প্রেমস্পন্দন #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্বসংখ্যা_০৫

0
202

(মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০৫

নওশীন তার নানা মুহিব শেখ-এর কথায় তাদের দিকে এগিয়ে যায়। নওশীন নিজের বাড়িতে আদনানকে দেখে বেশ অবাক হয়। অচেতন অবস্থায় যেন সব ঘটছে তার সাথে। সে গিয়ে তার নানার পাশে দাঁড়ায়। মুহিব শেখ এবার তাকে হাত ধরে নিজের পাশে বসায়। নওশীন তখনো এক পলকে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান নওশীনের অবস্থা দেখে মিটি মিটি হাসছে। মুহিব শেখ নওশীনকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে বলে, ” এটা আমার মা-বাপ মরা নাতিন। বিশ সালে করোনা ভাইরাসের সময় ওর বাপ মা দুই জনই মারা গেছে। তারপর থেকে ও আমার এখানে আছে। আমার কোন ছেলেপুলে নাই, আছে চারটা মেয়ে। আমার নাতনিগুলোকে নিয়েই আমি আর আমার স্ত্রী এই বাড়িতে থাকি। আমার পাঁচ পাঁচটা নাতনি, সারাদিন কিছু না কিছু করে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে।”

আদনান বলে ওঠে, ” এই বাড়িতে আর কেউ নেই? তাহলে আপনি এখন অভিভাবক? আপনার সাথেই সব কথা বলতে হবে? ”
” হ্যাঁ তুমি তোমার মাকে এখানে আসতে বল। ”

পাশে থেকে নওশীন বলে ওঠে, ” কেন?”
মুহিব শেখ হাসতে হাসতে বলে, ” তোকে নিয়ে যাবে রে আপা। ”

নওশীন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় নিয়ে যাবে? তুমি যেতে দিবে কেন? ”
” মেয়েদের কি ধরে রাখা যায়? কেউ না কেউ তো সওদা করবেই। তুই যা এখন। উনার খাবারের ব্যবস্থা করবি না? ”

আদনান ব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে, ” না না আমি আজ খাব না। আমার আজ তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে, আমি বরং অন্যদিন আসব সেদিন খাওয়া দাওয়া করব আজ উঠি। ”
” তুমি আমাকে নানা বলে সম্বোধন করতে পারো। ”
আদনান মুচকি হেসে বলে, ” ঠিক আছে।”
” নিশু যা তো, উনাকে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আয়। ”

নওশীন সম্মতি সূচক মাথা নাড়ায়। আদনান কে উদ্দেশ্য করে বলে,” চলুন। ”
নওশীন আগে আগে হাঁটা শুরু করে, আদনান মুহিব শেখের থেকে বিদায় নিয়ে নওশীনের পিছু পিছু এগোতে থাকে। নওশীন সদর দরজার কাছে এসে বলে, ” এখানে কেন এসেছিলেন, স্যার?”

আদনান নওশীনের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে বসে, ” আমাকে আপনার কেমন লাগে? ”

আদনানের উল্টো প্রশ্নের ঘাবড়ে যায় নওশীন। প্রশ্নের উত্তরে কী বলা উচিৎ তা ভেবে পায় না সে। উত্তর তো ভালো খারাপের মধ্যেই দিতে হয়। আদনান যেহেতু প্রথম থেকে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে সেহেতু লোকটা তার পছন্দের। কিন্তু আদনানের প্রশ্নটা তার কাছে গোলমেলে লেগেছে।

নওশীনকে চুপ থাকতে দেখে আদনান আবার জিজ্ঞেস করে, ” আমাকে আপনার কেমন লাগে? ”
নওশীন এবার চকিতে বলে ওঠে, ” ঠিকঠাকই তো আছেন স্যার, কেমন লাগে বলতে? ”
” প্রশ্নটা কি বেশি জটিল হয়ে গেল? ”
” আসলে কী বলবো বুঝতে পারছি না। আপনি তো আমার অপছন্দের কেউ নন। ”
” আপনার পছন্দের কেউ আছে? কাউকে ভালোবাসেন? ”

