প্রেমস্পন্দন #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্বসংখ্যা_০২

0
207

(মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০২

গলায় কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই কান্না করে ওঠে নওশীন। দুই হাত বেধে রাখা হয়েছে, মুখেও কাপড় গুজে দেওয়া। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে নওশীনের। চারদিক অন্ধকার, কোথাও এতটুকু আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। মুখে কাপড় থাকায় চিৎকার করতে পারছে না। নিজের মুখের কাছে অন্যকারও নিঃশ্বাসের শব্দ আরও গাঢ় হতে থাকে। নওশীন কী করবে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।
বোবায় ধরার মতো সমস্ত শরীর যেন অসাড় হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ছে নওশীন। কোনরকম দুঃসাহস দেখানোর সুযোগ যেন সে পাচ্ছে না। অন্ধকার কেন তাকে এত গিলে খাচ্ছে! স্পর্শগুলো যেন কেমন হিং*স্র হয়ে উঠছে। নিকটে থাকা পুরুষের ঘন রোমশ ভ্রুযুগল গাল স্পর্শ করছে। বিশ্রী, কটু ঘামের গন্ধও পাচ্ছে সে।

নওশীন তার শরীরের সমস্ত জোর দিয়ে চিৎকার দিতেই পাশে থেকে স্নেহা তার বাহু ধরে ঝাঁকাতে থাকে। পাশের বেডগুলো থেকে প্রিতী, অনু, নোয়া উঠে আসে। স্নেহার ধাক্কাধাক্কিতে নওশীন চোখ খুলে এদিক ওদিক দেখতে থাকে। মাথার ওপরে ফ্যান চলা সত্ত্বেও ঘেমে একাকার অবস্থা। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে নওশীন। পাশে চার বোনকে দেখে বুঝতে পারে ওটা স্বপ্ন ছিল।

নোয়া নওশীনের ডান পাশে বসে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় নওশীনকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,” নিশু, বাজে স্বপ্ন দেখেছিস?”

নওশীন শুকনো ঢোক গিলে বলে,” পানি খাব আপু। আমার গলা শুকিয়ে গেছে।”
নোয়া অনুকে ডেকে পানি নিয়ে আসতে বললে অনু রুম থেকে বের হয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি এনে দেয়৷ নওশীন সম্পূর্ণ পানি একেদমে খেয়ে নেয়। নওশীনকে বেশ অবিন্যস্ত দেখাচ্ছে। আজকে চুল বেধেও ঘুমায়নি সে।

প্রিতী নিজের আগ্রহ দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে ওঠে,” আজকে কিছু হয়েছে তাই না? তখন ইলমা কী যেন বলতে চাচ্ছিলো তুই থামিয়ে দিলি।”

স্নেহা সন্দিগ্ধ চোখে নওশীনের দিকে তাকায়। কপালে হাত দিয়ে দেখে গা একদম ঠান্ডা। কপালে ঘাম থাকায় স্নেহার হাত ভিজে যায়। একমুহূর্ত বিলম্ব না করে বলে,” জ্বরও তো নেই। একদম সুস্থ আছিস দেখছি। এবার বেশি ভনিতা না করে ঝেঁড়ে কেশে ফেলো তো দেখি। কী হয়েছে আজ? ”

প্রিতী এবার পাশে থেকে বলে ওঠে,” নওশীন, আমরা কিন্তু নিজেরা নিজেদের কথা দিয়েছিলাম মনে আছে নিশ্চয়ই? আমরা কথা দিয়েছিলাম আমাদের কথা অন্যকেউ না জানলেও আমরা পাঁচজন অন্তত একে অপরের কথা জানব। কেউ কোন কথা লুকোবো না। তাহলে তুই আজ কথা রাখছিস না কেন?”

