ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:২৩ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
179

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:২৩
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রোদসীর অবস্থা বিবেচনা করে রোদসীকে সি সেকশনে নেয়া হয়েছে। সাঈফ শব্দকে একটু পর পরই কল দিচ্ছে তবে কোনো কনট্যাক্ট করতে পারছে না। কিছুক্ষণ পরেই অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন নার্স এসে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনাদের মধ্যে মিসেস মাহাদীর বাড়ির লোক কে?”

সাঈফ এগিয়ে এসে বললো,

“আমি। আমাকে বলুন?”

“প্রেসেন্টের অবস্থা ভালো নয়। প্রচুর ব্লা*ড গিয়েছে। ব্লা*ডের ব্যবস্থা করুন এবং রিসিপশনের মেয়েটিকে যেয়ে বলবেন আপনাকে ড.প্রিয়ন্তী পাঠিয়েছে।”

সাঈফের বুঝতে সময় লাগেনি কেনো তাকে রিসিপশনে যেতে বলেছে। নিজেকে কোনো মতে টেনে হসপিটালের রিসিপশন ডেস্ক পর্যন্ত যেতে সাঈফের হাত একটা বন্ড পেপার ধরিয়ে দেয়া হয়। সাঈফের মনে হচ্ছে সে তাবাসসুমের খেয়াল রাখতে পারেনি। আর না শব্দকে দেয়া কথা রাখতে পেরেছে। সাঈফ কলমটা ধরলো। এই সময়টা ডাক্তারি পেশায় থাকতে সে অনেক দেখেছে। আজকের এই সময়টা যে তার জীবনেও আসবে এবং নিজে সাক্ষী থাকবে সে কখনোই কল্পনা করেনি। নিজেকে এই জায়গায় দেখে নিজেকে সে আর শক্ত রাখতে পারছে না। কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটায় সাইন করে। তারপর জিজ্ঞেস করে,

“তাবাসসুমের র*ক্তের গ্রুপ?”

“AB+।”

“আমার ও সেম গ্রুপ, আমি দিতে পারবো?”

মেয়েটা সাঈফের দিকে তাকালো। তারপর বললো,

“কমপক্ষে ৩ ব্যাগ ব্লা*ড লাগবে। আপনি আপাতত ১ ব্যাগ র*ক্ত দিন। বাহিরেও ইমার্জেন্সিতে বলে ব্যবস্থা করে রাখুন। যে কোনো সময় লাগতে পারে।”

সাঈফ মেয়েটির কথা শুনে হসপিটালের ব্লা*ড ব্যাংকে কল দিয়ে ওখান থেকে ব্লা*ড পাঠাতে বলে নিজেও চলে যায়। ব্লা*ড ডোনেট করে সে এসে অপারেশন থিয়েটারে সামনে দাড়ায়।

———

“মিসেস মাহাদীর বাড়ির লোক কে আছেন?”

সাঈফ এগিয়ে গেলো। তাকে জানালো হলো তাদের মেয়ে বেবি হয়েছে। তবে বেবির অবস্থাও ভালো না। তাই বেবিকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এবং প্রেশেন্টের অবস্থাও শংকাজনক। তাই এখন প্রে করা ছাড়া ডক্টরদের হাতে কিছুই নেই।

রাতের দিকে সাঈফ শব্দের সাথে কানেক্টেড হতে পারে। এবং বলে যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে ফিরতে। শব্দ কারণ জিজ্ঞেস করলে সত্যিটা বলতে সাহস হয় না সাঈফের তাই ব্যাপারটা চাপিয়ে রাখতে চাইলেও শব্দ জিজ্ঞেস করে,

“তাবাসসুম ঠিক আছে?”

