( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
” শি ইজ আ’ বিউটিফুল লেডি।”
কলেজের হলরুমে লালশাড়ি পরিহিতা নৃত্যরত রমনীকে দেখে থমকে যায় আদনান। সাথে সাথে সেই নারীর রূপের প্রশংসা অস্পষ্টভাবে বেরিয়ে আসে তার মুখ থেকে। পিছন থেকে কয়েকজন তাকে চেয়ারে বসতে বলায় ব্যস্ত হলেও সে মঞ্চের নৃত্যরত নারীকে পলকহীন চোখে দেখেই যাচ্ছে। হঠাৎ কোন একজনের ডাক কানে পৌঁছতেই সজ্ঞানে ফিরে আসে আদনান। বামপাশে দাঁড়ানো লোককে উদ্দেশ্য করে বলে,” এই মেয়েটাকে আমার চাই, খোঁজ করো সে কে? পুরো ডিটেইলস আমার চাই, আজই চাই।”
লোকটা মাথা হ্যাঁ-সূচক মাথা ঝাঁকায়। উলটো জিজ্ঞেস করে,” স্যার, মেয়েটা ওখান থেকে নামলে জিজ্ঞেস করব গিয়ে?”
” ওখানে যারা অনুষ্ঠান পরিচালনা করছে তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো মেয়েটার নাম কী? নাম শুনে অফিস থেকে পুরো ডিটেইলস নাও। সবকিছু আমাকেই কেন শিখিয়ে দিতে হবে? ঘটে কিছু নিয়ে আসো নি?”
লোকটা আর কিছু না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। আদনান সামনের সারিতে বসে মনোযোগ দিয়ে মেয়েটাকে দেখে যাচ্ছে। এই প্রথম কোন মেয়েকে তার এতটা মনে ধরলো। এক দেখাতেই যে মেয়েকে ভালো লেগে যায় সেই মেয়ের রূপের প্রশংসা করতেই হয়।
আদনান এখানে অল্প কিছুদিন হলো ইউএনও হয়ে এসেছে। উপজেলার পাশাপাশি কলেজ, প্রিন্সিপাল তার সাথে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে তোলায় আজ আদনান এখানে আমন্ত্রিত। প্রথমে ব্যস্ততার জন্য না আসতে চাইলেও পরবর্তীতে আজহার সাহেবের জোরাজুরিতে চলে এসেছেন। আদনানকে দেখে আজহার সাহেব জায়গা পরিবর্তন করে তার পাশে এসে বসে। দুজনে একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করে।
দুজন কথা বলছিলেন এমন সময় মাইক্রোফোনে একটা মেয়ের গলা ভেসে আসে। মেয়েটা হাসি মুখে বলছে,” ধন্যবাদ জানাই নওশীন হাওলাদারকে, এত সুন্দর একটা নৃত্য পরিবেশনের জন্য।” আদনান সেদিকে তাকাতেই দেখে মেয়েটা আর মঞ্চে নেই। মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে,” মেয়েটার নাম নওশীন! নওশীন। সে আমার নওশীন।”
______
নওশীন নাচ শেষ করে হলরুম থেকে বের হয়ে সোজা পাশের বিল্ডিংয়ে চলে যায়। বাহিরেই ইলমাকে দেখে তার দিকে পা বাড়ায় নওশীন। কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারে ইলমা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
নওশীন ইলমার বাহু ধরে টেনে নিয়ে এসে বলে,” দোস্ত আয় না, আমি চেঞ্জ করব। আমি একা একা চেঞ্জিংরুমে থাকতে পারব না। কেউ নেই ওখানে। ”
ইলমা ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে হোল্ড করতে বলে নওশীনকে বলে, ” দোস্ত সাবিত কল দিয়েছে, একটু কথা বলছি। আমি বাহিরেই আছি তুই প্লিজ গিয়ে চেঞ্জ করে আয়। রুমের ভেতরে নেটওয়ার্ক নেই।”
” একটু পর কথা বল। পাঁচ মিনিট লাগবে শুধু।”
” আমি বাহিরেই তো আছি। তুই যা প্লিজ।”
” হুম।”
নওশীন মন খারাপ করে ইলমাকে রেখে নিজেই চেঞ্জিংরুমের দিকে এগোয়। সে যা ভেবেছিল তাই, এখানে আশেপাশে কেউ নেই। নওশীন সাহস করে রুমের দরজাটা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। শাড়ি পরে সে এই গরমে আর থাকতে পারছিল না তাই নাচ শেষ করেই চেঞ্জ করতে চলে এসেছে। নওশীন স্যুইচবোর্ডের দিকে যেতেই দরজাটা ঘটাং করে বন্ধ হয়ে যায়। নওশীন স্যুইচবোর্ডে স্যুইচ টিপে যাচ্ছে কিন্তু লাইট অন হচ্ছে না। নওশীনের নেক্টোফোবিয়া আছে। অন্ধকার তার কোনমতেই সহ্য হয় না। ভয়ে নওশীনের শরীর কাঁপতে থাকে। চিৎকার দিয়ে ইলমাকে ডাকবে তার আগেই কেউ নওশীনের মুখ চেপে ধরে৷ সাথে সাথে নওশীনের প্যানিক এট্যাক হয়ে যায়। ভয়ে কাঁপতে থাকে সে। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। হঠাৎ নওশীনের কানের কাছে কেউ মুখ নিয়ে এসে পুরুষালি গলায় বলে ওঠে,” আমি বলেছিলাম আমার প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করে নিতে। আমাকে খুব বাজে লাগে? এই যে এখন আমি আস্তে আস্তে তোমার সমস্ত শরীর ছুঁয়ে দেব, ভালো হবে না বলো? আজকের পর থেকে আর কেউ তোমার দিকে মুগ্ধ নজরে তাকাবে না। কারো মনে তোমাকে পাবার কামনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না তুমি শুধু আমার। আমি আমার জিনিসে কারো নজর সহ্য করতে পারি না নিশু।”