আদনানের প্রশ্নে যেন এবার মোমবাতির সুতো ফুরিয়ে গেলে যেমন নিভু নিভু হয়ে যায় সেরকম অবস্থা হয়ে যায় নওশীনের। দমে যায় সে। নুহাশের কথা আদনান জানলে তার নানার জানতে দেরি হবে না তাই সোজাসাপ্টা ‘না ‘ জানিয়ে দেয় সে।

আদনান মুচকি হেসে বলে ওঠে, ” পছন্দের লিস্টে আর কাউকে না নিয়ে আসার অনুরোধ রইল। ”

নওশীন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,” আপনি এখানে কেন এসেছিলেন বললেন না তো স্যার? ”
” স্যার বলে না ডাকলে ভালো লাগবে। আর আপনি তো বুদ্ধিমতী মেয়ে, কেন এসেছিলাম সেটা এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা। ”
” বিয়ের সম্বন্ধ এনেছিলেন?”
” আমার ধারণা তবে সঠিক। আপনি নিশ্চিত বুদ্ধিমতী। ”
” ঠিক বললাম?”
” হ্যাঁ। ”
” কিন্তু আমি তো এখনই বিয়ে করতে চাই না। আমার সামনে ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা।”
” আমাকে আপনার অপছন্দ নাকি আলাদা কোন পছন্দের মানুষ আছে?”
” বললাম তো, নেই। আবার কেন জিজ্ঞেস করছেন?”
” কারণ এটা কোন স্ট্রং কারণ না বিয়েতে ‘না’ করার। আমি আমার বউয়ের পড়াশোনা নিশ্চয়ই বন্ধ করব না।”

আদনান একটু থেমে আবার বলে,” এখন সত্যিটা বলো৷ তুমি আমার জুনিয়র আর আমি যেহেতু তোমাকে পছন্দ করি, বিয়ের প্রস্তাব এনেছিলাম এসব মিলিয়ে যোগ- বিয়োগ করে তুমি করে বলতেই পারি। তোমার পছন্দের কেউ থাকলে সেটা বলতে পারো।”

নওশীন এবার আমতা আমতা করে বলে,” আপনি আমার নানুকে বলবেন না তো? উনি শুনলে ভীষণ কষ্ট পাবেন, আমার সাথে আর কথাই বলবেন না।”

আদনান গম্ভীর স্বরে বলে,” বলুন।”
” আসলে অনেকদিন যাবৎ আমি একজনকে পছন্দ করি।”

আদনান একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। স্পষ্টভাবেই বলে,” এই প্রথম এত বাজেভাবে নিজেই নিজেকে ঠ*কালাম। প্রথমদিনই কলেজের অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম তোমাকে সেদিনই মন জানিয়েছিল এই মেয়েকেই আমার চাই, চাই মানে চাইই। যেকোনভাবে তোমাকে দেখার জন্য কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেছি। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আজ আমি এখানে সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে চলে এসেছিলাম অথচ ভয়টা তুমি আমাকে পাইয়েই দিলে। আমি ভাবতেই পারছি না তুমি মেয়েটা অন্যকারো।”

” স্যার…” নওশীন মলিনমুখে ডাকলে আদনান তার দিকে ফিরে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,” তোমাকে হারাতে আমার একদম ইচ্ছে করবে না, নিশু।”
” স্যার…”
” আমার আজ প্রথম নিজেকে খুব অসহায় লাগছে, নিশু।” বলেই আদনান সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যায়।

নওশীন সেদিকেই একপলকে চেয়ে থাকে। এই লোকটাকে প্রথম থেকে তারও যে ভালো লেগেছিল। তার প্রতি যত্নশীল হওয়াটা যেন প্রথমদিকেই মন কেড়েছিল নওশীনের। তাকানো, হাসি হাসি মুখ যেন মাঝে মাঝে কিছু একটা ভাবতে বাধ্য করত৷ পরক্ষণেই নিজেকে গুটিয়ে নিত৷ মনকে বোঝাতো নুহাশকে সে ঠকাতে পারবে না, এটা উচিৎ না। নুহাশ যেমনই হোক নওশীন নিজেই তাকে পছন্দ করেছিল। নিজেই সম্পর্কের দিকে এগিয়েছিল।