নওশীন সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। সবাই বেশ সাগ্রহে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

নওশীন একটা জোরে শ্বাস ফেলে সবটা বলা শুরু করে। নওশীনের কথা শুনে মাঝের দিকে সবার ভ্রু কুচকে গেলেও সবটা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই।
নওশীনের কথা শুনে প্রিতীর র*ক্ত যেন টগবগিয়ে ওঠে। সে পাঁচ বোনের মধ্যে একটু বেশি প্রতিবাদী ধরণের। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,” শা*লারে আবার সুন্নতে খাৎনা দিতে ডাক্তারের কাছে পাঠাইলি না? ডাক্তারকে টাকা দিয়ে গোড়াসুদ্ধ কে*টে দিতে বলতাম। জা*নো*য়ার কোথাকার! এসব শুনলেই খু**ন করে ফেলতে ইচ্ছে হয়।”

স্নেহা প্রিতীর কথায় কোন পাত্তা না দিয়ে বলে ওঠে,” নিশুর তো ব্যক্তিগত ব্যাডা আইসা পড়ছে। নিশুর তো ব্যক্তিগত ব্যাডার সাথে বসন্ত চলে আসার কথা। আমিই মনে হয় সিঙ্গেল মরব। ”

অনু পাশে থেকে গান গেয়ে ওঠে,”মেরে সাপনোকি রাজা কাব আয়ে গি তু….”

সবার কথা শুনে বিরক্ত লাগছে নওশীনের। সবাইকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে,” আমার সাথে আজ এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল আর তো ইউএনও-কে নিয়ে মজা লুটছিস! শুধুমাত্র প্রিতীই আমার কষ্টটা বুঝলো। তোরা সব কয়ডা লুচ্চামি শুরু করেছিস।”

নোয়া সবাইকে চোখ টিপে ইশারায় চুপ করতে বলে। সবাই নওশীনকে ডেকে ডেকে দেখিয়ে মুখে আঙুল দেয়। নওশীন এবার সবার কান্ড দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

নোয়া এবার সবার মতো নিজেও মজা করতে শুরু করে। নওশীনকে নিজের কাধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে,” ইউএনও কেমন দেখতে রে?”

নওশীন মুচকি হেসে বলে, ” বয়স কত জানি না তবে দেখতে এক কথায় পঁচিশ বছরের সুদর্শন যুবক। প্রেম করবা? কিন্তু তোমার তো একটা বপ্পেন আছে। কী হবে এখন?”

” গাড়িতে আসার সময় নম্বর চায় নি? দেখে কী মনে হয়েছে রে? বিবাহিত নাকি সিঙ্গেল?” স্নেহার প্রশ্নে নওশীন বলে ওঠে,” গাড়িতে শুধু সাব্বিরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। মানুষকে দেখে কি বোঝা যায় কিছু? অন্যদের দেখে বোঝা গেলেও উনাকে দেখে আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। নিজের মানুষ থাকতে আমি অন্য কাউকে কেন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে যাব.”

নওশীনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে অনু বলে ওঠে,” তোমার ওই রিলেশন টিকবে না চান্দু৷ মানুষ চোখের আড়াল হইলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে৷ তোমার সেই ব্যাডা তোমার আড়ালে কতকিছু করছে সেটা তুমি নিজেও জানো না। সুন্দর দেখতে, স্মার্ট নব্বই শতাংশ ছেলের ছুকছুকানি স্বভাব। তোমারটারে দেখেই লুইচ্চা মনে হয়।”

” কই আমি তো কিছু করি না! আমিও তো নুহাশের চোখের আড়ালেই আছি। আমি যেহেতু কিছু করছি না তাহলে আমি ওর ওপর বিশ্বাস রাখতেই পারি। ”

নওশীন প্রেমে অন্ধ হয়ে আছে এটা নোয়া,প্রিতী,অনু,স্নেহা সবাই জানে। ছেলেটা কী মন্ত্র পড়ে বশ করে রেখেছে কে জানে!

এতক্ষণে নোয়া বলে ওঠে,” এই তোরা ঘুমাবি না? ওই হাসের বাচ্চার কথা আমার এতরাতে শুনতে ইচ্ছে করতেছে না।”

প্রিতী সবার কথায় বিরক্ত হয়ে নিজের বিছানায় চলে যায়। ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা থেকে সবাই কীভাবে বিনোদনের লাইনে চলে যেতে পারে তা সে বাদে সবাই জানে। নোয়া ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে আড়াইটা বাজতে চলেছে। সবাইকে ঠেলে নওশীনের বিছানা থেকে তুলে দেয়। সবাইকে ঘুমাতে নিজেদের বিছানায় চলে যেতে বলে।

বিছানা ছেড়ে সবাই চলে গেলে স্নেহাও শুয়ে নওশীনকে বলে,” তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়। মাঝরাত এখন।”

