তিক্ত_প্রণয়ালাপ কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল পর্ব:6

0
260

গল্পঃ #তিক্ত_প্রণয়ালাপ
কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল
পর্ব:6

— “আপনি ওনাকে কেনো বললেন আমি আপনার বউ??”

ওই বাঙালি মহিলাকে বিদায় দিয়ে দরজা বন্ধ করে পিছনে তাকাতেই এমন একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হয় প্রান্তিক…অনামিকার চোখে অনেক কৌতূহল,তারপর অনামিকাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুব রেগে যায় প্রান্তিক…

— “তোমাকে না বলেছিলাম বাইরে না বেরোতে, কেনো বাইরে এসেছো তাহলে?? বাইরে এসে আবার লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলে কেনো??”

— “এখানে তো লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শোনার কোনো প্রশ্নই নেই যেখানে আমাকে নিয়েই কথা হচ্ছিলো, আপনি ওনাকে কেনো বললেন আমি আপনার বউ?? আনসার মি প্রান্তিক…”

অনামিকা তাকে জেরা করছে এটা ভেবেই প্রান্তিকের চোখে আগুন সৃষ্টি হয়…মুহূর্তের মধ্যেই অনামিকার হাত দুটো চেপে ধরে পিছনে ঘুরিয়ে শক্ত করে ধরে ওকে…
— “তাহলে কি বলতাম আমি?? তুমি আমার র*ক্ষি*তা??

— “মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ প্রান্তিক, আমার সম্পর্কে এমন কথা বলবেন না ,আমি আপনার কাছে সইচ্ছায় আসিনি,আপনি আমাকে আটকে রেখেছেন এখানে…আমি সবাইকে বলে দেবো..”

প্রান্তিক খুব জোড়ে হেসে উঠলো…
— “প্রমাণ করতে পারবে তো?? এখানে আমার পজিশনটা ঠিক কি সেটা তুমি এখানে এসেই আশা করি বুঝতে পেরেছো…আমার পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোনো আইডিয়া নেই মিস অনামিকা পাল…”

প্রান্তিককে ব্যাঙ্গ করে হাসলো অনামিকা…
— “হ্যাঁ সেই আর কি! পাওয়ার আছে বলেই তো আপনার নতুন নতুন নারীর শখ যায়…”

— “তুমি কবে দেখলে অনামিকা আমার নতুন নতুন নারীর দরকার হয়??”

প্রান্তিক অনামিকাকে আরও জোড়ে চেপে ধরে…এতে অনামিকার হাতের চুড়িটা ভেঙে যায়..ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে ও..
— “হাতটা ছাড়ুন ,আমার লাগছে…”

অনামিকার ভেজা কণ্ঠ শুনে সঙ্গে সঙ্গে ওর হাতটা ছেড়ে দেয় প্রান্তিক …অনামিকা নিজের হাতটা অন্য হাত দিয়ে চেপে ধরে…প্রান্তিক বোঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে ,যখনই ও নিজের হাতটা দেখে আঁতকে ওঠে ও…নিচে ভাঙ্গা চুড়িটা দেখে বুঝতে পারে ও নিজের ভুলটা, অনামিকাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে ও…
— “অ্যাম সরি অনামিকা, দেখি হাতটা দাও…আমি বুঝতে পারিনি..প্লীজ প্লীজ অনামিকা হাতটা দাও…ব্লিডিং হচ্ছে,ক্লিন করতে হবে…”

প্রান্তিক অনামিকার হাতটা ধরতে গেলে অনামিকা নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়…
— “জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছেন??চাইনা আপনার এই দয়া…আপনার তো আমার শরীর দরকার?? আমি স্বইচ্ছায় নিজেকে আপনার হাতে তুলে দিলাম…আপনার কত খিদে মিটিয়ে নিন আজ…”

— “শান্ত হও, হাতটা দাও..নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে…”

— “এত অস্থির কেনো হচ্ছেন আপনি?? আমার পরিবারের থেকে দূরে সরিয়ে আমাকে যেই ব্যথাটা আপনি দিয়েছেন এটা সেই তুলনায় কিছুই না…”

— “নিজের রুমে যাও…সময় হলে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়ে যাবে..”

