তিক্ত_প্রণয়ালাপ কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল পর্ব:9

0
399

গল্পঃ #তিক্ত_প্রণয়ালাপ
কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল
পর্ব:9

অনামিকার মাথায় চট করে একটা প্রশ্ন খেলে গেলো…
— “তাহলে কি প্রীতম এই জন্যই আমার সাথে তিনবছর ধরে ভালোবাসার অভিনয় করেছে??”

প্রান্তিক অনামিকার দিকে ঘুরে তাকালো, অনামিকাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে নিজে হাঁটু মুড়ে বসলো অনামিকার সামনে..অনামিকার গালে হাত রাখলো…
— “যখন থেকে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা কি,তখন থেকেই আমার মনে শুধু তোমার বিচরণ অনামিকা..”

— “প্রীতম আর আমার বিষয়টা তো খুব গোপন ছিলো,আমার বন্ধুরাও জানতোনা, আপনি কিভাবে জানলেন?”

— “তোমার দাদাভাইয়ের জন্য আমাদের দুই পরিবারের বিচ্ছেদ হয়েছিলো পাঁচবছর আগে, এখনও এর কোনো সুরাহা হয়নি…আমি ভেবেছিলাম আমার ভালবাসা হয়তো একতরফাই থেকে যাবে…”

— “আমি এগুলো শুনতে চাইনি প্রান্তিক, আমি যেটা জানতে চেয়েছি সেটা বলুন…”

— “এত অধৈর্য্য হচ্ছো কেনো বউ? আমার কথাটা মন দিয়ে শোনো না..”

— “এরকম সাসপেন্স ক্রিয়েট করে কথা বললে আমার প্রেসার বেড়ে যাবে…”

— “তোমার এই হতভাগা বর আছে তো তোমার প্রেসার কমানোর জন্য…”

অনামিকা বিছানা থেকে একটা বালিশ তুলে প্রান্তিকের দিকে ছুঁড়ে মারলো…
— “এই আপনি আসল কথা বলবেন নাকি আমি পুলিশে ফোন করে বলবো আপনি আপনার ওই ঘরে মেয়েদের মেরে আটকে রেখেছেন…”

প্রান্তিক মুখ থেকে বালিশ টা সরিয়ে আবার বিছানায় রাখলো…
— “বাব্বাহ বউ তো আমার দেখছি ভালোই হুমকি দিতে শিখে গেছে, খুব সাহস হয়ে গেছে দেখছি…”

অনামিকা খুব বিরক্ত হলো…
— “বউ বউ করে আদিখ্যেতা না করে বলুন আমাকে তাড়াতাড়ি..”

প্রান্তিক হাসলো অনামিকাকে রেগে যেতে দেখে…
— “হঠাৎ একদিন অনীশদা ফোন করলো আমায়, আমি অবাক হয়েছিলাম…ও জানতো আমি তোমাকে পছন্দ করি..তাই তোমাকে বাঁচানোর জন্য ও আমাকে অনুরোধ করে…”

— “মানে?”

— “প্রীতমের সাথে তুমি সম্পর্কে আছো এটা ও জানতে পেরেছিলো, সেদিন ও অনুধাবন করেছিলো যাদের সাথে এতদিন ও অন্যায় করে এসেছে তাদের বাড়ির লোকের অবস্থা ঠিক কি হয়, যখন দেখলো নিজের বোনই নিজেদের ফাঁদে পা দিয়েছে…তোমার দাদাকে ফোন করছি,বাকিটা ওর কাছ থেকেই শোনো..”

প্রান্তিক অনিশের নম্বরে ফোন লাগালো… চারটে রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হলো…
— “ তোমার বোন সব জেনে গেছে, বাকিটা তুমি বলো..”

— “ তুই ওকে সব বলে দিলি??”

— “তোমাদের কুকর্ম ঢাকতে তো আমি চিরকাল ওর কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে পারবনা..”

— “দে ওকে ফোনটা দে ”

— “ স্পিকারে আছে, ও শুনতে পাচ্ছে তুমি বলো…”

অনীশ কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল…
— “ অনু”

অনামিকা শব্দ করে কেঁদে উঠলো, কতদিন পর ও ওর দাদাভাইয়ের গলা শুনছে…কিন্তু পরক্ষণেই প্রান্তিকের বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেলো ওর…
— “ছি দাদাভাই, তুই কি করে করলি এগুলো?? তোর একবারও মনে পড়লো না তোরও একটা বোন আছে…”

— “ আমাকে ক্ষমা কর অনু,আমি আমার অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছি এখন…আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে আমার হাতে কোনো কাজ ছিলোনা…কিছু কিনতে গেলে বাবার কাছে হাত পাততে হতো…খুব লজ্জা লাগতো…একদিন প্রীতমের সাথে দেখা হলো…ওর মাধ্যমেই এই চক্রের মধ্যে ঢুকে পরি আমি..অনেক অনেক টাকা আসতো..টাকার প্রতি একটা লোভ জেগে গিয়েছিলো…তখন আমি প্রনতির কথা বলি প্রীতম কে…এরপর বাকিটা নিশ্চই তোকে প্রান্তিক বলেছে…”

