#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০৫
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
“তুমি কি বেশি ভয় পেয়েছো পাখি। আসলে আমি এমন করতে চাই নি হঠাৎ কি থেকে কি করে ফেল্লাম, মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমি সরি আচ্ছা তুমি কি ব্যাথা পেয়েছো।”
এটা বলেই উচ্ছ্বাস রোদসীর হাত পা দেখতে শুরু করলো৷ আর রোদসী পুতুলের মতো উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে ছিলো। একটা লোক কিভাবে এত দ্রুত এমন রং বদলের মতো ব্যাবহার করতে পারে। কে বলবে ইনিই একটু আগেই কেমন পাগলাটে ব্যাবহার করছিলো। অদ্ভুত! রোদসী উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর উচ্ছ্বাস ওর হাত পা চেইক করে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। আর বারবার মাফ চাইতে থাকে।
রাতে মেইড এসে ডিনারের জন্য ডেকে যায়। উচ্ছ্বাস যেয়ে খাবার নিয়ে আসে আর মেইডকে বলে রুম পরিষ্কার করে দিতে।
—-
অনেক দিন পর বাবার বাড়ি যাচ্ছে রোদসী। সে কল্পনাও করেনি এত দ্রুত তাকে উচ্ছ্বাস তাদের বাবার বাড়ি নিয়ে যাবে। উচ্ছ্বাসের সাথে বিয়ে হবার পর এই প্রথম বাবার বাড়ি যাচ্ছে রোদসী। ও অনেক বেশি খুশি। উচ্ছ্বাস ড্রাইভ করছে আর কিছুক্ষণ পর পর মিররে রোদসীকে দেখছে। কেমন উতলা হয়ে আছে।উচ্ছ্বাস মনে মনে একটু শান্তি পায় ওই দিন রাগারাগির পর রোদসী তাকে আরো ভয় পায়। উচ্ছ্বাস হাত বাড়িয়ে রোদসীর হাতটা কাছে এনে চুমু খায়। রোদসী হঠাৎ এহেন কান্ড ভরকে যায়। তা দেখে উচ্ছ্বাস মুচকি হাসে। উচ্ছ্বাসকে হাসতে দেখে রোদসী আরো অবাক হয়। উচ্ছ্বাসকে সচারাচর হাসতে দেখা যায় না। সে সময় গম্ভীর একটা ভাব নিয়েই থাকে।রোদসীকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উচ্ছ্বাস রোদসীকে আরো অবাক করে দিয়ে রোদসীকে নিজের আরো কাছে টেনে ঘনিষ্ট হয়ে বসায়। রোদসী ওভাবেই চুপ করে পড়ে থাকে। উচ্ছ্বাস রোদসীকে জিজ্ঞেস করে,
“আজকে এতো খুশি? আমাকেও বলো আমিও একটু শুনি মেমসাহেবা এতো খুশি হবার কারন কি?”
“কিছুই না এমনি।”
“এমনি কেউ এতো খুশি হয়? কারণ ছাড়া এতো খুশি খুশির কিন্তু আরো একটা কারণ থাকে, যেটা সবাই বোঝে।” উচ্ছ্বাস মাথা নাড়িয়ে অভিজ্ঞদের মতো কথা টা বল্লো।
উচ্ছ্বাসের নরমালভাবে কথা বলায় রোদসী একটু নরম হয়। সে এতোক্ষণ মনে মনে ভয় পাচ্ছিলো তবে উচ্ছ্বাসের এমন নরমগলায় কথা বলাতে একটু একটু ভয় কাটে। সে জানায়,
“এতো দিন বাবা- মা, রুহি বাসার বাকি সবার কথা অনেক মনে পড়ছিলো সাথে দেখতেও ইচ্ছে হচ্ছিলো আজকে যখন হঠাৎ বল্লেন আমাদের বাসায় যাবেন আমার ঠিক ঈদের মতো আনন্দ হচ্ছে। আমি অনেক খুশি। আপনাকে অনেকগুলো ধন্যবাদ।” রোদসী হাসে।
উচ্ছ্বাস বোঝার ভঙ্গিতে হেসে বল্লো,
“আমি তো ভেবেছি এই বুঝি ম্যাডামের মন গলেছে আর আমাকে ভালোবাসলে কিনা। কি জানি বান্দার প্রতি মন গলতেও পারে। আমি কিন্তু ওতোও খারাপ নই যতটা প্রথম দিন থেকে ভেবে আসছো!”