সাঈফ উত্তর দিতে পারে না। কি উত্তর দিবে?যে সে তাবাসসুমের খেয়াল রাখতে অক্ষম নাকি সে তার কথা রাখতে পারেনি তা! সাঈফ উত্তর না করায়, এমন নিশ্চুপ থাকায় শব্দের যা বোঝার তা বুঝে যায়। সে জানায় সে এখনি এয়ারলাইন্সের কথা বলে আপডেট জানাবে। আর সাঈফও যেনো তাকে আপডেট জানাতে থাকে। এগুলো বলেই একমুহূর্ত দেরি না করে কল কেটে ইমারজেন্সি এয়ারলাইন্সে খবর নিয়ে জানতে পারে লাস্ট ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭ টায় চলে গেছে। আবহাওয়ার অবস্থা আশংকাজনক তাই লাস্ট নাইট যে ফ্লাইট টা ছিলো সেটা পোস্টপন্ড করা হয়েছে। আগামীকাল ছাড়া কোনো ফ্লাইট বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাবে না। এসব শুনে শব্দের মনে হলো তার দুনিয়াটা দুলে উঠলো। চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। চোখের সামনে রোদসীর মুখটা বার বার ভেসে উঠছে। সেই গুলুমুলু মেয়েটা। সারাদিন আচার নিয়ে বসে থেকে এটা ওটা বায়না ধরে। সবশেষে! হঠাৎ করেই শ্রেয়ার মুখটা ভেসে উঠলো। শ্রেয়া শব্দের বিছানার ওপর বসে আছে। শব্দ ওদিকে তাকাতেই হেসে উঠে বলে,

“দাদাই, জানো আমার না একা ভালো লাগে না। আমি তাবাসসুমকে নিয়ে যাই? তাহলে আমার আর একা লাগবে না।”

এটা বলেই শ্রেয়া বিভৎষ চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠলো। শব্দ তখনও শ্রেয়ার মুখের দিকে হতভম্ব তাকিয়ে আছে। শ্রেয়া আবারো বলে,

“জানো, আমি তোমাকে অনেক মিস করি। কিন্তু তুমি তো আর আমার কাছে আসবে না তাই আমি তাবাসসুমকে নিতে এসেছি। ওকে নিয়ে তবেই ফিরবো।”

এবার শব্দ কথা বলার চেষ্টা করলো। মনে হচ্ছে গলাটা কেউ টিপে ধরে আছে। কথা বের হচ্ছে না। তবুও অনেক চেষ্টা করে বলে,

“তুমি কাউকে নেবে না।”

শ্রেয়া কান্না থামিয়ে অবাক চোখ তাকিয়ে বলে,

“তাহলে বাবুকে নেই?”

শব্দ চিৎকার দিয়ে উঠে,

“তুমি কাউকে নেবে না। চলে যাও, চলে যাও।”

হাতের সামনের ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারে এতে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে সেটা অনেক গুলো টুকরো টুকরো হয়ে আশেপাশে ছিটকে পড়ে। শ্রেয়া ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,

“আমার জন্য একটুও মায়া হয় না দাদা?”

এর মধ্যে দরজায় অনবরত করাঘাতে শব্দ দরজার দিকে তাকিয়ে আবারও বিছানার দিকে তাকায়। কেউ নেই। সারাঘরে চোখ বুলিয়ে দেখে সে ছাড়া রুমে কেউ নেই। ফ্লোরে ভাঙ্গা ফুলদানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শব্দ দেয়াল ধরে কোনো মতে দরজার সামনে যেয়ে দরজা খুলে দিতেই। একলোক হুরমুর করে ঘরে ঢোকে আশেপাশে তাকিয়ে বলে,

“সাবজি, কি করেছেন? ইয়ে সাব কিউ তোরা?”

শব্দ কিছু না বলে হেটে বিছানায় বসে। লোকটা ইংলিশ বোঝে না বাংলা ভালো করে না বুঝলেও একটু আধটু বোঝে। তাই শব্দ বলে,

আব্দুল, মাফ কারিয়ে। ম্যায় বহাত পারেশান হু। মেরে বেহেন প্রেগন্যান্ট থা। সুবাহ হি উসকা অপারেশন হুয়া হ্যা। উসকা তাবিয়াত কয়ি আচ্ছা নেহি। এয়ারলাইন্স কো কল কিয়া থা। পার মৌসাম খারাব হোনেকে লিয়ে আপ সাব বান্ধ হ্যা।