— “আমি এখনই সব প্রশ্নের উত্তর চাই…”

প্রান্তিক নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হাতের মুঠো শক্ত করে লম্বা স্বাস নিলো …তার স্থির কন্ঠে বললো…
— “ঘরে যাও অনামিকা…,এই নিয়ে পরে কথা হবে…”

— “আমি আমার প্রশ্নের উত্তর না পেলে কিছুতেই ঘরে যাবনা…”

বাঁধ ভাঙলো প্রান্তিকের… এই কদিন অনেক চেষ্টা করেছে নিজেকে শান্ত রাখার…কিন্তু এবার আর পারলোনা…উচ্চস্বরে বললো…
— “আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না তুই?? ঘরে যেতে বলছি তো…আর এক সেকেন্ডও আমার চোখের সামনে থাকলে খুন করে ফেলবো তোকে…যা…”

প্রান্তিকের উঁচু আওয়াজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো অনামিকা…ছোটবেলা থেকেই খুব আবেগপ্রবণ ও, কারোর উঁচু গলার স্বর সহ্য করতে পারেনা…ছুটে ড্রয়িং রুম থেকে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো অনামিকা…প্রান্তিক সেইদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো…
— “তুমি যতটা খারাপ ভাবো,আমি ততটাও খারাপ নই অনু…তবে তুমি যদি আমার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াও তোমাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলতে আমি একবারও ভাববো না..তাই এমন কোনো কাজ করোনা যাতে আমাকে এই সিদ্ধান্তটা নিতে হয়…প্রান্তিক মজুমদার প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছে…সে তার লক্ষপূরণ করবেই…”
.

রাত গড়িয়ে সকাল,সকাল গড়িয়ে বিকেল ,বিকাল গড়িয়ে রাত আবার পুনরায় রাত গড়িয়ে সকাল..এভাবে কেটে গেছে প্রায় একটা মাস…সম্পর্কের সমীকরণ পাল্টায়নি এই একমাসে…শুধু অনামিকা বাড়ির প্রত্যেকের জন্য চিন্তা করে করে নিজের শরীরের অযত্ন করেছে…আগের থেকে অনেকটাই রোগা হয়ে গেছে সে…তবে অবাক করা বিষয় এই একমাসে অনামিকাকে ছুঁয়েও দেখেনি প্রান্তিক… তার মতে ডক্টর নাকি বলেছে অনামিকা এখন কনসিভ করলে নাকি ওর প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে… তাই যথাসাধ্য দূরত্ব বজায় রেখেছে ও অনামিকার থেকে…

প্রান্তিক এখন বাড়ির বাইরে আছে…অনামিকা বাড়িতে একা…যদিও গেটের বাইরে দুজন গার্ডকে রেখে গেছে প্রান্তিক…এই একমাসে অনামিকা খেয়াল করেছে একটা রুমে প্রত্যেকদিন রাতে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটায় প্রান্তিক…বেশ কৌতূহল জেগেছে তার মনে ওই রুমটা নিয়ে…যদি প্রান্তিকের সম্পর্কে কিছু জানতে পারে এটা ভেবে ওই রুমে চিরুনি তল্লাশি করবে বলে ভেবে ফেলেছে ও…অনেক কষ্টে এই ঘরের চাবি উদ্ধার করেছে … চাবি খুলে ঘরে ঢোকে অনামিকা…চারিদিক অন্ধকার হওয়ায় কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা…

— “এখানে এত অন্ধকার কেনো?? ফোনটাও আনিনি… যাই গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসি…”

রুম থেকে বেরোতে যাবে অমনি বাইরের কলিং বেল বাজার শব্দ পায় ও…ভয়ে ভয়ে রুমে আবার চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেয় প্রান্তিককে…প্রান্তিক ভিতরে ঢোকে…
— “কি করছিলে?? এত দেরি হলো কেনো??”

— “শরীরটা একটু খারাপ…শুয়ে ছিলাম”

— “রেডী হও,ডক্টরের কাছে যাবো..”

অনামিকা কপাল চাপরালো,শুধু শরীর খারাপ বলাতে এরকম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো…
— “কি হলো যাও”

— “এত ব্যস্ত হবেননা, আমার তেমন কিছু হয়নি…কয়েকবার বমি হয়েছে শুধু…”

প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকাল…অনামিকা যে মিথ্যে বলছে সেটা বুঝতে ওর বেশিক্ষণ সময় লাগলো না…তবুও একটু মজা করার লোভ সামলাতে পারলনা প্রান্তিক..
— “এখনও তো কিছু করিইনি , তাহলে বমি হচ্ছে কিভাবে??”

— “কিছু করেননি মানে? কি করার কথা বলছেন আপনি?”

প্রান্তিক অনামিকার কানের কাছে মুখটা নিয়ে এলো…
— “আদর”

অনামিকার কানের পাশটা গরম হয়ে উঠলো…প্রান্তিকের থেকে দূরত্ব বাড়ালো নাহলে ওর হৃৎপিন্ডের দ্রুত ওঠানামা সম্পর্কে প্রান্তিক অবগত হয়ে যেতো…ও জানেনা এই অনুভুতির নাম কি…গত একমাস ধরে প্রান্তিক যেভাবে ওর কেয়ার করেছে সেরকমটা প্রীতম কোনোদিনও করেনি… এর পিছনে প্রান্তিকের যতই খারাপ উদ্দেশ্য থাকুকনা কেনো পুরুষের অতিরিক্ত যত্নে নারী দুর্বল হতে বাধ্য….তেমনটাই হয়তো হয়েছে অনামিকার সাথে…

— “খেতে দাও,খিদে পেয়েছে…”

— “আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন,আমি খাবার রেডি করছি…”

প্রান্তিক নিজের রুমে চলে যায়, অনামিকাও রান্নাঘরে চলে যায়…মিনিট পাঁচেক পর প্রান্তিক হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে…
— “অনামিকা!!”

