ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:২২ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
202

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:২২
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আজকে রুহি-উদয়, বৃষ্টি-আবিদের বিয়ের রিসিপশন। সবাই নিজেকে সুন্দর সাজে মুরিয়ে নিয়েছে। বৃষ্টি পড়েছে ল্যাভেন্ডার কালারের একটা শাড়ি। আর আবিদ কালো স্যুট। এদিকে রুহিকেও কম লাগছে না। ম্যজেন্ডার কালার শাড়ি। আর উদয় পড়েছে গ্রে স্যুট। সবাই বার বার দুই কনে আর বরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলছে, একদম মেইড ফর ইচ আদার। বাড়ির সবাইও খুশি। ঊষা ওদের দেখছিলো আর বন্ধবীদের সাথে আড্ডা মারছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে শব্দ এবং উচ্ছ্বাস এসে উপস্থিত হয়। ওরা আসতেই বান্ধবীদের মধ্যে গুঞ্জন আরো ভাড়ি পড়ে। শব্দ উচ্ছ্বাসের সাথে কথা বলছে আর একদিক ওদিক তাকিয়ে ঊষাকে খুঁজছে। তা দেখে হাসাহাসি রোল তো আছেই আর ঊষার বান্ধবীরা এটা ওটা বলো ঊষাকে লজ্জা দিতে ভুলছে না। ওসব কথা শুনে ঊষার গাল,কান গরম হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। সেখানে আর টিকতে না পেড়ে ঊষা উঠে দাড়ালো। সবাই ঊষা কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই ঊষা বলে বৃষ্টি আর রুহির ওখানে যাবে তা শুনে সবাই উঠে দাড়িয়ে দুই বউয়ের কাছে চলে আসে। এখানে এসেও তাদের মুখ মনে হচ্ছে আরো লাগাম ছাড়া হয়ে গেলো। ওদের মধ্যে রুহির এক বান্ধবী জিজ্ঞেস করে বসলো,

“হ্যাঁ রে রুহি ফার্স্ট নাইটের এক্সপেরিয়েন্স কেমন?”

ছোটো ননদদের সামনে এমন কথায় বেচারি যায় যায় অবস্থা। এদিকে ওর অবস্থা দেখে সবাই হেসে গড়াগড়ি খেয়ে, বৃষ্টি কেও একই প্রশ্ন করে। আরেক মেয়ে বলে উঠে,

“ওরে কি জিজ্ঞেস করছিস? ওর ফার্স্ট নাইট তো কবেই গেছে। তাও বল কালকে কেমন গেলো।”

ওদের এমন বেফাঁস কথাবার্তায় রুহি আর বৃষ্টির জান যায় যায় অবস্থা। আরেক বান্ধবী তো ডাইরেক্ট রুহিকে জিজ্ঞেস করেই ফেলে,

“প্রটেকশন ছিলো তো? এই মেডিসিন নিয়েছিস তো।”

এরি মধ্যে উদয় আসে। এসব কথা কানে আসতেই দাড়িয়ে পরে পিছনে। এহেন প্রশ্ন শুনে বেচারার বুঝে এখানে অবস্থা আরো খারাপ।তাই আস্তে করে কেটে পড়ে। কোনো মতে ওখান থেকে দূরে এসে চোখ বড় বড় করে স্টেজের দিকে তাকিয়ে থাকে উদয়। ও ভেবেছিলো এইসব কথা শুধুমাত্র ছেলেদের মধ্যেই হয়। এখন দেখছে মেয়েদের মধ্যেও এরমই অবস্থা৷ নিজের বন্ধুদের কথা মনে করতেই উদয়ে বন্ধুরা,

“কিরে?” বলে উদয়ের বন্ধুরা উদয়কে সবাই একসাথে জড়িয়ে ধরলো। তারপর উদয়কে ছেড়ে বলে,

“বাহ। তাহলে বিয়েও করে ফেললি।”