লোকটা বোধহয় শব্দের কথা বুঝলো। লোকটা দুঃখ প্রকাশ করে চলে যায়।

———-

৭২ ঘন্টা পর,

শব্দ এসেছে। রোদসীর অবস্থা আগের থেকে উন্নত হলেও বাবুর অবস্থা আগের মতোই। কোনো উন্নতি ডক্টররা দেখতে পারছে না। তার মধ্যে ডক্টর জানিয়েছে বাবুর হার্টে ছোটো একটা ছিদ্র আছে। এটা শোনার পর রোদসীর পা*গ*লা*মি আরো বেড়ে যায়। আর বার বার ডুকরে কেঁদে উঠে। একটু পর পরই বলে মেয়েকে দেখবে। এদিকে রোদসীর এই অবস্থা ওদিকে বাবুর অবস্থা এমন। শব্দের মনে হচ্ছে অথই সাগরে পড়েছে। সাঈফও বসে নেই লোকটাও বাবুর জন্য এটা আনো ওটা আনো এসবের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আছে। আর রোদসীর দেখাশোনা করছে শব্দ। শব্দ দোয়া করে এমন দিন জানো কারো জীবনে না আশে। এমন দিন যে সে কিভাবে পার করছে একমাত্র সেই জানে। রোদসীর কান্না বাড়তে থাকে। সাথে পা*গ*লা*মি তো আছেই তাই শব্দ ডক্টর ডেকে বলে তাকে যেনো ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখতে। ডক্টরও শব্দের কথা মতো রোদসীকে ইনজেকশন দেয়ার কিছুক্ষণ পর রোদসী ঘুমিয়ে পড়ে। রোদসী ঘুমিয়ে পড়ার পর কেবিন থেকে বেড়িয়ে শব্দ বেবির কেবিনে যায়। বেবীও ঘুমাচ্ছে। শব্দ যেয়ে বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে পাশেই চেয়ার টেনে বসলো। শব্দ বসার সাথে সাথেই রুমে থাকা নার্সটা কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়। শব্দ বাবুর মুখের দিকে তাকায়। কি স্নিগ্ধ লাগছে। একদম একটা ফুলের মতো। রোদসী বাবুর নাম রেখেছে “রিন্তীহা উর্জা”। মেয়েটার সাথে নামটা একদম মিল পায় শব্দ। রিন্তীহা অর্থ একটি সুন্দর ফুল। আর মেয়েটাকে দেখে সর্বপ্রথম কোনো পবিত্র ফুলের কথাই মনে পড়বে। শব্দ নার্সকে ডাকলে সে আসতেই শব্দ বলে বাবুকে তার কোলে উঠিয়ে দিতে, নার্স রিন্তীহাকে কোলে তুলে দিতেই শব্দের মনে হলো সে কোনো তুলো কোলে নিয়েছে। রিন্তীহা কে পুতুলের মতো লাগছে। রিন্তীহা কোলে নেয়া মাত্রই রিন্তীহা নড়েচড়ে তাকেলো। চোখ দেখেই শব্দ চমকে উঠলো চোখ গুলো কেমন ধূসর রাঙা বর্ণের ঠিক তার চেনা পরিচিত কারোর সাথে মিল। কিছুক্ষণ থমকে তাকিয়ে রইলো শব্দ। শ্রেয়ার মতো! হ্যাঁ! আর কিছুটা ধারালো চোখ ঠিক উচ্ছ্বাসের মতো! কিন্তু রিন্তীহার সাথে ওদের সম্পর্ক কি? ওদের সাথে তো রক্তের সম্পর্ক নেই তাহলে? কোএন্সিডেন্স? শব্দের হাত পা কেঁপে উঠল। সে নার্সের কাছে রিন্তীহা কে দিয়ে উঠে দাড়াতেই সাঈফ দরজা ঠেলে ভিতরে আসে। কিন্তু শব্দ এক মূহুর্তে না দাড়িয়ে এলোমেলো পায়ে বেড়িয়ে আসলো। আর সাঈফ অবাক নয়নে তা দেখলো।

শব্দ যেয়ে রোদসীর কেবিনের সামনের ওয়েটিং চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। তার মাথা কাজ করছে না। উচ্ছ্বাস বা শ্রেয়ার সাথে রিন্তীহার কি সম্পর্ক! আর শ্রেয়া মারা যাবার ৩ বছর পর হঠাৎ হ্যালুসিনেশন! এগুলো কি আসলেই হয়! আর কোএন্সিডেন্স! এতো মিল! এটা কি আদোও সম্ভব। শব্দ উঠে রোদসীর কেবিনের দরজায় দড়ায়। কিছু সময় নিয়ে দড়জা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। রোদসী কপালের ওপর হাত রেখে রুমের সিলিংটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। দরজায় আওয়াজ হতেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে শব্দ দাঁড়িয়ে আছে। রোদসী আলতো হেসে আবারো চোখ সিলিং এ নিবন্ধ করে। শব্দ নিঃশব্দের হেটে এসে রোদসীর বেডের পাশে টুল টেনে এনে বসে। তারপর কিছু সময় নিয়ে মুখ খোলে,

“আমি সরি।”

রোদসী শব্দ দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে, “কেনো?”