কথা শেষ করেই সেই ব্যক্তি নওশীনের গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়৷ নওশীনের সারা শরীর কেঁপে ওঠে। মুখ দিয়ে গোঙানির আওয়াজ বেরোচ্ছে। নওশীন বুঝতে পারে সামনে দাঁড়ানো পুরুষটা আর কেউ নয়, সে হচ্ছে সাব্বির। সে এই রুমে কীভাবে এলো সেটাই বুঝতে পারছে না নওশীন৷ নিজেকে সামলে নেওয়ার খুব চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। কিছুতেই নিজের ভীতি আর দূর্বলতার সাথে পেরে উঠছে না। সাব্বির ডান হাতটা নওশীনের পেট ছুঁতেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে নওশীনের। আজ কি তবে সে নিজের সম্ভ্রম হারাবে! মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে যাচ্ছে । খুব করে চাইছে কেউ এখানে এখনই চলে আসুক আর তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করুক। নওশীনের হাত দুটো অবশ হয়ে আসছে।
সাব্বির আরও নোংরাভাবে নওশীনকে স্পর্শ করার প্রস্তুতি নিতেই নওশীন সামনের দিকে পা ভেঙে দ্রুততার সাথে হাটু উঁচু করে সাব্বিরের তলপেটে আঘা*ত করে। পরপর দুইবার দুই জায়গায় লাগে সাথে সাথে নিজের শরীরের সেই অংশের প্রচন্ড ব্যথায় কুকিয়ে ওঠে সাব্বির। বেঞ্চের ওপর পড়ে গিয়ে ‘ ও মা গো’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে৷ নওশীন সেই সুযোগে দেয়াল হাতরাতে হাতরাতে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে বাহিরে চলে আসে। বাহিরে বারান্দায় তখন ইলমা ছিল না। নওশীন একপ্রকার খোড়াতে খোড়াতে এগিয়ে যায়। মাথা ঘুরছে তার সাথে যেন সমস্ত দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে। নওশীন সোজা হলরুমের দিকে এগুতে থাকে কিন্তু তার পা আর চলছে না। সেখানেই মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার। আবছা চোখে দেখতে পায় সামনের দিক থেকে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত কেউ তার দিকে ছুটে আসছে। তার পিছনে হয়তো আরও কয়েকজন আসছে কিন্তু তা স্পষ্ট দেখতে পায় না নওশীন। চারপাশ নিকষ অন্ধকারে ছেয়ে যায়, জ্ঞান হারায় সে। একজোড়া হাত তাকে সযত্নে আগলে নেয়।
আশেপাশের স্টুডেন্টরা তাকিয়ে তাকিয়ে আদনানের কর্মকান্ড দেখছে। আদনান নওশীনকে বুকের সাথে বামহাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে। প্রিন্সিপাল এবং দুজন সহকারী ম্যাম দৌঁড়ে সেখানে এসে উপস্থিত হয়। নওশীনকে রেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। রেস্টরুমের একপাশে একটা ছোটরুমের মতো ব্যবস্থা করা যেটা সাধারণত শয়নকক্ষ হিসেবেই পরিচিত। এটা ছাত্রীদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। অনেক সময় অনেকে অসুস্থ হয়ে যায় যাদের এখানে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।
নওশীনকে শুইয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ইলমা দৌঁড়ে সেখানে আসে। ইলমা এসে ক্লাস টিচারের সাথে কথা বলে জানতে পারে নওশীন হলরুমের সামনে মাঠের মধ্যে এসে জ্ঞান হারিয়েছে।
_____
আদনান বাহিরে দাঁড়িয়ে নওশীনের জ্ঞান ফিরে আসার অপেক্ষা করছে। ভেতরে কয়েকজন ম্যাম এবং নওশীনের বান্ধবী আছে তবুও যেন এক মুহুর্তের জন্য নিশ্চিন্ত হতে পারছে না সে। এত অল্প সময়ে এই মেয়েটা এত মায়া তৈরি করল কীভাবে সেটা ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছে আদনান। তার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হলো- মেয়েটা কি জাদু জানে? যদি না-ই জানে তবে এত টানছে কী করে? নওশীন যখন আদনানের হাতের ওপর জ্ঞান হারায় তখন খুব কাছে থেকে দেখেছে সে তাকে। কী সুশ্রী তার মুখ !
