ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:০২ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
236

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০২
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্তদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।

“দাদু ডেকেছেন? আসবো?”

“হ্যাঁ আয়, আয়। বস” রোদসী যেয়ে উচ্ছ্বাসের দাদুর পাশে বসে। দাদু রোদসীর মুখ ধরে চুমু খেয়ে বলে,

“হ্যাঁ রে আমার নাতিটাকে কি করে পাগল করলিরে? আর ওই-বা এই চাঁদের মতো মেয়েটা পেলো কি করে আমি ভেবে পাচ্ছি না।”

মিসেস রাবেয়া বেগমের কথা শুনে রোদসী শরম পেলো। রাবেয়া বেগম আর উষা মিটিমিটি হাসছিলো।

উষা বলে উঠলো,

“জানো দিদান, ভাইয়া ভাবিকে প্রথম ভাবীর কাজিনের বিয়েতে দেখেছে। একবার ভাবো, ভাইয়া কত দুষ্টু। মানে ভাবীকে দেখলো আর সেই ভাবীকে বিয়েও করে ফেল্লো।”

রাবেয়া বেগম বলে,

“আমার দাদাভাই হিরা চেনে তাই তো হিরা দেখেই হিরাকে ঘরে উঠিয়েছে। হ্যাঁরে বউ উচ্ছ্বাস আদর টাদর করে তো?”

দাদুর বেফাশ কথাবার্তায় বেচারী রোদসী আরো শরমে পড়ে। মাথা নিচু করে বসেই থাকে। উষা বলে,

“উহু দাদু শরম দিও না তো দেখো গাল গুলো কেমন লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছে।”

এটা বলেই উষা খিলখিল করে হেসে দেয়। এরি মধ্যে উষার বড় ভাই উদয় আসে।

“কিরে এমন পে ত্নির মতো হাসছিস কেন? তোর তো গাছে থাকার কথা এখানে কি?”

“দেখিস ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু!”

” খারাপ আর হবে কি? যার ঘরে জলজ্যান্ত এমন একটা শা ক চু ন্নি আছে তার আর কি সর্বনাশ হবে?”

“দেখো দাদু, কিছু বলো তোমার নাতিকে। ভালো হচ্ছে না কিন্তু।”

“আচ্ছা শোন না, শুনলাম ভাইয়া আর ভাবী আসছে। কই রে?”

উষা চোখ দিয়ে ঈশারায় দেখায়, উদয় রোদসীকে দেখে নিজেই বোকা হয়ে যায়। রোদসীও বোকা হয়ে যায়। একে অপরের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে একসাথে চেঁচিয়ে উঠে,

“তুইইই? ভাবীইইই! তাও আমার। ইহহ না আমি মানি না।”

“তুইইই? আমার দেবর? না। এ কিছুতেই হতে পারে না।”

দাদী আর উষা কিছুই বুঝতে পারে না। হলোটা কি?উষা তাই উদয়কে জিজ্ঞেস করে, “রোদসী ভাবিকে কি উদয় আগে থেকেই চেনে কিনা?”

“ও আমার কলেজের ব্যাচমেট ছিলো। বন্ধুও বলতে পারিস।”

উষা এবার বুঝলো, “ওহহ তাই বুঝি। বাহ তাহলে তোদের কি তোরা তো পরিচিতিই ভালোই হলো এখন থেকেই অনেক মজা হবে। কিন্তু কলেজ শেষ হবার পর কিছু কারণে আর যোগাযোগ করা থাকে নি।”

উদয় বল্লো, “দুর মজা হবে না ছাই। ভাইয়া যে পারলে উঠিয়ে আমাকে আছাড় মারবে। কিরে তুই বল তোর জামাই কেমন?”

“কার কথা জিজ্ঞেস করছিস?” উচ্ছ্বাস এসে দরজায় দাড়িয়ে ছিলো। সবাই তাকে দেখে একটু নড়ে চড়ে বসলো। সে আবার জিজ্ঞেস করলে, “বল কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো?”