তারপর একটা প্যাকেট এগিয়ে এনে উদয়ের হাতে ধরিয়ে বলে,

” এই নে তোর বিয়ের গিফট। পুরো বছরেরটা আছে তোর আর কষ্ট করে কিনতে হবে না।”

বলেই চোখ টিপে ওরা হাসাহাসি শুরু করলো। উদয়ের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না এরা কি নিয়ে কথা বলছে। আর প্যাকেটেই বা কি দিয়েছে। কিছু বলার আগেই আবিদ, উচ্ছ্বাস আর শব্দ এসে উদয়ের কাছে এসে দাড়াঁলো। ওরা আসতেই এই টপিক এখানেই বন্ধ হয়।

——

“ড.মুনীব শব্দ আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। তবে আপনার সেখানে যেতেই হবে। কিছু করার নেই।”

“কিন্তু আমার সমস্যাটা বুঝুন। বাসায় আমার বোন আছে। সে এখন প্রেগন্যান্ট। ওর ডেলিভারির ডেইট চলছে। এখানে আমার প্রয়োজন পড়লে? এমনিতেই ওর পেইন কখন উঠে তার ঠিক নেই তারওপরে ফার্স্ট বেবি।”

“দেখুন এটা একটা পেশা। আর আপনি ডাক্তার হয়ে ডাক্তারদের নীতি ভুলে যাবে না৷ আর আমরা আপনাকে ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা করতে পারছি না।”

“আমি আমার নীতির কথা ভুলিনি। তবে এখানে আমার বোনের প্রয়োজন আমাকে বেশি পড়বে ড.আফতাব। কেনো বুঝতে পারছেন না?”

“দেখুন ড.মুনীব শব্দ, আপনার বোন প্রেগন্যান্ট তা আমরা বুঝেছি। যতদিন আপনি না ফিরছেন ততদিন তার দেখা শুনার দায়িত্ব না হয় আমরা নিলাম। আপনি যান, তিনদিনে এমন কিছুই হবে না। আপনি জাস্ট ইন্ডিয়া যাবেন অপারেশন হয়ে গেলেই চলে আসবে। ওকে।”

তুমুল বাকবিতন্ডায় একসময় হার মেনে শব্দ চুপ করে যায়। তার মাথা ফেটে যাচ্ছে রোদসীর ডেলিভারির সময় চলে এসেছে। যেকোনো সময় পেইন উঠতে পারে। এই সময় শব্দকে তার বেশি প্রয়োজন তবে এদিকে যে পেশা সে যুক্ত করেছে নিজেকল সেই পেশার নীতির বিরুদ্ধে কাজ সে করতে পারবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় রোদসীকে এসব ব্যাপার জানাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। রোদসীকে কল দেয় শব্দ,দ্বিতীয় বার রিং হতেই রোদসী কল রিসিভ করে। শব্দ বলে,

“কি করছিলি?”

“আচাড় খাচ্ছিলাম।”

“সারাদিনই এই নিয়েই থাকিস তাই না?”

রোদসী কিছু না বলে হাসে। শব্দ চুপ থেকে ওর হাসি শুনে। তারপর রোদসী সময় নিয়ে শব্দকে বলে,

“ভাইয়া কিছু বলবে?”

“বুঝলি কি করে?”

“সেটা বাদ দিয়ে বলো কি হয়েছে?”