— “ টাকা তোকে এতটাই অন্ধ করে দিলো যে প্রণতি দির সাথে এমন করলি…”

— “তার প্রায়শ্চিত্য করতে হচ্ছে আমাকে তোর মাধ্যমে,আজ প্রান্তিক না থাকলে আমি তোকেও বাঁচাতে পারতাম না রে , আমাদের এই গ্রুপে ঢোকার আগে বলে দেওয়া হয় যে পরিবারের প্রতি মায়া রাখা যাবেনা, যখন যাকে টার্গেট করবে তখন তাকেই তুলতে হবে,সেটা কারোর মা,দিদি ,বোন বা কোনো আত্মীয় হলেও…কোনো একচোখামী করা যাবেনা তখন…আমি তোদের কথা কাউকে বলিনি…কিন্তু আমি কিভাবে বুঝবো প্রীতম তোকেই টার্গেট করবে…”

অনামিকা একবার প্রান্তিকের দিকে আড়চোখে তাকালো…প্রান্তিক অনামিকার চোখের ভাষা পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে…ফোনের ওপার থেকে অনীশ বলে…
— “যেদিন আমি তোর আর প্রীতমের বিষয়টা জানতে পারি আমার মাথা কাজ করছিলনা,তোকে কিভাবে এই চক্রান্ত থেকে উদ্ধার করবো ভেবে উঠতেই পারছিলাম না,তখনই প্রান্তিকের কথা মাথায় এলো আমার..ও তোকে ভালোবাসে এটা জানতাম আমি,তাই যতই আমার সঙ্গে শত্রুতা থাকুক তোর ক্ষতি ও হতে দেবেনা, আমার কথায় ও কলকাতায় আসে…আমি বাবা আর প্রান্তিক গোপনে আলোচনা করি…”

অনীশ থামলো, এরপর থেকে প্রান্তিকই ভালো বলতে পারবে বিষয়টা…
— “প্রীতম আমাকে চেনেনা, আমি যে প্রণতির দাদা এটা ও জানতোনা, ছদ্মবেশে প্রীতমের সাথে দেখা করি…ওর সামনে নিজেকে একজন এমন মানুষ প্রমাণ করি যার প্রত্যেক রাতে নতুন নতুন মেয়ের প্রয়োজন হয়…”

কথাটা বলেই প্রান্তিক অনামিকার দিকে তাকালো…অনামিকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে দেখে প্রান্তিক হাসলো…
— “এটা না করলে যে ও তোমাকে আমার হাতে তুলে দিতোনা, এর বিনিময়ে ও আমার কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়েছিলো আবার পরে ওর মায়ের ট্রিটমেন্টের খরচ বাবদ ষোলো লাখেরও বেশি খরচ হয় আমার, এতে অবশ্য আমার কোনো আফশোষ নেই ,আফশোষ আছে ওই প্রথমের দশ লাখ টাকার ওপর…”

— “মানে? ষোলো লাখের থেকে দশ লাখ টাকার ওপর আপনার বেশি আফসোস??”

— “এর উত্তরটা পরে দেবো,আগে পুরোটা শোনো…ও নিজে তোমাকে দিয়ে যায় আমার কাছে অজ্ঞান অবস্থায়…তারপর বাকিটা তো তুমি জানো…”

অনীশ ফোনের ওপার থেকে মৃদু হাসলো…তার বোন যোগ্য একজন মানুষকে পেয়েছে ভেবে…কিন্তু অনুশোচনাও হলো খুব…
— “তুই আমার বোনের জন্য এত কিছু করছিস আর আমি দেখ তোর বোনের সবথেকে বড় সর্বনাশটা করেছি,আমার জন্য তোর বোন আজ আর এই পৃথিবীতে নেই…”

— “কিন্তু প্রণতি দি তো…”

অনামিকার মুখটা চেপে ধরে প্রান্তিক…চোখের ইশারায় বলতে না করে…অনামিকা চুপ হয়ে যায়…প্রান্তিক পুনরায় অনিষের উদ্দেশ্যে বলে…
— “এখন তাহলে রাখলাম অনীশ দা…”

ফোনটা কেটে দিয়ে অনামিকার মুখ থেকে হাতটা সরায় প্রান্তিক…
— “আপনি কেনো আমাকে বলতে দিলেননা প্রণতি দি বেঁচে আছে…”

— “আমি অনীশদাকে এখনও বিশ্বাস করিনা অনামিকা, আমার বোনের খবর আমি ,মা , বাবা আর তুমি ছাড়া কেউ জানেনা…আর আমাদের ফ্যামিলির বাইরে যেনো এই কথাটা না যায়…এটা আমার অনুরোধ…”

অনামিকা প্রান্তিকের হাতের ওপর হাত রাখে…
— “কেউ জানতে পারবেনা,তার আগে বলুন তো ষোলো লাখের থেকে দশ লাখের ওপর আপনার বেশি কেনো আফশোষ…?”