নওশীন বাহির থেকে নিজেদের রুমে চলে আসে। রুমে প্রবেশ করেই দেখে সেখানে নোয়া, প্রিতী, স্নেহা,অনু সবাই আগে থেকে তার জন্য বসে বসে অপেক্ষা করছে। নওশীনকে সবাইকে দেখেও পাত্তা না দিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে। নওশীন বসতেই নোয়া জিজ্ঞেস করে,” এখন কী করবি?”

নওশীনের যেন প্রশ্নের জবাবটা রেডি করা ছিল তাই সে চকিতে বলে ওঠে,” কালকে নুহাশের জন্মদিন। কালকে ওর সাথে দেখা করতে যাব।”

অনু পাশে থেকে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,” সারপ্রাইজ দিবি?”

প্রিতী ধমকে অনুকে চুপ করিয়ে দেয়। নওশীনকে বলে ওঠে,” ওই ছেলের পিছনে এভাবে আর কতদিন পড়ে থাকবি তুই? সে নিজে থেকে একবারও তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছে? বিপদে তোকে সঙ্গ দিয়েছে? সামান্য ভালো করে কথা বলেও তো তোর মন ভালো করেনি৷ উলটো আরও উল্টাপাল্টা কথা বলে মন খারাপ করে দিয়েছে৷ ওকে জীবন থেকে বাদ দিয়ে দে। ওই ছেলের মধ্যে কী এমন দেখেছিস যে ওকে ছাড়ছিস না? ওই ছেলে তোকে মন থেকে ভালোবাসে না, তোকে ঠ*কাচ্ছে। এটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি কিন্তু তুই বুঝতে পারছিস না। তুই প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিস নিশু।”

নওশীন এবার রেগে বলে ওঠে,” আমাকে কোন প্রমাণ দেখাতে পেরেছিস? আমি নিজেই ওর সাথে রিলেশনে গিয়েছিলাম। আমি যাদি জানতে পারি আমি ওর কাছে ঠ*কে যাচ্ছি তাহলে আমি নিজেই সরে আসব। আমি অন্য মেয়েদের মতো নই যে কাউকে হারিয়ে দিনের পর দিন কান্নাকাটি করব৷ তাই আজ অন্তত এসব বলিস না কেউ৷ এসব শুনতে আমার একদম ভালো লাগে না। একটুও ভালো লাগে না।”

নওশীন পাশে এসে জিজ্ঞেস করে, ” তাহলে তুই যাবিই?”
” হ্যাঁ, যাব।”
” ঠিক আছে। কালকে বের হওয়ার নাম করে আমরা সবাই যাব। তোকে একা আমরা কিছুতেই ছাড়ব না।”

” সেটা তোমরা যেতেই পারো আমার সাথে। আমার তাহলে খারাপ লাগবে না। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না ওর জন্য কী নিয়ে যাব আমি?”

স্নেহা বলে ওঠে,” তুই নিজেই তো একটা গিফট। তোকে আচমকা দেখে নুহাশ কী করবে সেটাই ভাবছি আমি।”

অনু বলে ওঠে,” কালকে একটা গেম খেললে কেমন হয়?”
” কী গেইম?” জানতে চায় নোয়া।
” কালকেই নুহাশকে পরিক্ষা করে নেওয়া যাক। নুহাশ পাশ করলে নওশীন জিতে যাবে আর নুহাশ হেরে গেলে নওশীনকে আমরা যা বলব তাই করতে হবে।”

নওশীন বিরক্তমুখে জিজ্ঞেস করে,” কী খেলা?”
অনু হাসতে হাসতে বলে,” সেটা কাল বলব।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here