প্রেমস্পন্দন #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্বসংখ্যা_০৬

0
160

#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০৬

গতকালের কথা অনুযায়ী নওশীন তার বোনগুলোকে নিয়ে নুহাশের উদ্দেশ্যে বের হয়। বাড়িতে বলে তারা একটু প্রয়োজনে বের হচ্ছে কিছুক্ষণ পরই চলে আসবে। নুহাশের আর নওশীনের বাড়ির দূরত্ব খুব একটা দূরে না। তবুও তারা কেউ এতদিনে দেখা করার কথা ভাবেনি।

গাড়ি নির্দিষ্ট জায়গায় এসে থামে। গাড়ি থেকে সবাই নেমে ভাড়া মিটিয়ে পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসার সিদ্ধান্ত নেয়। একটা দোকান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে পাশেই একটা বড় রেস্টুরেন্টে যায় সবাই৷ নুহাশের জন্য কেক অর্ডার করা হয়েছে। নওশীন যতটুকু জানে নুহাশের বাড়ি এই জায়গার আশেপাশেই। সবকিছু যখন রেডি হয়ে যায় তখন নওশীন নুহাশকে কল দেবে এমন সময় অনু তাকে থামিয়ে দেয়।

নওশীন ইশারায় জানতে চায় কী হয়েছে? অনু বলে,” নম্বরটা আমাকে দে।”

নওশীন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,” কেন?”
” আমি না বলেছিলাম তোর বফ একটা প্রতা*রক। ওর চরিত্রে সমস্যা আছে সেটাই প্রমাণ করব।”
” আমি আজ ওকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছি৷”
” ভয় পাচ্ছিস? তোর বয়ফ্রেন্ডের আসল চেহারা সামনে চলে আসবে জন্য?”
” তোরা ওকে যতটা খারাপ ভাবিস, আমার সামনে বানাচ্ছিস নুহাশ ওরকম না।”
” নম্বর দে, দেখি সে কেমন!”
” যদি তোরা যা ভাবছিস সেটা মিথ্যা হয়?”
” তাহলে তোদের বিষয়ে নানাকে আমরা সবাই মিলে মানাবো।”

স্নেহাসহ সবাই অনুর পক্ষ নিলে নওশীন একপ্রকার অনিচ্ছাতেই নুহাশের নম্বর দিয়ে দেয় অনুকে। অনু সেই নম্বরটি নিয়ে তৎক্ষনাৎ কল করে বসে৷ দুইবার রিং হয়ে কলটা কেটে যায়। অনু হাল ছাড়ার পাত্রী নয়৷ সে কল দিতেই থাকে।

কিছুক্ষণ পর কল রিসিভ হয়। অনুর চোখমুখ আনন্দে চকচক করে ওঠে। নওশীন মুখবুজে সবকিছু দেখে যাচ্ছে।

কল রিসিভ হতেই অনু বলে ওঠে,”শুভ জন্মদিন নুহাশ।”

পাশে থেকে স্নিগ্ধা লাউড স্পীকারে দিতে বললে অনু কলটা স্পীকারে দেয়। ফোনটা সবার মাঝে রেখে কলে মন দেয়।

ওপাশ থেকে নুহাশ বলে ওঠে,” কে আপনি?”

অনু মুখ টিপে হেসে বলল,” কেউ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে আগে ধন্যবাদ দিতে হয় জানেন না?”
” অপরিচিত কাউকে কল দিলে আগে পরিচয় দিতে হয় সেটা জানেন তো নাকি?”
” আমি আপনার সাথে পরিচিত হতেই দেখা করতে এসেছি।”
” মানে?”
” মানে আমি আপনার পাশের এলাকাতেই থাকি। আপনার আইডি মাঝেমধ্যে ঘাটাঘাটি করি। আজ দেখলাম আপনার জন্মদিন তাই নম্বর কালেক্ট করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে নুহাশ বলে ওঠে,” আপনি কি সবাইকে এভাবে উইশ করেন?”
” না, শুধু আপনাকেই।”
” শুধু আমাকেই কেন?”
” আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনি দেখা করুন, আমি সব বলব।”
” আপনার কেন মনে হলো যে আপনি দেখা করতে আসবেন আর আমি দেখা করব? এতদিনে প্রেমিকার সাথে দেখা করলাম না আর আপনার সাথে দেখা করব?”