“এই যে, যে সময়ে তোর আমাকে সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো তখন আমি তোর পাশে থাকতে পারলাম না।”

রোদসী হাসলো, “যা হবার তা হয়ে গেছে ভাইয়া। আর সাঈফ সাহেবকে ধন্যবাদ জানিও। উনি অনেক ধকল সামলেছে।”

শব্দ মাথা নাড়িয়ে হাসলো। রোদসী বললো, “উর্জাকে দেখেছো?”

শব্দ দৃঢ়দৃষ্টি নিবন্ধন করলো রোদসীর পানে। তারপর গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয়,

“রিন্তীহাকে দেখেছি। ঘুমোচ্ছে। রিন্তীহা দেখতে কিছুটা আমার এক বন্ধুর মতো লাগে। কি আশ্চর্যের ব্যাপার তাই না। আর ওর চোখটা ধূসররাঙা ঠিক শ্রেয়া সাথে মিল আর আমার সেই বন্ধুর মতো।”

শব্দ একসাথে এতো গুলো কথা বলে থামলো। রোদসীর ভিতরটা কেমন যেনো কেঁপে উঠল মনে হলো। তার চোখের বর্ণনা শুনে সর্বপ্রথম একটা শ্যামবর্ণের পুরুষটার মুখ রোদসীর চোখে ভেসে উঠলো। যে চোখের বর্ণনা শব্দ দিয়েছে। সেই চোখ, হ্যাঁ সেই ধারালো চোখ খুব কাছে থেকে দেখেছে রোদসী। তাহলে মেয়ে কি তার মতোই হয়েছে? যার থেকে এতো পালিয়ে বাঁচলো? আচ্ছা সে যখন জানবে তাদের ছোট্ট ছোট্ট হাত,পা,লালচো ঠোঁট, ধূসররঙের ধারালো চোখের একটা জীবন্ত পুতুল পৃথিবীতে এসেছে তাহলে মাহাদীর রিয়াকশন কেমন হবে। সে কি খুশি হবে? রোদসী আর ভাবতে ইচ্ছে হলো না। চোখ বন্ধ করতেই চোখের কার্নিশ থেকে চোখের জলের রাশি গড়িয়ে পড়লো। শব্দ সেটা দেখে রোদসীকে জিজ্ঞেস করে, “খারাপ লাগছে কিনা? ডাক্তার ডাকবে।”

রোদসী মাথা নাড়িয়ে না বলে। সে ঠিক আছে। তাই শব্দও উঠে দাড়ায়। এখন রোদসীকে একটু সময় দেয়া উচিত। ব্যাক্তিগত সময়।

——-

শব্দ কেবিনের বাহিরে এসে ফোন বের করে। এতো এতো ঝামেলার মাঝে ঊষা মেহেজাবিন নামক এক রমনীর খবরই নেয়া হয় নি শব্দের। তাই ঊষার নম্বর ডায়াল করে শব্দ হেটে এসে কাঁচের সামনে, তারপর রাস্তার বাহিরে চোখ রাখে। আজকে আকাশটা কত স্বচ্ছ। মেঘ গুলো ঘুড়ছে। এসব দেখতে দেখতে ঊষাকে কল করে। কল দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই কল রিসিভ হয়। শব্দ কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে এক রমনীর উতলা কন্ঠ ভেসে আসে শব্দের কানে। শব্দ হাসে মেয়েটা আসলেই বাচ্চা। শব্দ ঊষাকে থামতে বলে। তারপর বলতে শুরু করে,

“আপনার সব প্রশ্নের জবাব আপনি পাবেন। আগে একটু শান্ত হন। তারপর পানি খান।”

“রাখেন আপনার পানি। আগে বলেন কই ছিলেন। আর হঠাৎ করে এমন কেউ গায়েব হয়ে যায়। কতগুলো কল দিয়েছি। সে খেয়াল আছে আপনার? এদিকে যে আমার কত চিন্তা হচ্ছিলো সে খেয়াল আছে আপনার? অবশ্য খেয়াল রাখবেন কেন! কে হই আমি আপনার?”