উষাই প্রথমে কথা শুরু করলো, “আরে জানো ভাইয়া কি হয়েছে? উদয় ভাইয়া আর রোদসী ভাবী সেম ব্যাচ।

“সো হোয়াট?” গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করলো রোদসীর মুখের দিকে তাকিয়ে। এদিকে রোদসীও ভয় পাচ্ছে যদি উচ্ছ্বাস কোনো সিন ক্রিয়েট করে বসে তাহলে যা-তা অবস্থা হবে।

আর ভাইয়া তুমি বোঝানি। ভাবী আর উদয় ভাইয়া এক কলেজে ছিলো। আর বন্ধুও ছিলো। আমি আর দাদু শুনে তো পুরোই অবাক। বলো কি কান্ড? অবশ্য ভালোই হলো ওরা পূর্ব পরিচিত। যাইহোক, ভাইয়া বলো ব্যাপারটা জোস না?

উচ্ছ্বাস “হু” বলে উঠে রোদসীকে রুমে আসতে বলে চলে গেলো!

রোদসীও উঠে দাড়ানো মাত্রই উদয় জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে। রোদসী বলে, “তোর ভাই রুমে ডাকলো শুনিস নি?”

“আরে ধুর, রাখ তো রুমে যাওয়া কত দিন পর দেখা হলো সবসময় তো ভাইয়ার সাথেই তো থাকিস এখন আগে আমাকে বল ভাইয়ার সাথে পরিচয় কিভাবে। আর বিয়ে? জানিসই তো বড়বাবার সাথে ভাইয়ার সম্পর্কে ওই উদয় একটু ইতঃস্ততবোধ করে বললো বড় চাচীর জন্য। তাই আমাদের না জানিয়েই বিয়েটা করে ফেলো।”

রোদসী মনে মনে ভয় পেলো। তবুও ভাবলো এতোদিন পর সবার সাথে কথা বলতে পারছে। বিশেষ করে যদি হয় কাছের কোনো বন্ধু বা বান্ধবী তাহলে কথাই নাই।

“বিয়ের কাহিনী সে অনেক বড় ভাই। বলিস না আর। বিয়েটা হয়েছেই গোলমেলে ভাবে বা হঠাৎ বলতে পারিস।”

আর কিছু বলার আগেই উচ্ছ্বাস এসে রোদসীকে কোলে তুলে নিলো। আর যেতে যেতে বল্লো, “সরি গায়েস তোদের ভাবী এখন ব্যাস্ত। পরে কথা বলিস।” আর কোনো কথা না বলেই উচ্ছ্বাস নিজের রুমের দিকে হাটা দিলো। রোদসী শরম পেলো দাদু, ছোটো ননদ, আর দেবরের সামনে এভাবে কোলে উঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য। রোদসী নিচু কন্ঠে বললে,

“হচ্ছে কি নামান। আপনার শরম কম থাকতে পারে। আমার তো আছে। বাসায় হুটহাট কোলে নেন সেই ব্যাপার আলাদা ওখানের বাসায় কেউ নেই বলে আমি কিছু বলি না। কিন্তু এই বাসায় সবাই আছে।”

উচ্ছ্বাস কোনো জবাব না দিয়ে সোজা নিজের রুমে এসে বিছানায় রোদসীকে বসালো তারপর দড়জা বন্ধ করে রোদসীর পায়ের কাছে বসে কোলে মাথা রাখলো।কতক্ষণ এভাবেই কাটলো। পুরোঘরময় নিঃশব্দ বিরাজ করলো। কিছুক্ষণ পর উচ্ছ্বাস মাথা তুলে রোদসীর দিকে তাকালো। রোদসী উচ্ছ্বাসের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।

“আচ্ছা রোদ আমি কি খুব বাজে? অনেক কষ্ট দেই। খুব খারাপ?”

