আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্ব_০৭

0
324

#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৭

” আমার থেকে চুমু নেন না অন্য মেয়ের দেওয়া এতকিছু নিচ্ছেন কীভাবে? কোন মেয়ে আপনাকে পাঞ্জাবি, ঘড়ি,ওয়ালেট পাঠিয়েছে? আমি থাকতে আবার কোন মেয়ে আপনার ওপর নজর দিয়েছে?”

ইহান পার্সেল খুলে ভূত দেখার মতো বসে ছিল। বিছানার ওপর দুইটা পাঞ্জাবি রাখা, একটা সাদা আরেকটা গাঢ় খয়েরী। একটা ঘড়ি, ওয়ালেট ও পাশে রাখা। ইহান সেগুলো থেকে চোখ ফিরিয়ে রায়ার দিকে তাকায়।

” কী বললি?”
” কোন মেয়ে পাঠিয়েছে আপনাকে এসব?”

ইহান ঠান্ডা মেজাজে বলে,” আমি জানি না। এখানে এসব ছাড়া কিছুই নেই।”
” আপনি বাসায় এসেছেন সেটা বাহিরের মানুষ জানলো কী করে?”
” সেটা আমি কী করে বলব আজব?”
” একদম রাগ দেখাবেন না৷ আমি কিছু করলে সেটা দোষ আর আপনি করলে সেটা আপনি জানেন না?”

ইহান রায়ার কথায় বেশ দমে যায়। নরমস্বরে বলে, ” আমি সত্যিই জানি না এসব কে পাঠিয়েছে। আমার কারো সাথে এফেয়ারও নেই যে সে পাঠাবে। তুই তো জানিস আমি তোকে..”

ইহান চুপ হয়ে যায়। কথা মাঝপথে থেমে যাওয়ায় রায়া বলে, ” আপনি আমাকে কী?”
” কিছু না।”
” বলুন?”
” বললাম তো কিছু না।”
” ভালোবাসেন না এখন আর?”
” সাত বছর ধরে।”
” দূরে থাকছেন কেন? আমার শা*স্তি পাওয়া শেষ হয়নি? বুকের ভেতরটা খুব খালি খালি লাগে জানেন? আমার কী আপনাকে আর পাওয়া হবে না?”
” আমারও লেগেছিল। সত্যটা বুকে তীরের মতো বি*ধেছিল।”
” দূরে গেলে ভালো থাকবেন? ব্যবস্থা করে দেব?”
” রায়া প্লিজ সবসময় এই ঘ্যানঘ্যানানি আমার ভালো লাগে না। তুই তোর মতো থাক, আমাকে আমার মতো থাকতে দে প্লিজ।”
” দূরত্ব ঘুচিয়ে কাছে আসতে চেয়েছিলাম, দূরে সরিয়ে দিলে আমার আর ফেরা হবে না। মেয়েদের অভিমান অনেক বেশি। সহ্য করতে পারবেন না। ”

রায়া বারান্দায় চলে যায়। ইহান মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে কে পাঠালো এসব। এত এত চিন্তার মাঝে রায়ার এসব কথা একদমই ভালো লাগছিল না ইহানের। সবগুলো জিনিস উল্টেপাল্টে বারবার দেখতে থাকে। গিফট পাবে মেয়েরা। শাড়ি, চুড়ি, পৃথিবীতে যত প্রসাধনী আছে সব পাবে। ছেলেরা কেন গিফট পাবে! তাও আবার সারপ্রাইজ গিফট। সারপ্রাইজ গিফট তো না যেন টেনশনের বস্তা।
ইহান উঁকি দিয়ে বারান্দায় দেখে রায়া বারান্দার গ্রিল ধরে নিজের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান মায়ের কাছে শুনেছে রায়া একটাবারের জন্যও নিজের বাড়িতে যায় নি। রায়ার সকালে ঘুমোনোর অভ্যাস তাই রায়ার মা মাঝে মাঝে এসে দেখে গেছেন।

ইহান রায়ার কাছে যাবে এমন সময় রায়ার ফোনে ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ আসার শব্দ হতেই ইহান ফোনটা হাতে নেয়৷ স্ক্রিনেই মেসেজ নোটিফিকেশন দেখা যাচ্ছে। ইহান স্পষ্ট দেখতে পেলো সেখানে লেখা, ” দোস্ত চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে ইহান ভাইয়ার ওসব কিনতে। বিকেলে আমি তোকে বাকি এক হাজার ব্যাক দিয়ে দেব।”

ইহান মেসেজটা দেখে খানিক্ষন থ’ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথায় যেন ঢুকেও কিছু ঢুকছে না। রায়া এসব করেছে! আর এমন ভাব করল যেন সে কিছুই জানে না!