ভেতর থেকে নওশীনের ক্লাস টিচার নাজনীন বাহিরে এসে আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,” স্যার, নওশীনের জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু হয়তো কিছু দেখে ভয় পেয়েছিল জ্ঞান হারানোর আগে। মেয়েটা এখনো খুব ভয় পেয়ে আছে।”
” উনার সাথে দেখা করা সম্ভব হবে এখন?
” জি, আসুন।”
আদনানের পাশেই প্রিন্সিপাল আজহার সাহেব দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদনান আজহার সাহেবকে বলে,” চলুন তাহলে ভেতরে গিয়ে শুনি কী হয়েছিল উনার সাথে।”
” চলুন।”
নওশীনকে জানালার পাশে সোফাতে বসানো হয়েছে। নওশীন সেখানেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসে আছে। আদনান সেখানে যেতেই একজন চেয়ার এনে দেয়। আদনান নওশীনের নিকটে চেয়ার টেনে বসে। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে নওশীন এখনো ভয় পাচ্ছে, তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। সামনে আরও একটা অপরিচিত পুরুষকে দেখে ঘাবড়ে যায় নওশীন।
আদনান নওশীনকে বিচলিত হতে দেখে বলে ওঠে,” এখানে কাউকে দেখে ভয় পাবার প্রয়োজন নেই। নিজেকে একটু শান্ত করুন। পানি খাবেন?”
নওশীন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। আজহার সাহেব পিছনে তাকিয়ে আয়াকে ইশারা করতেই সে পানি আনতে চলে যায়। পানি এনে দেওয়ার পর গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে নেয় নওশীন।
গ্লাসটা পাশে রেখেই বলে,” আমি রুমে গিয়েছিলাম চেঞ্জ করতে কিন্তু আমার আগেই ওখানে কেউ উপস্থিত ছিল। রুমে অন্ধকার করে রাখা হয়েছিল। আমাকে খুব বাজেভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে সে।” জড়িত স্বরেই কথাগুলো বলে মাথামিচু করে ফেলে সে। সুশ্রী সুগঠিত মুখখানা যেন পাংশুবর্ণ ধারণ করে।
নওশীনের কথা শোনামাত্র আদনানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। আজহার সাহেবকে বলে ওঠে,” সিসিটিভি চেক করুন, দেখুন কার এতবড় সাহস হয়েছে কলেজে এসে কলেজের মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করার।”
আজহার সাহেব সাথে সাথে অফিস সহকারীকে বিষয়টা দেখতে বলেন। আদনান নওশীনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,” আপনার ভয় পাবার প্রয়োজন নেই, আমি বিষয়টা দেখছি। চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেই আমার গাড়ি করে।”
নওশীন ধীরে ধীরে নিজের জড়তা কাটিয়ে বলে,” সেটার প্রয়োজন হবে না। আমি বাসায় চলে যেতে পারব। ”
পাশে থেকে ইলমাও বলে,” স্যার আমাদের দুজনের বাসা পাশাপাশি। আমরা একসাথে যাতায়াত করি। সমস্যা হবে না হয়তো।”
” আপনারা দুজনই চলুন আমার গাড়িতে। আপনাদের সাথে কিছু কথাও আছে। উনাকে একা ছাড়তে মন সায় দিচ্ছে না।”
আদনানের কথায় তার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে নওশীন। মনে মনে ভাবে- এই লোকটা এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছে আমার প্রতি! কে উনি?”
#চলবে……..
#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০১
আসসালামু আলাইকুম। নতুন গল্প নিয়ে উপস্থিত হলাম, আশা করছি প্রথম পর্বে সবাই রেস্পন্স করবেন। একটু বেশি করে কমেন্ট করবেন সবাই। পনেরো বছরের উর্ধে যাদের বয়স তারা পড়তে পারবেন। ১৮+ বা খুব এট্র্যাক্টিভ কিছু তেমন পাবেন না।