব এতোক্ষণ বৃষ্টি দেখছিলো। বেচারি এখনো বোকা বোকা চোখে শব্দ আর ঊষাকে দেখে যাচ্ছে। সে সবার মুখ দেখে আবিদের দিকে তাকালো। আবিদ জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেন?
সবাই বৃষ্টির দিকে তাকালে। বৃষ্টি থতমত মুখ নিয়ে জবাব করে,
“এই তো খাচ্ছি।”
তারপর তারা টুকিটাকি কথা বলে খাওয়া শেষ করে সেখানে থেকে বেড়িয়ে পড়লো।
——
শব্দের বাসায় ফিরতে আজকে ভালোই দেরি হয়েছে। নিজের কাছে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাসায় ঢোকে। বাসায় আসার পর দেখে রোদসী এখনো সোফার বসে আছে কাছে যেয়ে বোঝে রোদসী ওখানেই ঘুমিয়ে গেছে ব্যাপারটা শব্দের পছন্দ হলো না। এই সময় এভাবে এখানে ঘুমানো না ভালো নয়। যদি পড়ে যায়? শব্দ রোদসীকে আলতো গলায় ডাকলো,
“তাবাসসুম। এই তাবাসসুম?”
রোদসী নড়েচড়ে উঠলো। আসতে আসতে পেটে হাতদিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কে ডাকছে। চোখ খুলে দেখলো শব্দ তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদসী অল্প নড়ে উঠে বসলো। তারপর হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“এসেছো কখন?”
“মাত্র। তুই এখানে ঘুমাচ্ছিস কেনো?”
“আরে বোঝোই তো এই সময় ঘুম হয় না। তাই এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিভাবে যে চোখ লেগে আসলো বুঝতে পারি নি। আমাকে একটু ধরো আমার ঘরে যাবো।”
“খেয়েছিস?”
রোদসী মাথা নাড়িয়ে বোঝালো “হ্যাঁ। খেয়েছে।”
শব্দ রোদসী ধরে নিজের ঘরে যেতে সাহায্য করছে মাত্রই আটমাসে পড়লো। মেয়েটা এখনই ভালোমতো নড়াচড়া করতে পারে না। রোদসীকে ঘরে দিয়ে এসে। যা খাবার এনেছিলো সব ফ্রীজে রেখে নিজের রুমে এসে একেবারে গোসল করে এসে বারান্দায় দাঁড়ায়। শুধু একটা ট্রাউজার পরে উন্মুক্ত শরীর বারান্দায় দাড়িয়ে আছে শব্দ এই ঠান্ডা বাতাসটা ভালো লাগছে শব্দের কাছে। হঠাৎ করেই শব্দের সেই সবুজ শাড়ি পড়া রমনীর কথা মনে পড়লো। কই এতো দিন তো মনে পড়েনি? হঠাৎ করেই এমন হচ্ছে কেনো? শব্দ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করে। হচ্ছে না! চোখ বন্ধ করলে আবারো সেই সবুজ শাড়ি পড়া রমনীকেই দেখছে। শব্দ চোখ খোলে বিধ্বস্ত মন নিয়ে আশেপাশে চায়। তারপর রুমে যেয়ে সিগারেট আনে। সাধারণ সিগারেট খাওয়া হয় না। তবে থাকে যখন এমন বিধ্বস্ত লাগে তখনই খায়। সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া উড়ায় নিকশ কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে। শব্দের কাছে ঘুরে ফিরে একটা প্রশ্নই আসে তার এমন বিচ্ছিন্ন লাগে কেনো? আচ্ছা তার একটা পরিবার থাকলে কি হতো? আর তার ছোটো বোন? এতো দিনে বোধহয় তাকেও বিয়ে দিতো তারপর? এমন মামা হবার খবর পেতো! আসলে জীবন কখনোই একই নিয়মে চলে না। শব্দ কখনোই ভাবিনি। হঠাৎ করেই এমন সুন্দর পরিবারটা নিঃশেষ হয়ে যাবে। সিগারেট শেষ হলে আবারো ধরায়। আজকে রাতে আর শব্দের চোখে ঘুম ধরা দেয় না। সারারাত বারান্দায় সিগারেট খেয়েই কাটিয়ে দেয়। ফজরের আজান কানে আসলে আবারো গোসল করে নামাজ পড়ে ঘুৃমানো চেষ্টা করে। এবারো ফল শূন্য। সবদিক থেকে কেমন একা একা লাগছে। উঠে বসে তারপর বাহিরে তাকিয়ে দেখে এখনো ভোরের আলো ফুটেনি। সময় নিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থেকে রেডি হয়ে হাটতে বাহিরে চলে যায়।
চলবে।
ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।
গঠনমূলক কমেন্ট করলে অনেক খুশি হই। গল্পের সকল আপডেট এবং আড্ডা দেয়ার জন্য আমার একটা ছোট্টো গ্রুপ আছে। আশা করি সবাই এখনই যুক্ত হবেন। ধন্যবাদ🤍