ইহান ফোনটা রেখে বারান্দায় চলে যায়। রায়ার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, ” স্যরি।”

রায়া পাশে না তাকিয়েই বলে,” কেন?”
” ওই যে ধমক দিলাম সেজন্য।”
” শুধু ধমকের জন্য?”
” আর কীসের জন্য স্যরি বলা উচিৎ? ”
” কিছু না।”
” বাজারের মোড়ের ওখানে নীলরঙা একটা বাড়ি আছে না? ওখানে একটা মেয়ে আছে। তোর মতো সুন্দর দেখতে। ফর্সা গায়ের রঙ কিন্তু ওর চুলগুলো অনেক বড়। ওদিকে গেলেই বারান্দায় এসে আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে ওই মেয়েটা এসব দেয় নি তো? দিতেও পারে তাই না বল? ভালোবেসে যেহেতু পাঠিয়েইছে, নষ্ট করা উচিৎ হবে না।”

রায়া এবার এক ঝটকায় ইহানের দিকে ফিরে তাকায়। ভ্রু কুচকে ইহানের দিকে তাকিয়ে বলে, ” কোন মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে? নিয়ে চলুন আমাকে তার কাছে। আমি এক্ষুনি দেখব তাকে। ”
” দেখে কী করবি? হিংসে হবে দেখে।”
” হলে হোক, আপনার কী? ওই মেয়ের মুখে আমি এসি**ড নিক্ষেপ করাবো, চেয়ারম্যানের মেয়ে আমি।”
” এত সাহস?”
” সাহসের কিছুই দেখেন নি।”
” দেখতে চাই, দেখা একটু সাহস।”

রায়া দুই পা এগিয়ে এসে এক পা ইহানের পায়ের ওপর রাখে। এই প্রথম রায়া নিজের ইচ্ছেতে ইহানের কাছে আসে। নিজের পায়ে প্রেয়সীর স্পর্শ পেয়ে সমস্থ শরীর যেন আন্দোলিত হয়। নিশ্চুপ হয়ে যায় ইহান। দুজন একে অপরের চোখে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে নেয়। দুজন যেন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে ধীরেধীরে। রায়া নিজের আরেকটা পা ইহানের পায়ের ওপর রাখতেই ইহান রায়ার পড়ে যাওয়া আটকাতে কোমর জড়িয়ে ধরে। রায়া ইহানের পায়ের ওপর পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়ে। রায়ার সমস্ত শরীর কাঁপছে। সেদিনের প্রথম ছোঁয়ায় কোন অনুভূতি অনুভূত হয়নি রায়ার। আজ যেন পেটের নারী অব্ধি কাঁপা-কাঁপি করছে। রায়া ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছে না। রায়া ইহানের ঠোঁটের দিকে নজর ফেলে ধীরে ধীরে সেটাকে গন্তব্য মনে করে এগুতে থাকে। ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করতেই রায়ার শরীর যেন একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। সাথে সাথে দুজন চোখ বন্ধ করে নেয়৷ ইহান রায়ার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রেয়সীর সাথে ভালোবাসাময় প্রথম চুম্বন উপভোগ করতে থাকে। দুজন যেন বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মহাকাশ থেকে যেমন কোন কিছু হঠাৎ কোথাও ছিটকে পড়ে ঠিক তেমনই যেন রায়া আর ইহান পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে ছিটকে যায়। বাস্তব থেকে তারা এখন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

এশা ভাইয়া ভাইয়া করে ডাকতে ডাকতে রায়া আর ইহানের রুমের দিকে আসতে থাকে। এশার গলা অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট হতেই রায়া আর ইহান দুজন নিমিষেই দুজনকে ছেড়ে বারান্দার দুইপ্রান্তে চলে যায়। রায়া একবার ইহানের দিকে তাকাতেই দেখে ইহান অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। ইহান রায়ার সামনে থেকে রুমের দিকে পা বাড়ায়। ইহানের মুখে হাসি লেপ্টে আছে। এশাকে দেখেই মুখটা গম্ভীর করে নেয় সে।

