(মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০৪
সামনে নওশীনকে দেখেই আদনানের হৃৎস্পন্দন যেন মুহুর্তের জন্য থেমে যায়। এক পলকে সামনে দাঁড়ানো রমনীর দিকে তাকিয়ে থাকে। নওশীন আদনানের অবস্থা টের পেয়ে ঠোঁট টিপে হাসি আটকে আবার গলা খাঁকারি দিতেই আদনান একটা জোরে শ্বাস টেনে বলে, ” ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন?”
নওশীন সহাস্যমুখে জবাব দেয়,” আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন?”
” আলহামদুলিল্লাহ। ভেতরে যান। ওসি সাহেব কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবে।”
” ঠিক আছে।”
নওশীন ভেতরে চলে গেলে কিছু সময় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ ওসি সাহেব কথায় কথায় প্রশ্ন তোলেন,” সাব্বির কী শুধু আপনাকেই বিরক্ত করে নাকি তার ব্যাপারে এসব অনেক আগে থেকেই চলে? মানে অন্যদেরও কি এভাবে বিরক্ত করত?”
নওশীন জবাব দেয়,” সেসব জানি না স্যার। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় বেশ কয়েকবার প্রপোজ করেছে ও’ আমায়। হয়তো এক্সেপ্ট না করায় আমার সাথে এমনটা করতে চেয়েছিল। ”
” স্যরি কিছু মনে করবেন না, আপনি আগে থেকে জানতেন সাব্বির ভালো ছেলে না? তার জন্যই কি প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করেন নি?”
” না, আসলে আমি এসবে এখন জড়াতে চাই না তাই।”
আরও কিছু প্রশ্ন করা হয় নওশীনকে। সেও সোজাসাপটা জবাব দিয়ে বেরিয়ে আসে। নওশীন বেরিয়ে সোজা ক্লাসে চলে যায়।
______
সাব্বিরকে ধরতে ধরে প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। তিনদিন যাবৎ তাকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে। সাব্বিরের বাবা বার কয়েক নওশীনের নানাবাড়ি এসে কেস তুলে নিতে বললে নওশীনের নানা তাতে রাজি হন নি। সবার অগোচরে সাব্বিরের মা নওশীনের কাছাকাছি এসে কান্নাকাটি করেছে। সাব্বিরের মা বাড়ি থেকে চলে যাওয়া-মাত্র বসারঘর থেকে নিজেদের রুমে চলে আসে। ফোনটা চার্জে বসিয়েছিল। রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়েই দেখে নুহাশ কল দিয়েছিল। ফোনটা নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হবে তখনই স্নেহা এসে নওশীনের হাত ধরে ফেলে। নওশীন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই স্নেহা হাত ছেড়ে দেয়।
নওশীনের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলে,” পেয়ার হুয়া?”
” রাস্তা ছাড় স্নেহা।”
” কিউ?”
” এমনি। যে কাজ করছিলি সেটা কর৷ ”
” তোকে পাহাড়া দিতে আসলাম। ”
” আমাকে পাহাড়া দিতে হবে না। সামনে থেকে যা।”
” না গেলে?”
” পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ঠুস করে নদীতে ফেলে দেব।”
স্নেহাকে রুমের ভেতরের দিকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দিয়ে দৌঁড়ে ছাদে চলে যায়।
চিলেকোঠার পাশে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক কাউকে না দেখে নুহাশের নম্বরে কল দেয়। প্রথমে নম্বর ব্যস্ত বললেও দ্বিতীয়বার কল দেওয়ায় ওপাশের ব্যক্তি রিং হওয়ার মাথায় কল রিসিভ করে।
ওপাশ থেকে কন্ঠস্বর ভেসে আসে,” হ্যালো।”
” কেমন আছো? তোমার পরিক্ষা তো গতকাল শেষ। কল দাও নি যে?”
” বন্ধুদের সাথে ব্যস্ত ছিলাম। ভালো আছো তুমি? শরীর ভালো?”
” আমাদের কতগুলো দিন কথা হয় না বলো তো? ভালো থাকব কীভাবে?”
” পরিক্ষা ছিল তো, জেনেও এমন অবুঝ কেন?”
” তুমি বুঝতে পারো না?”
” আচ্ছা বাদ দাও। কী করা হচ্ছে?”
” কিছু না। আমরা দেখা করব না? তোমার উচিৎ এবার দেখা করা। ”
” পরিক্ষা মাত্র শেষ হলো। আর কয়েকটা দিন সময় দাও প্লিজ। ”
দুজনের কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর নওশীন আমতা আমতা করে বলে, ” উম্ তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।”
” হ্যাঁ বলো।”
” সেদিন আমার কলেজে অনুষ্ঠান ছিল। ”
” হ্যাঁ আগে বলেছিলে তো।”
” হুম।”
নওশীন আবারও কাঁপা কাঁপা গলায় পুরোটা বলতে থাকে। ওপাশের মানুষটার কোন প্রতিক্রিয়া নওশীন বুঝতে পারছে না। নিজের কথা শেষ করে ওপাশের মানুষটা কী বলবে সেটা শোনার অপেক্ষায় কান পেতে থাকে। নওশীন ভয়ে চুপসে যাচ্ছে আর ভাবছে ওপাশের মানুষটা তাকে ভুল বুঝবে না তো!
কিছু মুহুর্ত চুপ থেকে নুহাশ বলে ওঠে,” ওই ছেলে তোমাকে রাস্তায় বিরক্ত করে সেটা আমাকে জানাও নি কেন?”