নওশীন বালিশের নিচে থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে নুহাশ আজ তাকে কোন টেক্সট করেনি৷ ফোনটা বালিশের নিচে না রেখে পাশেই চার্জে দিয়ে রাখে। খারাপ স্বপ্ন যেন না দেখতে হয় তাই আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
_____

ভোর ছ’টা।
পরীজান বেগম ফজরের নামাজের জন্য উঠে ওজু করে পাঁচ নাতনিকে ডেকে তুলে ওজু করতে পাঠিয়ে দেয়। পরীজান বেগমের কোন ছেলে নেই। চার মেয়ের পাঁচ মেয়েকে নিজের কাছে রেখেছেন। বিরাট একটা পুরোনো নকশার বাড়িতে শুধুমাত্র সাতজন মানুষ থাকে৷ পরীজান বেগমের স্বামী মুহিব শেখ, পরীজান আর পাঁচটা নাতনি। বাড়ির সামনেই সদর দরজার পাশেই বড় একটা ঘর আছে সেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকেন যারা বাড়ি দেখাশোনা করে।

বাড়ির সবার অভ্যাস ফজরের নামাজ শেষ করে মুহিব শেখ মসজিদ থেকে বাড়িতে আসলেই সবাই বাহিরে হাটতে বের হবে। বাহিরে থেকে এসে সবাই এক কাপ করে চা আর কিছু বিস্কুট নিয়ে পড়তে বসে যাবে। আজও তার অন্যথা হলো না। মুহিব শেখ মসজিদ থেকে আসার পর প্রতিদিনের মতো বাহির থেকে হেটে বাড়ি এসে সবাই পড়তে বসে যায়।

ঘড়িতে আটটা বাজতেই নওশীন, স্নেহা আর অনু কলেজের জন্য রেডি হতে চলে যায়। স্নেহা আর অনু একই কলেজে পড়ছে। অনু ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে, সামনের মাসেই এক্সাম জন্য পড়ার চাপ তার একটু বেশি।

খাওয়া দাওয়া করে কলেজের জন্য রেডি হয়ে তিনজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। বাড়ি থেকে বের হতেই স্নেহা আর অনু একরাস্তায় চলে যায় আর নওশীন আরেক রাস্তায়৷ একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখে ইলমা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্যই অপেক্ষা করছে। কলেজ খুব একটা দূরে না হওয়ায় বেশিরভাগ দিন দুজন পায়ে হেটেই গল্প করতে করতে চলে যায়। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় পনেরো মিনিটের। গল্প করতে করতে গেলে সময় বেশি মনে হয় না।

নওশীন আর ইলমা হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার সামনাসামনি আসলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,” এখন যদি দ্যি হ্যান্ডসাম আদনান সাহেবের সাথে দেখা হয়ে যায়! কেমন হবে বল তো?”
” খুব বাজে হবে ইলু৷ এসব মুখেও আনিস না৷ আমার বাড়ির বাদরগুলো এই লোককে নিয়ে খুব জ্বা*লিয়েছে রে, তুই আর জ্বা*লাস না।”
” আমার কিন্তু কালকে উনাকে দারুণ লেগেছে। যাই বলিস লোকটা কিন্তু হেব্বি হ্যান্ডসাম। ”
” ছিঃ ছিঃ ইলু, তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে? ভালো হয়ে যা সময় থাকতে।”
” যা ইচ্ছে বল, আমি এখন মনে প্রাণে চাইছি আদনান সাহেব সামনে এসে দাঁড়াক।”

পিছনে গলা খাঁকারির আওয়াজ শুনে দুজনে দাঁড়িয়ে যায়। নওশীন আর ইলমা একে অপরকে দেখছে। পিছন থেকে ভারী গলায় কেউ বলে ওঠে, ” এই যে শুনছেন!”

#চলবে…..

পাঠকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে রেস্পন্স করার। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই। কিপ্টেমি করবেন না।☹️
যারা পেইজে ফলো দেন নি তারা প্লিজ ফলো দিয়ে রাখবেন।
যারা আমার ইবুক এখনো কিনেন নি তারা জলদি বইটই এ্যাপ থেকে- “কাছে না এসে ভালোবাসব না” ইবুকটি পড়ে নিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here