” কী চাই? ডাকছিস কেন?”
” টাকা দাও। টাকা লাগবে।”
” কীসের টাকা?”
” আমার বান্ধবীরা বিকেলে বের হচ্ছে সবাই মিলে, আমিও বের হব।”
” কত টাকা লাগবে?”
” এক হাজার হলেই চলবে।”

ইহান টেবিলে রাখা ওয়ালেট থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে এশার হাতে দেয়। এশা নোটটা নিয়ে রুমের এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে, ” রায়া আপু কই? ওয়াশরুমে?”
” বারান্দায় আছে। ওকে আবার কীসের দরকার?”
” শাড়ি নেব একটা। সবাই শাড়ি পরবে। ”
” আচ্ছা যা, গিয়ে দেখ।”

এশা আর কথা না বাড়িয়ে সোজা বারান্দায় চলে যায়। বারান্দার রুম থেকেই আপু বলে ডাক দিতেই রায়া চমকে ওঠে। পিছনে তাকাতেই এশাকে দেখে আমতা আমতা করে বলে, ” ক কী?”

” কিছু হয়েছে তোমার?”

“তোর ভাইকে আমি চুমু খেয়েছি, গভীর যে চুমু আছে না? ওটা। আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেছে। নাড়িও কাঁপছে জানিস?”- কথাগুলো বলতে না পেরে বলে, ” কিছু হয়নি। তুই কিছু বলবি?”

” হ্যাঁ, তোমার সবুজ শাড়িটা দাও। সেদিন কিনেছিলে না? ওটা।”
” আলমারি থেকে নিয়ে নে সোনা প্লিজ। আমি রুমে যেতে পারব না।”
” ওমা, নিজের রুমে যেতে পারবে না কেন?”
” পারব না বলতে, যেতে ইচ্ছে করছে না। ”
” না তুমি আসো। আমার জুয়েলারিও লাগবে।”
” যেতেই হবে?”
” হ্যাঁ আসো।”
” তোর ভাইয়া রুমে আছে?”

এশা রুমে উঁকি দিয়ে ইহানকে না দেখতে পেয়ে বলে, ” না ভাইয়া রুমে নেই। ”
” আচ্ছা চল।”

রায়া এশার সাথে রুমে চলে আসে। রুমে এসে আসলেই ইহানকে দেখতে পায় না সে। শুকনো একটা ঢোক গিলে আলমারির দিকে চলে যায়। আলমারি থেকে এশার পছন্দের সবকিছু বের করে এশার হাতে দিতেই এশা সেগুলো নিয়ে চলে যায়। রায়া বিছানায় রাখা ইহানের জন্য নেওয়া জিনিসগুলো দেখতে এগুবে ঠিক তখন ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হয়। রায়া যেন সেখানেই স্ট্যাচু হয়ে যায়। রায়া মনে মনে নিজেই নিজেকে নোংরা অকথ্য ভাষায় গা**লি দিতে থাকে। মনে মনে নিজেকেই শাসায়, কেন যে তখন ওরকম বেহায়ার মতো কাজ করতে গেলি! এখন এই লোকটার সামনে দাঁড়াবি কী করে? এই লোকটা তোকে এখন কথায় কথায় লজ্জা দেবে দেখে নিস।

রায়া ইহানকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইহানের মুখভঙ্গি কোন কিছুই বলছে না, কিছুর আভাসও দিচ্ছে না। তবে কী আগামবার্তা ছাড়া কোনকিছু ঘটবে!

#চলবে…..

যারা পড়ছেন তারা কাইন্ডলি একটু পেইজে চেক করে দেখবেন ফলো দিয়েছেন কি না। ফলো না দেওয়া থাকলে দিয়ে রাখবেন। আজকের পর্বে পাঠকেরা রেস্পন্স করবেন একটু। রেস্ট্রিকশনের কারণে অনেকের সামনে পোস্ট যাচ্ছে না। একটু বেশি বেশি কমেন্ট করলে ভালো লাগবে।

বিঃদ্রঃ প্লিজ কেউ লজ্জা দিও না আজকের পর্ব নিয়ে।😑

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here