প্রান্তিককে চিন্তিত দেখে অনামিকা ভয় পেলো…
— “কিছু হয়েছে??”

— “আমার রুমের পাশের রুমটায় তুমি ঢুকেছিলে??”

অনামিকার গলাটা শুকিয়ে গেলো…প্রান্তিক কি করে বুঝে গেলো অনামিকা ওই ঘরে ঢুকেছিল…
— “ওই রুমটা তো বন্ধ, লক করা…আমি কিভাবে ঢুকবো??”

— “সত্যি বলছো তো?? আমি যদি পরে জানতে পারি তুমি ওই রুমে ঢুকেছিলে তাহলে কিন্তু আমার সবথেকে খারাপ রূপটা তুমি দেখবে…তোমাকে মেরে ফেলতেও দুবার ভাববোনা আমি…”

অনামিকার মনের ভয়টা কমলো, প্রান্তিক শুধু সন্দেহ করেছে,নিশ্চিতভাবে কিছু জানেনা….তাই অনামিকা একটা পাল্টা প্রশ্ন করলো প্রান্তিককে …
— “ওই ঘরে এমন কি আছে যেটা আমি জেনে গেলে আপনার অসুবিধা হবে?? এমনকি আমাকে মেরে ফেলতেও দুবার ভাববেন না??”

প্রান্তিক একটু ঘাবড়ে গেলো অনামিকার প্রশ্নে…কিন্তু প্রকাশ করলো না…
— “ওই রুমে তোমার মত আরও অনেক মেয়ে আছে…”

বিস্ময় চোখে অনামিকা প্রান্তিকের দিকে তাকালো…
— “তাহলে আমি বাইরে কেনো?? আমাকেও ওদের সাথে ভিতরে রাখুন…”

প্রান্তিক অনামিকার শরীর ঘেঁসে দাঁড়ালো…
— “তুমি থাকতে চাইলেই রাখবো ওখানে,তবে ভেবে নিও মৃত মানুষদের সাথে থাকতে পারবে তো???”

অনামিকা চকিতে তাকালো প্রান্তিকের দিকে…
— “মানে??”

— “মানে যারা ছয়মাসের মধ্যে আমার মনের ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি তাদেরকে মেরে তাদের কঙ্কাল আমি ওই রুমের মধ্যে রেখেছি…এবার তোমার পালা…যদিও তোমার হাতে এখনও পাঁচমাস সময় আছে…”

ভয়ে প্রান্তিকের কাছ থেকে সরে গেলো অনামিকা…প্রান্তিক বাঁকাভাবে হাসলো অনামিকার দিকে তাকিয়ে…অনামিকা ভয়ে দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে দাঁড়িয়ে আছে…
— “আম..আমাকে মারবেন না, আমি মর..মরতে চাইনা…”

— “তাহলে ভুলেও আর ওই ঘরে পা রাখার চেষ্টা করবেনা, ওই রুমে অচেনা কোনো নিশ্বাস পড়লেও আমি টের পাই সেটা, মনে রেখো..”

অনামিকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়…প্রান্তিক একগ্লাস জল এগিয়ে দেয় অনামিকার দিকে…
— “ভয়ের কিছু নেই, বললাম তো তোমায় মারবোনা…”

— “আমি এখানে থাকবোনা,আমি এই মর্গে থাকতে পারবনা,আমাকে অন্য কোথাও রাখুন…প্লীজ…”

— “আগে জলটা খাও, আমি এই বিষয়ে পরে ভেবে দেখব…”

অনামিকা প্রান্তিকের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে এক নিশ্বাসে জলটুকু খেয়ে ফেলে…
— “আর জল খাবে??”

অনামিকা মাথা নাড়িয়ে না বলে…প্রান্তিক নিশ্চিন্ত হয়…
— “ডিনার রেডী করো, আমি আসছি দশ মিনিটের মধ্যে…”

প্রান্তিক রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো…তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হো হো করে হেসে উঠলো…
— “এই মেয়েটা এত বোকা কেনো কে জানে? একটা অবিশ্বাস্য কথাকে বিশ্বাস করে কীভাবে ভয় পেয়ে গেলো…যদিও আমার সুবিধাই হলো….ওই রুমে ঢোকার সাহস আর ও কোনোদিনও দেখাবেনা…এত ভীতু মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি….”

(( খুব শীগ্রই রহস্য উদঘাটন হবে, তোমরা কি মনে করো রহস্যটা ঠিক কি?? প্রান্তিক কে দেখে কি মনে হয়?? সবাই উত্তর দেবে…))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here