“আমার তিনদিনের জন্য কলকাতা যেতে হবে। একটা ইমারজেন্সি কেইস এ।”

এ কথা শুনে রোদসী চুপ হয়ে যায়। শব্দ আবারো বলতে শুরু করে,

“আমি অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু হসপিটালের ম্যানেজমেন্ট কমিটি তাদের সিদ্ধান্তই অটল। কি করবো বুঝতে পারছি না।”

রোদসী মন দিয়ে সব কথা শুনে তারপর ভরসা দেয়ার মতো বলে,

“তুমি কি আমার জন্য ভয় পাচ্ছো? একা তাই! আরে চিন্তা করো না তো। আমি নিজের খেয়াল রাখবো। আর মিলি খালাতো আছেই। বেশি চিন্তা করো না। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো আর হ্যাঁ আসার সময় আমার জন্য ফুচকা নিয়ে এসো তাতেই চলবে।”

রোদসীর এমন পজেটিভ উত্তর শুনে শব্দ একটু চিন্তা মুক্ত হলেও মনে ভিতর শংকা থেকেই যায়৷ তাই কি মনে করে শব্দ সাঈফকে কল করে। সাঈফ মাত্রই অপারেশন থিয়েটার থেকে আসলো। হঠাৎ করেই শব্দের কল দেখে অবাক হয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে। শব্দ জানায় এমারজেন্সি কথা আছে হয় শব্দের কবিনে আসতে নাহলে ক্যান্টিনে দেখা করতে। সাঈফ জানায় সে ক্যান্টিনেই আসছে।

—–

শব্দে মুখোমুখি বসে সব কথা শুনছিলো সাঈফ তারপর ধীর কন্ঠে বলে,

“আপনি যে চিন্তা টা করছেন তা ভাই হিসেবে করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাবাসসুমের ডেলিভারি ডেট এখনো পনেরো দিনের মতো দেরি আছে। আর আপনি কালকে গেলে দুইদিন পরই চলে আসবেন। আমার মনে হয় না সমস্যা হবে। আর এদিকে আমি আছি তো।আমার উপর ভরসা করতে পারেন। ফ্লাইট কখন?”

“রাত তিনটের দিকে।”

“আচ্ছা। আপনি নিশ্চিতে যান। আমি এদিকটা সামলে নেবো। আর আপনদের হেল্পিংহেন্ড তো আছেই। আমি প্রতি ঘন্টায় আপডেট জানাবো। দোয়া করি এবারের অপারেশনও আপনার সাকসেসফুলি হোক এবং সহি সালামতে তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন।”

শব্দ এবার পুরোপুরি না হলেও একটু চিন্তা মুক্ত হয়। তবুও মনের মধ্যে কেমন কু গেয়েই যাচ্ছে। তা শুনে সাঈফ বলে,

“আপনি বিদেশ থেকে ডিগ্রি অর্জন করা সনামধন্য একজন ডাক্তার আর আপনি এসব কুষ্কংসার মানেন? এগুলো আপনার মনের ভীতি। এসব কিছুই না। ফি আমানিল্লাহ বলে এ যাত্রা শুরু করুন, কিছুই হবে না।”

শব্দ আর কিছু বললো না।

———

শব্দের রাতে ফ্লাইট থাকায়। সাঈফকেই শব্দকে সি অফ করতে হলো। কোনো সমস্যার কারণে ফ্লাইট ডিলে হবায় সাঈফেরও সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে ফজরের আজান দিয়ে দেয়। বাসায় এসে একটা লম্বা ঘুম দেয়। ঘুম ভাঙে তার ফোনের কর্কশ আওয়াজে। ফোন তুলে দেখে শব্দের বাসার ল্যান্ডলাইন থেকে প্রায় অনেক গুলো কল এসেছে। এটা দেখে সাঈফের কাছে কেমন যেনো লাগলো। ঘড়িতে সময় দেখে, কেবল সকাল ১১ টা মাত্র। এই সময় ওই বাসা থেকে কল আসবে তা সাঈফ আশা করে নি। সে ভেবেছিলো একে বারে বিকেলে ওই বাসায় যাবে। আর সকালেই ফোন পেয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। তার মধ্যেই তার ফোনটা আবারো যান্ত্রিক আওয়াজে বেজে ওঠে। এবারো শব্দের বাড়ির ল্যান্ডলাইন থেকেই কল এসেছে দেখে সাঈল কলটা চট করেই রিসিভ করে কানে ধরতেই, মিলিখালা কান্নারত অবস্থায় কি যেনো বলে। যা সাঈফ কিছুই বোঝে না। তাই সে বলে,