নুহাশের কথা শুনে সেখানে থাকা সবার মুখ কালো হলেও নওশীনের মুখে হাসি ফোটে। নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসে তার। ভাবতে থাকে তার পছন্দ হয়তো ভুল নয়।

অনু সবার দিকে চোখ বুলিয়ে সবার মুখের অবস্থাটা একবার দেখে নেয়। এরপর আবার বলে ওঠে,” আপনার প্রেমিকা আছে? ”
” হ্যাঁ আছে আর না থাকলেও আপনার মতো গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ের সাথে সম্পর্কে যেতাম না।”
” আপনি সম্পর্কে আছেন এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি কোনভাবে মিথ্যা বলছেন না তো?”
” যদি মিথ্যা বলি তাহলে ভেবে দেখুন আপনি কোন ধরনের মেয়ে।”
” মানে?”
” ফোন রাখুন। পরবর্তীতে এরকম আবলামি একদম করতে আসবেন না।”

নুহাশ কল কেটে দেয়। নওশীন যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। সবার মুখ কালো দেখে সে বলে ওঠে,” এবার? নুহাশ তোদের ভুল প্রমাণ করে দিল তো?”

প্রিতী বলে ওঠে,” এই ব্যাডা স্বীকার করে নিল যে তার প্রেমিকা আছে? অথচ তোর সাথে কতদিন পরপর যোগাযোগ করে। পড়াশোনার অজুহাতে সেরকম কথাই বলে না। প্রেমিকা বলতে তোর কথাই বলেছে নাকি অন্যকারো কথা বলেছে?”

নওশীন এবার চিৎকার করে বলে ওঠে,” এইইই আর একটা কথাও না। তোরা আর নুহাশের বিপক্ষে যাবি না একদম। তোরা পরিক্ষা করতে চেয়েছিলি পরিক্ষা তো করলি, কিছুই পেলি না। এবার থেমে যা।”

নোয়া নওশীনকে শান্ত করে বলে ওঠে,” আচ্ছা আমাদেরই হয়তো ভুল হয়েছে। হতে পারে তুই নিজেই সঠিক ছিলি।”

অনু বলে ওঠে,” আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। তুই ওকে কল দিয়ে দেখ কী বলে।”
” হুম।”

নওশীন এবার নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে নুহাশের নম্বরে কল দেয়। রিং হতেই ওপাশ থেকে সাথে সাথে রিসিভ হয়ে যায়।

নুহাশ নিজেই বলে ওঠে,” কেমন আছো?”

নওশীন একবার শুকনো ঢোক গিলে নেয়। নোয়ার দিকে তাকাতেই নোয়া ইশারায় কথা বলতে বলে। নওশীন সবার মুখের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। সবাই আগ্রহের সাথে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

নওশীনকে চুপ থাকতে দেখে নুহাশ আবার বলে ওঠে,” কী হলো? চুপ করে আছো কেন?”
” তুমি কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ। কিছু হয়েছে তোমার? মন খারাপ?”
” না। আমি তোমাদের এখানে স্টেশনের পাশে আছি।”
” আমাদের এখানে? কেন?”
” তুমি তো দেখা করবে না তাই আমি নিজেই চলে এসেছি।”
” কী বলো! আমাকে জানাওনি কেন? কী যে করো না!”
” প্লিজ দেখা করো।”
” আচ্ছা দশ মিনিট অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি।”
” আচ্ছা। জলদি এসো।”
” হ্যাঁ জলদিই আসছি। তুমি যেখানে আছো সেখানেই থাকো।”
” ঠিক আছে।”

নওশীন কল রাখতেই স্নেহা বলে,” আমরা কি ভুল ছিলাম?”

অনু নখ কামড়ে থুথু ফেলে বলে,” গুড লুকিং একটা ছেলে রিলেশনে আছে। দূরত্ব খুব বেশি দূর নয়, কখনো নিজে থেকে দেখা করতে চায়নি। পড়াশোনা, পরিক্ষার দোহায় দিয়ে কথাও সেরকম বলে না তারপরও নওশীন সম্পর্কটা টিকিয়ে রেখেছে। ছেলেটা কি ওর বিশ্বাসের দাম দেবে?”