রোদসী জবাব দেয় না। সে জানতো এমন একটা পরিস্থিতিতে তার পরতে হবে। ডাকার সাথে সাথে আসে নি সে। ভুল করেছে মাশুল দিতে হবে।

ধমকে উঠে উচ্ছ্বাস, “কি হলো বলো, জবাব দিচ্ছো না কেনো? কই আমার সাথে এতো কথা বলো না। হাসো না।”

এগুলো বলেই উঠে রোদসীর চুল হাতে দিয়ে টেনে ধরলো। রোদসী তাকিয়েই ছিলো উচ্ছ্বাসের দিকে। কি অদ্ভুত মানুষ হঠাৎ করেই এমন পাগলামি। রোদসী চুল ধরার ব্যাথায় কান্না করে দেয়। রোদসীর কান্নায় কথা আটকিয়ে আসে তবুও কষ্ট করে বলে,

“ছাড়ুন আমি চুলে ব্যাথা পাচ্ছি। খুব লাগছে।”

উচ্ছ্বাস এতে আর রাগ করে করে গাল চেপে ধরে বলে,

“এর থেকে বেশি ব্যাথা আমি পাই। বলো কেনো আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলো না। আর এতো হাসাহাসি কিসের? আমার সাথে তো এতো হেসে কথা বলো না। আচ্ছা বলো তো তুমি আমাকে ভালোবাসে না? আমাকে ভালোবাসো না? বিয়েটা যেভাবেই হোক আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। এতো ভালোবাসি তাও কেনো তুমি আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলো না।”

রোদসী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।তবুও পারে না। উচ্ছ্বাস রোদসীর ছটফট দেখে। চোখের পানি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। তারও কষ্ট হয়। কিন্তু তার রোদপাখি তো বোঝে না। কিছুক্ষন পর উচ্ছ্বাস রোদসীকে ছেড়ে বারান্দায় চলে যায়। তার মাথা ঠান্ডা করতে হবে। বারান্দায় এসে উচ্ছ্বাস সিগারেট ধরায়। আর রোদসী বিছানার পাশেই বসে কান্না করতে শুরু করে। উচ্ছ্বাস বারান্দায় বসে শোনে কিন্তু যাবার ইচ্ছে করে না। কিছুক্ষণ বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট খায়। একসময় দেখে পুরো প্যাকেটই খালি হয়ে গেছে। ঘর থেকেও কোনো শব্দ আসছে না। তাই উচ্ছ্বাস রুমে এসে দেখে রোদসী বিছানার পাশেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। উচ্ছ্বাস রোদসীকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। তারপর নিচ থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে রেখে রোদসীর পাশেই রোদসীকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।

মাঝরাতে রোদসীর ঘুম ভাঙে।মনে হলো শরীরের ওপর ভারী বস্তু পড়ে আছে। পাশে তাকিয়ে দেখে উচ্ছ্বাস আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে তার ঘাড়ে উচ্ছ্বাসের গরম নিঃশ্বাস পড়ে। রোদসী একটু নড়তেই উচ্ছ্বাস রেদসীকে আরো কাছে টেনে রোদসীর গলায় মুখ গুজে দেয়। আর বিরবির করে বলে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি রোদ, অনেক ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে যেও না।” রোদসী তাকিয়ে থাকে আর ভাবে লোকটা কি অদ্ভুত !কে বলবে রাতে সে রাগারাগি করে এখন কি সুন্দর শান্তিতে জরিয়ে ধরেই ঘুমাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে আবারও ঘুমিয়ে পরে রোদসী।

—-

মিষ্টি রোদ, পাখির ডাক আশেপাশে মুখরিত করে আছে। আসলে পৃথিবীটা সুন্দর কিন্তু আমরা কখনো উপলব্ধি করতে পারি আবার কখনো পারি না। আমরা সবসময় নিজেদের হতাশা নিয়েই থাকি কখনো ওই দুঃখটুকু সরিয়ে ভালোর দিকে আগাতে পারি না। বারান্দায় দাড়িয়ে রোদসী আশে পাশে দেখছিলো। রোদসী অনেক বাউন্ডুলে, ভবঘুরে মেয়ে। বিয়ের আগে পর্যন্ত পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখতো। যখন যেটা করতে ইচ্ছে করতো, বাড়ির বড় মেয়ে কিনা কিন্তু উচ্ছ্বাস এগুলো পছন্দ করে না। সে পারলে রোদসীকে লুকিয়ে রাখতো।

“ভাবী”

চলবে…

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here