শব্দ হাসে এতো এতো অভিযোগ শুনে। মেয়েটা তাহলে অভিমানও করতে জানে। শব্দ এবার বলতে শুরু করে,

“আমি ঢাকাতে ছিলাম না। হঠাৎ করেই ভারত যেতে হয়েছে। আর ওখানে সকালে পৌঁছে অপারেশন করে বাসায় ফিরতে না ফিরতেই আমার কলিগের কল আসে, আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম আমার বোন প্রেগন্যান্ট ছিলো। আমি যেতে চাই নি তাও জোর করে ভারত গিয়েছি। তবুও মন টিকছিলো না। রাতে কলিগের কল আসে, এবং বলে আমার বোন ওয়াসরুমে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেছে। তখন তার সি সেকশন করা হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বাবু আর মা দুইজনেরই অবস্থা শংকাজনক। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এয়ারলাইন্সে কল করলাম। সেখানে আবহাওয়ার ত্রুটি থাকার কারণে ফ্লাইট পোস্টপন্ড। সেদিনটা আমার কেমন দমবন্ধ কেটেছে তা আমি কাউকে বোঝাতে পাবো না। তারপর তো দেশে ফিরে বাবু আর বোনের আশেপাশেই ছিলাম। কিভাবে কি হলো! বুঝতেই তো পারছেন ব্যস্ত ছিলাম।”

ঊষা শান্ত হয়ে যায়। তারপর জিজ্ঞেস করে,

“আপু ঠিক আছে? আর বাবু?”

শব্দ একটু হাসার চেষ্টা করে জবাব করে,

“আপনার আপু এখন আগের থেকে সুস্থ কিন্তু রিন্তীহার কন্ডিশন” এতোটুকু বলেই শব্দ চুপ হয়ে যায়। এতো ঊষা আরো উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে বাবুর? ঠিক আছে? কথা বলছেন না কেনো?”

“রিন্তীহা ঠিক আছে। তবে ডক্টর জানিয়েছে ওর হার্টে ছোটো একটা ছিদ্র আছে। ঠিক মতো কেয়ার আর ডক্টরের কথা মতো চিকিৎসা চললেই ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা এখন রাখি?”

ঊষার আরেকটু কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো এই প্রাণঘাতি পুরুষের সাথে তবে সময় আর পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা বলতে আর সাহস করে না ঊষা। তাই আচ্ছা বলে কল কেটে দেয়।

শব্দ কল কেটে কি যেনো মনে করে উচ্ছ্বাসকে কল করে। কল রিসিভ না হওয়ায় আবারো রোদসীর কেবিনের দিকে যেয়ে দরজা ধরতেই শব্দের ফোনটা বিপবিপ আওয়াজ করে কেঁপে ওঠে। শব্দ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে উচ্ছ্বাস কল দিয়েছে। তাই দরজা ছেড়ে আবারো কাঁচের গ্লাসের সামনে এসে দাড়িয়ে রাস্তায় চোখ রেখে কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ব্যস্তকন্ঠে উচ্ছ্বাস বলে ওঠে,

“কল দিয়েছিলি? আসলে আমি একটু ব্যস্ত।”

“হুম। আমার বোনের মেয়ে বাবু হয়েছে। সময় পেলে দেখে যাস।”

” হাতে একটু সময় নেই। বুঝিসই তো এখনো সাইক্রোয়াটিস্টের কাছে আমি কাউন্সিলং চলছে। সময় পেলে অবশ্যই কোনো সময় দেখতে যাবো।”

শব্দ উচ্ছ্বাসের কথা শুনে আর কিছু না বলে কল কেটে দিয়ে আবারো রোদসীর কেবিনে চলে যায়।

——–

সেদিনের পর দিন সাতেক পর রোদসী এবং রিন্তীহাকে রিলিজ করে বাসায় আনা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে ঠিক মতো দেখাশোনা এবং সময় মতো চেক-আপ করলেই রিন্তীহা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠবে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এতে সবাই সহমত পোষণ করলেই রোদসী আর রিন্তীহাকে বাসায় সিফট করা হয়। এখন রোদসীর অবস্থা ঠিকঠাক থাকলেও রিন্তীহা মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে যায়। রিন্তীহার সবে মাত্র তিন মাসে পড়লো। আজকে কথা ছিলো শব্দ রোদসী এবং রিন্তীহাকে নিয়ে হসপিটালে যাবে কিন্তু বরাবরের মতোই আবারো ইমার্জেন্সি অপারেশন পড়ায় শব্দ যেতে পারে না। তাই কল করে সাঈফকে রিকুয়েষ্ট করে যাতে রোদসী আর রিন্তীহাকে যেনো একটু হসপিটালে নিয়ে যায়। সাঈফ হলো তৎপর লোক। সময় অনুযায়ী বাসায় হাজির। এদিক রিন্তীহার কান্না থামছেই না। তার জন্য রোদসীও রেডি হতে পারছে না। সাঈফ এগিয়ে এসে রিন্তীহাকে কোলে নিয়ে বলে,