“খালা কান্না না করে কি হয়েছে তা স্পষ্ট করে বলুন।”

মিলিখালা কান্নার কারনে ঠিক মতো কথা বলতে পারছিলো না। সাঈফের হঠাৎ মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ জানান দিলো মিলিখালা শুধু শুধু কল দিয়ে কান্না করবে না। ওই বাসায় কি কোনো বিপদ হলো? তাবাসসুম! তাবাসসুমের কিছু হয় নি তো? এবার সাঈফ সিরিয়াস ভঙ্গিতে ধমকে উঠে বলে,

“খালা কান্না না করে বলুন? কি হয়েছে? তাবাসসুম! তাবাসসুম কেথায়?”

“তুবা খালা তো পইড়া গেছে। বাথরুমে গেছিলো। হের চিতকারে আমি দৌড়াইয়া গিয়া দেহি হেয় পইড়া গেছে। আমি কুনু মতো হেরে ধইরা হোয়াইয়া রাইখা শব্দ বাবারে কল দিছিলাম। হের নাম্বার বন্ধ কয়। হের ফর আম্মেরে কল দিছি কতডি। তারাতারি আহেন। আমার অনেক ভয় করতাছে। তুবা খালা কানতাছে।”

“আর আপনি আমাকে এখন জানাচ্ছেন। তাবাসসুম কেথায়? শুনুন আপনি আগে কান্না থামান৷ তারপর আপনি ওর কাছে যেয়ে ওর হাত-পা মালিশ করুন। আমি হসপিটালে কল করে দিচ্ছি এম্বুলেন্স এসে যাবে আর আমিও আসছি।”

কথা গুলো বলতে বলতেই গাড়িতে উঠে বসে সাঈফ। তার মাথা কাজ করছে না। কেনো মতে হসপিটালে কল দিয়ে শব্দের বাসার ঠিকানা দিয়ক এম্বুলেন্স যেতে বলে। আধাঘন্টার পথ আজকে মনে হচ্ছে শেষই হচ্ছে না। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি কোনো মতে ব্রেক করেই সাঈফ বাড়ির ভিতরে দৌড়ে ঢোকে। এরি মধ্যে এম্বুলেন্সও এসে পড়ে। রোদসী কে স্ট্রেচারে করে এম্বুলেন্সে উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হয়। সাঈফ রোদসী হাত ধরে, রোদসী হাতটা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে। সাঈফের মন কেমন করে উঠলো। এদিকে মিলিখালাও কান্না করতে যায় যায় অবস্থা। রোদসী নিয়ে যাওয়া হলে সাঈফ নিজে গাড়িতে যেয়ে বসে। বারবারই রোদসীর মুখটা মনে পড়ছে সাঈফের। রোদসীর শরীরটা কেমন নিস্তেজ লাগছিলো। এসব ভাবতেই সাঈফের শরীরটা কেমন ঝিমঝিমেয়ে উঠলো। শরীরটা ছেড়ে দিতে চাইছে তবুও গাড়ি স্টার্ট দিলো। যাত্রা এখন হসপিটালের উদ্দেশ্য।

#চলবে…..

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।

(বাহিরের অবস্থা ভালো না। ফোনে চার্জ ছিলো না। কারেন্ট আসা মাত্রই ফোন চার্জে লাহিয়ে লিখলাম। তারমাধ্যে বারবার কারেন্ট যাচ্ছিলো। তাই ছোটো করে লিখলাম। আপনাদের অপেক্ষা করলাম না। গল্প ছোটো হওয়াতে কেউ বকা দিয়েন না। ভালোবাসা অবিরাম। ধন্যবাদ 💜)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here