প্রান্তিক হাত থেকে ফোনটা রেখে অনামিকার কোমর জড়িয়ে ওকে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো…
— “আমার বউ কোনো পণ্য নয় যে তাকে দশ লাখ টাকা দিয়ে কেনা যাবে, আমার বউ আমার হৃদয়ের রানী… তাকে কেউ ছুঁতে আসলে শেষ করে ফেলবো আমি তাকে…”

— “এখন তো খুব বউ বউ করছেন,আর ওই রুমে যে ওতগুলো মেয়েকে মেরে রেখে দিয়েছেন…”

প্রান্তিক বিরক্তি ভঙ্গিতে অনামিকাকে ছেড়ে দিলো…
— “ঘটে কি একটুও বুদ্ধি নেই?এত কিছু বলার পরও মনে হয় ওই ঘরে লাশ আছে?”

— “তাহলে ঐ ঘরে কি আছে? আমি দেখবো..”

— “কেনো ওই ঘরটা নিয়ে পড়ে আছো বলো তো?? তোমার এই একমাত্র বরটা যে খুব ক্ষুধার্ত সেই খেয়াল রেখেছো তুমি?”

অনামিকা জিভ কাটলো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলো দুপুর দুটো বাজে…এই হসপিটাল যাওয়ার জন্য স্নান ,রান্না কিছুই হয়নি ওদের…
— “ রান্না করার সময় পাইনি, আপনি বরং স্নান করে আসুন ,ততক্ষন আমি দেখি কম সময়ের মধ্যে কি বানানো যায়…”

অনামিকা যেতে গেলে প্রান্তিক অনামিকাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টানে যার ফলে দুজনেই বিছানায় পড়ে যায়…প্রান্তিকের ওপর অনামিকা…অনামিকা প্রান্তিকের শার্ট খামচে ধরে আছে…ওর মুখের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুলগুলো প্রান্তিক সযত্নে কানে গুঁজে দেয়…
— “বউ,মিষ্টি খাবো..”

প্রান্তিকের অদ্ভুদ আবদার শুনে অনামিকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো…
— “এই দুপুরবেলা খালি পেটে কেউ মিষ্টি খায় ?”

— “বউ থাকলেই সব পুরুষ মানুষরা এই মিষ্টি যখন ইচ্ছে খেতে পারে…”

— “মিষ্টি খাওয়ার সাথে বউ….”

প্রান্তিকের কথার অর্থ বুঝতে পেরেই চুপ হয়ে যায় অনামিকা, প্রান্তিকের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে…
— “উমহুম মিষ্টি না দিলে তো ছাড়া পাবেনা তুমি…”

— “বেশি মিষ্টি খেলে সুগার হয়ে যাবে, ছাড়ুন আমায়..”

— “হোক না ক্ষতি কি? এই মিষ্টির স্বাদ নেওয়ার জন্য সুগার হলেও তার পরোয়া করিনা আমি…”

অনামিকার মুখের ধরন হটাৎ পাল্টে গেলো…কিছুটা গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করলো..
— “আচ্ছা প্রান্তিক,আপনি আমার কাছ থেকে এতদিন এই কথাগুলো লুকিয়েছিলেন কেনো??”

প্রান্তিক বেশ বিরক্ত হয়…এই রোমাঞ্চকর মুহূর্তে আবার পুরোনো কথা তোলায় অনামিকার ওপর খুব রাগ হয় ওর…
— “তুমি বড্ড আনরোমান্টিক বউ, এমন একটা মুহূর্তে কোথায় আমাকে একটু আদর করবে, তা না করে এইসব সিরিয়াস প্রশ্ন করছো…”

— “আহা বলুন না”

— “তখন বললে কি বিশ্বাস করতে? ভালবাসায় অন্ধ হয়েছিলে তো তুমি…আর তখন বললে তুমি বিষয়টা গোপন থাকতে দিতেনা,এতে তুমিও বিপদে পড়তে আর আমার বোনও..”

— “আচ্ছা প্রান্তিক…”

বিরক্তিতে চ সূচক শব্দ করলো প্রান্তিক…
— “প্লীজ এখানেই তোমার প্রশ্নের ভাণ্ডার শেষ করো,এখন আমি ওইসবের মুডে নেই… আর এইসব প্রান্তিক প্রান্তিক কি?? বাঙালি বউ রা বরেদের ওগো, হ্যাঁ গো বলে ডাকে…”

অনামিকা প্রান্তিকের বুকে দুবার মারলো…
— “দুপুর হয়ে গেলো ,এখনও স্নান করেননি…গা দিয়ে গন্ধ বেরোচ্ছে…যান স্নান করে আসুন…”

প্রান্তিক অনামিকার কানের কাছে মুখটা নিয়ে গেলো…
— “জানো বউ ,গরমকালে জলের খুব প্রবলেম হয় এখানে… কিনে খেতে হয়, তাই এখন থেকেই জলটা সাশ্রয় করলে হয়না?”

— “তারমানে কি আজকে আপনি স্নান করবেননা ভাবছেন?”

— “আমরা তো স্বামী স্ত্রী, তুমিও তো স্নান করোনি এখনও..দুজনে একসঙ্গে ওয়াশরুম শেয়ার করাই যায়,এতে আমরা কিছুটা জলও বাঁচাতে পারবো…”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here