এই কথা শুনে রোদসী একটু নড়েচড়ে উঠলো। তাতে উচ্ছ্বাস একটু বিরক্তবোধ করলে বলে,
“উমম নড়ে না। দেখো না ড্রাইভ করছি। মনোযোগ নষ্ট হলে কিন্তু তোমারই ক্ষতি। ”
রোদসীর নড়াচড়া বন্ধ করে জড়োসড়ো হয়ে ওভাবেই পড়ে রইলো।
কিছুক্ষণ বাদে ওরা রোদসীর বাসায় পৌঁছলো। সবাই ওদের জন্য ড্রইং রুমে অপেক্ষা করছিলো। রোদসীকে দেখা মাত্রই রুহি আপু বলে চিৎকার করে এসে জড়িয়ে ধরে। রোদসীও কোনো মতে পড়া থেকে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর দু’জনেই একসাথে খিলখিল করে এসে দেয়। সবাই ওদের কান্ড দেখে ওরাও হাসতে থাকে। উচ্ছ্বাস যেয়ে রোদসীর বাবা আর চাচাদের সাথে সালাম আদান-প্রদান করে কথা বলে। আর রোদসী বাসার মহিলাদের সাথে ঘরের ভিতরে চলে যায়।
রোদসীর রুমে এসে ওদের বসিয়ে রেখে আগে ফ্রেশ হয়ে আসে। ওয়াসরুম থেকে রের হয়ে দেখে ওরা সবাই কিছু নিয়ে হাসাহাসি করছিলো। রোদসী ওদেরকে জিজ্ঞেস করে কি নিয়ে ওরা এতো হাসাহাসি করছে। ওর জিজ্ঞেস করার ধরন দেখে ওরা আরো হাসাহাসি করছিলো। মারজিয়া ভাবী এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে রোদসসীকে বলে করে,
“হ্যা রে তাবাসসুম উচ্ছ্বাস ভাই তোমাকে এতো ভালোবাসে। বোধহয় তোমাকে চোখেও হারায়। দেখোনি, যখন তোমাকে আমরা এখানে নিয়ে এলাম কেমন অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলো।”
এটা বলেই সবাই স্বশব্দ করে হেসে উঠলো। ওদের হাসতে দেখে লজ্জাবোধ করলো। ওরা বোনেরা আর ভাবীরা গল্প করতে বসলে বড়রা উঠে চলে যায়। আজকে বাড়ির জামাই এসেছে কত কাজ। ওদের গল্পের মাঝে মারজিয়া ভাবী রোদসীকে জিজ্ঞেস করলো,
“রোদসী কি উচ্ছ্বাস কে এখন মেনে নিতে পেরেছে?”
রোদসী শুধু জানালো চেষ্টা করছি। ভাবী আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ বাদেই উচ্ছ্বাস রুমে আসলে ওরা সবাই চলে যায়। উচ্ছ্বাস রোদসীকে জিজ্ঞেস করলো,
“আজ তাহলে মহারানী মন ভালো।”
রোদসী মুচকি হেসে জাবাব না দিয়ে উঠে এসে উচ্ছ্বাস কে ব্যাগ থেকে একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে দিলে উচ্ছ্বাস সেসব নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলো। একটু পরই রাহা এসে বলে তাদের খেতে নিচে ডেকেছে। রোদসী রাহা কে বলে,
“তুমি যাও আমি তেমার ভাইয়াকে নিয়ে আসছি।”
রাহা রোদসীর কথা শুনে চলে যায়। উচ্ছেদ ট্রাউজার পরে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে এসে বিছানায় বসে রোদসীকে চুল মুছে দিতে বলে।রোদসীও উচ্ছ্বাসের কথা মতো চুল মুছে দিচ্ছিলো। হঠাৎ উচ্ছ্বাসের শরীর উষ্ণ হতে শুরু করে। রোদসীর সাথে উচ্ছ্বাসের এখনো শারিরীক কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। আর উচ্ছ্বাস ও যথেষ্ট পরিমান নিজেকে কনট্রোল করতে যানে কিন্তু হঠাৎ কি থেকে কি হচ্ছে বুঝে এলো না। উচ্ছ্বাস রোদসীকে থামিয়ে সে উঠে বারান্দায় চলে যায়। রোদসী বারান্দার দিকে বোকাবোকা চোখে তাকিয়ে থাকে। আর উচ্ছ্বাস বারান্দায় যেয়ে সিগারেট ধরায় এতে রোদসী রেগে যায় এবং উঁচু গলায় বলে,