নওশীন মুচকি হেসে বলে,” ওর রাগ বেশি। রাগটা সাইডে রাখলেই আমি বুঝতে পারি ও আমাকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে। রিসেন্ট ঘটে যাওয়া ঘটনা ওকে না জানানোটা আমারই ভুল। এখন ওর যদি কিছু হতো আর আমি যদি অনেকদিন পর জানতাম তাহলে আমিও সেম বিহেভ করতাম। আর তাছাড়া ও ভালো স্টুডেন্ট, রেজাল্ট ভালো করার একটা প্রেশার তো থাকেই।”

নোয়া বলে ওঠে,” আদনান আহমেদকে তোর এতদিনে ভালো লাগেনি?”

নওশীন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,” উনি একজন ভালো মানুষ। আমার প্রতি উনার যত্ন, সহোযোগিতা, ব্যবহার সবকিছুই ভালো লেগেছে। মাঝেমাঝে মনেও হয়েছে আমি হয়তো উনাকে পছন্দ করতে শুরু করেছি ঠিক তখনই নুহাশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যদিও আমাদের সম্পর্ক বেশিদিনের নয়। প্রতিদিন কথাও হয় না তবুও আমি ওকে বিশ্বাস করি, ও আমাকে হয়তো ঠ*কাবে না। আমি ওকে ভালোবাসি।”

অনু হাসিমুখে বলে ওঠে,” আমার না এখন আর তোকে ভুল প্রমাণ করতে ইচ্ছে করছে না। এখন মনে হচ্ছে তুই যেভাবে চাইছিস সবকিছু যেন ওভাবেই হয় কিন্তু আদনান সাহেবের জন্য আমার খারাপ লাগছে। উনি সত্যিই তোকে পছন্দ করে আমি যতটুকু বুঝেছি।”

অনু নিজের ফোনটা হাতে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে,” সেটা আমিও বুঝি কিন্তু নুহাশ যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে, আমার বিশ্বাসে মূল্য দেয় তাহলে আমি ওকে ঠকাতে পারব না। আমি যদি নুহাশকে ঠ*কাই তাহলে আমিও ওসব মেয়েদের কাতারে পড়ব যারা টাকার জন্য মানুষ ঠ*কায়।”

নোয়া নওশীনের গালে হাত দিয়ে বলে,” আমি শুধু অবাক হয়ে যাচ্ছি তোর এত কথা শুনে। এত ভালোবাসতে শিখলি কবে বল তো?”

নওশীন নোয়ার হাতে হাত রেখে বলে ওঠে,” অপর পাশের মানুষটা সঠিক হলে ভালোবাসাটা আপনাআপনি এসে যায় আপু।”

এতক্ষণে প্রিতী বলে,” নুহাশ যদি সঠিক হয় তাহলে আমরা আজই নানুকে তোদের বিষয় জানাবো কথা দিলাম।”

নওশীন তড়িৎ প্রিতীকে থামিয়ে দিয়ে বলে,” না। নুহাশ বলেছিল ওর পরিক্ষার পর একটা চাকরির চেষ্টা করবে আর ততদিনে আমারও ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট হয়ে যাবে তারপর আমরা বিয়ের ব্যাপারে ভাববো।”

অনু মুখ গোমড়া করে বলে ওঠে,” আমার এবার আদনান সাহেবের জন্য সত্যিই কষ্ট হচ্ছে রে। বেচারা তোকে কত পছন্দ করে যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল!”

নওশীন এবারও হাসিমুখেই বলে ওঠে,” আমি উনার কথা ভেবে নুহাশকে ঠ*কাতে পারব না। আমি নিজেও এটা করে ভালো থাকতে পারব না। আদনান স্যারের সাথে দেখা হলে আমি উনাকে বুঝিয়ে বলব, উনি ঠিক বুঝবেন আর তাছাড়া তো আমি উনাকে কখনোই সায় দেইনি বা উনার সাথে আলাদা কোথাও দেখা করিনি, ঘুরতে যাইনি, সময়ও পার করিনি। আমি টোটালি সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রেখেছি। এখন কেউ আমাকে ভালোবাসতেই পারে বা পছন্দ করতেই পারে এতে আমার কোন দোষ নেই।”

নওশীনের ফোন বেজে উঠতেই নওশীন বলে ওঠে,” এবার যাও, তোমরা অন্য টেবিলে বোসো। নুহাশ কল করেছে, ও বোধ হয় চলে এসেছে।”

#চলবে………..

এটাও হয়তো তাড়াতাড়ি শেষ করে দেব। যারা পড়বেন তারা রেস্পন্স করবেন।🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here