“আমি ওকে নিয়েছি। তুমি রেডি হয়ে আসো।”

রোদসী মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বলে নিজের রুমে চলে যায়। কোনো মতে একটা শাড়ি পেঁচিয়ে নিচে চলে আসে। তা দেখে সাঈফ বলে,

“তারাহুরোর কিছু নেই। আস্তে আসো।”

রোদসী আস্তে নেমে এসে রিন্তীহা কে নেয়া জন্য হাতে পাতে এবং বলে,

“উর্জাকে আমার কাছে দিন। আপনি তো ড্রাইভ করবেন আপনার সমস্যা হবে।”

“সমস্যা নেই এসো।”

সাঈফ আগে আগে হেটে এসে রোদসীর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়। রোদসী হেসে গাড়িতে উঠে বসে। সাঈফও ঘুরে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। গাড়ি স্টার্ট দিতেই রোদসী বোঝে সাইফের রিন্তীহাকে সামলে ড্রাইভ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই রোদসী বলে,

“এভাবে উর্জাকে নিয়ে পারবে না। উল্টো ব্যাথা পেতে পারে। আপনি উর্জাকে আমার কাছে দিয়ে ড্রাইভ করুন তারপর হসপিটালে যেয়ে নাহয় আপনি উর্জাকে নিয়েন। সাঈফের আসলেই রিন্তীহাকে কোলে নিয়ে ড্রাইভ করতে সমস্যা হচ্ছিলো তাই সে দ্বিমত না করে রিন্তীহাকে কোলে থেকে রোদসীকে দিয়ে দেয়।

——

হসপিটালের এসে রিন্তীহাকে ডাক্তার চেইক-আপ করে জানায়। সে এখন মোটামুটি রিকভারি করে আসছে। আর কেয়ার করতে হবে। এসব শুনে রোদসী এবং সাঈফ একে ওপরের দিকে তাকায় আবারো ডাক্তারের কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে হাসে। তারপর ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই রিন্তীহাকে সাঈফ কোলে তুলে নেয় আর রোদসী তা দেখে হাসে।

উচ্ছ্বাসের আজকে শেষ কাউন্সিলিং ছিলো। তাই ডক্টর বলেছে হসপিটালে আসতে চেম্বারে যবার আর দরকার নেই। সে কথা শুনে মাত্রই হসপিটাল এসেছিলো কাউন্সিলিং এর জন্য। কি মনে হতেই পাশে তাকিয়ে হঠাৎ করেই রোদসীকে দেখে । রোদসীর সাথে এক লোক আর তার কোলে বাবু দেখে উচ্ছ্বাস থমকে দাঁড়িয়ে যায়। সাথে সাঈফ আর কোলে বাবু দেখে মনে হচ্ছে উচ্ছ্বাসের দুনিয়ে দুলে উঠলো। এসব বিশ্বাস হচ্ছে না। শেষে কিনা রোদসী? না এ হতে পারে না। দ্রুত পা বাড়াতেই ভিড়ের মধ্যে রোদসীকে হরিয়ে ফেলে উচ্ছ্বাস। তার মনে হচ্ছে তার জান টা কেউ বের করে নিয়ে যেতে চাইছে। কোনে মতো পকেট হাতড়ে ফোন বের করে শব্দকে কল দিয়ে এলোমেলো পায়ে বাহিরের দিকে হেটে আসে। শব্দ কল রিসিভ করতেই উচ্ছ্বাস ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,

“ভাই আমার বউকে মাত্র দেখেছি।”

“কি বলছিস? কই তুই?”

“হসপিটালে। ও বিয়ে করে নিয়েছে। বেবিও আছে। মাত্রই এক লোকের সাথে বেড়িয়ে গেলো আমি আগাতে গেলেই হারিয়ে গেলো।”

“আচ্ছা তুই দাড়া আমি আসছি।”

চলবে…….

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here