“দুপুরের সময় লাঞ্চ এর বদলে এসব কেনো খাচ্ছেন বলেন তো? নিচে চলুন আমাদের জন্য খাবার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে। চলুন।”
রোদসীর হঠাৎ এমন ব্যাবহারে যারপরাণই উচ্ছ্বাস অবাক হয়। রোদসীকে বিয়ের আগে ঠিক এমন ভাবেই কথা বলতে শুনেছে। আর বিয়ের পর এভাবে কথা বলে। আচ্ছা ধরেই নিলো তাদের বিয়েরা তারাহুরায় করেই নিয়েছিল। তাই বলে রেদসী তারসাথে কথা বলা কমিয়ে দিবে। হঠাৎ উচ্ছ্বাসের মাথায় রাগ চাপলো। তবুও বারান্দায় দাড়িয়েই থাকলো। যখন রোদসী উচ্ছ্বাস কে ডাকতে কাছে আসলো সে তড়িৎ গতিতে রোদসীর কোমর পেঁচিয়ে ঠোঁট আকরে ধরলো। রোদসী এতে আরো ভরকে যায়। যখন সে বুঝলো তার সাথে কি হচ্ছে তখন থেকেই মোচড়ামুচড়ি শুরু করে এতে উচ্ছ্বাস আরো শক্ত করে রোদসীকে পেচিয়ে ধরে।
“ইসস, আমি কিছু দেখি নি। এই চোখে বন্ধ করলাম।”
হঠাৎ রুহির কথায় উচ্ছ্বাস একটু অপ্রস্তুত হয় এবং রোদসীকে ছেড়ে দেয়। আর রোদসী ছাড়া পেয়ে রুহিকে পাশ কাটিয়ে নিচে চলে যায়। আর রুহি উচ্ছ্বাস আর রোদসীর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। রোদসীও লজ্জায় পড়ে।
খাবার টেবিলেও রুহি সেভাবেই হাসছিলো যার কারণে রোদসীর মা মিসেস তানি বেগম রুহিকে জিজ্ঞেস করে এমন মিটিমিটি হাসার কারণ কি। হঠাৎ এ এমন প্রশ্ন করায় রুহি কিছু বলার আগেই রোদসী “কিছু না মা” বলে উঠে ওর কথার ধরন দেখে রোদসীর মা হকচকান। আর রুহি ভ্যাবাচ্যাকা খায়। বাসার সবাই ওদের অবস্থা দেখে হাসাহাসি শুরু করে দেয়।
লান্ঞ্চ শেষ করে যে যার রুমে চলে যায় রেস্ট করতে। রোদসী যখন রুমে যায় তখন উচ্ছ্বাস রুমে ছিলো না। সে রেদোয়ানের সাথে কথা বলতে গেছে। বন্ধু কি না। রোদসী রুমে যেয়ে মিররে সামনে দাড়িয়ে নিজেকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে আর আবারও দুপুরের কথা মনে পড়ে। সেও এখন চেষ্টা করছে উচ্ছ্বাস কে মেনে নেবার কিন্তু উচ্ছ্বাসের হঠাৎ করে রাগারাগি করা পজেসিভনেস এসব কর্মকান্ড রোদসীকে ভয় পাইয়ে দেয়।
“কি হয়েছে এভাবে আয়নার সামনে দাড়িয়ে কি ভাবেছো? প্রেমে পড়লে শুনেছি মানুষজন বার বার আয়না দেখে। কাহিনী কি বলো তো? এই তুমি আবার আমার প্রেমে পড়ে যাও নি তো। বলো আমাকে আমি সিক্রেট রাখবো কাউকে বলবো না। প্রমিস!”
রোদসী চমকে দরজার দিকে তাকায়। তারওপরে উচ্ছ্বাসের কথা শুনে আরে হকচকায়। ওখানে উচ্ছ্বাস দাড়িয়ে ছিলো এবং দাড়ানো দেখে বোঝা যাচ্ছে সে অনেকক্ষণ আগেই এসেছে। উচ্ছ্বাস হেটে এসে রোদসীকে পিছন থেকে আলিঙ্গন করে হঠাৎ এমন করায় রোদসী একটু লজ্জাবোধ করে। তা ওর মুখ দেখেই উচ্ছ্বাস টের পেলো। সেটা দেখে উচ্ছ্বাস হাসলো।
চলবে।
ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।