নওশীন একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে, ” আসলে এটা তেমন বড় কোন ঘটনা ছিল না। আর তোমাকে বলেই বা কী হতো বলো? তুমি তো কিছু করতে পারতে না৷”
” তার জন্য আমাকে জানাবে না? আজ নোংরাভাবে ছোয়ার পর আমাকে বলতে এসেছ? তোমার ব্যাপারে তো আমার কোনকিছু জানার অধিকারই নেই। আজও না বলতে। আমি তো কিছুই শুনতে চাই নি। তোমার যখন মনে হবে যে কিছু বলা উচিৎ তখন বলবে আর অন্যসময় বলবে না?”
” তুমিও তো আমাকে কত কিছু বলো না।”
” কী বলি না আমি তোমাকে? কী বলতে হবে বলো?”
” চিৎকার করছো কেন নুহাশ? আমি কী আমার খারাপ লাগা শেয়ার করে ভুল করলাম?”
” হ্যাঁ ভুল করলে। এখন বলে ভুল করলে।”
” আমার এখন কী করা উচিৎ? ”
” জাস্ট ফোনটা রাখো। আমাকে আর নেক্সট টাইম কল দেবে না।”
” কতদিন পর আমাদের কথা হচ্ছিল নুহাশ, তুমি শুধু শুধু আমার বিষয়টা না বুঝে রাগারাগি করছো।”
” নিশু, ভাল্লাগছে না আমার। কল কাটো।”
” আচ্ছা স্যরি।”
” কল কাটো।”
” একটু পর রেখে দিই। ”
” আমি রাখছি৷ আল্লাহ হাফেজ।”
ওপাশের ব্যক্তির এমন আচরণ আজ নতুন না। নুহাশ মাঝেমধ্যেই এমন হুটহাট রেগে যায়। পরক্ষণেই আবার স্যরি বলে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেয় কিন্তু সে অল্প সময়ে নওশীন যে কষ্ট পায় সেটা যেন আকাশ ছোঁয়া।
নুহাশ ফোন রাখার পর নওশীন আরও দুই, তিনবার কল দেয়। নুহাশ আর কল রিসিভ করে নি। নওশীন এবার মন খারাপ করে চিলেকোঠার দরজায় আসতেই দেখে তার স্নেহা আর প্রিতী দাঁড়িয়ে আছে।
নওশীনের মন খারাপ দেখে প্রিতী বলে ওঠে,” ওই হাসের বাচ্চা আবার তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে? ওরে তুলে এনে উদুম ক্যা**লানি দেওয়া লাগবে বুঝছিস। শালার ব্যাডারা এমন হয় ক্যান বল তো? কেউ পাত্তা দেয় না আবার কেউ পাত্তা পায় না। অসহ্যকর ব্যাডা মানুষ। ”
নওশীন গোমড়ামুখে বলে ওঠে,” আমার ভালো লাগছে না প্রীতু৷ কালকে ওর জন্মদিন আর আজ আমি ওকে রাগিয়ে দিলাম। সাব্বিরের বিষয়টা আমার ওকে জানানো উচিৎ ছিল। আমারই ভুল। কেন যে ওকে বললাম না।”
স্নেহা বলে ওঠে,” আচ্ছা এসব নিয়ে পরে ভাববি। এখন নিচে চল। আয় দেখবি কে এসেছে!”
নওশীন উৎসুকভাবে জিজ্ঞেস করে,” আবার কে এলো? সাব্বিরের কেউ?”
” নাহ, তোর সেই পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের সেই যুবক।”
স্নেহার কথায় প্রিতী হেসে ফেলে। হাসতে হাসতেই বলে,” এটা কিন্তু জোশ বলেছিলস স্নেহুবাচ্চা।”
” তোমার স্নেহুবাচ্চা বলে কথা!”
নওশীন দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলে,” কে এসেছে বলবি তোরা?”
প্রিতী হাত ধরে টেনে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,” তুই এখানে কারও রাগ অভিমান দেখছিস আর ওখানে কেউ তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
” তোরা আমার সাথে হেয়ালি কেন করছিস ভাই?”
” বোন হই, ভাই বলিস ক্যান ভাই?”
স্নেহার কথায় নওশীন আর প্রিতী দুজনই এবার হো হো করে হেসে দেয়। মন খারাপ থাকলে স্নেহার উল্টাপাল্টা কথাতেই সবার মন ভালো হয়ে যায়।
স্নেহা নওশীনের কানে ফিসফিস করে বলে,” মাথায় ওরনাটা দিয়ে নে। তোকে দেখতে এসেছে তোর পঁচিশ বছরের যুবক।”
নওশীন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,” কী বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না। পঁচিশ বছরের কোম যুবক দেখতে এসেছে?”
” শুধু দেখতে আসে নি। তোর নুহাশের কপাল পো*ড়াতে এসেছে হয়তো।”
” কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার সিরিয়াসলি।”
” আমরা এখন কিছুই এক্সপ্লেইন করতে পারব না। কথা না বাড়িয়ে চল তো।”
স্নেহার কথায় আর কথা না বাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। বসারঘরে কালো শার্ট পরিহিত কেউ নওশীনের নানার সাথে বসে বসে কথা বলছিল। নওশীনকে দেখামাত্র তার নানা তাকে ডাক দেয়। লোকটা পিছনে ঘুরে তাকাতেই নওশীন অবাক হয়ে যায়। প্রিতীর দিকে তাকিয়ে অস্পষ্টভাবে বলে ওঠে,” উনি এখানে! কেন?”
#চলবে…..
সবাই রেস্পন্স করবেন। বেশি বেশি কমেন্ট করবেন যেন গল্প সবার সামনে যায়।